#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-১৩
ফাবিহা নওশীন
আরাফের ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন রিসিভ করতেই কেউ একজন বলে উঠলো,,কাজ হয়ে গেছে।চলে আয়।
আরাফ বললো,ওকে আমি তিয়াশাকে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
তিয়াশা আরাফের বাসায় থেকে থেকে এসে আর রুম থেকে বের হয়নি।দরজা বন্ধ করে বসে আছে।ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ফোনটা বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে ফোন।ফোন রিসিভ করতেই,,
-তিয়াশা আমি তোমার বাসার বাইরে দাড়িয়ে আছি।এখনি বাইরে আসো।
-আমি আসতে পারবোনা।
-দেখো আমি যদি এখন তোমার বাসার ভিতর যাই।তাহলে ব্যাপারটা অন্য রকম হয়ে যাবে।তাই আমি ভিতরে যেতে চাই চাইনা।কিন্তু তুমি যদি বের না হও তাহলে,,,
ওকে আমি আসছি।
তিয়াশা চায়না আরাফের জন্য বাসায় আর নতুন কোনো অশান্তি হোক।এমনিতেই অনেক কিছু ঘটে গেছে।বাসার পরিবেশ গরম।
-কি হয়েছে?তুমি হটাৎ?
-গাড়িতে বস।
-কি??গাড়িতে কেন উঠবো?
-আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে।
-আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছিনা।বুঝতে পেরেছ?
-আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে। না গেলে অনেক কিছুই তোমার অজানা থেকে যাবে।যদি সব কিছু জানতে চাও তবে আমার সাথে চলো।
-যা জানানোর এখানেই বলো।আমি কোথাও যেতে পারবো না।
-না গেলে বুঝতে পারবেনা।
তিয়াশা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ঠিক আছে চলো।তিয়াশা গাড়িতে বসে মামনিকে মেসেজ করে দিলো।
তিয়াশা পুরো রাস্তায় চুপচাপ বসে ছিলো।আরাফ কয়েকবার ওকে আড়চোখে দেখলো।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।চেহেরায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
আরাফ একটা ফ্যাক্টরির সামনে গাড়ি থামলো।বেশ পুরনো, নিরিবিলি জায়গা।
তিয়াশা নেমে বলল,এখানে তুমি আমায় কি দেখাতে এনেছো?এটা তো একটা ফ্যাক্টরি।তাও বন্ধ মনে হচ্ছে।
-এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাবা কিনে নিয়েছে।এখনো চালু করেনি।
-তো আমরা এখানে কি করছি?ফ্যাক্টরি মেরামত না চালুর উদ্বোধন করতে আসছি?
-ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবে।
তিয়াশার কিছুটা ভয় লাগছে।এমন নিরিবিলি জায়গা, ব্যাপারটা ওর ভালো লাগছেনা।আরাফকে যদিও যথেষ্ট বিশ্বাস করে কিন্তু কিছুদিনের ঘটনায় ওকে আর আগের মতো বিশ্বাস করতে পারেনা।তাই তিয়াশা ভিতরে না যাওয়াই ভালো মনে করলো।
তাই বললো,,দেখো যা বলার এখানেই বলো, যা দেখানোর এখানেই দেখাও।আমি ভিতরে যাবোনা।
আরাফ তিয়াশার ভয়ার্ত চেহারা দেখে বুঝতে পারলো।তিয়াশা ভিতরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
তাই বললো,
তুমি কি ভয় পাচ্ছ?তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবো,,আমি ততটাও খারাপ নই।
-কে বললো, আমি ভয় পাচ্ছি?
-তুমি বলবে তারপর আমি বুঝবো যে তুমি ভয় পাচ্ছ? আমি তোমাকে বুঝতে পারি।হয়তো সবটুকু পারি না।তবে একটু হলেও বুঝতে পারি।
-আমি ভয় পাচ্ছিনা।
তিয়াশার অবস্থা দেখে আরাফের হাসি পাচ্ছে।ভয়ে কুকরে যাচ্ছে।আরাফ মাথা নিচু করে মুখ চেপে হাসছে যাতে তিয়াশা না দেখে।ব্যাপারটা তিয়াশার চোখ এড়ালো না।
-হাসি পাচ্ছে না,,,এভাবে না হেসে ভালো ভাবে হাসো।নয়তো হাসি আটকে রাখাত জন্য মরে যাবে।
আরাফ এবার হাহা করে উচ্চস্বরে হাসলো।
-জঘন্য হাসি।
-আমার সব কিছুই তো জঘন্য।এবার যাওয়া যাক।আমি যাচ্ছি।যদি তোমার মনে হয় যে আমাকে বিশ্বাস করা যায় তবে এসো।
আরাফ ভিতরে চলে গেলো।তিয়াশা দাড়িয়ে আছে।যাবে কিনা ভাবছে।তারপর ভাবলো দেখাই যাক ভিতরে কি আছে,,কি দেখাবে।আল্লাহ ভরসা।দোয়া পড়তে পড়তে ভিতরে গেলো।ফ্যাকরির ভিতরে ঢুকে দেখে ৪-৫জন ছেলে দাড়িয়ে আছে।আরাফ ওদের সামনে গিয়ে দাড়ালো।আরাফ একবার পিছে ঘুরে তাকিয়ে দেখে নিলো তিয়াশা আসছে কিনা।তারপর ওদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।নিচে কিছু একটা পড়ে আছে।কিছু না। একটা মানুষ। হাত-পা দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে রেখেছে।চোখ-মুখ বাধা।মানুষটা ছটফট করছে।
তিয়াশা দৌড়ে আরাফের পিছনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বললো, কি হচ্ছে এখানে?আর এটা কে?এভাবে ফেলে রেখেছো কেনো?
আরাফ কিছুনা বলে বন্ধুর হাত থেকে হকি ব্যাট নিলো তারপর পাগলের মতো শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারতে লাগলো।আর মানুষটা ব্যথায় গোঙ্গাতে লাগলো।হাত,পা,শরীর নাড়াচ্ছে।তিয়াশা আর দেখতে পারছেনা।
-আরাফ,থামো।কি করছো?ওকে মারছো কেন?তোমরা ওকে থামাচ্ছো না কেনো?
ওরা কিছুই বলছেনা।আরাফও থামছেনা।তিয়াশা কি করবে বুঝতে পারছেনা।আরাফের চোখমুখ লাল হয়ে আছে।সারা শরীর রাগে কাপছে।ভয়ংকর লাগছে।তিয়াশা আরাফের এ রুপটা কখনো দেখেনি।তিয়াশার খুব ভয় লাগছে আরাফকে।কি করবে বুঝতে পারছেনা।লোকটা তো মরে যাবে।
তিয়াশা আর না পেরে আরাফকে পিছ থেকে যতটা পারলো শক্তি দিয়ে আকড়ে ধরলো।
-আরাফ,প্লিজ থামো।প্লিজ থামো।
আরাফ থেমে গেলো।হাত থেকে ব্যাট ফেলে দিলো।তারপর হাপাতে লাগলো।
-সাজ্জাত,ওর মুখ খোল।দেখি শালা কি বলে।
সাজ্জাদ চোখমুখ খোলে দিতেই তিয়াশা পুরো চেহেরা দেখে নিলো।
-অভি!!!!
-হ্যা অভি।এই অভি ই সব কিছু করেছে।ও ই আড়াল থেকে ভিডিও করেছে।তারপর ভাইরাল করেছে।
তুই কি ভেবেছিস,,তোকে আমি খোজে বের করতে পারবোনা।তুই চিনিস না আমাকে?আমার সাথে টক্কর দিতে আসছিস।তুই জানিস না আমার সোর্স সম্পর্কে।না ভেবেছিস আমি বদলে গেছি তাই এখন আর কিছু বলবো না।যা খুশি করে বেড়াবি।আমি বদলে গেলেও আমার রক্ত থেকে সব কিছু মুছে যায়নি।জানিস ই তো আমার হাত কতটা সই।বলেই একটা লাথি মারলো।
-আমায় মাফ করে দিন।আমি আর কখনো এসব করবোনা।ভাই আমাকে ছেড়ে দিন।তিয়াশা আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ।
-ভুল?এটা ভুল?তুমি এটা কি করে করতে পারলে?তার চেয়ে আমায় মেরে ফেলতে।এভাবে প্রতিশোধ নিলে?আমার পরিবারকে সবার কাছে ছোট করে?
আমি তোমায় রিজেক্ট করেছি তাই,,তুমি কি মানুষ? তোমার মতো ছেলেকে আমি কেন,তুমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নও।যার মন মানসিকতা এতোটা চিপ।ছিঃ
আরাফ বুঝতে পারলো অভি তিয়াশাকে প্রপোজ করেছিলো।তাই আবার পিটাতে শুরু করলো,তোর এতো বড় সাহস।এরপর যদি তোকে তিয়াশার আসেপাশে দেখি তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে এমন জায়গায় গুম করবো কেউ খোঁজে পাবেনা।মনে রাখিস।
-আমি আর কখনো তিয়াশার আসেপাশে যাবোনা।ওর দিকে তাকাবোনা।আমায় ছেড়ে দিন।
ফারাবি ল্যাপটপ এগিয়ে দিলো।
-ধর,,ভিডিও সমস্ত সাইড থেকে ডিলিট কর।
অভি কিছুক্ষণ ল্যাপটপ কাজ করে বললো, আমি সব সাইট থেকে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছি।
তারপর আরাফ বললো,ওকে হসপিটালে এডমিট করে দিস।আমি তিয়াশাকে পৌছে দিয়ে তোদের সাথে মিট করবো।
আরাফ আর তিয়াশা পাশাপাশি গাড়িতে বসে আছে।আরাফের হাত লাল হয়ে গিয়েছে।সমস্ত শক্তি দিয়ে মন মতো পিটিয়েছে।হাত ব্যথা করছে।সেই হাতেই ড্রাইভ করছে।
-তোমার হাত তো দেখছি ছিলে গেছে,,
-তাতে কি মন মতো পিটিয়েছি।
-এভাবে আর কতোজন পিটিয়েছো?
-সত্যি বলতে প্রচুর।হিসাব রাখিনি।
-তোমার উপর দায় পরেছে ভিডিও ভাইরাল করার।তাই এতো রাগ হয়েছে।তাইনা?
আরাফ তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি সব এভাবে কথা বলো কেনো?
আমি এসব তোমার জন্য করেছি।এখন হয়তো আমাদের মধ্যে অনেক সমস্যা।কেউ কাউকে সহ্য করতে পারি না।কিন্তু একটা সময়,,, যাই হোক তোমার যা খুশি মনে হয় ভাবো,,,।
আরাফ তিয়াশার বাসার সামনে দাড় করালো,,। তিয়াশা বের হতেই আরাফ বললো, আমায় যতটা খারাপ ভাবো।আমি ততটা খারাপ নই।
তিয়াশা বললো, কিন্তু এসব তোমার জন্য হয়েছে।আমি তোমাকেই দায়ী মনে করি। তুমি সুযোগ দিয়েছো এসব করার। বলেই তিয়াশা চলে গেলো।
তিয়াশা বাসায় গিয়ে ওর মাকে সব খোলে বললো।
-আমিও বলি,,ও তো এমন ছেলে নয়।কি করে করলো।যাই হোক তুই আর ওর উপর রাগ করে থাকিস না।
-তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ,এইসব ওর জন্য হয়েছে।
তিয়াশা নিজের রুমে চলে গেলো।
পরের দিন আরাফ আর ওর বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে নিজের বাসায়।ওয়াচ ম্যান এসে একটা খাম দিয়ে গেলো, কলেজ থেকে এসেছে।ফারাবী খাম খোলে পড়ে বললো ,,আরাফ তোকে রাস্টিকেট করা হয়েছে।
-কি??
আমাকে দেখা।দেখে ওর মুখ থেকে একটা শব্দ উচ্চারিত হলো,, তিয়াশা!!!