#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_১২+১৩
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
আইজা আর রিতা তখন ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতেই সে দেখতে পায়, সামনে কিছুটা দূর থেকে আমান এদিকটায়-ই হেঁটে আসছে। তার সাথে তিথিও ছিল। তার ঠোঁটে সেই বাঁকা মুচকি হাসি লেগে আছে।
তাকে দেখে আইজার হাঁটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। আমানও এসে তার সামনেই দাঁড়ালো। তার সাথে তিথিও। আইজা এত বেশি চমকে গিয়েছিল যে তখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে নি।
সে বলল “আমান! তুমি এখানে কি করছ?”
আমান কিছুই বলল না, তবে তিথি বলল “আমান তার ভার্সিটিতে আর কি করতে আসবে, তোমার মত পড়াশোনা করতেই নিশ্চয়ই! তুমিও আজব কথাবার্তা বলো।
অবশ্য তোমার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই, আমি আর আমানও একই ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি। তবে তোমার আর আমাদের ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন।”
ভেতরে ভেতরে খুব রেগে গেলেও বেশ ঠান্ডা স্বরে আইজা বলল “আমান! আমি যখন বারবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কোথায় ভর্তি হচ্ছ, একবারও তো বলো নি আমাকে, যে এই ভার্সিটিতেই ভর্তি হচ্ছ।”
এবারও তিথি বলল “আমি তো বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমানই নিষেধ করেছিল, সে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। এছাড়া আমান কানাডার একটি ভার্সিটিতেও স্কলার পেয়েছিল। কিন্তু যখন শুনেছে, আমি এখানে ভর্তি হচ্ছি, সে-ও এখানেই ভর্তি হয়েছে। আমরা খুব ভালো বন্ধু কিনা।”
আইজা একবার কঠিন দৃষ্টিতে আমানের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
আমানের ঠোঁটে তখনও সেই হাসি লেগে আছে।
তিথি বলল “আইজা কি কোনো বিষয়ে রাগ করল নাকি?!”
আমান বলল “লিভ হার।
এখন তো আমি পুরো ভার্সিটি ঘুরে দেখব। আর আইজার সাথে তো পরে কথা হবে আমার।”
তিথি বলল “আমিও যাবো তোমার সাথে।”
আমান পকেটে হাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে, তার সাথে তিথিও। তখন আমান বলল “তোমার জন্য এই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি আমি?!”
তিথি একটু বিব্রত কন্ঠে বলল ” এমনিতেই বলেছিলাম আর কি! আমরা কত ভালো বন্ধু, তা সবাইকে জানাতেই। এভাবে আমি কি ভুল কিছু বলেছি, আমান?!”
হাঁটতে হাঁটতেই আমান বলল “কিছু না, পুরোটাই ভুল বলেছ। আমি আর যার কারণেই এখানে ভর্তি হয়েছি, তোমার কারণে না, তা নিশ্চিত।”
তিথি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়লেও স্বাভাবিক গলায় বলল “মজা কিন্তু তুমি ভালোই করতে পারো, আমান। আই রিয়েলি লাইক ইট।”
আমান আর কিছুই বলল না তার কথার জবাবে।
.
.
.
ক্যান্টিনে চায়ের কাপ সামনে রেখে আইজা বসে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো । আমানের উপর কেন যেন খুব রাগ হচ্ছে তার, এই বিষয়ে তাকে আগে জানালে কি আর হত এমন!
এছাড়া এতগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটার উত্তরও সে নিজে দেয় নি। তিথি তোতা পাখির মতো একটির পর একটি উত্তর দিয়ে গিয়েছে। অসহ্য লাগছে আইজার সবকিছু।
তখন রিতা আইজাকে উদ্দেশ্য করে বলল “ক্যান্টিনে আসার সময় যে ছেলেটির সাথে কথা বলছিলে, চেনো তুমি তাকে?! খুব বেশি হ্যান্ডসাম সে, আমি তো প্রথম দৃষ্টিতে ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি। তবে তার সাথে যে মেয়েটি ছিল, আমার মনে হয়, সে তার গার্লফ্রেন্ড।”
আইজা বলল “এমন কিছুই নয়। আমরা তিনজন দূরসম্পর্কের আত্মীয়। এজন্যই একে অপরকে চিনি। যাই হোক, এখন প্লিজ এসব বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।”
রিতা বলল “আচ্ছা ঠিক আছে, এমনিতেও তুমি যে কোন বিষয়ে হাইপার হয়ে আছো, আমি অনুমান করতে পারছি।
তবে আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে তোমার এই চা শেষ করা উচিত। তোমার মাথা যদিও কোন কারণে গরম। তবে এটা ঠান্ডা হয়ে পানি তো অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে, আর কিছুক্ষণ রেখে দিলে আইসক্রিম হয়ে যাবে একেবারে।”
আইজা বলল “জোক-টা লেইম ছিল। তবে তুমি ঠিকই বলছ, এই চা এমনিতেই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। এটা পান করার আর কোন মানে হয় না।
আমি এখন উঠি তবে। এমনিতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।”
এই বলে আইজা উঠে দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে ব্যাগ তুলে নিল।
রিতা তার দিকে মুখ তুলে বলল “আচ্ছা। একটু পর আমিও চলে আসব হোস্টেলে।”
.
.
.
ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আইজা দেখতে পায়, আমান, তিথি সহ আরো অনেক ছেলে মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সে মনে মনে ভাবল “আজ ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই তাদের এই দশা! এসব আড্ডাবাজি করে সময় পেলেই না তারা পড়াশোনা করবে!
এছাড়া প্রথম দিনই এতগুলো আড্ডাবাজ বন্ধুও জোগাড় করে ফেলেছে। অবশ্য দুধের মাছির তো কোথাও অভাবও হয় না। আমানের বাবা যে শুধু বিশাল ধনীই নয়, বরং পলিটেকললি বেশ ইনফ্লুয়েন্সশিয়াল-ও এই বিষয়টি বোধ হয় ভার্সিটির অনেকেই ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে। কারণ সিনিয়র, ব্যাচমেট সবার মধ্যে আমানের অন্যরকম সমাদর। অবশ্য আমানের পার্সোনালিটি-ই যদিও এই বিষয়ে যথেষ্ট। তবে যতটা সমাদর সে পাচ্ছে, তা হয়ত তার ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্যই।”
এইসব ভাবতে ভাবতেই সে তাদের ক্রশ
করছিল। আমানও আইজাকে দেখতে পায়। এবং তার দিকে তাকিয়েও ছিল। কিন্তু মুখে কিছুই বলে নি।
তখন তিথি আইজার উদ্দেশ্যে বলল “আরে আইজা, কোথায় যাচ্ছ? চাইলে আমাদের সাথে বসতে পারো। আসো আমাদের ফ্রেন্ডসদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই তোমাকে।”
পর্ব_১৩
তখন তিথি আইজার উদ্দেশ্যে বলল “আরে আইজা, কোথায় যাচ্ছ? চাইলে আমাদের সাথে বসতে পারো। আসো আমাদের ফ্রেন্ডসদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই তোমাকে।”
আমানও আইজার দিকে তাকিয়ে আছে। আইজা আমানের দিকে এক নজর দেখে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল “অন্য একদিন পরিচিত হবো। আমার এখন যেতে হবে, জরুরি কিছু কাজ ছিল।”
আইজা দাঁড়িয়েও কথা বলল না, কথা বলার সময় কেবল হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়েছিল একটু। মুখে যদিও সে বেশ ভদ্রভাবেই কথা বলেছে, তবে মনে মনে বলছিল “তোমাদের মত ইউজলেস আড্ডাবাজ ছেলে মেয়েদের সাথে পরিচিত হওয়ার কোন শখ নেই আমার। যারা, যেখানে পারে, বসে পড়ে আড্ডা দেয়া শুরু করে দেয়।”
আমান কিছুটা ঠান্ডা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে আইজার চলে যাওয়া দেখল। আইজার তাদের সাথে এখানে না বসা, নিঃসন্দেহে তার ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ নয়।
তবে সে-ই ভালো জানে, কখন কি কারণে কার উপর সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
.
.
.
রাতের দিকে আইজার ফোনে কল আসল। আইজা ঘুম জড়ানো চোখে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে শুনতে পেল,
“আজকে নিশ্চয়ই খুব ভালো ঘুম হচ্ছে তোমার, এটা জেনে যে এখন থেকে সর্বক্ষণ আমি তোমার পাশেই থাকব, তোমার ছায়া হয়ে।”
আইজা বলল “এটা বলার জন্য এত রাতে ফোন দিয়েছ?
আমান! সকালে উঠে আমার ক্লাসেও যেতে হবে।
এছাড়া এটা ভেবে এত খুশি হওয়ার কিছু নেই, কারণ সত্যি বলতে, আমি খুশি হই নি। বিরক্ত হয়েছি। এখন তোমার কারণে হয়ত আমার পড়াশোনায় অনেক ডিসটার্ব হবে।
এছাড়া তোমার মিথ্যা খুশির জন্য মনের কথা লুকিয়ে তোমাকে আমি মিথ্যে তো বলতে পারি না নিশ্চয়ই।”
আমান বলল “তাই; না?”
আইজা বলল “হ্যাঁ, একদম সঠিক। এছাড়া আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না পড়াশোনা শেষ করে জব করা শুরু করছি, আমি তো বিয়েও করতে পারব না। কিন্তু আমি যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করতে চাই সেই মানুষটিকে যাকে আমি নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসি।”
আমান মুচকি হেসে বলল “আর কে সেই হতভাগ্য?”
আইজা বলল “আছে একজন। খুবই অহংকারী, রাগি জেদি স্বভাবের একজন। যে কথায় কথায় আমার উপর অভিমান করে, আর এটাও দেখার প্রয়োজন বোধ করে না, এতে আমার কোন দোষ আছেও কি নেই!”
আমানের ঠোঁটে হাসি ছড়িয়ে পড়ল, সে বলল “তাহলে এত খারাপ একজন মানুষকে বিয়ে করতে প্রস্তুত হলে কীভাবে, ভালোবেসে নাকি ভয় পেয়ে?”
আইজা এবার সিরিয়াস হয়ে বলল “পুরো দুনিয়া হয়ত ভয় পায় তোমাকে, কিন্তু আমি না।
আর কারণ যদি সত্যিই জানতে চাও, তবে শুনো, অনেক ভালবাসি তোমাকে। এমন একজনকে সজ্ঞানে কখনো ভালবাসতে পারতাম না ঠিক, তবে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি। এখন তো এর কোন প্রতিকার-ও নেই আমার কাছে।”
আমান বলল “কিন্তু আমার কাছে আছে।”
আইজা বলল “তা তো থাকবেই। যে কষ্ট দেয়, সেই কষ্টের ঔষধও তার কাছে থাকা উচিত।”
আমান বলল “আমার ভালোবাসা তোমার জন্য কষ্টের!
আজব না বিষয়টি, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে সস্তা আবেগ, তোমার কষ্ট। আরো কি কি? আমাকে এখনই বলে দাও তুমি।”
আইজা একটু হেসে বলল “হ্যাঁ, সেটা ঠিক আছে। আমি আর তুমি যখনই কথা বলি, একটা না একটা মনোমালিন্য হয়েই যায়। ছোটবেলায় আমাদের বোঝাপড়া কত ভালো ছিল, আর এখন!
তবু খারাপ না। আমার তো মনে হয়, আমাদের ঝগড়ার মধ্যেও একটা ভালোবাসা কাজ করে। আমাদের মাঝে যত যাই হয়ে যাক, আমরা সবসময় এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের দুজনের মনে দুজনের জন্য যে স্থান রয়েছে, তা অন্য কেউ কখনো নিতে পারবে না।”
আমান চুপ করে রইল। তখন আইজা আবারও বলল “আচ্ছা, আমান সব ভালোবাসার সংজ্ঞা কিন্তু একই রকম হয় না। তুমি জানো, এই একটি শব্দ, অথচ এর সংজ্ঞা সীমাহীন। আসলে একেকজনের কাছে এর সংজ্ঞা একেক রকম। সেই কারণে আমি মনে করি, এটা আসলে অসংজ্ঞায়িত।
তো আমরাও এত শত সংজ্ঞার সাথে নতুন একটি সংজ্ঞা নাহয় যোগ করে নিলাম। আমাদের ভালোবাসা নাহয় গতানুগতিক ভালোবাসার মত না-ই হলো।
আমাদের মাঝের এই ছোট ছোট লড়াই, বড় বড় যুদ্ধ! সেগুলোও নাহয় আমরা আমাদের ভালোবাসার অংশ হিসেবেই মেনে নেই।”
এরপর অল্পক্ষণ নীরবতার পর আমান বলল
চলবে…
{ আচ্ছা, আপনাদের যদি প্রত্যেকদিন গল্প দেই কেমন হবে? আমার অনেক বেশি কষ্ট হয়ে যাবে, জানি। এরপরও আমি দিতে পারি।
কিন্তু আমি বুঝি না, আমি এত কষ্ট করে গল্প দেই, অথচ আপনারা কোন মতামতই দেন না গল্পের ব্যাপারে?! আচ্ছা, আমার গল্পের প্রতিটি পর্বে যদি ৬৬+ কমেন্ট হয় (সংখ্যাটা কিন্তু খুব বেশি না, সামান্যই ) তবে আমি প্রতিদিনই গল্প দিবো। এছাড়াও আপনারা আমার গল্পের যেকোনো একটি বা একাধিক চরিত্রের ব্যাপারে আমার গ্রুপে পোস্ট করবেন, হতে পারে, কোন কিছু জানতে চেয়ে, বা পছন্দ বা অপছন্দের দিকটি তুলে ধরে, যা আপনাদের ইচ্ছা হয়। যার পোস্ট আমার বেশি ভালো লাগবে তার নাম মেনশেন করে তাকে dedicate করে আমি প্রত্যেকদিন গল্প পোস্ট করবো।
ব্যাপারটা একটু নতুন। নতুন জিনিস ট্রাই করতে আমার বেশি ভালো লাগে। গ্রুপ লিংক নিচে দিয়ে দেয়া হলো –
https://www.facebook.com/groups/590966405108442/?ref=share