# জীবনের জলছবি
#পর্ব ৬
অত সহজে যে সব কিছু মিটবে না জানতোই টুসি। মনের মধ্যে একটা চাপা ভয় কাজ করছে, এতদিন ধরে দেখেও একটুও কাকু কে বুঝতে পারে নি ও। তপু দাদের বাড়ি তো সেই ছোটো বেলা থেকেই যাচ্ছে ও, কখনো তো হয়নি এমন। কাকিমা তো ওকে খুব ভালোবাসে, কতদিন মা বাড়ি না থাকলে, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কাকিমার কাছে বাড়ির চাবি আনতে গিয়ে খেয়ে ফিরেছে ও! কাকু ও তো ওকে খুব ভালোবাসতো, আজ কেনো এমন হলো!
কালকের ঘটনার রেশ গড়ালো আজও। সকাল বেলা ও ছাদে ফুল তুলতে গিয়েছিলো, কাকিমা তখন কাপড় মেলছিলেন ছাদে এসে। ওকে দেখে থম থমে মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
কালকে তোর কাকুকে দিয়ে সিঙ্গাড়া পাঠালাম, খেলিনা কেনো?
কি বলবে বুঝতে না পারলেও সত্যি কথা বলাটা যে ঠিক হবেনা এটুকু বুঝতেই পারছিলো টুসি।
অগত্যা বললো ইচ্ছে করছিলনা কাকিমা।
আর তোর মা? তারও ইচ্ছে করছিলনা বুঝি, গম্ভীর গলায় বললো কাকিমা। আর কাল সকালে ওই রকম দৌড়ে চলে গেলি কেনো? কাকু কিছু বলেছিলো তোকে?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে টুসির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো কাকিমা। এবার একটু থত মত খেলো ও। কি বললে ঠিক একটা যুক্তিপূর্ণ উত্তর হবে সেটাই খুঁজে যাচ্ছিলো মনে মনে।
ওর মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আর কোনো কথা না বলেই নিচে নেমে গেলো কাকিমা। টুসি ও দৌড়ে নীচে নেমে গেলো সঙ্গে সঙ্গেই, ওর শুধু মনে হচ্ছিলো কাকিমা এত সহজে থেমে যাবার মানুষ নন।
সবে মাত্র নীচে নেমে এসে মা কে কথাগুলো বলতে শুরু করেছিলো, তখনই পাশের বাড়ি থেকে কাকিমার গলায় চিৎকার শুনতে পেলো টুসি। কথা গুলো পরিষ্কার শোনা না গেলেও চিৎকারের কারণ ওরা মা মেয়ে দুজনেই বুঝতে পারছিলো।
মা এবার মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো, তুই কিছু বলেছিস না কি?
না মা তুমি তো বারণ করেছিলে বলতে কাকিমা কে, তাই কিছুই বলিনি।
এবার বাবা বেরিয়ে এলো।
সিঙ্গাড়াটা নিতে কি হয়েছিলো তোমার, না হয় ফেলেই দিতে ডাস্টবিনে। দেখতো কি কাণ্ড হয়ে গেলো এবার, ওটা নিয়ে নিলে উনি কিছুই বুঝতে পারতেন না আর।
মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকলো,
ইস একবারও যদি বুঝতে পারতাম শীলার সন্দেহ হবে তাহলে তো নিয়েই নিতাম, বেচারা ওর কি দোষ বলোতো। যত নষ্টের গোড়া তো ওর বর টা, নোংরা লোক একটা,
মা রাগে দাঁতে দাঁত পেষে। টুসির ও খুব কষ্ট হচ্ছিলো কাকিমার জন্য, সত্যিই তো কাকিমা ভীষণ ভালো, ওনার তো এতে কোনো দোষ নেই। স্বামীর দোষের ভাগীদার হয়ে উনিও ছোটো হয়ে গেলেন কোথাও এটা বুঝে মন টা খারাপ লাগছিলো টুসির।
সকালে অনেকক্ষন চিৎকার করার পর এক সময় ওই বাড়ি থেকে আওয়াজ আসা বন্ধ হয়েছিলো। দুপুরে খেয়ে উঠে পড়তে বসে ছিলো টুসি।মা পই পই করে বলে দিয়েছিলো,
কাকিমা জিজ্ঞেস করলে একদম কোনো কথা না বলতে, তাতে কাকিমা আরও দুঃখ পাবেন। পড়া শেষ করে একটু ছাদে এসে দাঁড়িয়েছিলো টুসি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সবে ছাদ থেকে নেমে যাবে বলে ভাবছিলো ও, সামনে এসে দাঁড়ালো তপু দা।
তোর সঙ্গে কথা আছে আমার, শুনেই ভয় পেলো টুসি।
এইরে আবার ওই সব কথা জিজ্ঞেস করবে না তো তপু দা, মনে মনে ভাবলো।
কাল সকালে বাবা তোকে কি করেছে? একদম সরাসরি জানতে চাইলো তপু দা।
একদম মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিলো টুসির, সব বলে দিতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়তেই নিজেকে সামলালো ও। নাহ! কিছুতেই বলা যাবেনা কিছু, কাকিমা আরও কষ্ট পাবেন।
কিছু না তো, মাথা নিচু করে ঘাড় নাড়লো ও।
এবার ওর দুই কাঁধে হাত রাখলো তপু দা, আমার দিকে তাকা,
মুখ তুলে তাকালো টুসি।
ভালোবাসি আমি তোকে, বাবা যদি কিছু করে থাকে আমাকে বল, মা কিছু জানবেনা, শুধু তুই আর আমি জানবো, কোনো ভয় নেই তোর,
একদম অন্য রকম শোনালো তপু দার গলা। কাল থেকেই চেপে রাখার, কিছু না করতে পারার যে অসহায়তা কুরে কুরে খাচ্ছিল টুসি কে, আজ তপু দার সহানুভূতির গলা সেই বাঁধ কে ভেঙে দিলো।
তপু দা কে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো টুসি। মায়ের বারণ আর মনে থাকলো না, কাঁদতে কাঁদতেই সব টাই তপু দা কে বলে ফেললো ও।
সব শুনে ওকে বাড়ি চলে যেতে বললো তপু দা,
চিন্তা করিস না, বাবা আর এমন কিছু কোনো দিনও করবেনা, আমি কথা দিলাম তোকে।
দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে এলো টুসি। ঘরে ঢুকে মা কে একটা কথাও বললো না আর, মা শুনলেই রেগে যাবে জানে ও। হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসে গেলো তাড়াতাড়ি, যাতে মা এর কোনো কথার সম্মুখীন আর হতে না হয়।
বই খুলে একটু আগের কথা গুলোই ভাবছিলো। হটাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত মাথায় এলো, কি বললো তপু দা? ভালোবাসি তোকে, মানে কি? এতক্ষণ তো খেয়াল করেনি এই কথা টা, নতুন করে অন্য চিন্তা মাথায় এসে ঢুকলো টুসির। জানতেই হবে এই কথাটার মানে, মনে মনে ভেবে নিলো ও।
ক্রমশ
(আপনারা কাল সবাই এই গল্পটা শেষের পক্ষেই রায় দিয়েছেন, তাই এটাই শেষ করছি আগে,সবার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। গল্পটা যখন প্রথম লিখেছিলাম মনে হয়েছিলো অনেক কিছু বাদ রয়ে গেছে বলতে, তাই এবার এটা একদম মনের মতো করে লিখছি, আর প্রত্যেকবার এডিট করতে গিয়ে নিজের কিশোরী বেলা কে ছুঁয়ে ফেলছি বারবার, আপনারাও ফেলছেন কি? কোথাও কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন টুসির সঙ্গে নিজেদের, জানান প্লিজ, মতামতের আশায় রইলাম কিন্তু❤️। আজ থেকে প্রতিদিনই এই সময় থাকবে নতুন পর্ব, সঙ্গে থাকবেন সবাই।)