শেষ বিকেলের তুমি❤ #writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤ #part:শেষ পর্ব

0
749

#শেষ বিকেলের তুমি❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:শেষ পর্ব


বাসর ঘরে ঢুকার সাহস জোগাতে পারছে না শুভ্র।।এক পা এগুলেই পা যেনো অটোমেটিকলি দু’পা পিছিয়ে যাচ্ছে।।আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা এই দশ হারামজাদাকে দেখে ওর কনফিডেন্স লিভেল আরো লো হয়ে আসছে।।এমন বন্ধু থাকলে মানুষ তার শত্রুর কাছেও সেইভ ফিল করবে, মিরজাফর একেকটা।।এদের দাঁত কেলানো দেখে শুভ্রর ইচ্ছে করছে ঘুরে দৌড় লাগায়।।একসপ্তাহ যাবৎ যে সারপ্রাইজগুলো পেয়ে চলেছে তারপর আর ভরসা রাখতে পারছে না এদের ওপর।না জানি কি করে রাখছে ভিতরে?তার থেকে বড় কথা রোদ।।সেই ছোট্টবেলার কোমলমতি রোদ যে এখন বাঘিনী হয়ে গেছে তা এতোদিনে বেশ বুঝে গেছে শুভ্র,,এই বাঘিনীর হাতেও যে তার নিস্তার নেই সে সম্পর্কে নিঃসন্দেহ শুভ্র।।এসব চিন্তায়ই পড়েই শুভ্র দরজার পাশে ঝিম ধরে দাড়িয়ে আছে,,

এই শালা তুই যাবি ভেতরে?নাকি কিক মারুম?

যাচ্ছি তো,,

তো যা না,

কথাটা বলেই সাহেল এক ধাক্কায় শুভ্রকে রুমের ভেতর পাচার করে দিলো।শুভ্রও হুমড়ি খেয়ে পড়লো,,কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানায় গুটিশুটি বসে থাকা রোদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,,

হাই??

কি চাই?(ভ্রু কুঁচকে)

কি চাই মানে?

কি চাই মানে,,এখানে কেন এসেছেন??

তো বাসর ঘরে মানুষ যে কারনে আসে আমিও তাই এসেছি,(পাশে বসতে বসতে)

শখ কতো,,পুরো দশ বছর আমাকে কষ্ট দেওয়ার পর আসছেন বাসর করতে,,

আরে কষ্ট তো তুই দিয়েছিস আমাকে….দশটা বছর দূরে ছিলি….বাবা-মার সাথে ঠিকই কথা বলেছিস কিন্তু আমাকে তোর নাম্বারটাও দিতে মানা করে দিয়েছিস,,কোথায় আছিস সেটা বলা তো দূরের কথা।।শুধু জানতাম তুই দেশে নেই ব্যস।।

এটাই কি তোমার প্রাপ্য ছিলো না?সেই ক্লাস ওয়ান থেকে তোমার পেছনে পাগল ছিলাম….তখন তুমি ক্লাস এইটে পড়তে।।আমি বাচ্চা ছিলাম কিন্তু তুমি তো বড় ছিলে….বুঝাতে পারতে আমায় কিন্তু না,,বুঝানো তো দূরের কথা কখনো অবহেলা ছাড়া অন্য কিছু তোমার মনে ছিলো আমার জন্য ??সবসময় আমাকে ফেলে দেওয়া কোনো জিনিসের মতো ট্রিট করতে….কারণ জানতে এই রোদ তোমার পিছেই পড়ে থাকবে(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

সরি রোদ…তখন বুঝতে পারি নি।।মাফ করে দে প্লিজ।।

সরি??হাহাহা…জাস্ট একটা সরি??তুমি জানো সেদিনের পর থেকে কতো রাত আমি শুধু কান্না করে কাটিয়েছি।।ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে কতোটা নিষ্ঠুরের মতো মেরেছিলে আমায়…তাই চলে গিয়েছিলাম…তোমার প্রতি সব ভালোবাসাটুকুকে জেদে রূপান্তর করে।।দশটা বছরে একটাবারও ইচ্ছে হয় নি তোমার সাথে দেখা করার…কিন্তু হঠাৎ যখন মামানি বিয়ের প্রোপোজাল দিলো অবাক হলাম কিন্তু মেনে নিতে পারি নি।।স্ট্রংলি মানা করে দিয়ে ছিলাম।।কিন্তু সিদ্ধান্তটা পাল্টাতে বাধ্য হলাম তোমার ডায়েরীটা পড়ে।।কি কাহিনী বলো তো??আমি চলে যেতেই ভালোবাসা উপচে পড়ছিলো নাকি??ডায়েরীতে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের ছাপ কেন?(ভ্রু নাচিয়ে)

ভালোবাসি তোকে…কতটুকু জানি না… কিভাবে তাও জানি না।।শুধু কষ্টটাই জানি..ঠিক কতোটা কষ্ট হয়।। তুই যখন আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিলি..প্রথম দিনটা নিজেকে বুঝিয়েছি আমি অনেক হ্যাপি..কিন্তু পরের দিনগুলো যে এভাবে অসহনীয় হয়ে উঠবে ভাবি নি।।প্রথমে মন খারাপ তারপর দম বন্ধ ভাব।। যেনো গলায় ফাঁস দিয়ে দিয়েছে কেউ।।তোর বলা,,”শুভ্র??এই শুভ্র….ওহহ সরি সরি শুভ্র ভাই..তুমি বলো আমায় কি করতে হবে..আমি তোমার জন্য সব করতে পারি।।” আবার ছাদে দাড়িঁয়ে তোর হঠাৎ বলে ওঠা,,”বুঝলে শুভ্র ভাই আমি না আজ নামায পড়ে আল্লাহকে বলেছি, আল্লাহ যেনো তোমার সব রাগগুলো মেঘ করে দেই,,ওই দেখো ওই সাদা মেঘের মতো।।তুমি এতো রাগী কেনো বলো তো??শুধু শুধু আমায় বকো”।।তোর সেই ছোট্ট ছোট্ট কথাগুলো শোনার জন্য পাগল হয়ে পড়ছিলাম।।সেই মুহূর্তে আমি আর কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না,,শুধু মাথায় একটা কথায় ছিলো তোকে আমার এই মুহূর্তে চাই।।শেষমেষ আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেই নিলাম তোর কথা।।তুই কেনো আসিস না??আম্মু সাবলিল ভঙ্গিতে বলে দিলেন,,তুই আর দেশে নেই।।কিন্তু কথাটা আমি এতোটা সহজে নিতে পারলাম না,,, আমার পৃথিবীটা যেনো ঘুরে গেলো মুহূর্তেই।।আমি এমন কিছু আশা করি নি কখনো…বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিলো।।সেদিন রাগে দুঃখে হাত কেটে ডায়েরীর পাতা ভিজিয়েছিলাম।।জানি না কেনো…হয়তো তোকে মারার শাস্তি দিচ্ছিলাম নিজেকে।।

রোদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে…শুভ্রর চোখে পানি টলমল করছে।।একটা মুচকি হাসি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে শুরু করলো….

কারো জন্য কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে আমি এটা কোনো কালেই বিশ্বাস করতাম না কিন্তু জিএসসি পরীক্ষার আগে যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।।তখন কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো তোকে একবার দেখতে পারলেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো,,একবার তোর মুখে শুভ্র নামটা শুনলেই ব্যথাগুলো দৌড়ে পালাবে…কিন্তু কোনো উপায় ছিলো না।।তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিই নিজেকে বুঝায় তুই ফিরবি অবশ্যই ফিরবি।।কিন্তু বছর ঘুরে যখন ১৫ জুলাই আসতো তখন নিজেকে আটকাতে পারতাম না।।এই দিনটাতেই তোকে মেরেছিলাম যার জন্য তুই আমার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলি ভাবতেই চাপা কষ্ট আর রাগ ঝাপটে ধরতো আমায়।।ওই দিন খুব কান্না পেতো।।ছেলেদের তো কাদঁতে নেই ওদের স্ট্রং থাকতে হয় তাই রক্ত ঝরাতাম,,নিজেকে শাস্তি দিতাম।।দেখ তোর জন্য এতোদিনেও আমি সিংগ্যাল আছি,,যদিকে সাহেল এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে।।(হালকা হেসে)জানিস? আম্মুর আনা একেকটা মেয়েকে কতো কষ্টেই না ভাগাতে হয়েছে,, আল্লাহ মালুম।।তবে সব কষ্ট সার্থক,,”আমার শেষ বিকেলের তুমি” হয়ে।। আমার কষ্টের শেষ বিকেলটাকে রাঙিয়ে দিতে তুই আজ আমার পাশে,,,আমার হয়ে আমার সাথে বসে আছিস।।ব্যস তাতেই দশবছরের কষ্ট উদাও,,

এহহহ,,,তুমি তো নকল বউ সেজে থাকা আমার প্রেমেই পড়েগিয়েছিলে,, আমি বেশ বুঝেছি।।যেভাবে তাকিয়ে থাকতে আমার দিকে…. রোদকে ভালোবাসলে মোটেও প্রেমে পড়তে না,,

হাহাহাহা…আরে আমি তো কনফিউজড ছিলাম তখন।।আমি ভাবছিলাম যদি আমি বিয়ে করেও থাকি তাহলে মেয়েটি কে??রোদ নাকি অন্য কেউ??আমি তো রোদ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা না।।আর তাছাড়া চেনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম বাট তোদের কথাবার্তায় সবকিছু আউলায় যাচ্ছিলো,,,বুঝলি??(নাক টেনে)

হুমম

তোহ??(ভ্রু নাচিয়ে)

তোহ কি?(ভ্রু কুঁচকে)

আমি কনটিনিউ করতে পারি আমার বাসর??(চোখ টিপে)

উমমম…ভাবতে হবে,,,ভাববো…চিন্তা করবো…তারপর বলবো … পারো কি পারো না…(দাঁত কেলিয়ে)

কিহহ??তাহলে দেখা যাবে ততদিনে সাহেল নাতিপুতি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেই যাচ্ছি….কারণ তখনও তোর ভাবনা চিন্তা শেষ হবে বলে মনে হয় না(মুখ গোমরা করে)তার থেকে দুই তিনটা গার্লফ্রেন্ড রিজার্ভ রাখতাম….এদিকে তুই ভাবতি ওদিক না হয় আমি ওদের সাথেই….

খুনন করে ফেলবো…

হাহাহাহাহা,,, আমি তো এক পায়ে রাজি(চোখ টিপে)তোর হাতে সবই আদর…সবই ভালোবাসা,,,তাই এক কথায় মরতেও রাজি।।তো মারবি আয়….

দূরে গিয়ে বসো বলছি,,,

কেন মারবি না??(বাঁকা হেসে)

খুনশুটি ভালোবাসাগুলো চলতে থাকুক এভাবেই অবিরাম গতিতে…ভালোবাসার রঙে রাঙা হোক সবাই।।তবে আপাতত আমাদের এই রুম থেকে যেতে হচ্ছে,,, এটা রোদ শুভ্রর শেষ বিকেলের গল্প,,, সেই গল্পের শেষ বিকেলে মেতে উঠার অধিকার শুধু তাদেরই।। তাই কাবাবে হাড্ডি না হয়ে একটু লাজুক হাসিতেই বিদায় নিই সবাই,,,,ওরা নাহয় রাঙা হোক ভালোবাসার রঙে…..

সমাপ্ত…..❤❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here