#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_৩২
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
রায়হান ফোন কাট করার পর রেহানা বললেন “এর মানে ফারুক ভাই বিয়ের জন্য মানা করে দিয়েছেন?!”
ভেতরে রাগে কটমট করলেও উপরে চাপা রাগত স্বরে রায়হান বললেন “হ্যাঁ।”
আক্ষেপ করে রেহানা বললেন “আমান যদি এই বিষয়ে জানে, কি হবে তখন ?! সে তো ওই মেয়ের জন্য নিজেকে এভাবেই তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আর ওই মেয়ের কোন পরোয়াই নেই।
এখন এই বিষয়ে যদি সে জানে, তখন আরো বেশি কষ্ট পাবে, তার এই অবস্থা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
আমান কখন এসে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনে ফেলেছে রায়হান, রেহানা নিজেদের দুশ্চিন্তায় তা টেরই পান নি। তার কথায় দু’জনই চমকে তার দিকে তাকালেন।
আমান ঠোঁটে হতাশ, মলিন হাসি ছড়িয়ে বলল “সে রাজি হয়নি তো এই বিয়েতে?!”
এরপর একটু শব্দ করে হেসে বলল “আমার ভালোবাসা, আমার মতই জেদি হবে। স্বাভাবিক।
কিন্তু একদিন না একদিন তার রাগ ঠিকই পড়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত তার অপেক্ষায় বেঁচে থাকব আমি।”
এই বলে আমান বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। পেছন থেকে রেহানা কয়েকবার ডাক দেয়ার পরও যখন সে থামে নি তিনি আনিসের উদ্দেশ্যে বললেন “তার পেছনে যাও। আর প্লিজ যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে তাকে একা ছেড়ো না। প্লিজ।”
আনিসও আমানের পিছু পিছু দ্রুত বের হয়ে যায়।
রায়হান বেশ খানিকটা রেগে বললেন ” কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে এমন, যে তার জন্য নিজের এই অবস্থা বানিয়ে ফেলেছে সে! এমনই চলতে থাকলে বেশিদিন আর বাঁচবে না সে।
এতই যদি আইজার জন্য ভালোবাসা ছিল তাহলে সেই রাতে এত দ্রুত তিথির সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিতে পারতো। সব বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতো!
কিন্তু তোমার ছেলের তো যা করার সে তা-ই করে। এখন নিজের জীবন নিজ হাতে ধ্বংস করছে এসব করে। মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে সে। তার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেও বাঁচতে পারবো না, রেহানা। তার দুশ্চিন্তায় আমি নিজেও অস্থির থাকি সবসময়।
অনেক হয়েছে। এবার বুঝাও তোমার ছেলেকে। আমি আর সহ্য করবো না তার এইসব।”
রেহানা বললেন “তুমি এভাবে কেন বলছো? সেই রাতে তো রাগের মাথায় জিদের বশে সে তিথির সাথে বিয়ের কথাটি বলেছিল কেবল। কিন্তু পরবর্তীতে তো সে বিয়েই করতে চায় নি। সে তো ভেবেছিল, আইজাকে যেহেতু পায়নি অন্য কাউকেও আর মেনে নিবে না।
কিন্তু যখন তোমার ভাই জয়নুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, আর তোমার ভাবী আনোয়ারা মরা কান্না কাঁদছিলেন আমার ছেলের সামনে, যে তার মেয়েকে বিয়ে না করলে তাদের পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। তিথি তো দূরের কথা তিশাকেও আর বিয়ে দিতে পারবেন না তিনি। আর আমানও যদি এখন তিথিকে বিয়ে না করে আর জয়নুল তা জানতে পারে, তিনি নাকি তা সহ্য করতে না পেরে মারা যাবেন। তখন বিয়ে বয়সী দুই মেয়ে নিয়ে আনোয়ারা কি করবেন! তোমার ভাবী এসব বলে বলে আমার ছেলেকে এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল করে এই বিয়েতে রাজি করায়।
এদিকে তার বন্ধু আনিস! তিথির প্রতি তো তার আলাদা ধরনের টান। সে-ও কত কিছু বুঝায় আমার ছেলেকে যে জয়নুলের যদি সত্যিই কিছু হয়ে যায়, সে কখনো নিজেকে মাফ করতে পারবে না।
এছাড়া আনোয়ারা ভাবী ইচ্ছাকৃতভাবে এসব মরা কান্না কেঁদেছিলেন। আমার তো মনে হয়, সব নাটক ছিল তার। এসব করে তার প্রতারক মেয়েকে আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন।জিদের বশে আমানের বলা একটা কথা! এরপর তার গলার ফাঁস বানিয়ে তিথিকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
সবাই মিলে আমার ছেলেটার উপর কি পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিল! আর সে-ও মানুষের উপকার করতে গিয়ে জয়নুল ভাইয়ের জীবন জীবন বাঁচাতে গিয়ে তার বদজাত মেয়েটাকে বিয়ে করে নেয়!”
রায়হান বললেন “আমি সেদিন তাকে বলেছিলাম, আইজার ব্যাপারে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে। যেদিন সে তিথিকে বিয়ে করছিল সেদিনও কবুল বলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তাকে বলি, এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে। এটাও বলি, আইজার ব্যাপারে একবার অন্তত ভাবতে, আফটার অল, ভালোবেসেছিল সে আইজাকে। এসবের মধ্যে তার সাথে না আবার কোন অন্যায় হয়ে যায়!
কিন্তু তোমার ছেলে আমার কোনো কথা শুনেছিল কখনো, যে সেই বার শুনত!
বন্ধুর কথা, আনোয়ারা ভাবীর কথা শুনে; জয়নুল ভাইয়ের কথা ভেবে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এখন নিজে এত কষ্ট পাচ্ছে, সাথে নিজের বাবা মায়ের জীবনও জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
আমার কথা জীবনে যদি একবারও শুনত সে, আজ তার জীবন তাকে এই মোড়ে এনে দাঁড় করিয়ে দিতো না।
কিন্তু এখন যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। তাকে বলো, এসব থেকে বের হয়ে আসতে। নাহলে তাকে সত্যিই আমাদের চিরতরে হারাতে হবে। সে আমার একমাত্র ছেলে, আমার একমাত্র সন্তান। তার জানাজা খাটিয়া নিজের কাঁধে উঠানোর আগে আমারই মৃত্যু ঘটবে।”
রেহানা বললেন “এভাবে বলো না। এমনিতেই আমানকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তার শেষ নেই, এর উপর দিয়ে আবার তুমি এসব বলছ! বাচ্চারা ভুল করে। ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ তাদের কর্মকাণ্ডে বাবা মায়েদের অযথা কষ্ট পেতে হয়। বাবা মায়ের জীবন মাঝখান দিয়ে জাহান্নাম হয়ে যায়!
এছাড়া কি বুঝাবো আমি আমানকে! তার জিদ, রাগ সম্পর্কে তো তুমি জানোই। মেনে নিবে সে আমার কথা?!
এছাড়া আমার ছেলে আইজাকে কতটা ভালোবাসত, মা হিসেবে এর সাক্ষ্য দিতে পারি আমি। কিন্তু তিথি যে এমন কিছু করে আমানের হাতে এত বড় অপরাধ করিয়ে দিবে, সেই বিষয়ে তো আমরা কেউ-ই ধারণা করতে পারিনি; সে-ই বা করবে কীভাবে!
আমার ছেলে পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেই মেয়েটিকেই এতটা হার্ট করেছে যাকে পাগলের মত ভালোবেসেছিল। এখন সব সত্য যখন সবার সামনে খুলে চলেই এসেছে, সে কি করে স্বাভাবিক থাকবে! অপরাধবোধ তাকে শান্তি মত বাঁচতে দিচ্ছে না।
আর এইসব কিছুর জন্য দায়ী ওই তিথি, তার চেহারা পর্যন্ত দেখতে রাজি ছিল না সে, অথচ আইজার বাবার শর্ত অনুযায়ী তাকে মেনে নেয়ার ব্যাপারেও রাজি হয়ে গিয়েছিল, এরপরও তারা এই বিয়ের ব্যাপারে মানা করে দিয়েছে। কি ধরনের পাথর হৃদয়ের মানুষ তারা।
আর ফারুক ভাই! তার উপর তো অনেক আস্থা ছিল তোমার। মেয়ের খুশির কথাই কেবল ভাবছেন তিনি। তার এমন সিদ্ধান্তে আমাদের এত বছরের সম্পর্ক যে নষ্ট হয়ে যাবে, এই বিষয়ে তার কোন পরোয়া নেই।
ওই তিথির কারণেই সবার জীবনে কেয়ামত নেমে এসেছে। তাকে বদদোয়াও দিতে পারছি না তার গর্ভে এই বংশেরই উত্তরাধিকারী রয়েছে বলে।
আমার আমান তো তাকে ইনোসেন্ট ভেবে তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে তাকে সব ধরনের অধিকার দিয়েছে।
আইজা তার সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে অন্য কারো জন্য তাকে ঠকিয়েছে ভেবে সে প্রতিনিয়ত যে আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছিল সে চায়নি একটি নিষ্পাপ মেয়েকে বিয়ে করে এনে তাকেও একই কষ্টের মধ্যে ফেলতে। এই কারণে না চাইতেও সে তিথিকে সব ধরনের সুখ দিয়েছে, তাকে তার প্রাপ্য সব অধিকার দিয়েছে।
এই বিয়েতে সে নিজে কতটা অসুখী ছিল এই বিষয়ে তিথি নিজেও জানত সব।
এছাড়াও আনোয়ারা ভাবী কেঁদে কেঁদে তার থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে তার মেয়েকে যেন কখনো কোন কষ্ট পেতে না দেয় আমান, তিথির ভাগের সমস্ত অধিকার আর সুখ যেন সে তাকে নিশ্চিত করে। বাধ্য হয়ে সে-ও প্রতিশ্রুতি দেয়। আর একবার প্রতিশ্রুতি দিলে যা-ই হোক না কেন, সে তা পালন করে। যেমন এতদিন পালন করে এসেছিল তিথির ক্ষেত্রে যতদিন না তার সত্য সবার সামনে বের হয়ে আসে।
এই বিয়েতে আমান সুখী না হলেও তিথিকে কষ্ট পেতে দেয় নি কখনো। অথচ সেই তিথিই এত বড় প্রতারক বের হলো! সে-ই তার সাথে এত বড় প্রতারণা করেছে। তার কারণেই আমার ছেলের জীবন জাহান্নাম হয়ে গিয়েছে!
মা হিসেবে আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করি, আমার ছেলের জীবনে যেন শান্তি ফিরিয়ে দেন তিনি। এক ফোঁটা শান্তি নেই তার মনে। কি পরিমাণ অশান্তি নিয়ে আমার ছেলে বেঁচে আছে, তা ভাবতেই আমার নিজের শান্তি হারিয়ে যায়!”
রেহানার চোখ ভরে উঠলো অশ্রুতে।
.
.
.
আইজা আর ফারুক বসে সাধারণ কথাবার্তা বলছিলেন, এমন সময় ফোন হাতে লায়লা এক প্রকার দৌড়ে তাদের কাছে আসলেন। দৌড়ে আসার কারণে হাঁফাতে গিয়ে তিনি ঠিক মত কথাও বলতে পারছিলেন না।
ফারুক আর আইজা বেশ চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তিনি ঠিক আছেন কিনা, কি হয়েছে তার।
প্রত্যুত্তরে লায়লা বললেন “ফারুক; আমান কার এক্সিডেন্ট করেছে, নিজেই ড্রাইভ করে কোথায় যাচ্ছিল, কিন্তু কীভাবে যেন এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। সে হাসপাতালে আছে এই মুহূর্তে।”
আইজা ফারুক রীতিমতো চমকে উঠলেন। কাঁদো কাঁদো গলায় আইজা বলল “এখন কেমন আছে, ঠিক আছে তো সে?”
লায়লা এক নজর আইজার দিকে তাকিয়ে তাকে একেবারে ভ্রুক্ষেপ না করেই আবারও ফারুকের দিকে তাকিয়ে বললেন “প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, এখন আউট অফ ডেনজার। আর এখন নাকি দুশ্চিন্তারও তেমন কিছু নেই।”
ফারুক বললেন “সে তো ড্রাইভিং এ খুবই পারদর্শী, হঠাৎ করে এসব কীভাবে হয়ে গেল?!
তবে আল্লাহকে অশেষ শুকরিয়া যে তার কিছু হয়নি।
রেহানা! দ্রুত গিয়ে তৈরি হয়ে এসো। আমরা এখনই যাবো হাসপাতালে। তাকে না দেখা পর্যন্ত শান্তি লাগবে না আমার মনে।”
আইজা বলল “বাবা, আমিও যাবো।”
ফারুক বললেন “যেতে চাইলে চলো, মা।”
হাসপাতালে পৌঁছে তারা রায়হান রেহানাসহ জয়নুল আর তার পরিবারকেও সেখানে দেখতে পান। তিথিও ছিল সেখানে।
আইজা সবার থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে বসে রইল চুপ করে। লায়লা আর ফারুক গিয়ে রেহানা, রায়হানকে সান্তনা দিতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পর রেহানা উঠে আইজার পাশে গিয়ে বসলেন, এরপর অল্পক্ষণ চুপ থেকে বললেন “আমাদের মতো তোমারও হয়ত এই মুহূর্তে খারাপ লাগছে। হাজার হোক, তুমিও একসময় ভালোবাসতে তাকে।
আইজা; যা কিছু তোমার সাথে হয়েছিল, আমি স্বীকার করি, তা অনেক বড় অন্যায় ছিল। কিন্তু সেটাতে কি কেবলই আমানের দোষ ছিল? আমি জানি, সে অনেক বড় ভুল করেছে।
কিন্তু তুমি কি কোন ভুলই করো নি?! তিথি আর তার বোনের কথা শুনে তুমি মিথ্যা বলো নি আমানের সাথে?! সত্য লুকিয়ে কত বড় ভুল করেছিলে তুমি। তোমার সন্দেহজনক সেসব ব্যবহারের কারণেই তোমাকে রাজিবের সাথে দেখে সে তাই বিশ্বাস করেছে যা সেই মুহূর্তে তার চোখের সামনে ছিল।
এছাড়া তার রিয়েকশেন এতটা ভয়াবহ কেবলমাত্র এই একটি কারণে হয়েছে যে তার ভালোবাসাও ছিল এমনই পাগলামি লেভেলের। সে দীর্ঘসময় তোমাকে সময় দিয়েছে, তোমার সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখার পরও তোমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছে। কিন্তু সেদিন হয়তো আর বিশ্বাস রাখতে পারে নি। কারণ সে হয়তো এটা মেনে নিতে পারছিল না যে যাকে এতটা ভালোবেসেছে সে-ই অন্য কারো জন্য তাকে ঠকাচ্ছে।
এসব হওয়ার আগেই তুমি যদি একবার তাকে সব সত্য সম্পর্কে জানিয়ে দিতে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নিত তোমার সব কথায়, যদিও সে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছিল যে তুমি তার সাথে মিথ্যা বলছ, তোমার আর রাজিবের দেখা সাক্ষাত, ফোনে তোমাদের কথাবার্তা গোপন করছ! আচ্ছা তুমি-ই বলো গোপনে এভাবে দেখা সাক্ষাত করা, ফোনে কথা বলার অর্থ কি দাঁড়ায়? আমান যদি এমন কিছু করত, তুমি করতে না তাকে সন্দেহ! আমান তো এই পর্যন্ত তোমার থেকে কিছুই লুকায় নি, এরপরও তো মাঝে মধ্যে তুমি সন্দেহ করতে তাকে। অথচ তখন পরিস্থিতি তো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
এছাড়া অবিশ্বাস তো সে একা করে নি তোমাকে। আমরা সবাই করেছিলাম। এমনকি তোমার জন্মদাত্রী মা-ও বিশ্বাস করে নি তোমায়। মায়েরা তো বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, সে-ই যদি অবিশ্বাস করতে পারে, তবে তুমি নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছ, পরিস্থিতিই তখন এমন ছিল।
এছাড়া ভুল সবাই করেছে, লায়লা মা হয়ে তোমাকে ভুল বুঝেছে। তুমি তাকেও তো ক্ষমা করে দিয়েছ। সবার জন্য ক্ষমা। অথচ শাস্তি শুধু আমার ছেলেকেই দিচ্ছ।
সে হয়ত তোমাকে ভালোবাসার শাস্তিই পাচ্ছে। আমার ছেলের এমন অবস্থা একজন মা হিসেবে আমি সহ্য করতে পারছি না।
একসময় তো তুমিও ভালোবেসেছিলে তাকে, তাহলে কীভাবে এত নিষ্ঠুর হতে পারছ তার সাথে, তোমার হৃদয় এতটা পাথরের!
সবার ভাগ্যে থাকে না, হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়া, আর তুমি সেই সুযোগ পেয়েও এভাবে হাতছাড়া করে দিচ্ছ।”
আইজার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল, আমানের জন্য সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আজ যদি আমানের কিছু হয়ে যেত, আইজা নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারত না।
রেহানা বলে চললেন “দেখো, একেকজনের জিদই আজ আমাদের প্রত্যেককে এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তুমিও এখন নিজের এই জিদের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ করছ। একবার চিন্তা করে দেখো, তোমার এই একটি সিন্ধান্তে সবকিছু কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে পারে। নাহলে এখানে জীবন, সম্পর্ক, সবকিছুই বাজি রাখা।
আইজা, তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করো।”
এই বলে রেহানা উঠে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন। আইজার বাবা মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
আইজা কিছুতেই নিজের অশ্রু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আমানের জন্য সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে তার।
এরপর কিছুক্ষণ এভাবেই বসে থাকার পর; সবার সামনেই এক অপ্রত্যাশিত কান্ড করে বসলো সে। সবার সামনেই গিয়ে তার বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলল “আমানের সাথে বিয়ের ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। আমান সুস্থ হওয়ার পর তোমরা বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে পারো।”
সেখানে তিথি আর তার পরিবারও ছিল। তিথির সংসার ভাঙবে না, এই ভেবে যদিও তার খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু এরপরও সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার কান্না আইজার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সে নির্লিপ্তভাবে কেবল এক নজর তিথির দিকে তাকিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়।
এদিকে রায়হান, রেহানা আর লায়লা খুশি হলেও ফারুক কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মেয়ের জন্য কেন যেন দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার।
চলবে…
{ এই গল্পের ব্যাপারে আপনাদের নিজস্ব কোন মতামত বা মন্তব্য থাকলে করতে পারেন। }