#জীবনের জলছবি
#পর্ব ৩৩
এক সপ্তাহ হলো বাড়ি ফিরে এসেছে টুসি, ফেরার সময়, গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলো তপু দা, কিন্তু একটাও কথা বলেনি ওর সঙ্গে, ও ও মুখটা ঘুরিয়েই রেখেছিলো। পাড়ার অনেকেই দেখতে এসেছিলো ওকে, সবাই জানে ওর জ্বর হয়েছিলো। শরীর টা বেশ দুর্বল ছিলো কয়েক দিন, তাই আর কলেজে যায়নি ও।
যেদিন ফিরে এলো সেদিন রাতে খাওয়ার পরে বাবা এসেছিলো ওর ঘরে, বাবা কে ঢুকতে দেখে খাটে উঠে বসেছিলো টুসি।
মন খারাপ? এতো চুপ চাপ কেনো?
ও চুপ করেছিলো, উত্তর দেবার মতো কিছু ছিলো না, ওকে চুপ করে থাকতে দেখে নিজেই বলেছিলো বাবা,
কোনো কোনো সময় নিজেদের জেদ দেখাতে গিয়ে বড়রাও ভুল করে ফেলে বুঝলি তো! আমাদের মনে হয়েছিলো যা করছি সেটা তোর ভালোর জন্যেই! কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যে তোর ওপর খুব বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছি, সেটা বুঝিনি তখন। আজ যদি সত্যি কিছু হয়ে যেতো তোর, আমাদের থেকে বড়ো ক্ষতি কি হতো কারও! যাইহোক, এখন আর পুরনো কথা ভাবিস না,
খুব অসহায় লাগছিলো বাবার গলাটা, খানিকক্ষন চুপ করে বসে থেকে ওর মাথায় হাত রেখে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বাবা।
গত কয়েক দিনে অনেক গুলো ঘটনা ঘটে গিয়েছে ওর জীবনে। দিন চারেক আগে রাত্রে খেতে বসে হটাৎ মা বলেছিলো,
কাল শীলা কে আসতে বলেছি, তপু তো ভালো ছেলে, তোরা যে বিয়ে করতে চাস এটা বাবা কে বলিস নি কেনো? বাবা তো অন্য কেউ ভেবেছিলো, তপু জানলে না বলতো না একটুও। ওকে কত ছোটো থেকে চিনি, তাছাড়া শীলা ও আমার খুব প্রিয়। শীলা সব জানতো, অথচ তুই আমাকে জানাতে পারিস নি একটুও।
মায়ের কথা শুনে অবাক হয়েছিল টুসি, শীলা কাকিমা সব জানতো মানে!! তপু দা কিছু বলেছিলো নাকি, কিন্তু তপু দা তো বলেছিলো ওর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, সব হিসাব কেমন যেনো গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিলো টুসি র।
আর বাবা কে কি বা বলতো ও, ওতো নিজেই জানতো না এই কথা গুলো, তপু দা তো কিছু বলেনি ও কে, কোন ভরসায় বাবা কে বলতো নিজে থেকে।
তার পরের দিন কাকিমা এসেছিলো,
তোকে তো কোন ছোটো থেকেই আমি তপুর বউ হিসাবে ঠিক করে রেখেছিলাম, দাদা একটু রাগারাগি করলো বলে তুই কিছু না জানিয়ে এইরকম কাণ্ড ঘটিয়ে বোসলি একটা। তুই আমাকে দাদার আপত্তির কথা জানাতে পারলি না একবার, আমিই এসে কথা বলতাম নিজে। আর আমি তো তপু কে বলেই ছিলাম আমিই কথা বলবো, তপু বলে নি তোকে?
কথা গুলোর মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলো না ও। তপু দা কাকিমা কে সেদিনের কথা কিছুই বলেনি বুঝতেই পারছিলো টুসি। সেদিন ওকে অত অপমান করলো, অথচ তার আগে থেকেই কাকিমা ওদের বাড়ি আসবেন বলেই তপু দা জানতো, তাহলে ওর সঙ্গে এরকম করলো কেনো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না টুসি।
চিন্তাগুলো কিছুতেই মাথা থেকে বার করতে পারছিলো, কলেজে এসে একটু অন্যমনস্ক হয়েই বসেছিলো ও।
তোর কি হয়েছে বলতো! বেশ কিছুদিন ধরেই খুব চুপচাপ হয়ে গেছিস!
সোমার কথায় শুধুই একটু হাসলো টুসি। ওর জীবনের ওপর দিয়ে যে ঝড় টা গত কয়েকদিন ধরে বয়ে গিয়েছে, সেটা তো আর সোমা কে বলা যায় না। এই কয়েকটা দিন ওকে অনেক বড় করে দিয়েছে, ও সেই হাসিখুশি, চঞ্চল, আবেগপ্রবণ টুসি আর নেই এখন।
কাকিমা যতই মায়ের কাছে এসে সব কথা বলুক না কেন, টুসি সেগুলো একটুও বিশ্বাস করেনি। কাকিমার কথা থেকেই ও বুঝেছিলো সেদিনের তপু দার করা ব্যবহারের কথা কাকিমা কিছুই জানেন না। বাবার হসপিটালে থাকার সময় তপু দা যে কথাগুলো কাকিমা কে বলেছিলো সেগুলো এখন মূল্যহীন। তপু দার যে সীমার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, সেটা ইতিমধ্যেই সীমার মুখেই শুনেছে ও। কিন্তু এই কথাগুলো ও বাড়িতে মা বাবাকে কি করে বলবে, ওঁরা তো কাকিমার কথা শুনে অন্য রকম ভেবে নিয়েছেন।
তোর কি তপু দার সঙ্গে কিছু হয়েছে?
সোমার কথার উত্তর না দিয়েই উঠে পড়লো টুসি, ও তপু দাকে নিয়ে কোনো কথা আলোচনা করতে চায় না আর!
আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি, শরীর টা ভালো লাগছে না,
বলেই অনেকটা উদ্যেশ্যহীন ভাবেই কলেজ থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটতে লাগলো ও, বেশ কিছুদিন ধরে পর পর অনেক গুলো ভুল হয়ে গেছে। সেই ভুলগুলো কি করে শুধরাবে, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। মা কে কি করে বোঝাবে যে আসলে ও যাকে বিয়ে করতে চেয়ে সম্বন্ধ টা ভেঙ্গে দিয়েছিলো সে এখন অন্য কাউকে ভালোবাসে। এই কথাগুলো শুনলে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে!
তুই এদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? কলেজে যাসনি?
টুসি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলো শীলা কাকিমা বাজারের ব্যাগ হাতে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
বাজারে গিয়েছিলে কাকিমা?
প্রশ্ন টা কে ঘুরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও, এখন যদি ও বলে যে ও ক্লাস না করেই এই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাহলে কাকিমা মা কে জানিয়ে দেবে। মা এমনিতেই সেদিনের ঘটনার পর থেকেই ওকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে, নতুন করে আর চিন্তায় ফেলতে চায় না ও।
হ্যাঁ, চল, বাড়িতে চল, রান্না হয়ে গেছে আমার, খেয়ে যাবি,
কাকিমার কথায় টুসি একটু থমকালো, ও এখন নতুন করে আর তপু দার মুখোমুখি হতে চায় না। জীবনের ওই পর্ব টাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে ও, তপু দার সামনে দাঁড়ালেই ও আবার দুর্বল হয়ে পড়বে!
এখন থাক কাকিমা, আমি এখন বাড়ি যাবো,
টুসির কথা কে একটুও পাত্তা না দিয়ে কাকিমা ওর হাত ধরে টানলেন,
আরে চল না, আমার বাড়িতে খেয়ে গেছিস শুনলে তোর মা কিছু বলবে না,
জোর করে ওকে বাড়িতে নিয়ে এলেন কাকিমা, তপু দা যে দুপুরে খেতে আসবে সেটা জানে টুসি, তার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে এখান থেকে। ওকে বসিয়ে রেখে কাকিমা চান করতে ঢুকেছিলেন, দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজে দরজা খুলে না চাইতেও তপু র মুখোমুখি হলো টুসি।
কেমন আছিস?
তপু দার প্রশ্নের উত্তরে ছোট্ট একটা “ভালো” বলেই ঘরে ঢুকে পড়লো ও,তপুর সঙ্গে একটাও কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না আর। একটু পরেই স্নান সেরে বেরিয়ে কাকিমা খেতে ডাকলেন, টেবিলে খেতে বসে আবার একই প্রসঙ্গ নিজেই তুললেন কাকিমা,
তুই ওকে বলিসনি কেনো আমি ওদের বাড়ি যাবো বলেছিলাম?
তপু দার দিকে তাকিয়ে বললেন, তপু চুপ করে থাকলো দেখে টুসি অস্বস্তিতে পড়ছিলো, ও এইসব প্রসঙ্গে আর আলোচনা করতে চায় না এখন। ও বুঝতেই পারছে তপু দার মনোভাব এখন, তপু দা কি করেই বা কাকিমা কে বলবে কথাগুলো!
কাকিমা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, মা কে তাড়াতাড়ি ফিরবো বলে এসেছি, আমার হয়ে গেছে, উঠে পড়ি?
প্রসঙ্গ টা ঘুরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো টুসি।
দাঁড়া, বেরিয়ে পড়িস না, তপু তোকে পৌঁছে দেবে,
খেয়ে উঠে বেরোতে গিয়েও কাকিমার ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লো টুসি। প্রতিবার তপু দার ওকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো ও, কিন্তু এবার নিজেই ও চাইছিলো না সেটা।
কাকিমা, আমি এখন বাড়ি যাবো না আর, টিউশন পড়েই ফিরবো একদম, এইটুকু রাস্তা আমি একাই চলে যেতে পারবো,
বলেই কাকিমা কে আর কোনো কথা বলতে না দিয়েই বেরিয়ে পড়লো টুসি। বেলা হয়ে গেছে, রোদের তেজ বেশ বেশি, গরমে ঘামতে ঘামতে স্ট্যান্ডে এসে দেখলো একটাও বাস নেই, অগত্যা ছায়ায় একটা বেঞ্চে বসে পড়লো ও।
সেই স্বার্থপরই রয়ে গেলি, নিজের প্রয়োজন মিটে যেতেই আর আমাকে চিনতে পারছিস না, তাই তো?
টুসি চমকে তাকিয়ে দেখলো তপু দা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তপু দা এত তাড়াতাড়ি এখানে এলো কি করে! ভাবতে ভাবতেই স্ট্যান্ডের বাইরে রাখা গাড়িটা চোখে পড়লো টুসির।
চল, তোর সঙ্গে কথা আছে আমার, গাড়িতে ওঠ,
ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বললো তপু দা।
আমার তোমার সঙ্গে কোনো কথা নেই, আমি এখন বাড়ি যাবো,
খুব শান্ত গলায় বললো টুসি,
তোর নেই, আমার আছে! এতদিন তো তোর অনেক প্রয়োজনে ইচ্ছে না থাকলেও তুই ডাকলে গিয়েছি আমি, আজ না হয় আমার প্রয়োজনে একবার তুই গেলি,
একটু ভাবলো টুসি, ঠিক আছে! সত্যিই তো তপু দা কে ও অনেক প্রয়োজনে ডেকেছে এতদিন, এবার না হয় শেষ বারের মতো ও যাবেই কথাগুলো শুনতে। আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলো ও। গাড়ি টা বাড়ির উল্টোদিকের রাস্তা ধরতেই সোজা হয়ে বসলো টুসি, সদ্য সদ্য এইরকম ঘটনা ঘটেছে, ঠিক সময়ে না ফিরলে মা খুব চিন্তা করবে, ওকে বাড়িতে ফিরতেই হবে তাড়াতাড়ি।
আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে, মা চিন্তা করবে, তুমি যা বলার এখানেই বলো, এখন অন্য কোথাও যেতে পারবো না আমি।
তপু দার দিকে তাকিয়ে বললো টুসি।
বেশি দূরে যাবনা, কাছেই, তোর ঠিক সময় ফিরতে অসুবিধা হবে না,
আর কোনো কথা বললো না ও। গাড়িটা একটা পার্কের সামনে রেখে টুসি কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে এলো তপু।
তাহলে? এবার কি করবি, পড়াশোনা, না বাবার কথামত বিয়ে? টুসির দিকে তাকিয়ে বললো তপু।
এখনও কিছু ঠিক করিনি,
আস্তে করে বললো টুসি, তপু একটু অবাক হলো, এরকম টুসি কে দেখতে ও অভ্যস্ত নয়। এবার একটু সিরিয়াস হলো তপু,
যা হবার সেতো হয়েই গেছে, ভুলে যা ওসব, মন দিয়ে পড়াশোনা কর এখন।
টুসি কোনো উত্তর দিলো না, ওর এই মুহূর্তে এসব কথা শুনতে একটুও ভালো লাগছিলো না, ও নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিলো, বেশিক্ষন এখানে থাকলেই ও কেঁদে ফেলবে।
তুমি কিছু বলবে বলছিলে, একটু তাড়াতাড়ি বলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,
নিজেকে সংযত করে বললো টুসি, তপু ওর দিকে সোজাসুজি তাকালো এবার,
মা গিয়েছিলো তোদের বাড়ি, তুই জানিস কি কথা হয়েছে?
জানি, মা বলেছে আমাকে! একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে ওটা, তুমি চিন্তা কোরোনা আমি বাবা মা কে বুঝিয়ে বলবো,
কি ভুল বোঝাবুঝি? কি বুঝিয়ে বলবি তুই!
অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো তপু, টুসি একটু ভাবলো, কি বলবে ও! তপু দা যে সীমা কে ভালোবাসে, সেটা ও মা বাবা কে বোঝাবে কেমন করে! এটা যে তপু দা কে বলতেও ওর কষ্ট হচ্ছে! এই কথাটা মনে মনে ভাবলেও তো ওর বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যাচ্ছে একদম।
তুমি কাকিমা কে সত্যিটা বলে দাওনি কেনো? তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকতো না!
কি সত্যি? তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, টুসি র কথা শুনে অবাক গলায় বললো তপু।
টুসির এবার খুব খারাপ লাগছিলো, তপু দা এতো নিষ্ঠুর, ওর মুখ দিয়েই কথা গুলো বলাতে চায়! টুসি কে কষ্ট পেতে দেখে এতো আনন্দ পাচ্ছে ও!
তুমি যে সীমা কে বিয়ে করতে চাও, সেটা কাকিমাকে জানিয়ে দাওনি কেনো! তাহলে তো আর কাকিমা আমাদের বাড়িতে যেতো না, আর এতো সমস্যাও হতো না নতুন করে! এই কথাগুলো বলতেই আমাকে ডেকেছো তো? চিন্তা করোনা, আমি মিটিয়ে নেবো বাবা মার সঙ্গে কথা বলে,
নিজেকে একদম শক্ত রেখে শান্ত গলায় বললো টুসি, তপু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
চলো এবার উঠি, আমার সত্যি দেরি হয়ে যাবে এবার,
তপুর নির্বাক তাকিয়ে থাকা কে পাত্তা না দিয়েই উঠে পড়লো, এই কথাগুলো বলে দেবার পরে আর এক মুহূর্তও তপু দার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না ও।
আমি সীমা কে বিয়ে করতে চাই, এটা তোকে কে বললো?
আমি এটা নিয়ে আর কোনো আলোচনা করতে চাইনা প্লিজ,
তপুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিলো টুসি।
জানি তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে, তবু এই প্রশ্নটার উত্তর না দিয়ে তোকে আমি যেতে দেবো না, টুসির একদম সামনে এসে দাঁড়ালো তপু,
তুমি নিজেই তো বলেছিলে আমাকে, তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! আজ আবার নতুন করে কে বলেছে জানতে চাইছো কেনো!
সীমার নামটা আর বললো না টুসি, ওর এই কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিলো,
সেতো আমি তোকে রাগে বলেছিলাম, কিন্তু সীমা কে বিয়ে করতে চাই এরকম কথা বলেছিলাম কখন! আমার সত্যি মনে পড়ছে না!
তপু অবাক গলায় বললো।
ছেড়ে দাও তপু দা, আর ভালো লাগছে না আমার!
এইটুকুতেই ভালো লাগছে না, আর তুই যখন তনু কে ফোন করতিস আমাদের বাড়ি থেকে, সেবক থেকে নিয়ে আসতে বলতিস আমাকে, তোর বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতিস আমাকে একটুও পাত্তা না দিয়ে, তখন আমার কেমন লাগতো ভেবেছিস কোনো দিনও,
খানিকটা ক্ষোভের গলায় বললো তপু এবার, টুসি চুপ করে থাকলো।
সেদিন তুই যখন আমাদের বাড়িতে এলি, তোকে ওই কথা গুলো বলতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো, কিন্তু রাগও হচ্ছিলো খুব, একবার তোকে দেখাতে ইচ্ছে করছিল কেমন লাগে অন্য কাউকে ভালোবাসি বললে, ওই জন্যই শুধু তোর ওপর রেগেই বলেছিলাম অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, যে কষ্ট টা আমি এতদিন পেয়েছি, সেটা তোকে একটা রাতের জন্য ফেরত দিতে চেয়েছিলাম মাত্র। ভেবেছিলাম পরের দিন তুই কলেজে এলে বলবো তোকে সত্যি কথা গুলো, কিন্তু তুই তো একরাত চাপ নেবার মত ক্ষমতাও রাখিস না দেখলাম। তুই যে এইরকম কিছু করবি একটুও মাথায় আসেনি আমার।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো সেদিন, বাবাও বেরিয়ে যেতে বললো, কোথায় যেতাম বলোতো আমি, সেই মুহূর্তে মাথা কাজ করছিলো না,
এবার চোখে জল এসে গেল টুসির, এতক্ষন ধরে চেপে রাখা কষ্ট টা আর নিতে পারছিলো না ও।
তোর সত্যিই মনে হয়েছিলো কাকু তোকে বাড়ি থেকে বার করে দিতে পারেন! তুই আর বড়ো হলি না! তুই যে এতটা ইমমাচিওর, আমি একদম ভাবিনি! এগুলো আমি বা কাকু তোকে বলেছি বলেই তুই এরকম কাজ করবি! তবে একটা কথা বলছি, আমি তোকে যাই বলে থাকি না কেন, আমি সীমা কে বিয়ে করতে চাই, এটা কখনোই বলিনি, এটা তুই নিজে নিজেই বলছিস!
আমি তোকে এসব কিছু বলার জন্যে ডাকি নি এখানে, যতই হোক তোর এই কাজ টা করার পেছনে যে আমারও কিছুটা ভুল আছে সেটা ফিল করেছি, আমি রাগ না দেখালে তুই হয়ত শুধু কাকুর কথায় এতো বড় ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলতিস না! সেই থেকেই খুব খারাপ লাগছে আমার, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, তাই তোকে ডেকে সরি বলতে চেয়েছিলাম, তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারতাম না। সত্যি ওই ভাবে বলা উচিত হয় নি আমার,
চল, সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে, এবার সত্যি কাকিমা চিন্তা করবে,
বেঞ্চ থেকে উঠে পড়লো তপু, টুসি একটা কথারও জবাব দিলো না।
আজ দেরি হয়ে গেছে তাই তোকে আর আটকালাম না, আমি সীমা কে বিয়ে করতে চাই, এই ভুল ধারণা টা মাথা থেকে বার করে দে। কাল কলেজের পরে আসিস একবার, এই ভুল বোঝাবুঝি গুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে বুঝলি!
ওকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবার আগে বললো তপু। ওর কি তপু দা কে বিশ্বাস করা উচিত! ও কি সীমার কথাটা বলে দেবে, নাকি বলে দিয়ে আরও হাস্যস্পদ করে তুলবে নিজেকে ওদের কাছে! ডিসিশন নিতে পারছিলো না টুসি।
ক্রমশ
( গল্পটা একদম শেষ পর্যায়ে, সেটা নিশ্চয়ই আপনার সবাই বুঝতে পারছেন। হয়ত আর দুটো পর্ব থাকবে, সঙ্গে থাকবেন সবাই 🙏)