#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_২
#লেখিকা: #Kaynat_Ash
আনিস যাওয়ার পর আইজা আমানের পাশে বসে বলল “কি হয়েছে!”
আমান আইজার হাত নিজের দুহাতের মুঠিতে ভরে নরম কন্ঠে বলল “তোমার কি হয়েছে, আইজা?!”
আইজা নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল “আমান প্লিজ, তুমি অতীত খুঁড়তে যেও না। যেটা যেভাবে চলছে, চলতে দাও। একবার বিয়ে হয়ে গেলে এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও এখন তোমার এমনটিই মনে হচ্ছে যে কিছু একটা হয়ত ঠিক নেই।”
আমান বলল “কিছু একটা ঠিক নেই, আর আমি সেটা ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছি।”
আইজা আমান অল্পক্ষণ নীরব থেকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল কেবল।
এরপর এক পর্যায়ে আইজা দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল “তুমি আর তোমার অনুভূতি! দুইটাই আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়।”
আমান করুণ দৃষ্টিতে আইজার দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর আইজা উঠে দাঁড়ালো এবং বলল “আমান, অনেকক্ষণ হয়েছে আমরা এখানে বসে আছি, নিচে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
আমান বলল “তুমি যাও। আমি পরে খেয়ে নিব। এছাড়া সবার সাথে বসে খাবার ইচ্ছাও আমার নেই।”
আইজা বলল “আমান! নিচে শুধু তোমার পরিবার না, আমার পরিবারের সদস্যরাও বসে তোমার অপেক্ষা করছে। তুমি কি তাদের এটাই বুঝাতে চাও যে এই বিয়েতে তুমি খুশি নও, এক প্রকার দায়বদ্ধতা আর জিদ থেকেই করছ এই বিয়ে?!”
আমান কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল “এমন কিছুই নেই, আইজা। তোমার সেটা ভালোভাবে বুঝে নেয়া উচিত।”
আইজা কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে টেনে বলল ” ঠিক আছে, বুঝলাম আমি, তুমি যা বুঝাতে চাও, তাই বুঝলাম।
কিন্তু আমার পরিবার যদি কোন বিষয় নিয়ে ভুল বুঝে থাকে, আমি তোমাকে জানিয়ে দেই, একদম ভালো হবে না, আমান!
এমনিতেই আমার কারণে এর আগেও আমার পরিবারকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে।
এখন তুমি অন্তত এমন কিছু করো না যাতে তাদের নূন্যতম কোন কষ্ট হয়। আশা করি, আমার কথা বুঝতে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”
আমান দাঁতে দাঁত চেপে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল ” সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এখন নিচে যাওয়া উচিত। যদি আর কিছু বলার না থাকে!”
এরপর কেউ আর কিছুই বলল না, নিঃশব্দে নিচে নেমে গেল।
.
.
.
খাবার টেবিলে সবাই খাওয়া শুরু করেছে কেবল, তখন আমান বাড়ির ভৃত্য নাদিয়াকে ডেকে বলল, তার জন্য আলাদা প্রস্তুতকৃত প্লেইন রাইস নিয়ে আসতে।
সবাই আমানের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিথি মাথা নিচু করে বসে চামচ দিয়ে খাবার নাড়া চাড়া করছে কেবল, হৃদয়ের গভীর থেকে বের হয়ে আসা বাঁধ ভাঙা অশ্রু, মানুষ থেকে আড়াল করার যুদ্ধ যে তার প্রতিনিয়ত করে যেতে হয়।
আইজা এক নজর তিথিকে দেখে নিল। এরপর সে চামচ দিয়ে খাবার তুলে মুখে দিতে দিতে বলল “কেন আমান, আমরা যে খাবার খাচ্ছি, সেটা খেলে কি সমস্যা! বিষ তো নিশ্চয়ই নেই এই খাবারে?! এছাড়া আমরা সবাই এই খাবার-ই খাচ্ছি। তবে তুমি খেলে সমস্যা কি?”
রেহানা হাসি মুখে ব্যাখ্যার স্বরে বললেন “আসলে আমান এত হেভি ফুড খায় না খুব একটা। সেজন্যই আর কি!”
আইজা বলল ” সমস্যা নেই, একদিন নাহয় আমাদের সাথে এসব হেভি ফুড-ই খেলে।
এছাড়া আমার তো এসব হেভি ফুড-ই বেশি পছন্দ। আমাদের মাঝে এত অমিল, এরপরও বিয়ের মত একটা গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ হতে যাচ্ছি দুজনে। মাঝে মধ্যে চিন্তা করি, কিসের ভিত্তিতে আমাদের এই সম্পর্ক ওয়ার্ক আউট করবে! আগের ভিত্তিও তো এখন আর নেই।”
আইজার কথা শুনে একটি অস্থায়ী নীরবতা নেমে এলো পুরো ডাইনিং টেবিলে।
যদিও আমানের মেজাজ অতিরিক্ত গরম হচ্ছে কিন্তু মুখে সে কিছুই বলে নি।
খাওয়া দাওয়ার পর অল্পক্ষণ বসে কথাবার্তা বলে আইজা আর তার পরিবার চলে যায়।
.
.
.
রাত প্রায় একটা বেজে গিয়েছে, আইজা তার রুমে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়েছিল স্থির দৃষ্টিতে।
এমন সময় লায়লা প্রবেশ করলেন তার রুমে। সে তার নিজস্ব চিন্তায় এতটা ডুবে ছিল যে লায়লার উপস্থিতি খেয়ালই করে নি।
লায়লা গিয়ে আইজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল “ঘুম নিশ্চয়ই আসছে না, আমার বার্বি ডলের!”
আইজা এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল “মা, তুমি কখন এলে?! আর তোমাকে কতবার বলেছি, আমাকে বার্বি ডল ডাকবে না। আমি পুতুল নই।”
লায়লা বললেন “আমি জানি, আমার মেয়ে হচ্ছে, যোদ্ধা। পুতুল টাইপস মেয়ে নয়। কিন্তু বাবা মায়ের কাছে তো মেয়েরা সবসময়ই পুতুলের মতই। যাই হোক, তুমি যেহেতু পছন্দ করো না, আর ডাকব না।”
এরপর একটু থেমে বললেন “আচ্ছা, এবার কি আমি জানতে পারি, আমার মেয়েটার ঘুম আসছে না কেন?”
আইজা বলল “মা, কিছুই হয়নি। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আগামীকাল তো আবার তোমাকে অফিসেও যেতে হবে।
এরপর একটু থেমে বলল “এমনিতে অফিস থেকে তুমি ছুটি নিচ্ছ কবে?”
লায়লা একটু হাসি দিয়ে বললেন “আগামীকালই ছুটির আবেদন করব।
আগামীকাল থেকেই।”
আইজা মাথা নেড়ে বলল “আচ্ছা।”
এরপর একটু থেমে বলল “রাত তো অনেক হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ো তুমি। নাহলে তোমার আবার অফিসে যেতে সমস্যা হবে!
লায়লা আইজাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন “আমার মেয়েটার মনে যে অনেকের প্রতি অনেক অভিমান জমে আছে, তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারি।
আমি এটাও জানি, হয়ত মা হিসেবে ছোটবেলা থেকে তোমাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারি নি বলে আমার প্রতিও তোমার অভিমান…”
এই পর্যায়ে লায়লাকে থামিয়ে দিয়ে আইজা বলল “মা, এমন কিছুই নেই। আমার মনে কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আর তুমি আমার মা, তোমার প্রতি তো চাইলেও কোন অভিযোগ করতে পারব না।”
লায়লা বললেন “এমনই যদি হয়ে থাকে, তবে ঘুম আসছিল না কেন এতক্ষন? কি ভেবে এত হয়রান পেরেশান হচ্ছ! আমি রুমে এসেছি টেরও পাও নি, কোন চিন্তায় এত মগ্ন ছিলে, শুনি!”
আইজা দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
লায়লা বললেন “এভাবেই চুপ করে থাকবে? কোন কথা বলবে না আমার সাথে!”
চলবে…
{ গল্পটি কেমন লাগছে কমেন্টে জানাবেন।। ধন্যবাদ।। }