#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:৩১
কলমে:লাবণ্য_ইয়াসমিন
জার্মানিতে পৌঁছে মীরাকে আলাদা রেখে জামসেদ। মেয়েটা একা থাকতে চাইছে না তবুও কিছু করার নেই।ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখতে হয়েছে।তাছাড়া জার্মানির রাজধানী বার্লিন থেকে ওকে কিছুটা দূরে রাখা হয়েছে। মূলত থাকার জায়গা বলতে সুলতানদের এখানে দুইটা বাসা বাড়ি আর একটা ফার্ম হাউজ আছে যেটার সবটা দাদুর চেনাশোনা। দুজন মেয়েকে ওর সঙ্গে রাখা হয়েছে। জামসেদ নিজের কক্ষে বসে চুপচাপ কথাগুলো ভাবছিলো। দাদুর মতিগতি ওর ঠিক সুবিধার লাগছে না। গতকাল নতুন একটা মেয়েকে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য যে ভালো না ওর থেকে ভালো কে জানে?তবে মেয়ে আনার বিষয়টা ও জেনেছে অনেক পরে। জানার পর থেকে কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। কহিনুরের খোঁজ নিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। দাদু জানলে অসুবিধা হবে। যে কাজে ওকে বাড়ি থেকে আলাদা রাখা হয়েছে সেই কাজটা শেষ করতে হবে। দাদুর সামনে থাকলে মেয়েটা যেভাবেই হোক বশে চলে আসলো। তাই দূরে রাখা। কথাগুলো ভেবে ও কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলো। দাদুর কক্ষের বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সামনে ডান পা ফেলে সামান্য উঁকি দিয়ে থমকে গেলো। কারণ সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে মোটেই ওর দাদু না। ভদ্রলোকের মুখের অবয়ব বদলে গেছে। প্রশ্ন জাগলো কে এই লোক? জামসেদ কৌতূহলী হয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসে দরজাতে নক করে বলল,
>দাদু আসবো?
ভেতর থেকে চেনা কণ্ঠে বলল,
< আসো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। জামসেদ ভেতরে প্রবেশ করে দাদুর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ভদ্রলোক আবারও নিজের চেহারায় ফিলে এসেছে। মনে মধ্যে বারবার প্রশ্ন জাগলো লোকটা কে ছিল? ভেতরে সেই অচেনা লোকটা নেই তারমানে দাদুর মধ্যেই দ্বিতীয় কোনো সত্তার বসবাস কিন্তু আরেকটা কে হতে পারে? জামসেদ মনে মনে কথাগুলো ভাবছিল ঠিক তখনই দাদু বলে উঠল, > কহিনুরের সন্ধ্যান পেলে? এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেনো বলবে? কি চাইছো এতোটা কাছে এসে সব গোলমাল হয়ে যাক? শুনো জামসেদ আমার হাতে অনন্তকাল টাইম নেই। দ্রুত ওকে খোঁজ করো। তুমি আমাকে উস্কানি দিয়ে কহিনুরের বিয়েটা পযর্ন্ত দিয়ে দিয়েছো এখন ওরা যদি এসে যায় আমি কি জবাব দিবো? নিয়ম ভেঙেছি। তোমার জন্য সবটা হলো।
জামসেদ ভ্রু কুচকে ফেলল। দাদু হঠাৎ ওকে ব্লেম করছে। এতোদিন পাশে থাকার পরেও এমন কথা বলতে পারলো? তাছাড়া কহিনুরের বিয়ের কথা দাদু আগে বলেছিল। জামসেদ প্রতিবাদের ভঙ্গিতে বলল,
> কহিনুরের বিয়েটা তোমার সিদ্ধান্ত ছিল আমার না। আমি শুধুমাত্র তোমার হুকুমে চলেছি তবুও তোমার মনে হচ্ছে সবটা আমার দোষ?
> দেখো জামসেদ আমি কি বলেছি সেটা তুমি খুব ভালো করে বুঝেছো। অযথা তর্ক করো না। আমি যা বলেছি শুনো। মেয়েটাকে খুঁজে আনো। আগের কথা ভূলে যাও।
জামসেদ মুখ ভার করে বলল,
> তোমার কি সত্যি মনে হচ্ছে সব আমার পরিকল্পনাতে হচ্ছে? দাদু আমি কালো শক্তির আধার। আমার মধ্যে তুমি ভালো কিছু কিভাবে খুঁজে পেলে বলবে? আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। ড্যাড আর তুমি আমাকে এতিমখানা থেকে তুলে এনে এই বিশাল ঐশ্বর্যের মধ্যে লালন পালন করেছো সবটা আমার মনে আছে। তাছাড়া সবটা তো তোমরা আমার জন্যই করেছো তাইনা?
জামসেদের কথা শুনে দাদু মুখটা স্বাভাবিক করলেন। উনি হয়তো কোনো কারণে ওকে সন্দেহ করেছিল কিন্তু এখন আর করছেন না। তবুও বললেন,
> ঠিক আছে যাও,কাজ শুরু করো। আর শুনো! আপাতত আমাদের হাউজের আশেপাশের সিকিউরিটি ডাবল করে দাও। অকারণে চাইছি না আমাকে কেউ বিরক্ত করুক।
জামসেদ মাথা নিচু করে চলে আসতে গিয়ে থমকে গিয়ে বলল,
> পসরা আপু ফার্ম হাউজে আছে। ওকে কি ফিরিয়ে আনবো?
দাদু কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললেন,
> না ও থাক নিজের মতো করে। ওকে বিরক্ত করার দরকার নেই। মারিয়ার কি খবর?
জামসেদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> আগের মতোই।
দাদু আর কথা বললেন না। উনাকে চুপচাপ দেখে জামসেদ বেরিয়ে আসলো কক্ষ থেকে। ওর মেজাজ হঠাৎ করেই খারাপ হচ্ছে। বোনদের জীবন কেমন থমকে গেছে। একটাও ভালো নেই। কহিনুর তো ঠিক আছে এটা ভেবে ওর ভালো লাগলো। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে সেই আশায় এগিয়ে চললো। মীরা একা আছে, ওকে যেতে হবে মেয়েটার কাছে। নয়তো অভিমান করে বসে থাকবে। রাতের খাবার পযর্ন্ত খাবেনা। এতটা ভালোবাসা এতদিন মিস করতে হয়েছে। খুব করে আফসোস হয় নিজের অভিশপ্ত জীবন নিয়ে। সাধারণ জীবন হলে কত ভালোই না হতো।
****************
অচেতন হয়ে পড়ে আছে কহিনুর। জুবায়ের মেয়ের পাশে বসে আছে অধীর আগ্রহ নিয়ে। রিসোর্ট থেকে মেয়েটা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। অনেক খোজাঁখুজির পরে গাড়িতে ওকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। কি হয়েছিল জুবায়ের বা অধরা কিছুই জানেনা। মেয়েকে নিয়ে ওরা তৎক্ষণাৎ ফিরে এসেছে। এধরনের অনুষ্ঠানে ওরা আর কখনও যাবেনা ভেবে নিয়েছে। সাঈদ সোফায় বসে আছে। এর মাথায় নানারকম প্রশ্ন ঘুরছে। ওকে যদি মালকীন দেখতে পেতো তবে নিশ্চিত কান টেনে দিতো। কহিনুরের সব ভুলভাল কাজে ও সাহায্য করেছে। এখন মেয়েটা অচেতন হয়ে আছে কিন্তু এটাইতো প্রথমবার না। আরও একবার হয়েছিল। দুদিন আগে হঠাৎ সাঈদ আর ও সমুদ্রের তীরে ঘুরতে গিয়েছিল। ওখানে যাওয়ার পরে মেয়েটার আচরণ হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়।।কেমন অচেনার মতো বিহেব করছিলো।কতকিছু যে ঘটেছিল সবটা স্বপনের মতো করে। সাঈদ ভেবেছিল কহিনুরকে জিঞ্জাসা করবে কিন্তু তার আগেই মেয়েটা ওকে চমকে দিয়ে বালুচরে ঢোলে পড়ে। তাই এতোকিছু না ভেবে নিজেই ওকে ফিরিয়ে এনেছে। আজও ফার্ম হাউজের গেটের কাছে মেয়েটা অচেতন হয়ে পড়েছিল। বাড়িতে নিয়ে গেলে সন্দেহ হবে ভেবে ও বুদ্ধি করে গাড়িতে রেখেছে। কিভাবে বলবে রাতটুকু পার হলে মেয়েটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। কহিনুরের অনুমতি ছাড়া নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করতেও ভয় করছে যদি ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে কোথায় যাবে ও? কেউ নেই নিজের বলতে। এই বাড়ির মানুষগুলোকে ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তাছাড়া আম্মির বলা কথাগুলো কানে ভাসছে।আম্মি বলেছিলেন একজন আছে যাকে ওর সাহায্য করতে হবে। কিছু একটা রহস্য আছে যেটা আম্মি জানে। সাঈদের বিশ্বাস উনি কোথায় আছে সেটা কহিনুর পারবে খোঁজ করে দিতে। এই মেয়েটা ওর জন্য লাকি। কথাগুলো ভেবে ও চুপচাপ বসে থাকলো। জুবায়ের মেয়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> অধরা, ডাক্তার ডাকতে হবে এভাবে কতক্ষণ থাকবো? আমার টেনশন হচ্ছে। ওর জ্ঞান কেনো ফিরছে না?
অধরা কহিনুরের মাথা থেকে হাত তুলে নিয়ে বলল,
> বুঝতে পারছি না। এমনটা আগে কখনও হয়নি। তাছাড়া ওকে তেমন ডাক্তার দেখানো হয়নি আগে। আপনার ভাই না বলেছিলেন ওর সঙ্গে কিছু হতে চলেছে সেটাই কি হচ্ছে? তাও তো বুঝতে পারছি না।
> এভাবে বসে থাকার কোনো মানে হয়না। আমি যাচ্ছি তুমি অপেক্ষা করো।
জুবায়ের কথাটা বলে বিছানা থেকে পা নামাতেই সাঈদ হন্তদন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে খিল টেনে দিলো। কহিনুরকে কোনো ডাক্তারের কাছে নেওয়া চলবে না। মেয়েটার মধ্যে নানারকম ঝামেলা আছে সেসব প্রকাশ পেলে বিপদ হবে ভেবে ও আহাম্মকের মতো কাজটা করে চুপচাপ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের ভ্রু কুচকে অধরার দিকে তাঁকালো। দুজনই বুঝে গেছে এখানে চতুর্থ পক্ষ কেউ আছে। ওরা ভয় পাচ্ছে কহিনুরকে নিয়ে। অধরা মেয়েকে আগলে নিয়ে বলল,
> কে তুমি সামনে আসো? দেখো আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি তুমি করবে না। আমি কিন্তু ছাড়ব না বলে দিচ্ছি। কি চাই তোমার,বলো?
অধরা ভেজা ভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলে থামলো। জুবায়ের খুব সুক্ষভাবে আশেপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে কিছু ভেবে বলল,
> অধরা এখানে থাকা আমাদের জন্য ঠিক হবে না। বিপদ হতে পারে।
অবস্থা খারাপের পর্যায়ে যাচ্ছে দেখে সাঈদ ভয় পেয়ে গেলো। এমনিতেই ওর বুদ্ধি কম এভাবে কহিনুরের অজান্তে ধরা খাবে কল্পনাও করেনি। তাই মাথা নিচু করে নিজেকে অদৃশ্য থেকে সামনে নিয়ে আসলো। জুবায়ের হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার চোখেমুখে বিস্ময় খেলা করছে। ওদের সামনে লিকলিকে ফর্সা একটা ছেলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই এক সঙ্গে প্রশ্ন করে বসলো,
> কে তুমি? এখানে কি করতে এসেছো?
সাঈদ ভয়ে কেঁদে ফেলল। দ্রুত অধরার পা ধরতে চাইলো কিন্তু অধরা নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলল,
> দূর থেকেই বলো পা ধরছো কেনো?
সাঈদ সরে এসে একবার জুবায়ের দিকে তাঁকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে উত্তর দিলো,
> আমি এতিম, আপনার কেউ নেই। এই কক্ষে আমি থাকতাম।বোন সবটা জানে।
সাঈদ ক্রমাগত এতোদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করে দিলো। দাড়ি কমা পযর্ন্ত বাদ রাখলো না। সবটা শুনে অধরা ভয়ে গুটিয়ে গেলো তবে জুবায়ের স্বাভাবিক আছে। আসার সময় ভাই ওকে বলেছিল মেয়েটা এমন করবে ওকে সামলাতে হবে। সাঈদ না থাকলে বিপদের শেষ তাকতো না। অধরাকে চুপচাপ দেখে সাঈদ ছলছল চোখে বলল,
> মালকীন আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না। আমি কহিনুরকে বোন ভেবেছি। কথা দিয়েছি সব বিপদে আগলে রাখবো। আমার আম্মির আদেশ এই বাড়িতেই থাকতে হবে আমাকে। উনি যদি ফিরে এসে আমাকে না পাই তবে চিন্তা করবেন। আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারবো না।
সাঈদের জন্য অধরার খারাপ লাগলো। বাচ্চা একটা ছেলে। এভাবে কাঁদছে দেখে ও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
> কাঁদছো কেনো শুধু শুধু। আমরা কৃতজ্ঞ তোমার উপরে। তুমি এখানেই থাকবে। আর লুকিয়ে থাকতে হবে না। ওর জ্ঞান ফিরছে না কেনো জানো কিছু?
সাঈদ চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল,
> সকালে ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্রামের দরকার।
জুবায়ের এবার মুখ খুললো,
> এবার থেকে ও কোথাও যেতে চাইলে আমার অনুমতি নিবে ঠিক আছে? রিস্ক হয়ে যায় সেখানে যাবে না। বাচ্চাদের এভাবে বিপদের মধ্যে যাওয়া ঠিক না।
জুবায়ের অধরাকে নিয়ে নিজেদের কক্ষে ফিরে গেলো। সাঈদ ওর চিরচায়িত স্বভাব অনুযায়ী জানালায় পা ঝলিয়ে বসে পড়লো। বেশ হালকা লাগছে। আগামীকাল থেকে আর চুরিকরে খেতে হবে না। মালকীন নিশ্চয়ই খাবার দিবে ওকে। ভেবেই খুশি লাগলো।
***************
চুপচাপ বসে আছে পাথর। আজ একমাত্র বোন অরিয়ার জন্মদিন। পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে টানা পনেরো দিন সময় চলে গেছে তারপর দুদিন গেছে শালিনের জন্য। পাথর ঠিক করেছে রাজধানীর বাইরে ফার্মহাউজ ছাড়া আর কোথাও যাবে না। ব্যবসা যেমন চলছে চলুক। তাছাড়া নিজের অতিরিক্ত মাত্রায় রাগের জন্য নিজেকে কেমন অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। বাইরে এতো এতো লোকজন হৈচৈ করছে বিরক্ত লাগছে ওর। হঠাৎ বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ওর ধ্যান ভাঙলো। অরিয়া বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পাথর আর অপেক্ষা করতে পারল না। দ্রুত গিয়ে দরজা খুঁলে দিলো। সাদা গাউনে অরিয়াকে ভীষণ মিষ্টি লাগলে। পাথর হাত বাড়িয়ে বোনকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> জন্মদিনের শুভেচ্ছা বোন।
মেয়েটা অমায়িক হেসে উত্তর দিলো,
> বাইরে আমার ফ্রেন্ডরা এসেছে তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইছে। তুমি যাবে না?
পাথর হাসলো। বোনের অবদার ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই। তাই অরিয়ার হাত ধরে বেরিয়ে আসলো। নিজেকে ঠিকঠাক রাখার জন্য অনেক বুঝিয়েছে। কিছুতেই অস্বাভাবিক আচরণ করবে না । সিঁড়ি দিয়ে দু’ভাইবোনকে নামতে দেখে করতালিতে মুখোমুখি হয়ে উঠলো ডাইনিং রুম। সিঁড়ির শেষ হতেই অরিয়া দৌড়ে গিয়ে বন্ধুদের সবাইকে ডেকে এনে পাথরের সামনে উপস্থিত হলো। অরিয়ার কয়েকজন বাঙ্গালী ফ্রেন্ড আছে তারমধ্যে একটা মেয়ে রশ্মি আগে থেকেই পাথরকে পছন্দ করতো। অরিয়ার সঙ্গে বেশ ভাব তাই কৌশলে জেনে নিয়েছিলো পাথর একটা বোবা বধির মেয়েকে বিয়ে করেছে। আলাপের শেষে কেক কেটে যখন সবাই আনন্দ করছিল পাথর বেরিয়ে আসলো। সুইমিং পুলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিল হঠাৎ কারো কণ্ঠ শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো। রিনরিনে মেয়েলী কণ্ঠে উচ্চারিত হলো,
> এতো স্মার্ট আর সৌন্দর্য দিয়ে কি হবে সেইতো আপনাকে একটা বোবা মেয়ের সঙ্গেই থাকতে হবে। আপনার জন্য আমার খারাপ লাগে। ডিভোর্স দিয়ে নতুন জীবন শুরু করুন। শুনেছি আপনি তাঁকে দেখতে পযর্ন্ত পারেননি।
কণ্ঠটা থামতেই পাথর ভ্রু কুচকে পেছনে ফিরলো। রাগ কন্ট্রোল রেখেছিল সেটা তরতর করে বেড়ে কয়েকশো গুণ বৃদ্ধি পেলো। ইচ্ছে হলো সব ধ্বং/স করে ফেলতে। ডিভোর্স দিবে তাও নিজের স্ত্রীকে? কখনও না। এই মেয়ের সাহস দেখে ওর মাথায় আগুন ধরে গেলো। সোজা গিয়ে থা/প্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
> সামনে থেকে যাবি নয়তো খু/ন করবো। আমার স্ত্রীকে নিয়ে আর একটা শব্দ উচ্চারণ করলে তোর গ/লা আমি কে/টে দিবো। চিনিস আমাকে?
পাথরের নাকমুখ লাল হয়ে উঠলো। গায়ে জড়ানো ব্লেজার ছিল টেনে খুলে পুলের দিকে ছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলো। রশ্মির পেছনে পড়ে আছে সেদিকে তাঁকালো না পযর্ন্ত।
****
উত্তাল সমুদ্রের তীরে বিকট শব্দে চিৎকার করে হাটু গেড়ে বসে পড়ল পাথর। হঠাৎ শরীর কেমন উত্তপ্ত অনুভব করছে। সঙ্গে গায়ের পশম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাত পায়ের মধ্যে কেমন যন্ত্রণা করছে। নক খুলে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণায় ও ছটফট করতে থাকলো। ভেতর থেকে কিছু একটা বেরিয়ে আসতে চাইছে। কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে ওর জানা নেই তবে এখুনি যন্ত্রণা না থামলে ও মা/রা যাবে নিশ্চিত। এভাবে কয়েক মূহুর্ত কাটলো তারপর পাথরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে সেখানে অদ্ভুত আকৃতির এক পশুর দৃশ্য মিলল। যার মাথা মানুষের আকৃতি আর শরীর হিং/স্র নেকড়ের। ঘোলা চোখের অর্ধমানব আকৃতির পশুটা টগবগ করে ছুটতে শুরু করলো। থামার লক্ষণ নেই। কোথায় যাচ্ছে তাও ওর অজানা। শুধু মনে হলো কেউ ওকে ডাকছে যেতে হবে। ছুটতে ছুটতে কয়েক কিলোমিটার পার হলো। তারপর থামলো সমুদ্রের দক্ষিণদিকের জনমানবশূন্য এক দ্বীপে। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। শনশন বাতাসের সঙ্গে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। হঠাৎ কিছু একটা লক্ষ করে অর্ধমানটি সেখানে এগিয়ে গেলো। পানির মধ্যে লাল রঙের পোশাক পরিহিত এক মেয়ে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ঘুমন্ত রাজকুমারী। সৌন্দর্য যেনো উপছে পড়ছে শরীর বেয়ে। অর্ধমানব মেয়েটার মুখের কাছে মুখ নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখে কিছু একটা ভেবে নিজের থাবা দিয়ে মেয়েটাকে পিঠের উপরে তুলে নিয়ে যেদিক দিয়ে এসেছিল সেদিকে চলে গেলো।
************
মাথা নিচু করে বসে আছে সাঈদ। জুবায়ের আর অধরা পায়চারী করছে। রাত থেকে কহিনুরকে পাওয়া যাচ্ছে না। সাঈদকে লুকিয়ে মেয়েটা বেরিয়ে গেছে। জুবায়ের ওকে বকাবকি করছে। অধরার চোখ লাল হয়ে আছে। জ্ঞান ফেরার পরে মেয়েটা স্বাভাবিক ছিল তারপর নরমালভাবেই সাঈদের সঙ্গে কথা বলেছে। সারাদিন ভালো ভাবে পার করেছে কিন্তু মাঝরাতে সাঈদ ঘুমিয়ে গিয়েছিল,হঠাৎ চোখ খুলে আর কহিনুরকে পাচ্ছে না। তখনই ও জুবায়ের আর অধরাকে ডেকে নিয়েছে। ও একবার গিয়েছিল খুঁজতে কিন্তু পাইনি। সাঈদ মাথা নিচু করেই বলল,
> ওকে কেউ ডেকেছে। কালো শক্তি সম্পর্কে আপনারা বিশ্বাস করেন?
জুবায়ের দাঁড়িয়ে পড়লো সাঈদের সামনে। ভ্রু কুচকে বলল,
> ভনিতা রেখে বিস্তারিত বলো। তুমি তো আমাদের মতো না। বেশ কিছু শক্তি আছে তোমার। বলো কি হয়েছে?
সাঈদ কিছু একটা ভেবে বলল,
> ওকে কালো যাদু দিয়ে ডাকা হয়েছে। কহিনুরের কাছে লকেট আছে বিধায় ওরা কাছে যেতে পারছে না ওর। আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি যাচ্ছি ওকে যেভাবেই হোক ফিরিয়ে আনবো। কিছু হবে না। বিশ্বাস রাখুন আমার উপরে। লকেট যতক্ষণ ওর কাছে থাকবে খারাপ উদ্দেশ্যে কেউ ওকে স্পর্শ পযর্ন্ত করতে পারবে না।
সাঈদ আবারও বেরিয়ে গেলো কহিনুরের খোঁজে। জুবায়ের থপ করে সোফায় বসে পড়লো। মাথা ঘুরছে। যার জন্য এত ত্যাগ সেই যদি না থাকে তবে কিসের এতো পালিয়ে বেড়ানো। অধরা জুবায়েরের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে উঠলো। নিজেকে দোষারোপ করলো। মেয়েটার খেয়াল রাখতে পরেনি ভেবে। অজানা আতঙ্কে বুক কাপছে।কোথায় আছে কহিনুর?
চলবে