নীল চিরকুট লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা ৬২.

0
1295

নীল চিরকুট
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

৬২.

কাকের কর্কশ ডাকে ঘুম ভেঙে গেল নম্রতার। দক্ষিণের জানালায় বসে থাকা কাকটা কৌতূহলী চোখে চেয়ে আছে। ঘরভর্তি প্রথম ভোরের আলো। নম্রতা চোখ মেলে চারপাশটা দেখল, অপরিচিত ঘর, অপরিচিত বিছানা। সদ্য ভোরের ঝাপসা আলোয় অপরিচিত ঘরটা আরও বেশি অপরিচিত ঠেকল নম্রতার। শরীরটা দূর্বল লাগছে। হাতে-পায়ে বল পাওয়া যাচ্ছে না। নম্রতা ধীরেসুস্থে বিছানা থেকে নামল। গায়ে তার নিদ্রার টি-শার্ট আর টাওজার। গায়ের পোশাকের দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। মিনিট খানেক ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই গুটি গুটি পায়ে ঘর ছাড়ল নম্রতা। আশপাশটা দেখতে দেখতে উঠে গেল ছাদে। চাল-চলনে তার অস্বাভাবিকতার ছোঁয়া। যেন ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি কোনো রাজ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে সে। ছাদের দরজায় পৌঁছেই স্তম্ভিত হয়ে গেল নম্রতা। ছাদটাকে হঠাৎ করেই রূপকথার রাজ্য বলে বোধ হলো। বিশাল ছাদটা ভোরের ফ্যাকাশে আলো আর কুয়াশায় ঝাপসা দেখাচ্ছে চোখে। সেই ঝাপসা আলোতেই টানা বারান্দা দেওয়া ছনের ঘরটা চোখে পড়ল নম্রতার। বারান্দার বাঁশগুলো বাহারি লতা-পাতায় ঢাকা। ঘরের পাশে, মাঝারি আকারের শিউলি গাছে, ফুটন্ত কিছু শিউলি। কুয়াশায় ডুবে থাকা ঘরটা যেন দরদী শিল্পীর ভীষণ দরদ দিয়ে আঁকা প্রকৃতির গল্প। ফুল গাছে ভরে থাকা চারপাশটা কী স্নিগ্ধ। এ যেন এক রূপকথার বেলীফুলের রাজ্য!

নম্রতা বিস্ময় নিয়ে সামনে এগলো। ঘরের সামনের দুই তিন হাতের রাস্তাটা শিউলির চাদরে ঢাকা। নম্রতা কৌতূহল নিয়ে বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বারান্দার এক কোণায় ছোট্ট একটা দোলনা। দরজার পাশের দেয়ালটিতে ঝুলছে ভীষণ পুরোনো এক হারিকেন। পশ্চিমের দেয়ালটিতে নকশা করা বেতের বাক্স। তাতে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা ‘ডাকপিয়ন’। নম্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটল। চোখে ফুটল রাজ্যের বিস্ময়। ঢাকা শহরে এমন একটা ঘর? অবিশ্বাস্য! নম্রতা ডাকপিয়নের দিকে পা বাড়াতেই অদ্ভুত তীক্ষ্ম কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল কেউ,

‘ শ্যামলতা! শ্যামলতা! চিঠি! চিঠি! আমার নাম ডাকপাখি। আমার নাম ডাকপাখি।’

নম্রতা চমকে দুই পা পিছিয়ে দাঁড়াল। ভীষণ ভীত চোখে আশেপাশে তাকাল। কই?কেউ তো নেই। নম্রতার ভাবনার মাঝেই আবারও চেঁচিয়ে উঠল সেই কন্ঠ,

” শ্যামলতা! শ্যামলতা! চিঠি! চিঠি!’

নম্রতা এবার ভয়ে ভয়ে বারান্দার দিকে তাকাল। বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করল, বারান্দার এক কোণায় ঝুলছে খাঁচায় বন্দী হৃষ্টপুষ্ট টিয়া পাখি। নম্রতা বোকা বোকা চোখে চেয়ে রইল। টিয়া পাখিটা তার নামই তো ডাকছে। কি আশ্চর্য! পাখিটা তাকে চেনে? নম্রতার ভাবনার মাঝেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো দীর্ঘকায় এক মানব। নম্রতা চোখ ফিরিয়ে দরজার দিকে তাকাল। মানুষটির গায়ে অফ হোয়াট টি-শার্ট। মাথা ভর্তি ভেজা চুল। চোখদুটোতে এক রাজ্য বিস্ময়। নম্রতা কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করল। ফিরে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিতেই হেসে এগিয়ে এলো মানুষটি।

‘ এতো সকালে উঠে পড়েছেন যে?’

পরমুহূর্তেই উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

‘ জ্বর কমেছে? দেখি।’

নম্রতা দুই পা পিছিয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। উত্তর দিল না। আরফান বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বলল,

‘ কী হলো?’

নম্রতা চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইল, উত্তর দিল না। আরফান কপাল কুঁচকে তাকাল। নম্রতাকে আগাগোড়া নিরক্ষণ করে বলল,

‘ জ্বর নিয়ে এই পাতলা কাপড়ে ছাদে আসার কী প্রয়োজন ছিল? কমন সেন্স নেই? কত ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে দেখেছেন?’

এটুকু বলেই ঘরে ঢুকে গেল আরফান। কয়েক মিনিটের মাঝেই চাদর হাতে বেরিয়ে এলো আবার। চাদরটা নিয়ে নম্রতার দিকে এগিয়ে আসতেই ছিটকে সরে গেল নম্রতা। ধমক দিয়ে বলল,

‘ খবরদার আমার দাঁড়ে কাছে আসবেন না। বেয়াদব পুরুষ মানুষ। আপনার মনের খবর আমি খুব ভালো করেই জানি।’

আরফান থমকে দাঁড়াল। অবাক চোখে চেয়ে রইল। নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু হাসল,

‘ আচ্ছা? তো কী জানেন?’

‘ আপনি যে আমায় পটিয়ে ফটিয়ে নিজের জীবন থেকে আউট করতে চান তা খুব ভালো করে জানি আমি। দেখুন ডক্টর? এতো নাটক ফাটকের দরকার নেই। আমার প্রতি এতো মায়া দেখানোরও প্রয়োজন নেই। আমি এমনিতেও আপনাকে বিয়ে করব না। আপনার যাকে ইচ্ছে আপনি বিয়ে করতে পারেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি বাবাকে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব। আপনি চাইলে আপনার মাকেও জানিয়ে দিতে পারি। নাও চয়েজ ইজ ইউরস।’

নম্রতার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়ল আরফান। আকাশসম বিস্ময় নিয়ে বলল,

‘ কী বলছেন? কেন বলছেন?দুপুরে আসিনি বলে এত রাগ?’

নম্রতা চোখ রাঙিয়ে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ আপনি দুপুরে আসুন বা বিকেলে আসুন বা মধ্যরাতে কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকুন কোনো কিছুতেই আমার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। আমি আপনাকে বিয়ে করব না, মানে করব না।’

আরফান হাসল। নম্রতাকে জোর করে টেনে নিল কাছে। নম্রতা হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও লাভ বিশেষ হলো না। আরফান নম্রতাকে শক্ত করে চেপে ধরে চাদর জড়াল গায়ে। নম্রতাকে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখে হাতের বাঁধন শক্ত করে বলল,

‘ আহ! লাফাচ্ছেন কেন? বিয়ে করবেন না বললেন, শুনেছি তো। বিয়ে না করলে জড়িয়ে ধরা যাবে না? আপনার যদি বিয়ে করতে ইচ্ছে না হয় তাহলে করব না। জোরাজুরি করেছে কে? বিয়ে তো সবাই করে। আমরা বরং লিভ ইন রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করব। বাইরের দেশগুলোতে এসব কমন। ব্যাপার না।’

নম্রতা ধাক্কাধাক্কি থামিয়ে অবাক চোখে তাকাল। পরমুহূর্তেই রাগে ফুঁসে উঠল। আরফান থেকে দূরে সরার চেষ্টা করে বলল,

‘ আপনি খুবই জঘন্য একটা মানুষ। কী মনে করেন আমাকে? খুব সস্তা? মাঝরাতে অন্যের ফোনালাপে ব্যস্ত থাকবেন অথচ আমার বেলায় ব্যস্ততা। আমি বেঁচে আছি না মরে গিয়েছি তাতে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই আপনার। নিজ থেকে ফোনটা পর্যন্ত দেন না। আর আমি ফোন দিলে বিরক্তিতে ফোন বন্ধ। এতোই যদি বিরক্তি তাহলে এতো নাটকের প্রয়োজন কী? আপনার জীবনে আমার অস্তিত্ব ব্যস্ততা আর খেয়াল হওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ নিষ্প্রভ। আমি বোধহয় অতটাও সস্তা নয়। এতোটা অবহেলা আমি ডিজার্ভ করি না। আর আপনি ডিজার্ভ করেন না আমাকে। কখনও ডিজার্ভ করেন না। ছাড়ুন!’

কথাগুলো বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল নম্রতা। আরফান আহত চোখে তাকাল। রাগারাগি না করে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। মৃদু কন্ঠে বলল,

‘ আপনাকে অবহেলা করা আমার পক্ষে সম্ভব বলে আপনার বিশ্বাস হয় নম্রতা?’

নম্রতা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে অন্য দিকে চেয়ে রইল। উত্তর দিল না। আরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ আমি যে এমনই তা তো আপনি জানতেন নম্রতা। বার বার ফোনে কথা বলার চেয়ে আপনাকে অনুভব করতেই বেশি পছন্দ করি আমি। যখন আমাদের মাঝে চিঠি দেওয়া নেওয়া হতো তখনও কী আমি এমনই ছিলাম না?’

নম্রতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুদ্ধ কন্ঠে বলল,

‘ তাই বলে কখনও অবহেলা করতেন না। এক সপ্তাহ পরও যখন চিঠি লিখতেন, আমার মনে হতো আপনার সবটা জুড়ে শুধু আমিই আছি। কিন্তু এখন তেমনটা হচ্ছে না। আমার বারবার মনে হচ্ছে আপনি অন্যকারো মায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন ডক্টর। এমন যদি হয় তবে আমায় সরাসরি বলুন। আমি আপনার পথে বাঁধা হব না।’

আরফানের মেজাজ বিগড়ে গেল। নম্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বারান্দার দরজায় গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে চোখ তোলে তাকাল। নম্রতার হাতটা জোরপূর্বক টেনে নিয়ে পাশে বসাল। নম্রতার হাতের আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,

‘ কেন আমায় অবিশ্বাস করছেন নম্রতা? আমি কী এমন কিছু করেছি যা আপনার পছন্দ হয়নি? আমি মাঝরাতে কারো সাথে কথা বলি, এটা আপনার ভুল ধারণা। আপনার আমাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল যেমনটা আমি আপনাকে করি। কিছুদিন যাবৎ একটা মেয়ে ভীষণ বিরক্ত করছিল আমায়। ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছিল। তারপর হঠাৎ একদিন নিজেকে শ্যামলতা বলে দাবী করে বসল।’

নম্রতা অবাক চোখে তাকাল। আরফান অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ আপনি চাইলে আমার কল লিস্ট চেইক করতে পারেন। আমি কখনও ফোন দিইনি তাকে। সে নিজে আমাকে ফোন দিয়েছে প্রতিবার। সে যখন নিজেকে শ্যামলতা বলে দাবী করল তখন ভীষণ ডিস্টার্বড হয়ে পড়েছিলাম আমি।’

নম্রতা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

‘ মেয়েটার কথায় আমাকে অবিশ্বাস করেছিলেন আপনি? এজন্যই এবোয়েড করছিলেন আমায়?’

আরফান হেসে ফেলল। নম্রতাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আলতো চুমু খেল কপালে। ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে বলল,

‘ এক সেকেন্ডের জন্যও নয়।’

‘ তাহলে ম্যান্টালি ডিস্টার্বড হয়ে পড়েছিলেন কেন? মেয়েটার ফোন নাম্বারটা ব্লক করে দিলেই হতো।’

আরফান নম্রতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,

‘ আপনি নিজেও জানেন না শ্যামলতা নামক মানুষটা আমার অনুভূতির কতটা জুড়ে আছে নম্রতা। এই অনুভূতিটা কতটা তীক্ষ্ণ, কতটা জোড়াল। আমার জীবনের সবচেয়ে সেনসেটিভ দিকগুলোর একটি আপনি নিজে শ্যামলতা। মেয়েটা যখন ফোন দিয়ে নিজেকে শ্যামলতা বলে দাবী করছিল। তখন আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার এই অনুভূতিটাকে অপমান করছে। আপনাকে অপমান করছে। আমাদের এই অনুভূতি নিয়ে বিশ্রী একটা খেলা খেলছে। হাসাহাসি করছে। বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। দ্বিতীয়ত, মেয়েটা কে হতে পারে, তার উদ্দেশ্য কী এসবও মাথায় ঘুরছিল খুব। তারওপর হসপিটালে কাজের চাপ। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা অসহ্য লাগছিল খুব। আপনার ধারণা তার নাম্বার আমি ব্লক করিনি? এই নিয়ে দশটা নাম্বার ব্লক করেছি কিন্তু কোনো লাভ নেই। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে ফেলে রাখতাম। যখন দেখলাম তাতেও কাজ হচ্ছে না তখন ফোনই বন্ধ করে রাখতে লাগলাম। সেদিন রাতেও এমন কিছুই ঘটেছিল। ফোন রিসিভ করে ফেলে রেখেছিলাম বলেই আপনার কলের হদিশ পাইনি। আপনার সাথে কথা বলার সময়টুকুতেও চার থেকে পাঁচবার কল দিয়েছে সেই মেয়ে। এতো বিরক্ত লাগছিল। ইচ্ছে করছিল মেয়েটাকে আমি খুন করে ফেলি।’

নম্রতা স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইল। আরফান একটু থেমে আবার বলতে লাগল,

‘ রাতে মেজাজ খারাপ থাকায় ঘুম ভালো হয়নি। ডিউটিতেও ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারিনি। হসপিটালেও সেদিন ঝামেলা চলছিল। রোগীর চাপও ছিল বেশি। এতো কিছুর মধ্যে সীম অন করার ব্যাপারটা মাথায় আসেনি। আপনাকে ফোন করার সুযোগও হয়নি৷ আপনি বলার পর মনে হয়েছে। আমার খেয়াল রাখার উচিত ছিল। আমি সরি নম্রা।’

নম্রতা অভিমান নিয়ে বলল,

‘ আমি তো ভেবেছিলাম, আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ রেখেছেন আপনি। আপনার অন্য নাম্বারটাও দেননি আমায়। আমি ফোন দেওয়ার পরও রুড বিহেভ করেছেন, আমি কষ্ট পেয়েছি।’

আরফান অবাক হয়ে বলল,

‘ ওই ফোন নাম্বারটা যে আপনার কাছে নেই তাই-ই তো খেয়াল ছিল না আমার। আর তখন সামনে সত্যিই প্যাশেন্ট ছিল। বৃদ্ধা ভদ্রলোক ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে চেয়ে আছে, বিষয়টা অস্বস্তির না? আপনি বুঝতেই চাইছিলেন না। প্যাশেন্টের সামনে কী করে বুঝায় বলুন? আর রাগ তো আমারও করার কথা ছিল। আমি কী রাগ করেছি? নিদ্রার থেকে আপনার অসুস্থতার খবর শুনে কত অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম জানেন? হাজারবার কল দিয়েছি, রিসিভ করলেন না। শেষমেশ লজ্জার মাথা খেয়ে আপনার বন্ধু নাদিমকে ফোন করতে হয়েছে আমায়।’

নম্রতা চোখ বড় বড় করে তাকাল। অবিশ্বাস নিয়ে বলল,

‘ নাদিমকে ফোন করেছিলেন আপনি? ও বলেনি তো।’

‘ বলার প্রয়োজন মনে করেনি বলেই হয়ত বলেনি। তাছাড়া সেদিন রাত একটা পর্যন্ত ফোন ট্রাই করেছি আমি। বারোটা পর্যন্ত ফোনই রিসিভ করলেন না। তারপর থেকে ফোন বন্ধ। সকালে হসপিটালে যাওয়ার আগে এবং হসপিটালে গিয়েও কল করেছিলাম সেই-ই যে ফোন বন্ধ আর খুললেনই না। কতটা অস্থির লাগছিল জানেন?’

নম্রতার হঠাৎ করেই মনে পড়ল, আরফানের সাথে রাগ করে ফোনটা সাইলেন্ট করে আলমারিতে তুলে রেখেছিল নম্রতা। ছোঁয়ার বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হওয়ায় আর বের করা হয়নি। নম্রতা অপরাধী চোখে তাকাল। পরমুহূর্তেই তেজ নিয়ে বলল,

‘ তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু কাল দুপুরে কোথায় হাওয়া হয়েছিলেন আপনি? এতোই যদি খারাপ লাগত তাহলে আমি আসব জেনেও হাওয়া হতেন না নিশ্চয়।’

কথাটা বলে ভ্রু নাচাল নম্রতা। আরফান ভেজা চুলগুলো গোছাতে গোছাতে বলল,

‘ হসপিটালে যাওয়ার দুই তিন ঘন্টা পর আবারও সেই মেয়ের ফোন পেয়েছিলাম আমি। মেয়েটি কথা শুরু করার আগে পাশে কোথাও হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। মেয়েটির কথার মাঝেও পাশে থেকে সূক্ষ্ম হাসির আওয়াজ পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল কয়েকজন মিলে হাসি চাপার চেষ্টা করছে। তৎক্ষনাৎ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। ওরা যে দলবেঁধে ব্যাপারটা নিয়ে ফাজলামো করছে তা তখন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ঠিক ওই মুহূর্তে আসল কালপ্রিটকে না ধরতে পেরে। তাকে দুটো থাপ্পড় না মেরে শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই রহস্য উদঘাটনে বেরিয়েছিলাম। মেজাজ খারাপ ছিল বলে বোকামো করে ফোন ফেলে গিয়েছিলাম চেম্বারে। তাই আর কল করে ইনফর্ম করতে পারিনি।’

নম্রতা বিস্ময় নিয়ে বলল,

‘ আপনি মেয়েটিকে সত্যিই থাপ্পড় মেরেছেন?’

‘ না। মারিনি। তখন হাতের কাছে পেলে হয়ত মারতাম। যদিও মেয়েদের গায়ে হাত তোলার অভ্যাস আমার নেই। নিদ্রাকেও কখনও মারিনি। বকিওনি। রেগে গেলেও না। আমি না মারলেও আপনি কিন্তু মারতেই পারেন। লঞ্চে আমাকে যেভাবে খামচে ধরেছিলেন, সেভাবে। নিজেকে আপনার বরের বউ হিসেবে দাবী করছিল। আপনার তো ভয়ানক রেগে যাওয়া উচিত।’

শেষের কথাগুলো দুষ্টুমি করে বলল আরফান। নম্রতা সেসব খেয়াল না করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

‘ মেয়েটা কে? খুঁজে পেয়েছেন তাকে?’

আরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ পাইনি তবে শীঘ্রই পাব। কাল সিরাজগঞ্জ গিয়েছিলাম আমি। রাতে ফিরেছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল চিঠিটা সঠিক জায়গায় রাখা হয়নি। এখনও অবশ্য তাই মনে হচ্ছে। মুহিবের ভাষ্যমতে, চিঠিটা সে গ্রন্থাগারে না রেখে তার এক বন্ধুকে রাখতে দিয়েছিল। আর পড়াশোনার চাপে চিঠিটা সঠিক জায়গায় রাখা হয়েছিল কী-না তার খোঁজ নিতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। আমি আপনার ফোন না পেয়ে প্রায় তিনদিন পর মুহিবের সাথে যোগাযোগ করি। মুহিব যোগাযোগ করে তার বন্ধুর সাথে। তার বন্ধু তাকে জানায় চিঠিটা সঠিক জায়গায় রাখা হয়েছে। মুহিবও আমায় সেরকমটাই বলে। আপনি যখন দুই সপ্তাহের মাথাতেও কল করলেন না। তখন মুহিবকে গ্রন্থাগারে গিয়ে চিঠি আছে কী নেই তা সিওর হয়ে জানাতে বলি। সেদিনই মুহিব গ্রন্থাগারে গিয়ে বইয়ের ছবি তুলে পাঠায়। চিঠি নেই। তারমানে চিঠিটা আপনি পেয়েছেন। এমনটা ধারণা করেই অপেক্ষা করতে লাগি। এখন প্রশ্ন হলো, তার বন্ধু কী চিঠিটা সত্যিই রেখেছিল বইয়ে?’

নম্রতা স্তম্ভিত চোখে চেয়ে থেকে আর্তনাদ করে বলল,

‘ ইয়া মাবুদ! এই একটা চিঠি নিয়ে এত কাহিনী? আমার মাথা ঘুরছে। মুহিব ভাইয়ের বন্ধু আবার আরেকজনকে রাখতে দিলেই হলো। চিঠি এভাবে সার্কেলের মতো ঘুরতেই থাকবে। রহস্যও ঘুরতেই থাকবে ভন ভন ভন। ভয়াবহ।’

আরফান হাসল না। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘ মুহিব আমার সাথে ঢাকা এসেছে। আজ বিকেলে তার সেই বন্ধুকে একটা কফিশপে দেখা করতে বলা হয়েছে। আমার মনে হয় এবার উত্তর মিলবে।’

নম্রতা আরফানের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এতো কাহিনী! আমি তো শুনতে শুনতেই টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি ভাই।’

আরফান হেসে বলল,

‘ এতো অল্পতেই ক্লান্ত? তাহলে চারবছর ধরে অপেক্ষা করলেন কীভাবে? ক্লান্ত হয়ে পড়েননি? আমাকে খুঁজে পাওয়াটাও মুশকিল ছিল।’

নম্রতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তখন আপনি পাশে ছিলেন না বলে পেরেছি। এখন আছেন, এখন আমার বিশ্রাম।’

আরফান হেসে নম্রতাকে সামনে টেনে নিয়ে বলল,

‘ রাগ-অভিমান কমলে কাছে আসুন তো, জ্বর কমেছে কিনা দেখি। কাল এসেই আপনার অসুস্থতার কথা শুনে কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানেন? মা আমাকে দুই দুটো থাপ্পড় মেরেছে গালে। আপনি বসুন, আমি আমার ব্যাগ নিয়ে আসি। প্রেশার মাপতে হবে।’

আরফান উঠতে নিতেই বিরক্ত চোখে তাকাল নম্রতা,

‘ এসব ডাক্তারি ফাক্তারি বন্ধ করুন তো। আমি এখন একদম সুস্থ। প্রেশার ট্রেশার মাফতে হবে না। তার থেকে পাশে বসুন, সকাল দেখি।’

আরফান আগের জায়গাতেই বসে পড়ল। নম্রতার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা। এবার বলুন, মহারাণী কী তার বেলীফুলের রাজ্য দেখে সন্তুষ্ট হয়েছে? এই রাজ্যে শুধু শ্যামলতার অধিকার।’

নম্রতা এবার আশেপাশে তাকাল। ভীষণ উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,

‘ ভীষণ সন্তুষ্ট। ঢাকা শহরে ছনের ঘর। ভাবতেই পারছি না। ডেকরেশনটাও কী মারাত্মক!’

আরফান হুহা করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল,

‘ এটা ছনের মতো দেখতে হলেও ছনের ঘর নয় নম্রতা। ইটের দেয়ালে ছনের মতো পেইন্ট করা হয়েছে।’

নম্রতা যেন আকাশ থেকে পড়ল। বোকা বোকা চোখে চেয়ে বলল,

‘ এটা ইটের দেয়াল! একদম বোঝা যায় না। সত্যি বলছি…তাহলে এই বাঁশগুলোও কী?’

বিস্মিত চোখে চাইল নম্রতা। আরফান হেসে বলল,

‘ স্পেশাল পেইন্টার এপয়েন্ট করেছিলাম পেইন্ট করার জন্য। যেন আপনি যেমন চান ঠিক তেমই হয়। আর এগুলোও বাঁশ নয়। স্বাভাবিক লোহার গ্রিল। বাঁশের মতো রং করা হয়েছে।’

নম্রতা অবিশ্বাস নিয়ে বাঁশের উপর হাত রাখল। নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কপাল কুঁচকাল। বাঁশটা টিপে টিপে পরীক্ষা করার চেষ্টা করল। নম্রতার পাগলামোতে শব্দ করে হেসে ফেলল আরফান।

‘ এখন তো অনেক সকাল, কুয়াশাও পড়েছে তাই একদম বুঝতে পারেননি। কুয়াশা কেটে গেলে খেয়াল করলেই বুঝা যাবে। আমি তো ভেবেছিলাম একদম বিয়ের রাতে সারপ্রাইজ দিব আপনাকে। কিন্তু আপনি তো সব প্ল্যানই মাটি করে দিলেন।’

নম্রতা লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। ঠোঁট ভর্তি অকৃত্রিম হাসি নিয়ে চারদিক দেখতে দেখতে বলল,

‘ বিয়ের পর আমরা এখানে থাকব?’

‘ অবশ্যই। আপনিই না বলেছিলেন? আমরা ছোট্ট একটা ঘর বাঁধব। ছনের ছাওয়া চাল থাকবে। ফাঁক গলে জ্যোৎস্না আসবে। একটা পোষা টিয়া থাকবে। দেখুন তো সব ঠিকঠাক আছে না? আপনি বারান্দার দোলনাটাতে বসলেই এক ঝাঁক জ্যোৎস্না এসে ঘিরে ধরবে। পোষা টিয়া আপনার সাথে কথাও বলবে। ওকে আমি কথা শেখাচ্ছি আজকাল। এতো গাছ পেয়ে ঝিঁঝি পোকাদেরও দেখা মিলে মাঝে মাঝে। রাতে যখন আমি ফিরব তখন সারা ছাদের আলো নিভিয়ে হারিকেন জ্বালাব। জ্যোৎস্নার আর হারিকেনের আলো মিলেমিশে স্বর্গীয় এক আলো ছড়াবে। সেই আলোয় বসে একের পর এক গল্প করবেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনব। চারপাশে থাকবে বেলী ফুলের তীব্র সুবাস।’

আরফানের কথাগুলো শুনেই আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়ল নম্রতা। সুন্দর একটা রাতের ছবি ভেসে উঠল চোখের পর্দায়। বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল দুঃখ দুঃখ সুখ। নম্রতা আনন্দে আত্মহারা হয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। ডাকপিয়ন বাক্সটির কাছে গিয়ে কৌতূহল নিয়ে বলল,

‘ এটা কী?’

আরফান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,

‘ এটা চিঠি বাক্স। আপনার খুব ইচ্ছে ছিল না? বিয়ের পরও আমরা চিঠি প্রেম করব? সেজন্যই এই ব্যবস্থা। আমাদের সাংসারিক জীবনে নানা বাঁধা সৃষ্টি হবে, রাগ হবে, অভিমান হবে, ভুল বোঝাবুঝিও হবে। সেই রাগ,অভিমান, অভিযোগ সবকিছু এই বাক্সটিতেই চালান করব আমরা। যখনই মন খারাপ হবে তখনই চিঠি লিখতে বসে যাবেন আপনার প্রেমিকের ঠিকানায়। ডাকবক্সের বাইরে আমাদের সম্পর্কটা আপনিময় হলেও। ডাকবক্সের ভেতরের জীবনটা হবে তুমিময়। চিঠিতে আপনার স্বামী নয় প্রেমিক থাকবে। চির প্রেমিক।’

আরফানের দিকে চেয়ে, তার কথা শুনতে শুনতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল নম্রতার। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল, আমার এত সুখ কেন? আমার মানুষটা এমন পাগল কেন? এমন ভয়াবহ প্রেমিক কেন? নম্রতাকে কাঁদতে দেখে হাসল আরফান। ধীর পায়ে নম্রতার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। নম্রতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখল। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ এখনই কাঁদছেন? আপনাকে আরও অনেক অনেক কাঁদানো বাকি শ্যামলতা। আমি আপনাকে কাঁদিয়ে কাঁদিয়েই ভালোবাসব। এবার ডাকপিয়নটা খুলুন। কিছু আছে নিশ্চয়।’

আনন্দ, উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে লাগল নম্রতা। কাঁপা হাতে চিঠি বাক্সের দিকে হাত বাড়াতেই তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল ডাকপাখি,

‘ শ্যামলতা! শ্যামলতা! চিঠি! চিঠি!’

আরফান হেসে ফেলে বলল,

‘ ওর নাম ডাকপাখি। আপনাকে চিঠির কথা মনে করে দেওয়ার দায়িত্ব ওর।’

নম্রতার চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। নম্রতা নাক টেনে টেনে চিঠি বাক্স থেকে নীল খামে মোড়ানো এক চিঠি উদ্ধার করল। চিঠিটা মেলে ধরতেই দুইহাতে কোমর জড়িয়ে ধরে খোলা কাঁধে মুখ ডুবাল আরফান। নম্রতা কেঁপে উঠল। ধুরু ধুরু বুক নিয়ে দেখল দীর্ঘ এক চিঠি। গুটি গুটি অক্ষরে লেখা,

” এইযে,

শ্যামলতা! আমার প্রিয়তমা! আমার মিষ্টি কিছু অনুভূতি। আমার শূন্য ঘরের যতি!

কোনো এক কাক ডাকা ভোরে হঠাৎ উপলব্ধি করেছিলাম, তার প্রতি আমার জীবন মরণ ব্যধি। তাকে ছাড়া শ্বাসকষ্ট। তাকে নিয়ে শ্বাসকষ্ট। তার প্রতিটি ভাবনায় আমার ভয়ানক শ্বাসকষ্ট। তখন ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল সে। বুলবুলির বাচ্চাটির মত চঞ্চল, আদুরে। কত অদ্ভুত অদ্ভুত যুক্তি তার! কত অদ্ভূত তার স্বপ্ন! আমি তখন টগবগে যুবক। ভীষণ পড়াকু ছাত্র। হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তার। ক্যারেয়ারের প্রতি ভীষণ ফোকাসড্। প্রেম- ভালোবাসা দু-চোখের বিষ। এমন একটা ধরা-বাঁধা, নিয়মমাফিক জীবনে কেমন দুষ্টুমি করেই ঢুকে পড়ল সে। আমি তাকে আটকাতে গেলাম, সে খিলখিল করে হেসে উঠল। আমি তাকে অবহেলা করতে গেলাম, সে টলমল অভিমানী চোখে চাইল। ব্যস! আমার আজন্ম শ্বাসকষ্ট হয়ে গেল। আমি হেরে গেলাম। আমার এই ধরা বাঁধা জীবনটা সেই ছোট্ট মেয়েটার তরে মেলে ধরলাম। একটু স্বস্তি, একটু আরামের আশায়। কিন্তু সে-ই চঞ্চলা আমায় স্বস্তি দিল না। ছোট্ট শ্যামলতার চিঠির ভাঁজে, কথার তোড়ে স্বস্তি নামক পাখিটা শ্বাসরোধ হয়ে মরেই গেল শেষ পর্যন্ত। আহা, কী অকাল মৃত্যু তার! ডাক্তারের ডাক্তারী উবে গেল। প্রেসক্রিপশনের পাতায় ঔষধের নাম মিলিয়ে গিয়ে গুটি গুটি অক্ষরে ভেসে উঠতে লাগল আবেগময় চিঠি, তার টানা টানা অভিমানী চোখ। আমি এলোমেলো হয়ে গেলাম। মরে গেলাম। বিশ্বাস করো, সে-ই ছিল আমার প্রথম মৃত্যু। শ্যামলতার বিষে আকন্ঠ ডুবে বিস্ময়কর সেচ্ছা মৃত্যু।

তারপর একদিন হঠাৎ হারিয়ে ফেললাম তাকে। আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল। পাগল হয়ে উঠলাম। ছটফট করে উঠল বুক। তারপর যেদিন ফিরে পেলাম। তার টলমল অভিমানী চাহনীতে স্তম্ভিত হলাম। ক্লান্ত হলাম। আমার শ্বাসকষ্টের মাত্রা সেদিন সহ্য ছাড়াল। আমি ভেসে গেলাম। তাকে কাছে পেলে বুক শুকিয়ে আসতে লাগল। দূরে গেলে শুরু হতে লাগল তীক্ষ্ণ বুক ব্যথা। তাকে আমি কী করে বুঝাই, এই ক্ষণিকের বুক ব্যথায় কত সুখ, বেদনাময় স্বস্তি! দিনের পর দিন দূরত্ব রেখে হঠাৎ তাকে কাছে পাওয়া, তার অভিমানী চোখ নেড়ে নেড়ে এক আকাশ অভিমান ঝাড়া যে আমার কত প্রিয়!

আজ বলতে দ্বিধা নেই, আমি তার পাগল প্রেমিক। তবে তার রূপ নয়, তার অভিমানী চোখ দুটোরই ভয়ানক প্রেমিক। আমি তার শরীরের মসৃন বাঁক নয় তার বাম পায়ের স্বর্গীয় তিলের প্রেমিক। তার ঠোঁটের রঙ হওয়ার থেকে কপালের টিপ হতে পারাটাই আমার প্রিয়। তাকে খুব কাছে টানার চেয়ে বুকের ভেতর স্থাপন করে, প্রতিটি মুহূর্তে পাওয়া চিনচিনে সুখটাই আমার প্রিয়। তার নেশা ধরা যৌবন থেকে তার নেশা ধরা হাসিই আমার বেশি প্রিয়। তাকে প্রকাশ্যে শতবার ভালোবাসি বলার চেয়ে চুপিচুপি নিরন্তর, নিরবিচ্ছিন্ন, বিশ্রামহীন ভালোবেসে যাওয়াটাই আমার প্রিয়। শুনো মেয়ে? সেই সর্বগ্রাসীকে বলে দিও, তার কাজল রাঙা চোখদুটোতে আমার মৃত্যুও প্রিয়।

শুনো, শুনছ শ্যামলতা? আমার তোমাকে নয়, তোমার অভিমানী চোখদুটো খুব প্রিয়। তোমাকে এক সমুদ্র কাঁদিয়ে, এক পাহাড় অপেক্ষা করিয়ে, এক আকাশ সুখ দেওয়াটাই আমার ভীষণ প্রিয়।’

ইতি

তোমার সে ”

#চলবে…..

[ আজ বড় হয়েছে না?আরও বড় হওয়ার কথা ছিল এক্চুয়েলি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here