#জীবনের জলছবি
#পর্ব ১৩
কাল রাত্রে টিভির খবরে মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর খবর বললো, এবার বাড়ি ফেরার পালা। গত তিন মাসে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময় গুলো কাটিয়েছে টুসি। মা কাল নিতে এসেছে। মা কে দেখেই কান্না পেয়ে গিয়েছিলো টুসির, কতো দিন মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি!
বাবা কেমন আছে মা?
মা কে দেখেই জানতে চেয়েছিলো ও, মামী হেসেছিলো,
দেখো দিদি, তোমার মেয়ে আগে বাবার খবর জানতে চাইছে।
হ্যাঁ, ও তো বাবাকেই বেশি ভালোবাসে, আমি তো খারাপ, শুধুই শাসন করি,
একটু অভিমানের গলায় বলেছিলো মা, টুসি লজ্জায় পড়েছিলো। সত্যিই তো মা কে দেখে আগে তো মায়ের কথা ই জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল! মা কেও তো ও খুব ভালোবাসে, কিন্তু মা তো ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, তাই ও বাবার কথা জানতে চেয়েছিলো।
বাবার ট্রান্সফার হয়ে গেছে শিলিগুড়িতে এর মধ্যেই, তাই আর ওকে হোস্টেলে থাকতে হবেনা শুনেই আনন্দ হচ্ছিলো। মা কে ছেড়ে তিন মাস থাকতে গিয়ে ও বুঝতে পেরেছে যে হোস্টেলে থাকতে গেলে ও পারতোই না।
মায়ের কাছে শুনলো শীলা কাকিমা আর তপুদা চলে গেছে শিলিগুড়িতে, ওদের মামার বাড়িতে। কাকু এখন একাই থাকে ওখানে। টুসি একটু অবাক হলো, তারমানে কাকু ট্রান্সফার হয়নি। তপু দা ওকে সত্যি কথাটা বলেনি তখন! শুধু কাকিমা আর তপু দা চলে গেলো!
টুসি রাও তো ট্রান্সফার হয়ে ওখানেই যাচ্ছে তাই আবার দেখা হবে নিশ্চয়ই, বলে গেছে কাকিমা। তপু দাও দেখা করতে এসেছিলো যাওয়ার আগে, টুসি কবে ফিরবে জানতে চাইছিলো। মন টা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ওর, ইস ওর জন্যই আজ এত কিছু হয়ে গেলো, কেনো যে মরতে ও অঙ্ক দেখতে গেলো কাকুর কাছে।
তনুর জন্যও মন টা খারাপ লাগছিলো খুব।।আগামী দু বছর খুব চাপ থাকবে, তাই আর এখানে আসা হবে না বোধহয়। যদিও তনু বলেছে ওকে, ওই আসবে ওর কাছে এবার। আর তাছাড়া এখন সব জায়গায় টেলিফোন বুথ হয়ে গেছে, কথা বলতেও অসুবিধা নেই আর। চোখে দেখতে না পারলেও কথা বললে গলাটা তো শুনতে পাবে অন্তত, সেটুকু ভেবেই আনন্দ হচ্ছিলো ওর।
সব চাওয়া আর কবেই বা পূরণ হয়েছে কারো। কিছু চাওয়া অপূর্ণ ও থাকতে হয় জীবনে। তবেই তো বেঁচে থাকার ইচ্ছে গুলো বেঁচে থাকে, সব পেলে তো আর জীবনের কোনো উদ্যেশ্য ই থাকেনা।
প্রথম কয়েক দিন একটু মান অভিমান এর পালা চলেছিলো। তারপর দাদার প্রেম নিয়ে বলতে গিয়ে রাগারাগি আরও বেড়ে গেলো তনুর সঙ্গে। কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না ও।
তোমার আপত্তির কারণ বলো ?
খানিকটা বিরক্তির সুরেই বলেছিলো টুসি।
তুমি কিছুই বোঝনা, যদি তোমার দাদার ব্যাপার টা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তো আমাদের দুজনেরই সমস্যা। তুমি বাইরে থাকো, কয়েক দিনের জন্য আসো, তাই কেউ বোঝেনা আমাদের সম্পর্কের কথা, কিন্তু সৌমী তো আমাদের সঙ্গে একই কলেজে পড়ে, এত ছোট জায়গা, চেপে রাখা অত সহজ নয়। আর ওদের ব্যাপার বাড়িতে জানলে দুই বাড়ির মধ্যে সমস্যা হবে, তখন তুমি আর আমি ও ঝামেলায় পড়বো।
এক নিশ্বাসে বলছিলো তনু।
ইসস,এইদিক টা তো ভেবে দেখিনি, এবার তাহলে কি করা যাবে, এই দিকে দাদা কে কথা দিয়ে দিয়েছি, মনে মনে ভাবছিল ও। অবশেষে তনু ই বলেছিলো,
ঠিক আছে আমি আর কিছু বলবনা, ওরা যা পারে করুক, কিন্তু আমাদের ব্যাপার টা তোমার দাদা কে বলার দরকার নেই।
খানিকটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলো টুসি। এর পরেই তনু যা করেছিলো তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলো না ও, আচমকাই টুসি কে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলেছিলো,
এই যে তোমার দাদা কে ছাড়পত্র দিলাম এটা তার পুরস্কার, তুমি দিলেনা তো, তাই নিজেই নিয়ে নিলাম।
অদ্ভুত একটা অনুভুতি হয়েছিলো টুসির, ও ফিল করছিলো, কাকুর যে নোংরা ঠোঁট টাকে হাজার বার সাবান দিয়ে ঘষেও ও সরাতে পারেনি আজ পর্যন্ত, সেই ঠোঁট টা যেনো হটাৎ করেই নিজে থেকেই সরে গেলো আজ, তার বদলে একটা সুন্দর ভালো লাগার অনুভূতি ক্রমশ ঘিরে ধরছিলো ওকে। আবেশে চোখ বন্ধ করেছিলো টুসি, এই মুহূর্ত টা কে সারা জীবন ধরে রাখতে চাইছিলো ও।
ক্রমশ