জীবনের জলছবি #পর্ব ৫

0
332

# জীবনের জলছবি
#পর্ব ৫
লক্ষী পুজো শেষ হয়ে কালী পুজোর দিন এগিয়ে আসছিলো। ভাই ফোঁটার পরেই টেস্ট, তাই ভীষন চাপ পড়ার। দিনগুলো যেনো হুস হুস করে চলে যাচ্ছে। কিছুতেই তাল মেলাতে পারছে না টুসি।

এখন আর বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও হয়না। প্রত্যেকেই ভীষণ ব্যস্ত। মনের মধ্যে চাপা টেনশন। কোনো বিষয়ই যেনো আয়ত্তে আসছেনা তার। কদিন ধরেই বেশ কিছু অঙ্ক জমেছিলো। কাল রাত্রে ই ঠিক করেছিলো আজ নিয়ে বসবে ওগুলো।

করতে গিয়ে দেখলো মিলছে না বেশ কয়েকটা। পাশের বাড়ির তপুদা অঙ্কে বেশ ভালো। মেডিক্যাল পড়ছে কলকাতায়। মাঝে মাঝেই ওর কাছে অঙ্ক বোঝে ও। টুসির কোনো দাদা ছিলোনা বলে ও ছোটো বেলায় ভাই ফোঁটা আর রাখীর দিন খুব দুঃখ পেতো।

একবার রাখি নিয়ে তপুদা কে বাঁধতে গিয়েছিলো, শীলা কাকিমা মানে তপু দার মা মজা করে হেসে বলেছিলেন,

এমা তুই তো আমার তপুর বউ হবি রে, তুই আবার রাখি পরাবি কি,

ও লজ্জা পেয়ে ছুটে বাড়ি চলে এসেছিলো। সেই থেকে তপুদা ও যেনো একটু অন্য দৃষ্টিতে ওকে দেখে বলে টুসির মনে হয়। টুসির তাই একটু অস্বস্তি লাগে ওর কাছে যেতে। তপুদা পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছে। যাবে কি যাবেনা ভাবতে ভাবতেই শেষ পর্যন্ত বই খাতা নিয়ে ওদের বাড়ি উপস্থিত হলো ও।

কাকিমা রান্না ঘরে, কাকু ঘরে।

কাকিমা, তপুদা আছে?

ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো টুসি।

তপু দা বাড়িতে নেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেছে, শুনেই চলে আসছিলো টুসি। কাকু ডাকলেন, মাঝে মাঝেই কাকুও দেখিয়ে দেন। তপু দা তো কলকাতায় থাকে, কাকুর কাছেই বেশি অঙ্ক বোঝে টুসি।

ভালোই হলো তপুদার সামনে বসতে হবে না ভেবে একটু খুশি হয়েই ঘরে ঢুকে গেলো ও। খাটে বসে মাথা নিচু করে অঙ্ক খুঁজছিলো বই থেকে, হটাৎ করেই কাকু জড়িয়ে ধরলো ওকে, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই টুসি টের পেল, ওর ঠোঁটের ওপরে চেপে বসেছে একটা নোংরা ঠোঁট।

মাত্র কয়েক সেকেন্ড, সম্বিত ফিরে পেয়ে কাকু কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে এলো ও। কাকিমা রান্না ঘর থেকে জিজ্ঞেস করলেন

কি রে এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছিস, হয়ে গেলো তোর?

কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকে বাথরুমের দিকে ছুটে গেলো টুসি। সারা শরীর গুলিয়ে উঠে বমি পাচ্ছিলো ভীষণ, বেসিন এ উপুড় হয়ে বমি করতে লাগলো টুসি। সাবান দিয়ে ক্রমাগত ঠোঁট ঘষে পরিষ্কার করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো ও, কিন্তু কিছুতেই সেই নোংরা ঠোঁট টাকে যেনো নিজের ঠোঁটের ওপর থেকে সরাতে পেরে উঠছিলো না আর।

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল ও। শরীর টা খুব খারাপ লাগছিলো, কাঁপ ছিলো হাত, পা, কিন্তু কান্না আসছিলো না একটুও। সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছিলো টুসির। কোনো কিছুই করতে না পেরে অসহায় লাগছিলো ওর। ছুটে গিয়ে বলে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো কাকিমাকে,কিন্তু কোথাও ওর কিশোরী মন বুঝছিলো সব কিছু বলা যায়না সবাইকে।

সিনেমা, উপন্যাস এ চুমু র বিবরণ পড়তে গিয়ে কত বার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে টুসির, কিন্তু বাস্তবে অপছন্দের মানুষের জোর করে করা প্রথম চুম্বন যে কত খারাপ অনুভুতি জাগায় আজ বুঝতে পারছিলো। ওই কয়েকটা মিনিট যদি ওর জীবন থেকে মুছে দিতে পারতো কোনো ইরেজার, তবে এই মুহূর্তে আবার সকাল বেলা থেকে শুরু করতো ও।

চুপ করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে ছিলো কতক্ষন ও নিজেও জানে না। শুয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে ছিলো। ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজে, দরজা খুলে দিয়ে এসে খাটে বসেছিল বেশ খানিকক্ষন, মা ক্রমাগত চিৎকার করছিলো,

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আবার কেউ ঘুমায় নাকি, যত পরীক্ষা এগিয়ে আসছে ততই ঘুম বেড়ে যাচ্ছে তোর।

কোনো উত্তর দিতে ইচ্ছা করছিলো না ওর। কেমন যেনো দুর্বল লাগছিলো শরীরটা। মায়ের ডাকে অবসন্ন শরীরে খেতে বসেছিল, কিন্তু খাবার গলা দিয়ে ভেতরে নামছিল না কিছুতেই। খালি গুলিয়ে উঠছিলো পেটের ভিতরে। মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে।

কি হয়েছে রে তোর? সত্যি কথা বলবি? শরীর খারাপ নাকি?

মায়ের গলার স্বর ভয়ার্ত শোনাচ্ছিল। এতক্ষনে কেঁদে ফেললো টুসি, কোনো কথা চেপে রাখতে পারছিলো না আর। সব শুনে চুপ করে বসে ছিলো মা,

যা শুয়ে পড়, আজ আর বই নিয়ে বসতে হবেনা, আস্তে করে বললো মা।

সন্ধ্যে বেলা কাকুর গলার আওয়াজ এ ঘুম ভাঙ্গলো টুসির।

কোথায় তুই? দেখ কি এনেছি তোর জন্য, ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কাকু।

চমকে উঠে বসলো ও, কিছু বলার আগেই মা এগিয়ে এলো সামনে।

আমি সব শুনেছি ঠান্ডা গলায় বললো মা,

চমকে উঠে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো কাকু।

আর কোনো দিনও যেনো আমাদের বাড়িতে আপনাকে আসতে না দেখি, যদি আসেন আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য হবো আমি, মায়ের কঠিন গলা।

ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো কাকু, আর দু হাতে মা কে জড়িয়ে ধরে কোলে মুখ গুঁজে দিলো টুসি। মা ওকে কতো বকে বিভিন্ন সময়, কিন্তু আজ মা কে খুব ভালো লাগছিলো, মনের মধ্যের জমে থাকা কষ্ট গুলো যেনো একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ। শুধু ঠোঁটের ওপর লেগে থাকা নোংরা অনুভূতি টা কে কিছুতেই সরাতে পারছিলো না টুসি।
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here