#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_২১
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
আমান রাগি লাল চোখ নিয়ে কিছুক্ষণ আইজার দিকে তাকিয়ে থাকার পর সেখান থেকে উঠে চলে গেল। রেহানা পেছন থেকে কয়েক বার ডাক দিলেও সে থামে নি। সবার কাছেই বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হলেও সবাই তা এড়িয়ে যায়।
লায়লা আর তার পরিবার রাতে একেবারে খাবার দাবার করে আইজাকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা।
সুতরাং বিকেলের দিকে লায়লা তার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ফারুকও সেই মুহূর্তে রায়হানের সাথে বাইরে বের হয়েছিল।
সেসময় আইজা লায়লার রুমে নক করে প্রবেশ করে। লায়লা মেয়েকে দেখে বললেন “আইজা মা! তুমি এসময় এখানে?!”
আইজা বলল “তুমি বিশ্রাম নিচ্ছিলে। আশা করি, তোমাকে বিরক্ত করি নি।”
লায়লা বললেন “একদম না। আসো, এসে বসো আমার সাথে।”
আইজা গিয়ে তার মায়ের সাথে বসল। লায়লা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। তিনি আইজার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন “আমার মেয়েটা দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গিয়েছে।”
আইজা একটু চুপ থেকে বলল “মা, তুমি আমার বিয়ের কথাবার্তা বলছ, অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধও করো নি? জিজ্ঞেস করা তো দূরের কথা।”
লায়লা বললেন “আরে মা! পাকাপাকি কোন কথা হয়নি। তুমি ছেলের সাথে আগে দেখা সাক্ষাত করে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে। তবে ছেলে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তার মেজাজ, আচার আচরণ একদম তোমার মতই। সে তোমাকে সুখী করবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
আইজা বলল “কারো সাথে দেখা করতে চাই না আমি। বিয়ের ব্যাপারে তুমি মানা করে দাও তোমার কলিগকে।”
লায়লা বললেন “কিন্তু আইজা, দেখা করতে সমস্যা কি? দেখা করে যদি পছন্দ না হয়, তখন মানা করে দিলে নাহয় বুঝতাম।
এছাড়া বিয়ে করবে কি করবে না, দেখা অন্তত করে নাও তার সাথে, তখন আমি বলে দিব যে তোমার ছেলে পছন্দ হয়নি। এমনিতেও দেখা না করলে আমি কি এক্সকিউজ দিয়ে মেহেরকে না করব? সে-ই বা কি ভাববে?”
আইজা বলল “সেটা তুমি বুঝো। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে এসব করতে আমি তো আর বলি নি তোমাকে।
এছাড়া এটা কেমন ধরনের কথা হলো! তার সাথে বিয়ে করবো না জেনেও কেন দেখা করতে যাব? এত সস্তা নাকি সবকিছু, আত্নসম্মানেরও একটা বিষয় আছে।”
এরপর একটু চুপ থেকে বিড়বিড় করে বলল “এছাড়া এই বিয়ে হবে না জেনেও যদি সে এটা অন্তত জানতে পায় আমি বিয়ের ব্যাপারে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, সে আমাকে হয়ত কিছুই করবে না, কিন্তু সেই ছেলেকে ঠিকই জমিনের একশ হাত নিচে পুঁতে ফেলবে।”
লায়লা একটু শুনার চেষ্টা করে বললেন “বিড়বিড় করে কি বলছো?!”
আইজা কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল “কিছুই না।”
লায়লা কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পর শান্ত ভঙ্গিতে বললেন “তোমার কি পছন্দের কেউ আছে, আইজা?”
আইজাও বেশ শান্ত স্বরে বলল “আমি এই বিষয়ে কথা বলতেই তোমার কাছে এসেছিলাম।”
লায়লা বললেন “হ্যাঁ, বলো তুমি। আমি শুনছি।”
আইজা বলল “আমি একজনকে ভালোবাসি, আর বিয়ে করলে শুধু তাকেই করব। আর এই বিষয়ে কেউ আমার সাথে জোরাজুরি করতে পারে না।”
লায়লা বললেন “বুঝলাম। তবে ছেলেটা কে?
তার সাথে দেখা কবে করাচ্ছ? তোমার সাথে তার বিয়ে দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করার আগে আমাদের আগে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে হবে। তাকে চিনতে হবে। তার সব দোষ গুণ জেনে এরপর বিচার বিবেচনা করে স্থির করতে হবে, সে তোমার জন্য রাইট চয়েজ কিনা। যদি আমাদের মনে হয়, পাত্র হিসেবে সে খারাপ না। তাহলে তার সাথে তোমার বিয়ের ব্যাপারে আমাদের হয়ত কোন আপত্তি থাকবে না।”
অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে আইজা বলল “তুমি সেই ছেলেটিকে জানো, মা।”
লায়লা বললেন “মানে, কে সে?”
আইজা বলল “আমান।”
এবার বেশ খানিকটা চমকে, উঠে বসে পড়লেন লায়লা, বলতে লাগলেন “কি বললে? আমান! আমাদের আমান?!”
আইজা বলল “হ্যাঁ।”
এরপর লায়লা একটু সময় নিয়ে বললেন “তুমি তাকে পছন্দ করো, ভালোবাসো, বিয়ে করতে চাও। সবই ঠিক আছে।
সেও তোমাকে ভালোবাসে নাকি সব একতরফা? কারণ আমানের জন্য আরো উঁচু উঁচু পরিবার থেকে আরো ভালো ভালো মেয়ের লাইন লেগে আছে। বুঝতে পারছ? সুতরাং এসব দিবাস্বপ্ন থেকে জেগে উঠে বাস্তব জীবনে ফিরে আসো।”
আইজা কপাল কুঁচকে বলল “আমানও আমাকে ভালোবাসে।”
লায়লা কিছুক্ষণ আইজার দিকে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ হালকা দুলিয়ে বলল “সেসব কিছু নাহয় বুঝলাম। তবে আমার মনে হয়, তোমরা দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। তোমাদের মানসিকতা, পছন্দ অপছন্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এত ডিফারেন্সেস নিয়ে একসাথে কাটিয়ে দিতে পারবে পুরো একটি জীবন?!”
আইজা বলল “যাদের পছন্দ অপছন্দের অনেক মিল, তাদের জন্য কি খুব সহজ, পুরো জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়া?
না, বরং ভালোবাসা, সম্মান আর বোঝাপড়া থাকলে খুব সহজেই জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।
কারণ একজনের পছন্দ আরেকজনের পছন্দের চেয়ে যতই ভিন্ন হোক, সে তাকে বুঝবে, তার পছন্দকে সম্মান করবে। আর তাকে ভালোবেসে তা মেনে নেবে।
একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে পছন্দ অপছন্দের মিল হওয়ার আগে মনের মিল হওয়া অপরিহার্য।”
লায়লা মুচকি হেসে বললেন “আমানের ভালোবাসা আমার পাগলি মেয়েটাকে দেখি অনেক জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলা শিখিয়ে দিয়েছে।”
এরপর একটু থেমে বলল “এমনিতে এখন কোথায় সে? সারাদিন তো দেখলাম না তাকে।”
এবার আইজা কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বলল “সকালের ঘটনার পর রেগে বাসা থেকে বের হয়েছিল এখনো ফিরে নি। আমি কত কল, মেসেজেস করছি। কোনটার রিপ্লাই নেই। আমার উপর খুব রেগে আছে নিশ্চয়ই।”
লায়লা বললেন “কিন্তু এতে তোমার তো কোনো দোষ ছিল না, তোমার উপর কেন রেগে গিয়েছে?”
আইজা বলল “সে আমাকে নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ।”
লায়লা একটু চুপ করে থেকে বললেন “আইজা দেখো, আমার মনে হয়, তোমার আরেকবার নিজের সিদ্ধান্তকে বিবেচনা করা উচিত। এমন পজেসিভ একটি মানুষের সাথে তুমি কি করে থাকবে?”
আইজা বলল “জানি না। তবে তাকে ছাড়াও আমি থাকতে পারবো না। ইন ফ্যাক্ট, তাকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব না। আমি মারা যাবো তাকে ছাড়া।
এছাড়া আমার সিদ্ধান্তকে দ্বিতীয়বার বিবেচনা করারও কোন অবকাশ নেই। ভালোবাসি আমি তাকে, এত বেশি যা ব্যাখ্যা করারও কোন ভাষা নেই আমার কাছে।
এমন তো নয়, মা; যে যারা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না, তাদের মনে কোন ভালোবাসাই নেই। এরপরও আমার না বলা ভালোবাসা হয়তো উপলব্ধি করা সহজ নয়, তা যতই গভীর হোক না কেন!”
এরপর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আইজা মেঝেতে অন্যমনস্ক দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে আমানকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।
লায়লা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর কিছুই বললেন না।
.
.
.
রাতে খাবার দাবারের পর সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর আইজা আর তার বাবা মা এমনিতেও চলে যাবে।
তখন সারাদিন পর কোথা থেকে যেন আমান এসে উপস্থিত হয় সেখানে। তার সাথে আনিসও ছিল। আনিস পরীর বিয়ে উপলক্ষে সেখানেই ছিল।
আমানকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মুখে রেহানা বললেন “আমান, সারাদিন বাইরে ছিলে, ভালো কথা। অনন্ত ফোন তো রিসিভ করে কথা বলতে পারতে। মা হই তোমার, সন্তানেরা যত বড় হয়ে যাক না কেন মায়েদের সর্বক্ষণের কাজ তাদের কথা চিন্তা করা।
আনিস যদি তোমার সাথে না থাকত আর তার সাথে আমার ফোনে কথা না হত আমি তো সারাদিন এভাবেই চিন্তায় অস্থির থাকতাম।”
আমান রেহানার কথা উপেক্ষা করে এসে সোফায় বসে সবাইকে হতভম্ব করে বলতে লাগল “আমি আইজাকে বিয়ে করতে চাই। যদি তার বিয়ে হয় আমার সাথেই হবে নাহয়, অন্য কারো সাথেও না।”
আমানের কথা শুনে সবাই হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল।
চলবে…
{ আজ রাত নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে পরবর্তী দুই পর্ব দিতে পারি। তবে দিবো যে তা নিশ্চিত না।। ধন্যবাদ ।। }