গল্পঃ ভাবি যখন বউ #পর্ব_০৮ (জুয়েল)

0
1421

গল্পঃ ভাবি যখন বউ
#পর্ব_০৮ (জুয়েল)

(৭ম পর্বের পর থেকে)

অবন্তী আমাদের এই অবস্থা দেখে উঠে চলে গেলো। তারপর বাইরে এসে আমি আবারও লিমার সাথে কথা বলতেছি এমন সময় অবন্তী কোথায় থেকে এসে আমার পাঞ্জাবীর কলার চেপে ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।

আমিঃ কি ব্যাপার এই ভাবে ধরে নিয়ে আসলেন কেন?

অবন্তীঃ ওই মেয়ে দেইখলেই কথা বলতে মন চায়?

আমিঃ তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?

অবন্তীঃ আছে অনেক সমস্যা। তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না।

আমিঃ কেন?

অবন্তীঃ সেটা না জানলেও চলবে।

আমিঃ আমার যেহেতু কেউ নেই সেহেতু আমি অন্যদের সাথে অবশ্যই কথা বলবো।

অবন্তীঃ না তুই কারো সাথে কথা বলতে বলতে পারবি না। আর যেন ওই মেয়েটার সাথে না দেখি।

আমিঃ সমস্যা কোথায়?

অবন্তীঃ বলছিনা কথা না বলতে?

আমিঃ যদি বলি?

অবন্তীঃ তাহলে আব্বুকে কল দিয়ে বলবো তুমি আমাকে ছড় মেরে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছো।

আমিঃ কিহ! আপনি এই কথা বলতে পারবেন?

অবন্তীঃ হুম। এখন পাঞ্জাবী টা খুলে শুয়ে পড়ো।

আমিঃ আপনি কোথায় ঘুমাবেন?

অবন্তীঃ পরে দেখা যাবে। তুমি শুয়ে পড়ো।

তারপর আমি পাঞ্জাবী টা খুলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, আপাতত কেউ নাই, একা একা শুয়ে আছি।

শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি অবন্তী এমন রাগ দেখালো কেন? সেও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি? ধুর এটা হয় না, সে আমাকে এখনো দেবরের মতোই দেখে। বুঝতেছিনা কেন যে অবন্তী আমাকে মেনে নিচ্ছে না আল্লাই ভালো জানে।

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে যাবো এমন সময় বুকের উপর ভারি কিছু একটা অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।

এটা কি হলো? আমি তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা। বাহ! এটা তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো।

আমি উঠতে গিয়েও উঠিনি, এই প্রথম অবন্তী আমাকে স্পর্শ করলো তাও এমনটা একটা মুহূর্ত। আমি কেন পৃথিবীর কোনো পুরুষই এই অবস্থা থেকে উঠবে না।

আমি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি, দেখি অবন্তী কি করে?

কিছুক্ষণ থাকার পর অবন্তী উঠলো, উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো। আমি যেন না বুঝতে পারি সে আস্তে করে রুম থেকে চলে যায়।

আমি মনে মনে হাসতেছি, বালিকা নিজের জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাইছো সেটা দেখলে সমস্যা কোথায়?

যাক একটু পর সে আবার রুমে আসলো। এসে….

অবন্তীঃ জুয়েল! এই জুয়েল!!

আমি ঘুমের ভান ধরে বললাম….

আমিঃ হুমম,,,

অবন্তীঃ এই উঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।

আমিঃ আপনি যান, আমি আরেকটু ঘুমাই।

অবন্তীঃ না আর ঘুমাতে হবে না। উঠো উঠো। একটু পর বর পক্ষ এসে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা উঠছি। এই একটা কথা বলেন তো?

অবন্তীঃ কি?

আমিঃ আপনি কালকে রাতে কোথায় ছিলেন?

অবন্তীঃ মাহির সাথে। কেন?

আমিঃ না এমনি। কেউ একজন আমার পাশে শুয়েছিলো, মনে হয় লিমা হবে। (রাগানোর জন্য)

অবন্তীঃ কিহ, আবারও অই মেয়েটার কথা বলছো? (রাগ দেখিয়ে)

আমিঃ তাহলে কে হতে পারে? আপনি কাওকে দেখেছেন?

অবন্তীঃ এই নাও তোমার ব্রাশ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।

এ কথা বলে অবন্তী এক রকম চোরের মতোই রুম থেকে চলে গেলো। আমি বসে বসে হাসতেছি।

ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম।

বাইরে গিয়ে লিমার সাথে দেখা হয়,,,

লিমাঃ কিরে তুই বেঁচে আছিস?

আমিঃ তোর কি মনে হয়?

লিমাঃ আমার তো মনে হয় তুই মারা গেছিস। তোর আত্না ভুত হয়ে ঘুরতেছে।

আমিঃ হা হা হা হঠ্যাৎ করে এ কথা বললি কেন?

লিমাঃ কালকে রাতে তোর বউ যেই ভাবে তোরে ধরে নিয়ে গেছে সেটা দেখে মনে হইছে যে তুই আজকে শেষ।

আমিঃ আরে না, তেমন কিছু না।

লিমাঃ তোকে তো মনে হয় ভালোবাসে।

আমিঃ আরে না, অবন্তী নিজেও ঠিক মতো কথা বলে না, অন্য মেয়েদের সাথেও কথা বলতে দেয়না। একটা প্যারার মধ্যে আছি।

লিমাঃ হুম বুঝছি। আচ্ছা আর কয়েকটা ডোজ দিবো তোর বউ কে!

আমিঃ আর দরকার নেই দোস্ত। যেগুলো দিছস সেগুলোতেই আমার ১২ টা বাজছে। আর দিলে কি করবে আল্লাই জানে।

লিমাঃ সমস্যা নেই, হালকা করে একটা দিয়ে দিবো।

আমিঃ আচ্ছা দিস।

এমন সময় অবন্তী কল দিলো।

অবন্তীঃ এই জুয়েল কই তুমি?

আমিঃ আছি বাইরে।

অবন্তীঃ বাইরে কি? দরকারের সময় খুঁজে পাই না।

আমিঃ কি বলুন।

অবন্তীঃ তাড়াতাড়ি রুমে আসো।

আমিঃ কেন?

অবন্তীঃ ধুর তুমি এতো কথা বলো কেন? আসতে বলছি আসো।

আমিঃ আচ্ছা আসতেছি।

কলটা কেটে দিলাম,,,

লিমাঃ কিরে কে কল দিলো?

আমিঃ তোর ভাবি,রুমে যেতে বলছে।

লিমাঃ মনে হয়ে আমাকে তোর সাথে দেখেছে। যা তোর খবর আছে।

আমিঃ তুই দাঁড়া আমি একটু আসছি।

লিমাঃ যা বেঁচে থাকলে দেখা হবে। ওপাড়ে ভালো থাকিস বন্ধু হা হা হা

আমি; ফাজিল, থাক আমি আসছি।

তারপর রুমে গেলাম। অবন্তী দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। শাড়ি একটাকে উল্টোপাল্টো করে পড়ে আছে।

আমিঃ কি ব্যাপার আপনার এই অবস্থা কেন?

অবন্তীঃ এই তুমি আসছো,,,

আমিঃ হুম। কি হইছে?

অবন্তীঃ ধুর একা একা শাড়ি পড়া যায় নাকি? দরজাটা লাগিয়ে এদিকে আসো।

আমিঃ দরজা কেন লাগাবো?

অবন্তীঃ তো কি দরজা খুলেই শাড়ি পরবো? যাও লাগিয়ে আসো।

আমি গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসলাম,,

অবন্তীঃ এই শাড়ির আঁচল টা একটু ধরো তো?

আমি তো অবাক হয়ে গেলাম।এটা কি বলে?

অবন্তীঃ ওই আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?

আমিঃ না মানে স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটাইতো বুঝতেছি না।

অবন্তীঃ সামান্য শাড়িটা ধরতে বলেছি এতেই এই অবস্থা,অন্য কিছু বললে কি হতো?

আমিঃ অন্য কিছু কি?

অবন্তীঃ ওই এতো কথা বলো কেন? যেটা করতে বলেছি সেটা করো।

আমি গিয়ে হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কচিগুলো ধরলাম।

আমিঃ আপনি শাড়ি পড়তে পারেন না?

অবন্তীঃ পারি তবে পুরোপুরিভাবে পারিনা।

আমিঃ তাহলে কাল কিভাবে পড়েছেন?

অবন্তীঃ বাসা থেকে আসার সময় আম্মু পড়িয়ে দিয়েছে।

আমিঃ ও আচ্ছা।

অবন্তীঃ যাও তুমি গিয়ে গোসল করে রেড়ি হয়ে নাও। একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর গোসল করে রেড়ি হয়ে নিলাম। অবন্তী নিজের হাতেই আমার শার্টের বুতাম লাগিয়ে দিলো।

একটা জামাই জামাই ভাব আসলো শরীরে। আমি রেড়ি হয়ে বাইরে গেলাম। মাহির বাবা ডেকে নিয়ে গেলো উনার সাথে একটু দেখাশোনা করার জন্য।

আমি উনার সাথে গেলাম। বরপক্ষ চলে আসলো। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শুরু হলো কাজের মাঝখানে আমি নিজেও খেয়ে নিলাম।

কিছুক্ষণ পর মাহিকে মানে পাত্রিকে আনা হলো, মাহির সাথে অবন্তী সহ আরো কতো গুলো মেয়ে ছিলো। অবন্তী দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম। কালো একটা শাড়িতে একটু অন্যরকম লাগছে।

আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন টোকা দিলো তাকিয়ে দেখি লিমা….

লিমাঃ কিরে নিজের বউকে কেউ এভাবে দেখে?

আমিঃ আরে না, আমি বিয়ে দেখতেছিলাম।

লিমাঃ বুঝি বুঝি ডালমে কুচ কালা হে। আচ্ছা বাদ দে, তুই খেয়েছিস?

আমিঃ হুম। তুই?

লিমাঃ ভেবেছিলাম আরো পরে খাবো, আম্মু জোর করে খাইয়ে দিছে।

আমিঃ ভালো করছে।

লিমাঃ এই ১৫ তারিখ তো রেজাল্ট দিবে, জানিস?

আমিঃ কিসের রেজাল্ট?

লিমাঃ আরে আমাদের অনার্স পরীক্ষার।

আমিঃ ও আচ্ছা। তোর নাম্বারটা দেতো। তোদের অফিসে যাওয়ার আগে কল দিবো।

লিমাঃ ওকে, এই নে….. (নাম্বার টা বললো)

আমিঃ দোস্ত তোরে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।

লিমাঃ হইছে, চল তোর বউকে একটু রাগিয়ে দিই।

আমিঃ কেমনে?

লিমাঃ গেলেই দেখবি।

তারপর লিমা আমার একটা হাত ধরে স্টেজে নিয়ে যায়। তারপর বর আর কণে এর মাঝে বসিয়ে ফটো তুলা শুরু করলো। অবন্তীকে বললো আমাদের ছবি তুলে দিতে এটা দেখে অবন্তী রাগে লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।

আমিও একটু রাগানোর জন্য লিমার সাথে ক্লোজ হয়ে বসে ছবি তুলতেছি।

এভাবেই দিনটা চলে গেলো। বিকালবেলা বসে আছি এমন সময় বস কল দিলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,

বসঃ হুম, জুয়েল কোথায় তুমি?

আমিঃ আমি তো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছি।

বসঃ কালকে কাজে আসবে।

আমিঃ কিন্তু বস বিয়ে তো এখনো শেষ হয়নি বউভাত বাকি আছে।

বসঃ তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না। তুমি বিয়ে খাও,,,

আমিঃ না বস, ঠিক আছে আমি কালকে আসবো।

বসঃ মনে থাকে যেন। নাহলে চাকরি ডিসমিস।

কলটা কেটে দিলো। আমি মনে মনে ভাবতেছি শালা লিমাদের ওখানে চাকরিটা একটু পাই তখন দেখবি। তোর এই ব্যবহারের ফল আমি সুদেআসলে দিবো।

অবন্তীর কাছে গেলাম,,,,,

আমিঃ একটু এদিকে আসেন তো।

অবন্তীঃ আমাকে কেন ডাকতেছো? তোমার তো আর মেয়ে ফ্রেন্ডের অভাব নেই।

আমিঃ দেখেন বাজে কথা না বলে সাইডে আসেন।

অবন্তীঃ কি হইছে?

আমিঃ আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি।

অবন্তীঃ চলে যাচ্ছো মানে, কোথায় যাচ্ছো?

আমিঃ বস কল করেছিলো, কালকে কাজে না গেলে চাকরি থাকবে না। এখান থেকে তো আর কাজে যাওয়া সম্ভব না। তাই বলছিলাম আপনি থাকেন বিয়ে শেষ হলে তারপর আমি এসে নিয়ে যাবো।

অবন্তীঃ দরকার নেই। দাঁড়াও আমিও যাবো।

আমিঃ মানে কি! এখনো বিয়ে শেষ হয়নি।

অবন্তীঃ আসলটা শেষ, আর এখানে থেকেও কোনো মজা পাবো না। মাহি তো চলে যাবে। সো দাঁড়াও আমিও আসছি।

কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। লিমাকে ইশারায় বলেছি মোবাইলে কথা বলবো।

তারপর একটা CNG নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

আম্মুঃ কিরে চলে আসলি যে? বিয়ে শেষ নাকি?

আমিঃ না, কাজ আছে। বস কল করেছিলো তাই।

তারপর রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলাম।

আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, আসার পর পুরো ঘটনা ওর সাথে শেয়ার করলাম।

আয়মানঃ বাহ! তার মানে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে?

আমিঃ এখনো সিউর না। আরো কয়েকদিন দেখি।

আয়মানঃ লিমার ডোজটায় কাজ হয়েছে না হলে অবন্তী এতো সহজে নরম হতো না।

আমিঃ হুম বন্ধু ঠিক বলছিস। লিমা অনেক হেল্প করেছে।

আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। রাতে খেয়ে রুমে গেলাম। দেখলাম অবন্তী বিয়ে তোলা ছবি গুলো দেখতেছে। আমি গিয়ে কাঁথা আর বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে ঘুমানোর জন্য রেড়ি হচ্ছি।

অবন্তীর দিকে বার বার তাকাচ্ছি সে কিছু বলে কিনা। কিন্তু না কিছু বললো না।

আমিও শুয়ে গেলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি, অবন্তী তো কিছুই বললো না। তাহলে বিয়েতে কেন শুয়েছিলো একসাথে?

মনে হয় এটা অন্যদের দেখানোর জন্য, মান সম্মান রক্ষার্থে এমনটা করেছে হয়তো। আমার কপালে এগুলো নেই। তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই বেটার।

অবন্তী আগেও আমাকে মেনে নেয় নি, এখনো নিচ্ছে আর ভবিষ্যৎ এ নিবে বলে মনে হয় না। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি এমন সময় আব্বু সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করতেছে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলবে।

আমিঃ কিছু বলবে?

বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? তোর মায়ের মেডিসিন শেষ।

আমি জানি পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে, কারণ যেগুলো ছিলো সব বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। যাতায়াত, বিয়ের উপহার, অবন্তীর শাড়ি পুরো মাসের বেতন শেষ। কি বলবো বুঝতেছি না।

আমিঃ আচ্ছা প্রেসক্রিপশন টা আমাকে দাও আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।

তারপর বাবার থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম কিভাবে কি করবো।

হেটে হেটে কাজে চলে গেলাম। প্রতিদিনের মতো সেই দোকানে দোকানে মাল দেওয়া আর ভ্যান ঠ্যালা।

কাজ শেষ করে আসার সময় বসের কাছে কিছু টাকা চাইলাম। শালা টাকাতো দিলোই না, উলটো আরো ঝাড়ি দিলো।

পরে আয়মানকে কল করে দেখা করতে বলি, ওর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আম্মুর জন্য মেডিসিন গুলো কিনে নিয়ে আসি।

এভাবে দিন যেতে লাগলো, কয়েকদিন পর আমাদের রেজাল্ট দিবে। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। কারন আমার পরীক্ষা যে খারাপ হইছে সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ফেল করবো এটাই শিউর। এদিকে অবন্তী রেজাল্টের চিন্তায় শেষ।

দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে আসলো। আমি যথারীতি কাজে চলে গেলাম।

দুপুরবেলা অবন্তী আমাকে কল দিয়েছে,,,

অবন্তীঃ এই জুয়েল, তুমি কোথায়?

আমিঃ কাজে আছি কেন কি হইছে?

অবন্তীঃ রেজাল্ট দিয়ে দিছে, আমি পাশ করেছি।

আমিঃ congratulation.

অবন্তীঃ thanks. এই তোমার রোল নাম্বার আমি ভুলে গেছি আমাকে বলো তো।

আমিঃ আমি নিজেও ভুলে গেছি, এডমিন কার্ড দেখো।

অবন্তীঃ আচ্ছা দেখতেছি।

তারপর কলটা কেটে দিলো। পাশে বস ছিলো, আমার মোবাইলে কথা বলা দেখে উনি বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো…

বসঃ ওই মিয়া কাজ করতে আসো নাকি প্রেম করতে?

আমিঃ সরি বস!

বসঃ আরে রাখো তোমার সরি। মোবাইল বন্ধ করো মিয়া। এতোই যখন বউ বউ করো তাহলে কাজে আসো কেন? বউ এর কাছে থাকলেই তো পারো।

এই শালার উপর তো রাগ হচ্ছেই সাথে অবন্তীর উপরও। কল দেওয়ার আর সময় পেলো না। রেজাল দিয়েছে তো কি হইছে বাসায় গেলেও তো বলা যেতো। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখে দিলাম।

তারপর কাজ শেষ বসের কাছে টাকা চাইলাম উনি মুখের উপর বলে দিয়েছে মাস শেষ হওয়া ছাড়া কোনো টাকা দিবে না। যদি অতিরিক্ত করি তাহলে অতিরিক্ত কাজের টাকা দিবে।

আমি আরো দুই ঘন্টা করে ১০০ টাকা নিলাম। তার হিসেবে নাকি আরো কম পাবো।

তারপর গেলাম টিউশনিতে, পড়ানোর এক পর্যায়ে ছাত্রের মা আসলো। টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমিঃ আন্টি কিছু বলবেন?

আন্টিঃ এই নাও তোমার এই মাসের বেতন।

আমিঃ কিন্তু আন্টি মাস তো এখনো শেষ হয়নি।

আন্টিঃ জানি, তোমাকে আর আসার দরকার নেই। আমি ওর জন্য নতুন টিচার দেখেছি।

আমিঃ কিন্তু আন্টি কেন?

আন্টিঃ তুমি রাত করে আসো, তার উপর দেখে মনে হয় ক্লান্ত, তোমার পড়ানো নাকি ওর কাছে ভালো লাগে না। আর….

আমিঃ আর কি?

আন্টিঃ আর তুমি নাকি ভ্যান গাড়ি ঠ্যালো, তোমাকে আজকে সকালে ওর ফ্রেন্ডেরা সবাই দেখেছে। তারপর স্কুলে গিয়ে ওরে অনেক রকম কথাবার্তা বলেছে। ঠাট্টা করেছে।

আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। শালা ভ্যান গাড়ির সাথে পড়ানোর কি সম্পর্ক এখনো আমার মাথায় আসছে না।

কিছু না বলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।

এবার কি হবে? টিউশনির টাকাটা দিয়ে আব্বু আম্মুর মেডিসিন কিনি। কিন্তু এবার কি হবে?

হঠ্যাৎ করেই অবন্তীর রেজাল্টের কথা মনে পড়লো, আন্টির দেওয়া বেতন গুলো দেখতে লাগলাম। পুরো টাকা দেয়নি। অর্ধেক দিয়েছে।

বাঁশ আসকে সব দিক দিয়েই আসে, অবন্তীর জন্য ২ কেজি মিষ্টি নিলাম।

তারপর হেটে হেটে বাসায় গেলাম। কলিং বেল দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দিলো তাকিয়ে দেখি……

#চলবে……
To be Continue………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here