#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_২৫
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
তিথির বোন তিশা তিথিকে সামলাতে পারছে না। তিথি কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমান আমার সাথে কীভাবে এমন করতে পারল! সবসময় তার আশেপাশে থেকেছি তার ছায়া হয়ে। ভার্সিটির সবাই তো এটাই ভাবত যে, যে মেয়েটির কথা সে সবসময় বলে তার গার্লফ্রেন্ড, যাকে সে ভালোবাসে; সে হয়ত আমিই। অথচ সে মেয়ে কিনা ওই আইজা।
তুই জানিস, আমিও মাঝে মধ্যে এটাই ভাবতাম, হয়ত আমান আমার কথাই বোঝায়। এছাড়া আমরা কত ঘনিষ্ঠ ছিলাম, সে আমার সাথে ফ্লার্টিং-ও তো কম করত না। সেই সবকিছু কি ভালোবাসা ছিল না কখনো?!”
তিশা, তিথির টুইন সিস্টার, সে বলল “তিথি; আমান এমন হাজারটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করত যারা সবসময় তার সামনে পেছনে ঘুরত, আর এই বিষয়ে আইজা সহ সবাই জানত। সেসব মেয়েরা কি কখনো এমনটা ভেবেছে, যে সে তাদের সাথে কমিটেড, তাহলে তুই এমনটা ভাবতে গিয়েছিস কেন!”
তিথি বলল “আমি আর অন্য সব মেয়ে এক নই, তিশা।”
তিশা বলল “ঠিক আছে। এবার এটা বল, আমান কি কখনো তোকে বলেছে সে তোকে ভালবাসে? কোন কমিটমেন্ট করেছে তোর সাথে?! করে নি তো! তবে তার এ্যাংগেইজমেন্টের খবর শুনে এমন পাগলামি করছিস কেন যেন আমান সবসময় তোর ছিল, হঠাৎ অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে।”
তিথি পাগলের মত কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমান আমাকে ভালো না বাসুক। আমি ভালোবাসি তাকে। এত বেশি যে তুই কল্পনা করতে পারবি না, আমান কল্পনা করতে পারবে না, কেউই কল্পনা করতে পারবে না। তাকে আমার চাই, তিশা।
প্রয়োজনে আইজার সতীন হতে প্রস্তুত আমি।”
তিশা আঁতকে উঠে বলল “কিসব পাগলামো কথাবার্তা বলছিস। থাম এবার। আবেগের বশে, রাগের মাথায় বলছিস এসব, এরপরও কেউ যদি তা শুনে নেয় , কি ঘটবে বুঝতে পারছিস?!”
তিথি চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে বলল “আমি রাগের মাথায় বলছি না। আমার আমানকে চাই, যে করেই হোক। তাকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাকে ছাড়া সত্যিই আমি বাঁচতে পারব না, আমাকে বুঝতে চেষ্টা করছিস না কেন! এছাড়া আমার ভালোবাসা কোন পর্যায়ের হলে আমার মত একজন মেয়ে কারো সতীন হওয়ার ব্যাপারে ভাবতেও পারে, এটা তুই বুঝতে পারছিস না?!
এক হলে আইজাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে তার স্থান আমি নেব, নাহলে আইজা তার স্থানেই থাকুক। আমি কেবল ক্ষুদ্র একটি স্থান হলেও চাই আমানের জীবনে, এমনকি দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়ার মত একটি বিষয়ও মেনে নিতে প্রস্তুত।
আর এগুলোর কোনটাই যদি না হয়, তবে আমি আত্নহত্যা করব, শেষ করে দিব নিজেকে।”
তিশা স্তম্ভিত হয়ে গেল তিথির কথায়। সে কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। তবু সে কোন মতে মুখ ফুটে বলল “কি বললি তুই? আত্নহত্যা করবি?!
আমি বুঝতে পারছি না, তোকে আমার কি বলা উচিত, নিজের স্বাভাবিক চিন্তাচেতনা হারিয়ে ফেলেছিস তুই।
দেখ, নিজেকে একটু সময় দে। দেখবি তাকে সহজে ভুলে যেতে পারবি তুই। অল্প একটু সময় দে প্লিজ।”
তিথি বলল “সারাজীবন সময় দিলেও তা সম্ভব কিনা আমি জানিনা। এছাড়া আমি নিজেও তাকে ভুলতে চাই না। আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা সে।”
তিশা তাচ্ছিল্যের সাথে মাথা নেড়ে বলল “শুধুই তোর ভালোবাসা নয়, তোর পাগলামি লেভেলের জিদ সে, যাকে পাওয়ার জন্য নিজের জীবনকেও তোর তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, তোর এই মনোভাব!”
তিথি বেশ নির্লিপ্তভাবে বলল “তুই আমার সাহায্য করবি কিনা বল। নাহলে আমি ভুল কোন পদক্ষেপ নিয়ে নিলে তখন আমাকে দোষ দিতে পারবি না।”
তিশার মেজাজ যদিও খারাপ হচ্ছে তবে সে বেশ শান্তভাবেই বলল “আমাকে একটু সময় দে। আমি চিন্তা করে দেখি এর কোন সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় কিনা।”
তিথি বলল ” যা করার তাড়াতাড়ি কর। পরীর বিয়ের পর পরই আমানের বিয়ে, আমি চাই, আমানের বিয়েটা যাতে এখনই না হয়। এখনের জন্য, তার বিয়েটা ভেঙে গেলে সবচেয়ে ভালো হবে।”
তিথির অবস্থা দেখে তিশা চুপ করে ভাবতে লাগলো কি করা যায়! নিজের বোন এবং বোনের জিদ সম্পর্কে তার ভালোভাবেই ধারণা আছে।
.
.
.
তিশা তার ফার্স্ট কাজিন রাজিবের সাথে একটা ক্যাফেতে বসে কথা বলছে। বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে সে বলল “তুমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, তাই তোমাকে সব খুলে বললাম। এছাড়া আর কাউকে বলতেও পারছিলাম না আমি। আর এই কথা নিজের মধ্যে আটকে রাখতে রাখতে হয়ত দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম আমি। কি অবিশ্বাস্য কথাবার্তা!”
রাজিব বলল “আমানের বিয়ে অলরেডি ঠিক হয়ে গিয়েছে, এই বিষয়টি জেনেও তিথি তার পেছনে অযথা নিজের সময় নষ্ট করছে কেন?!
এমনিতেও এই আমানকে আমার একদম অসহ্য লাগে। কি আছে তার মধ্যে এমন?!”
তিশা বলল “সে সবদিক দিয়ে তোমার চেয়ে অনেক বেশি পারফেক্ট, এটাই নিশ্চয়ই একমাত্র কারণ তাকে এত অসহ্য লাগার?!”
রাজিব কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল “বাদ দাও সেসব কথা।
এখন এটা বলো, তুমি কি চিন্তা করলে যে কি করবে এখন?! আর তিথিই বা এই কি পাগলামি শুরু করল!”
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সম্পূর্ণ অন্য এক প্রসঙ্গে গিয়ে বেশ শান্ত স্বরে তিশা বলতে লাগলো “একটা কথা জানো?!
মানুষের মৌলিক সব চাহিদা যতদিন না পূরণ হয়, তাদের মাথায় সবসময় এই চিন্তাই ঘুরতে থাকে যে কীভাবে তাদের সব চাহিদা পূরণ হবে। তখন অযথা কোন বিষয় তাদের মাথায় আনার সময় তারা পায় না।
কিন্তু আস্তে আস্তে যখন সমস্ত চাহিদা পূরণ হয়ে তার জীবন যাত্রার মান উন্নত হতে থাকে, সে চেষ্টা করে নিজের সমস্ত শখ পূরণের; যা খারাপ কিছুও না, বলতে গেলে।
কিন্তু বিষয়টি এখানে থেমে থাকলেও হতো, আস্তে আস্তে তার সমস্ত শখ পূরণ হওয়াকে সে নিজের অধিকার ভাবতে থাকে, তার এসব শখ তখন কেবল শখে সীমাবদ্ধ থাকে না, তা সময় অসময়ে জিদে পরিণত হতে থাকে। আর মাঝে মধ্যে এসব জিদ পাগলামিতে রূপ নেয়। এজন্যই তুমি দেখে থাকবে, মাঝে মধ্যেই এসব ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা এমন কোন কান্ড বাঁধিয়ে বসে থাকে যা সাধারণ ঘরের কোনো ছেলেমেয়েদের পক্ষে ভাবাও সম্ভব হয় না।”
রাজিব একটু গম্ভীর হয়ে বলল “যে দার্শনিকের গ্রন্থ থেকেই এটি পড়ে থাকো, ভালো কথাই লিখেছে। তবে এখন এসব ছাড়ো। আর এটা বলো যে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছ তুমি, তাকে বুঝাবে কীভাবে?”
তিশা বলল “এখানে বুঝানোর কিছুই নেই। আইজার সাথে আমানের বিয়ে ভাঙানোর জন্য আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। নাহলে আমি আমার বোনকে হারাব। আমি জানি, আমানকে না পেলে সে সত্যিই আত্নহত্যা করবে। সে এখন যদিও আইজার সতীন হয়েও আমানকে বিয়ে করতে প্রস্তুত আছে, তবে আমি জানি, সে পারবে না কারো সতীন হয়েও বাঁচতে। তাই তার খুশির জন্যই আমাকে এমন কিছু ভাবতে হবে, যে আইজার সাথে আমানের বিয়েটাও ভেঙে যাবে। এবং তিথির সাথেও যেন তা হয়ে যায়।”
রাজিব বলল “এত সহজ মনে হয় তোমার কাছে সবকিছু? এর পরিণাম কি হতে পারে তোমাদের দুই বোনের কোন ধারণা আছে?! আমান যদি এই বিষয়ে কিছু টের পায়, সে কি করবে, ভাবতে পারছ? খুন করবে তোমাদের।”
বেশ খানিকটা ভয় পেয়ে তিশা বলল “তাহলে আমি কি করব, বলো?! আমি জানি তো তিথিকে। সে আমানকে না পেলে নির্ঘাত আত্নহত্যা করবে। আমি তাকে মারা যেতে দিব তার জিদের জন্য?! এই বিষয়ে কাউকে বলতেও পারছি না। জানো তো, বাবার হার্টের সমস্যা আছে, অপারেশনও হয়েছে কয়েকবার। তিনি কিছু জানতে পারলে…। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।”
রাজিব বলল “এসব কথা তো তিথির ভাবা উচিত। অথচ সে-ই এসব পাগলামি করছে। এর পরিণাম কি হতে পারে, সে জানে না?!”
তিশা বলল “সব জানে। তার নিজেরও ধারণা আছে যে আমান এই বিষয়ে ঘূর্ণাক্ষরেও যদি টের পায়, তবে কেয়ামত হবে।”
এরপর একটু থেমে মন খারাপ করে বলল “তবে জানো কি, আমরা কোন বিষয়ের ভয়াবহতা যদিও জানি কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত তা অনুধাবন করতে পারি না, উপলব্ধি করতে পারি না, যতক্ষণ না প্রেকটিকেললি তা আমাদের সাথে ঘটছে। যখন ঘটে তখন বুঝা যায়, কতটা জঘন্য ছিল আমাদের সিদ্ধান্ত, আমাদের কর্মকাণ্ড, যার ফলে পরিণতি এতটা করুণ হচ্ছে।
যেমন দেখো, যারা বিশ্বাস করে, তারা ঠিকই জানে, একদিন না একদিন কেয়ামত হবে, হাশরের মাঠে আমাদের সবার দাঁড়াতে হবে, এরপরও কি তাদের খারাপ কাজ থেমে আছে? একদমই না। অথচ একদিন সেই মাঠে দাঁড়িয়ে একসময় আমরাই আফসোস করে মরব, অনুরোধ করব, আমাদের আর একটা সুযোগ দিতে, আর একবার পৃথিবীতে পাঠাতে যাতে আমাদের আমলনামা ঠিক করতে পারি।
আমি এত কথা বলছি, কিন্তু আমি নিজেও জ্ঞানপাপী, সব জেনেও হাজারটা গুনাহ করছি, আসলে নিজের নফস কে বেশি ফিড করালে, তা হয়ত এভাবেই নিজেদের কন্ট্রোল থেকে বের হয়ে যায়। তখন নফসের গোলামী করতে থাকে মানুষ, অথচ স্রষ্টার দাসত্ব করতে আবার আমাদের অনেক সমস্যা। আজব না বিষয়টি?!”
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে যেন বলে চলেছিল তিথি এসব কথা। এরপর সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল “যাই হোক, বাদ দাও এখন সেসব কথা।
আর যতদূর তিথির প্রশ্ন, আমি আর কি বলব! কাউকে কিছু বুঝালেও কি লাভ হবে, সে যদি এর ভয়াবহতা নিজ থেকেই বুঝতে না চায়।
এছাড়া তিথি অনেক বেশি কনফিডেন্ট যে আমান বা অন্য কেউ, কখনো কিছুই জানতে পারবে না এসব বিষয়ে।
এছাড়া এমনও তো হতে পারে, যে আসলেও কেউ কিছুই জানবে না কখনো। এমন অনেক সত্যই তো মাটি চাপা পড়ে যায়। এবং সময়ের সাথে সাথে কেবল বিলিন হয়ে যায়। আমাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তবে সত্যিই কেউ কিছুই জানতে পারবে কখনো।”
রাজিব বলল “সেসব কিছু তো ঠিক আছে। তবে পরিকল্পনা কি তোমাদের?!”
তিশা বলল “জানি না, তবে তিথির মাথায় কিছু একটা চলছে। আর সেটা যাই হোক, আমি তার সাহায্য করব।”
রাজিব একটু ভেবে নিয়ে বলল “ওই আমানের জীবনে ঝড় আসতে চলেছে, এটা ভেবেই আমি খুশি। কোন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে পারো।”
তিশা বলল “আমি জানতাম, তোমাকে বললে কোন ক্ষতি তো নেই-ই বরং উপকার হবে।”
রাজিব বলল “আমরা এত ভালো বন্ধু। এই বন্ধুত্ব কবে কাজে লাগবে?!”
তিশা ছোট করে হেসে সম্মতি জানালো।
.
.
.
পরীর বিয়ে উপলক্ষে সব আত্নীয় স্বজন আমান-দের বাসায় এসে উঠেছে। রায়হান রেহানার নিমন্ত্রণে জয়নুল আর ফারুকও তাদের পরিবার নিয়ে কিছুদিনের জন্য আমান-দের বাসায় থাকতে আসে। বাড়ির মেয়ের বিয়ে হাজার রকমের কাজ, হাজার রকমের ঝামেলা। আর রায়হান সবকিছুই পারফেক্ট চান।
যাই হোক, সবাই একত্র হয়েছে, খুব মজা করছে সবাই একসাথে।
কিন্তু আইজা সবার থেকে দূরত্ব রেখে চলছে, তার মা ছোট বেলা থেকেই তাকে এই ধরনের গেদারিং থেকে দূরে রেখেছে, ছোটবেলা থেকেই একা থাকাটা তার নিজেরও পছন্দ।
আমানের সাথেই যা টুকটাক দেখা সাক্ষাত, কথাবার্তা হয় তার। এছাড়া বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন কাজে তার মা বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত রাখে তাকে। মাঝে মধ্যে খুব বিরক্ত লাগে তার। এত মানুষ থাকতে তাকেই কেন এসব কাজ করতে হবে।
.
.
.
তিথি তার বোন তিশাকে তার রুমে ডেকে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর তাকে বিছানায় বসিয়ে বলল “রাজিবও আমানের বাসায় অর্থাৎ এখানেই থাকছে! তোকে আজ দেখলাম তার সাথে বসে কথা বলছিলি।”
তিশা বলল “হ্যাঁ, তো কি হয়েছে?!”
তিথি বলল “এমনিতেও সেই ছেলে একটা বদের হাড্ডি। খুব বাজে স্বভাব চরিত্রের। এছাড়া আমানও তার এসবের কারণে তাকে খুব একটা পছন্দও করে না।”
তিশা বিরক্ত হয়ে বলল “এসব শুনানোর জন্য এখানে ডেকে এনেছিস?!”
এবার একটু থেমে তিথি বলল “না। আসলে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে আমান আর আইজা তো আলাদা হওয়াটা সময়ের ব্যাপার। আর এমনভাবে আলাদা হবে যে একে অপরের চেহারাও দেখবে না।”
তিশা সসংকোচে বলল “আর তা কীভাবে?!”
তখন তিথি তাকে পুরো পরিকল্পনাটি শুনায়। এটা শুনার পর তিশা আঁতকে উঠে বলল “অসম্ভব, আমি এসবে নেই। তুই কি সত্যিই পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিস।
এছাড়া আমান যদি এসব বিষয়ে কিছু জেনে যায়?!
অসম্ভব। এমন কিছু আমি নিজেও করব না, তোকেও করতে দিব না।”
তিথি রেগে বলল “অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।
এছাড়া এসবে নেমে নীতি নৈতিকতার বাঁশি বাজানোরও কোন মানে হয় না।
এমনিতেও এছাড়া আর কি করতে পারি আমরা! আমান আর আইজাকে গিয়ে বলব, যে আমি তোমার স্ত্রী হতে চাই, আর তোমার সতীন। আর তারাও হাসিমুখে বরণ করে নিবে আমায়?! গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে?!”
তিশা বলল “যেটা কখনো কোন মেয়ে করতে পারত না, তুই সেটা এত খুশি হয়ে করছিস! কোন মেয়ের জন্য, কারো সতীন হওয়া এত সহজ, এত খুশির?!”
তিথি বলল “আচ্ছা, দুইটা বিয়ের অনুমতি আইনও দেয়, ধর্মও। এর বৈধতাও আছে। আর কোন মেয়ে খুশি মনে এতে রাজি হলে তোদের মত মানুষগুলোর এত সমস্যা হয় কেন?! এছাড়া কারো সতীন হতে আমি নিজেও রাজি না এখন। আমি যে পরিকল্পনা করেছি, তা সফল হলে আমানের একমাত্র স্ত্রী কেবল আমিই হবো, বুঝতে পেরেছিস।
এজন্যই বলছি, সাহায্য কর আমাকে। এছাড়া তুই কথা দিয়েছিলি, আমার সাহায্য করবি, সুতরাং এখন পিছপা হতে পারিস না।”
ভয়ে ভয়ে তিশা বলল “আমি পিছপা হচ্ছি না। কেবল ভয় পাচ্ছি। আমান যদি কখনো এসব সম্পর্কে জানতে পারে?!”
তিথি বলল “উফ, এক কথা একশ বার কেন বলতে হচ্ছে?! বললাম তো, সে কখনো কিছুই জানতে পারবে না। ট্রাস্ট মি।
এছাড়া এসবে রাজিবের সাহায্যও লাগবে। তার সাথে কথা বল। আমাদের সাহায্য করতে সে রাজি হবে, আমি জানি। কারণ সে ঘৃণা করে আমানকে। আর তার ক্ষতি করতে সে যেকোনো কিছু করতে পারে। অন্য কিছু না হোক কিন্তু আমানের জীবন থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নেয়ার মত বড় শাস্তি তার জন্য আর কি হতে পারে, এটা অন্তত ভেবে সে আমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত হবে!”
মৃদু মাথা নেড়ে চিন্তিত মুখে সম্মতি জানালো তিশা।
.
.
.
সেদিন ছাদে আইজা আর আমান সেই একই দোলনায় বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখছিল।
যদিও এসব পূর্ণিমার চাঁদ দেখার ব্যাপারে তাদের দুজনের মধ্য থেকে কারোই আগ্রহ ছিল না, এরপরও তাদের এখানে আসা মূলত একে অপরের সাথে দেখা করা।
আইজা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল “আজকের চাঁদটা একটু বেশিই আলো ছড়াচ্ছে, মনে হচ্ছে।”
আমান বলল “অথবা তোমার কাছেই কেবল এমন মনে হচ্ছে।”
আইজা এবার আমানের দিকে ফিরে বলল “শুধু আমার কাছেই কেন মনে হবে?!”
আমান বলল “শুনেছি, প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে স্বাভাবিক পরিবেশকেও স্বর্গীয় মনে হয়। আর প্রিয়জনের বিরহে সর্গীয় সুখে থাকলেও তা জাহান্নামের আগুনের মতো মনে হয়।”
আইজা হেসে বলল “আমাকে ভালোবাসার পর থেকে দেখি তুমিও বেশ কাব্যিক কথাবার্তা শুরু করেছ! ভালোবাসা কি মানুষকে কাব্যিকও বানিয়ে দেয়!”
আমান বলল “হয়ত। ভালোবাসা মানুষকে বুদ্ধিমান প্রাণী ছাড়া বাকি সবকিছু বানিয়ে দেয়। ভালোবাসায় মানুষ যেসব বোকামি গুলো করে, স্বাভাবিক অবস্থায় তা করার ব্যাপারে হয়ত ভাবতেও পারে না।”
আইজা ঠোঁটে হাসি ছড়িয়ে আমানের দিকে তাকালো। এরপর বলল “হুম, হতে পারে। আমরা দুজনের একে অপরকে ভালোবাসা কি তার উদাহরণ নয়!”
আমান একটু গম্ভীর হয়ে বলল “কোন কারণে আমাকে কি তোমার নিজের যোগ্য বলে মনে হয় না?!”
আইজা অল্প একটু ভ্রু কুঁচকে বলল “এমনটা মনে হওয়ার কোন কারণ?! এছাড়া যোগ্য হয়ত আমি না তোমার জন্য; তোমার পরিবারের মত অন্য সবাইও হয়ত এটাই ভাবে। এখন তোমারও এমন মনে হচ্ছে না তো আবার?!”
কথাটি উপহাস করেই বলল আইজা।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে আমান বলল “এখন আমাদের উঠা উচিত, এমনিতেও রাত হয়েছে।
তবে আরেকটি কথা তুমি ভালোভাবে বুঝে নাও, এই ধরনের ফালতু কথা আমার সাথে বলতে এসো না আর কখনো।”
আইজা বলল “শুরু আমি করিনি।”
আমান আইজার দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল “উঠো এখন।”
আইজাও উঠে আমানের হাত ধরে বলল “চলো।”
আমান আস্তে তার হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আইজা আরো শক্ত করে ধরে বলল “এই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করবে না কখনো। নাহলে খুন করব তোমাকে।”
আমান আর সেই চেষ্টা না করে মুচকি হেসে বলল “আমার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও মারা মরার কথা বলা শুরু করেছ! বিয়ের আগেই স্বামীর রঙে রঙিন হতে শুরু করেছ দেখছি।”
আইজা খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল “তোমার মত এই টাইপের মানুষ কখনো হতে পারব না আমি।
এছাড়া ঠিকই বলেছ, মানুষের সঙ্গ তো ইনফ্লুয়েন্সিয়ালই বটে। তবে আমিও একজন শিক্ষিতা মেয়ে; বিয়ের পরেও নিজের স্বকীয়তা ঠিকই বজায় রাখতে পারব। বুঝতে পেরেছ?!”
আমান বলল “বিয়ের পরেরটা তো বিয়ের পরেই দেখা যাবে।”
আইজা বলল “হুম। দেখা যাবে।
এছাড়া জানো, এখন থেকেই আমি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছি যে কীভাবে সাজবো, কোথা থেকে বিয়ের ড্রেস কিনব, বিয়ের আয়োজনের ব্যাপারে সব আমার পছন্দ মতো হবে। আর মাথায় যে আরো কত শত প্ল্যান ঘুরছে, তোমাকে বুঝাতে পারব না।
সবকিছু সত্যিই স্বপ্নের মত মনে হয়। নাহয় তুমিই বলো, কয়জনের ভাগ্যে ভালোবাসার মানুষটির সাথেই বিয়ে লেখা থাকে! বেশিরভাগ এক হলে প্রতারক বের হয়, আর নাহয় ভাগ্য অন্য কিছুই লিখে রাখে।”
আমান ঠোঁটে অস্পষ্ট হাসি টেনে বলল “এখন থেকে তোমার সব স্বপ্ন পূরনই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।”
আইজাও তার দিকে হাসিমুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল “এবার নিচে চলো। এসেছি যে সত্যিই অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে।”
তারা দুজন একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে একসাথে হাঁটা শুরু করলো।
চলবে…
{ এই গল্প লেখার প্লট যখন থেকে মাথায় এসেছে, তখন থেকে এর প্লট-ই নয় শুধু, এই গল্প কখন কীভাবে এগোবে, এবং এর উপস্থাপনা কীভাবে করা হবে,, আমি সব প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছি। এখন শুধু সেই প্লটটি টাইপ করছি পলিশিং করে। আর এর উপস্থাপনা কৌশলই একেক সময় নায়িকা নির্ধারণ করেছে। উপস্থাপনা কৌশল এবং এই সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে গল্প শেষে কিছু কথা বলবো। আপনারা পুরো গল্প না পড়তেই যদি সেসব বলি আপনারা ঠিকভাবে বুঝতে পারবেন না হয়তো। অথবা এমনও বলতে পারেন কিছু মেসেজ দিবো।
এছাড়া শেষ পর্ব পর্যন্ত হয়তো আপনাদের দ্বারা এটা অনুমান করা একটু কঠিন হবে যে ক্লাইমেক্স আসলে কেমন হবে।
আরো একটি কথা, এই গল্পটি সর্বোচ্চ ৩৪ পর্বের হবে। কারণ এখনো অনেক কাহিনী বাকি আছে। তবে ৩৪ পর্বের চেয়ে বেশি বড় করবো না গল্পটা। ৩৪ তম পর্ব-ই হবে শেষ পর্ব। }