জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর #পর্ব_২৪

0
400

#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_২৪
#লেখিকা : #Kaynat_Ash

রায়হানের বাসায় ড্রয়িংরুমে একত্রে বসে সকলে কথা বলছেন।
লায়লা বললেন “পরীর বিয়ের সব প্রস্তুতি ভালোভাবে চলছে তো! কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের বলবেন অবশ্যই।”

রেহানা হাসিমুখে বললেন “ভালোই চলছে সব প্রস্তুতি। এছাড়া কিছু প্রয়োজন হলে আপনাদের বলব না তো আর কাকে বলব; পরিবার-ই তো আমরা।”

লায়লা বললেন “জ্বী।”
এরপর ফারুকের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন “আসলে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম। যদি কিছু মনে না করেন, আমরা বলতে পারি, কিছু বিষয়ে কথা?”

রায়হান রেহানা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করার পর রায়হান গম্ভীর গলায় বললেন “জ্বী বলুন।”

এতক্ষণ ফারুক মুখ কালো করে বসে ছিলেন, এবার তিনি বলতে লাগলেন “রায়হান ভাই, আমি আসলে আমান আর আইজার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলাম। আমি জানি, এদের দুজন একে অপরের জন্য হয়ত পারফেক্ট না, তবে আমাদের এটাও মাথায় রাখা উচিত, তারা একে অপরকে ভালবাসে। সুতরাং একে অপরকে ছাড়া তারা ভালো থাকতে পারবে না। আর বাবা মা হিসেবে আমাদের উচিত বাচ্চাদের সুখের ব্যাপারে কেবল চিন্তা করা।

এছাড়া আইজা! আমার মেয়ে আমার গর্ব। তাকে যে শিক্ষা দিয়ে আমি বড় করেছি, সে এই বাড়ির বউ হয়ে আসলে, আপনাদের কখনো নিজেদের সিদ্ধান্তে আফসোস করতে হবে না।”

রায়হান বললেন “আমিও ছোটবেলা থেকেই চিনি আইজাকে। সুতরাং আপনি না বললেও আমি ভালো করেই জানি, আমাদের আইজার মত ভালো মেয়ে দ্বিতীয়টা হয় না।”

ফারুক বললেন “তাহলে এই বিয়ের ব্যাপারে আপনারা কি ভেবেছেন, বা কি সিন্ধান্ত নিয়েছেন?”

রায়হান কিছু বলার আগেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে আসতে আমান বলল “এখানে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কি আছে, আমার আর আইজার বিয়ে হচ্ছে, এটা তো অনেক আগে থেকেই স্থির। আর এখন তো মিষ্টি আনানোর সময়। সবার মিষ্টি মুখ করতে, এত খুশির খবর এভাবে শুকনো মুখে শোনা আর শোনানো কি ঠিক হচ্ছে। কি বলেন, বাবা!!”

আমান সোফায় এসে বসে নিজের কথা সম্পূর্ণ করলো।

রায়হান আমানের দিকে তাকিয়ে বললেন “আমি এই বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমান। আর নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানাতে আমি নিজেই আইজার বাবা মাকে খবর দিতাম। কিন্তু ভালো-ই হয়েছে তারা নিজেরাই চলে এসেছেন।”

ফারুক লায়লা বেশ চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন।

আমান বেশ শান্ত, স্বাভাবিক এবং নিশ্চিন্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন “আর কি সেই সিদ্ধান্ত?!”

রায়হান আবারও ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললেন “আপনার বাড়ির মেয়ে এখন থেকে আমার বাড়ির ইজ্জত। তাকে এই বাড়ির বউ হিসেবে গ্রহণ করতে আমার আর রেহানার কোন আপত্তি নেই।

এছাড়া আমি আর রেহানা এটাও ঠিক করেছি, পরীর বিয়ের আগেই কোন একদিন আপনাদের বাসায় গিয়ে আইজাকে আংটি পরিয়ে আসা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটা ঘোষণা করতে যে এখন থেকে তার সম্পর্ক সরাসরি এই বাড়ির সাথে। এই বাড়ির আমানত সে।”

এই কথা শুনে আমান বেশ উৎফুল্ল হলো। ঠোঁটে হাসি টেনে রেহানার দিকে তাকালো সে।

রেহানা বললেন “তোমার মুখের এই হাসির জন্য আমরা সব করতে পারি, বাবা।”

রায়হানও মুখে হাসি ছড়িয়ে বসে রইলেন। আমান তার বাবাকে ধন্যবাদ বলে উপরে তার রুমে চলে গেল আবার।

এদিকে লায়লা আর ফারুকও খুশিতে দিশেহারা। রায়হান মিষ্টি আনিয়ে সবার মিষ্টি মুখ করালেন। এ যেন এই বাড়িতে খুশি দ্বিগুণ বেড়ে গেল।

কয়েকদিন পর আমানের পরিবার এসে আইজাকে আংটি পরিয়ে দিয়ে যায়। প্রথম দিকে যদিও কেউ তেমন একটা রাজি ছিল না, তবে এখন আমান আর আইজার পরিবারের সবাই-ই খুবই খুশি এই বিয়েতে।

.
.
.

এ্যাংগেইজমেন্টের দিন আইজা আর আমান আইজার বাসার ছাদে বসে কথা বলছিল।

আইজা আমানের দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল “আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না; সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তুমি আমার বাগদত্তা! সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে।”

আমান আইজার হাত নিজের হাতে নিয়ে তার আংগুলের আংটিটি স্পর্শ করে বলল “আজ আমার নামের আংটি কেবল পরিয়েছি তোমাকে। আর কিছুদিন পর কালেমা পড়ে কবুল বলে, আমার করে নিয়ে যাব এই বাড়ি থেকে।”

একটু হাসার চেষ্টা করে আইজা বলল “জীবনে কোন কিছুই এত সহজে পাই নি আমি। এজন্য ভয় করছে; কেন ভয় করছে, জানি না। তবে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে শান্তি পেতাম।”

আমান বলল “কি ভয় পাচ্ছো, যে আমি বিয়ে করবো না তোমাকে?! সবার সাথে যুদ্ধ করে এজন্য রাজি করিয়েছি!”

আইজা ব্যস্ত হয়ে ব্যাখ্যার স্বরে বলল “আমি এমনটা কখন বললাম! সবকিছু এত সহজে হয়ে যাচ্ছে, এজন্য হয়ত একটু ভয় কাজ করছিল। কিন্তু যাই হোক, এখন আর ভয় পাবো না। কারণ আমি জানি, আমার আমান আমার সাথে থাকতে, খারাপ কিছু কখনো ঘটতে দিবে না।”

আমান বলল “আচ্ছা! আমার উপর এত বিশ্বাস?!”

আইজা বলল “হুম, অনেক। এছাড়া যে ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই, সেই ভালোবাসা অর্থহীন।”
এরপর একটু থেমে বলল “তো চলো, এখন নিচে যাওয়া যাক।”

আমান মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে, একে অপরের হাত ধরে নিচে নেমে গেল।”

চলবে…

{ এতদিন যাদের তিথিকে নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন ছিল আগামীকালের পর্বে তার সম্পর্কে মোটামুটি জানতে পারবেন, যা আগেই বলেছিলাম গল্পের সেকেন্ড হাফে তিথি সম্পর্কে জানা যাবে। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here