পরীজান #পর্ব ৪

0
1910

#পরীজান
#পর্ব ৪
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

“তারপর পুত্র সন্তান জন্ম দেন তিনি। শুক্রবার মানে জুমার দিন জন্মেছে তাই ছেলের নাম রাখা হলো জুম্মান। জুম্মান ওর মায়ের মতো কালো হয়নি। আব্বার গায়ের রং পেয়েছে। শ্যামবর্ণ,আমি প্রথমে জুম্মানকে কোলে নিতাম না। রুপাই রাখত বেশি তখন আমি পরীর দেখাশোনা করতাম। পরীর বয়স পাঁচ বছর হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি পদে পদে আমি পরীকে দেখে অবাক হতাম। ছোট্ট পরী এতটা শক্ত তা কখনোই ভাবিনি আমি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন নাকি পোকামাকড় পশু পাখি অনেক ভয় পেতাম আম্মা সবসময় বলত। রুপার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু পরী সম্পূর্ণ আলাদা। ওকে কখনো ভয় পেতে দেখিনি। আমাদের রগচটা গরুটার দিকেও সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতো ও। গরুটাও ছুটে আসতো পরীকে গুঁতো মারার জন্য কিন্তু পরী তৎক্ষণাৎ সরে যেতো। দড়িতে টান খেয়ে গরুটা আর এগোতে পারতো না। তখন ভয় পাওয়ার বদলে পরী খিলখিলিয়ে হাসতো। তা দেখে সেদিন আমার বুক কেঁপে উঠেছিল। আমারও তখনও সাহস হয়নি ওই গরুর সম্মুখে দাঁড়ানোর। তারপর একদিন পরীকে সাপে কাটলো। তখন ওর বয়স সাত বছর। ওঝা যখন পরীর পা থেকে বিষ নামাচ্ছিল চোখমুখ শক্ত করে বসেছিল পরী। এতটুকু শব্দ ওর মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। পানি পড়ছে চোখ থেকে কিন্তু মুখে শব্দ নেই। অথচ দেলোয়ার কাকার মেয়েকে যখন সাপে কাটলো বিষ নামানোর সময় কি চিৎকার তার। তখন তার বয়স ছিল ষোল বছর। কিন্তু ওইটুকু বয়সে পরী কিভাবে চুপ করে রইলো?

কি ভাবছিস পরী তোকে এসব কথা বলার জন্য খাতাটা দিয়ে গিয়েছি?নাহ পরী, তোকে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু এতো কথা বলার সময় আমার কাছে নেই তাই টানা একসপ্তাহ ধরে আমার মনের সব কথা এই খাতায় বন্দি করেছি। তুই বড্ড কঠিন মানুষ পরী। তোর মনে আমরা দুই বোন ও আম্মার জন্যই ভালোবাসা আছে। এছাড়া বাকি সবাইকে তুই ঘৃণা করিস আমি তা বেশ বুঝতে পারতাম। সাত বছর বয়সে আব্বার জন্য যে ঘৃণা দেখেছি সে ঘৃণা আমিও আব্বাকে করতে পারি নাই। জানি না জুম্মানকে তুই আদৌ ভালোবাসিস কি না? তবে ছোট্ট ছেলেটাকে একটু ভালোবাসা দিস।
ভালোবাসা ছাড়া কেউ কখনো বাঁচে না পরী। যেদিন তুই ভালোবাসতে শিখবি সেদিন ই বুঝবি। তবে আজকে তোকে এক বিশেষ মানুষের কথা বলব। যার কথা শুনে তোর ইচ্ছা করবে ইশ তোর জীবনে যদি এরকম কেউ আসতো তাহলে মন্দ হতো না। অবশ্য তাকে এতদিন তুই চিনে ফেলেছিস, কিন্তু দেখেছিস কি না জানি না!সে হলো রাখাল। নামটা রাখাল হলেও সে রাখাল ছিলো না। সে শুধুই আমার রাখাল, একান্তই আমার। স্কুলে পড়াকালীন বইতে কবিতা পড়তাম ‘রাখাল বাজায় বাঁশি কেটে যায় বেলা’ কিন্তু আমার রাখাল বাশি বাজাতে পারতো না,গরু ছাগল ও চড়াতো না। কিন্তু তবুও সে রাখাল, আমাদের গ্রামের রাখাল রাজা,,,,,,,”

তবে পরের টুকু আর পড়া হলো না পরীর। তার আগেই কোন একটা শব্দে সেদিকে তাকালো সে। এখন রাত অনেক, শুধু বৃষ্টির শব্দ আর ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে। তবে পরী বেশ বুঝতে পারছে যে অন্দরমহলে কোন নতুন পুরুষের আগমন ঘটেছে। এবিষয়ে বরাবরই পরী সচেতন। ভেতরে কোন নতুন মানব আসামাত্রই পরী তা টের পেয়ে যায়। খাতাটা বন্ধ করে হারিকেনের আঁচ কমিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। পালঙ্কের পেছন থেকে মোটা লম্বা লাঠিটা বের করলো। এই লাঠি দিয়েই ছোটবেলায় সে চর্চা করতো। এখনও করে,বলতে গেলে লাঠি চালনায় খুব পারদর্শী পরী। সময় পেলেই লাঠালাঠি শুরু করে দেয় সে। অন্ধকার থাকায় মুখটা ঢাকতে হলো না পরীর। কারণ সে জানে এই মুহূর্তে ঘরে চোর ঢুকেছে এবং চোর অন্ধকারেই চুরি করে। পরী তাই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়লো। প্রথমেই গেল রান্নাঘরে,সেখানে গিয়ে সে চুপিচুপি কুসুমকে ডেকে তুলল। তারপর একটা গামছা নিয়ে বেরিয়ে গেল।
অন্ধকারে লাঠি চালিয়ে রক্তাক্ত করে দিলো চোরকে। পুরো মুখে গামছা জড়িয়ে দিয়ে উঠোনের কোনের পেয়ারা গাছের সাথে বেঁধে দিলো।
ঘটনাটা কেমন যেনো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও যেন শীত লাগছে না পরীর। শরীর আরো গরম হয়ে আসছে। সেটা কি রাগে!! বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করে পোশাক বদলে ঘুমিয়ে পড়লো সে।

সকাল হতেই সারা গায়ে ঢোল পড়ে গেল। কাল রাতে জমিদার বাড়িতে চোর এসেছিল। এবং পরীই চোরকে ধরে ফেলে। আর আজকেই চোরের বিচার হবে। এই গুঞ্জনে কেউই ঘরে থাকতে পারলো না। নৌকা আর ভেলায় চড়ে সোজা জমিদার বাড়িতে হাজির হলো। সবার আগ্রহ চোরের বিচার দেখা। সবাই ভাবছে চোরের এতো সাহস হলো কিভাবে যে জমিদারের বাড়িতে হানা দেয়।
সারারাত ঘুমাতে না পেরে মাথা ব্যথা হয়েছে পালকের। মিষ্টি আর রুমির ও একই অবস্থা। বাইরে লোকজনের আওয়াজ পেতেই ওরা বুঝলো যে বিচার আরম্ভ হতে চলেছে তাই ওরা ঘর ছেড়ে বের হলো। একটু এগোতেই মুখোমুখি হলো আবেরজানের। তিনি বললেন,’কই যাও তোমরা বিচার দেখতে?’

রুমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলতেই তিনি বাজখাঁই গলায় বললেন,’বেডাগো সামনে যাও তো মাথায় কাপড় কই? মাথায় কাপড় দেও তাড়াতাড়ি।’
কোনরকমে তিনজন মাথায় কাপড় টেনে অন্দরমহল থেকে বের হয়ে গেল। বাইরে এসে দেখলো অনেক মানুষ সেখানে। একপাশে মহিলারা আরেকপাশে পুরুষ। পালক ভিড়ের মধ্যে নাঈমকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু অতো মানুষদের মধ্যে খোঁজা কি সম্ভব?এর মধ্যেই আফতাব উদ্দিন এসে চেয়ারে বসলেন সাথে আঁখির ও। এছাড়া গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বি ও আছেন। চোরকে টেনে আনলো দুজন লোক। গামছা টা সরিয়ে মুখ দেখাতেই সবাই অবাক হয়ে গেছে। এ তো উওর পাড়ার কানাই। ওর এতো বড় সাহস হলো কিভাবে?

আফতাব উদ্দিন গোমড়া মুখে কানাইকে জিজ্ঞেস করল,’তুই আমার বাড়িতে চুরি করতে এলি কোন সাহসে। তাও আবার অন্দরমহলে ঢুকেছিস।’
কানাই কোন জবাব দিলো না। রাতভর বৃষ্টিতে ভেজায় এখন জ্বরে কাঁপছে। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। এরই মধ্যে আঁখির বলে উঠলো,’যাই হোক চুরি করেছে যখন শাস্তি পেতেই হবে। গ্রামের সবাই আমার ভাইকে সম্মান করে শ্রদ্ধা করে আর কানাই যা করেছে তা অন্যায়। এতে আমাদের জমিদারি কে অপমান করেছে সে। তাই ওর কঠিন থেকে কঠিনতর সাজা হওয়া উচিত। বাকিটা গ্রামের মুরুব্বিরাই ভালো বুঝবেন।’
বলেই সবার দিকে দৃষ্টি মেলল আঁখির। পালক মিষ্টি আর রুমি যেন প্রাণ ফিরে পেলো। নাঈমরা তাহলে নিরাপদ। কিন্তু ওরা এখন কোথায়?পালক দৌড়ে ভেতরে চলে এলো। ওর পিছু পিছু মিষ্টি রুমিও এলো। বৈঠকঘর পেরিয়ে ঢুকলো নাঈমের ঘরে। ওরা রেডি হচ্ছিল। পালক গিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,’তোরা এখানে বাইরে কি হচ্ছে জানিস কিছু?’

নাঈম জুতার ফিতা বাধছিলো। পালকের কথায় এক পলক সেদিকে তাকিয়ে আবার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল,’শুনলাম চোর ধরা পড়েছে তাই আর বের হইনি। ভেবেছি একসাথে রেডি হয়ে বের হবো।’

রুমি পালককে ঠেলে ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে বলল,’চোরটা কে ধরেছে জানিস পরী!’

পরীর নামটা শুনেই চমকে তাকালো নাঈম। শেখর শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে এগিয়ে এসে বলল,’পরী ধরেছে!!সর সর সর গিয়ে দেখি কেমন চোর ধরেছে আমাদের পরী!’

মিষ্টি শেখরের কলার চেপে ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’ছাগল কোথাকার আমরা কত ভয় পেয়েছি জানিস? ভেবেছিলাম তোরাই বুঝি ধরা খেলি।’
শেখর কলার ছাড়িয়ে শার্ট ঠিক করতে করতে বলল,’রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে বের হতাম কিভাবে?ঘুম পেয়ে গেলো তো তাড়াতাড়ি।’

নাঈম উঠে সোজা বাইরে চলে গেছে। বাকি সবাই বিচারে গিয়ে উপস্থিত হলো।

পরী এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতে ভেজার দরুন ওর গায়েও জ্বর নেমেছে। তাই তো ভোরের স্নিগ্ধ রশ্নি আখিপল্লবে পড়তেই কাথাটা দিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়। এবং আবার ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু এই ঘুমটা আর ধরে রাখতে পারলো না পরী। কুসুম আর জুম্মান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে পরীর ঘরে ঢুকলো। ডেকে তুলল পরীকে, প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে জুম্মানের কথায় অবাক চাহনিতে তাকালো পরী। জুম্মান বলেছে,’পরী আপা আব্বা কইছে কানাই কাকার হাত কাইটা ফালাইতে। চুরির সাজা নাকি এইডাই ভালো।’

পরী ঘুম পুরোপুরি ছুটে গেছে। একটানে গায়ের কাথাটা সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আলমারি খুলে নিজের বোরখাটা গায়ে জড়িয়ে নিল। নেকাবটা আটকে দিলো। চোখ দুটো ও খোলা রাখলো না। পাতলা কাপড়ে ঢেকে দিলো রক্তিম চোখদুটো। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। অন্দরমহল থেকে বের হয়ে যেই না বৈঠক ঘর পেরুতে যাবে তখনই বাঁধ সাধে মালা। মেয়ের হাত টেনে ধরে বলে,’কই যাস?’
কম্পিত কন্ঠে পরী বলে উঠলো,’আম্মা কানাই কাকার হাত কাটবো আব্বায়?’
মালা মাথাটা হালকা নিচু করে জবাব দিলো, ‘হ!’
পরী জোর গলায় বলে,’আব্বা অন্যায় করতাছে আম্মা। আমারে যাইতে হইবো। আমার হাত ছাড়েন।’

পরীর কথায় হাতটা আরো শক্ত করে ধরলেন মালা,’তুই যাবি না পরী। মনে আছে আমারে কি কথা দিছোস তুই?’

‘মনে আছে আম্মা। আপনেরে কথা দিছি আমার এই মুখ কোন পুরুষরে দেখামু না। তার লাইগাই বোরখা পরছি। অহন হাত ছাড়েন আম্মা।’
কিন্তু মালা ছাড়লো না। সে মেয়েকে এতো লোকের সামনে যেতে দেবে না কিছুতেই। জোড়াজুড়ির এক পর্যায়ে জেসমিন এসে মালার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’পরীরে যাইতে দেন আপা। কিচ্ছু হইবো না। একটা মানুষের প্রাণ বাঁচবে।’

অতঃপর জেসমিন মাথা দুলিয়ে পরীকে যেতে বলল। এই প্রথম পরী কৃতজ্ঞতার সহিত তাকালো জেসমিনের দিকে তারপর ছুটে গেল বিচার সভায়। এদিক ওদিক না তাকিয়ে পরী এক দৌড়ে গিয়ে আফতাবের পাশে দাঁড়ালো। মেয়েকে এমন সময় কল্পনাও করেনি আফতাব। আড়চোখে সামনে বসা মুরব্বিদের দিকে তাকিয়ে নিজের মেয়েকে বললেন,’তুমি এখানে?ঘরে যাও।’

পরী অত্যন্ত নমনীয় কন্ঠ বলে,’এখানে অন্যায় হইতাছে আব্বা। আর যেইহানে অন্যায় হয় সেইহানে আমি থাকি তা আপনে জানেন।’

আফতাব উওর দিলেন না তবে আঁখির বলল, ‘কি অন্যায় পরী?তুই জানস না যে কানাই চুরি করছে?এই বিচার ই ঠিক হবে তুই ঘরে যা।’

ঘৃণা দৃষ্টিতে আঁখিরের দিকে তাকালো পরী কিন্তু চোখদুটো নেকাবের আড়ালে থাকায় তা আঁখির দেখতে পেলো না।

‘আব্বা কানাই কাকা চোর হইছে তো আপনাগো কারণেই। একবার ভাইবা দেখেন। বন্যায় সব ভাইসা গেছে কাকার। অহন পোলাপাইন লইয়া কেমনে থাকব কাকায়?আপনারা যদি সাহায্য করতেন তাইলে তো কাকায় চুরি করতে আইতো না।’

পরীর কথায় চুপ করে রইলো আফতাব সহ সব মুরুব্বিরা। কথাটা পরী ঠিকই বলছে। এই বন্যায় তো কারোরই কাজ নেই। ভরসা করার মতো তো ওদের একজনই আছে সেটা হলো আফতাব। আফতাবের উচিত ছিল গ্রামের সবার খেয়াল রাখার। পরী আবার বলতে লাগলো,’পেটের খুদা কখনো ধর্ম মানে না। খুদা এমন একটা জিনিস যা সব ধর্মেই হার মানে। খুদার জ্বালা বড় জ্বালা তা একটু বুঝেন! কানাই কাকার হাত না কাইটা তারে একটা কাম দেন। ওই হাত দিয়া খাইটা খাইবো উনি। ওনার হাত কাটলে বউ পোলাপান গো কি খাওয়াবো?হেয় তো মরবোই তার সাথে বউ পোলাপান ও মরব। কাকা চুরি কইরা অপরাধ করছে। তার সাজা সে রাতভর পাইছে। অহন তার হাত কাইটা আপনারা অন্যায় কইরেন না। এমন ও তো হইতে পারে কাকার হাত দুইটাই আপনাগো একদিন কাজে লাগবো।’

কথাগুলো শেষ করেই পরী পা বাড়ায় অন্দরমহলে। তবে এতটুকু সময়ে বলা কথাগুলো শুনে সভার সবাই চুপ করে গেল। আফতাব ও কিছু বলল না। বিচারের বাকি কাজ তিনি মুরুব্বিদের হাতেই ছেড়ে দিলেন। কেউ কোন কথা বলতেছে না দেখে গ্রামের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক যিনি সে বলে উঠলো, ‘পরী তো হক কথাই কইছে। কানাইয়ের বউ পোলাপাইন গো কথাও তো ভাবতে হইবো।’

তারপর তিনি আফতাবের দিকে তাকিয়ে বললেন,’তুমি কি কও আফতাব?কানাইরে কি করবা?’
আফতাব মাথা নিচু করে বলল,’আপনেরা যা ভালো বুঝেন তাইই করেন। কথা তো সব পরী বলেই দিছে।’

তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। কানাইকে কাজ দেওয়া হলো সম্পানের সাথে। যাতে কটা টাকা রোজগার করে চলতে পারে। পেটের দায়ে সে এসেছিল জমিদার বাড়িতে চুরি করতে। কারণ এই গাঁয়ে ধনী বলতে আফতাব। আরো কয়েকজন আছে তবে এই মুহূর্তে তাদের ঘরবাড়ি ও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে আছে। তাই সে জমিদার বাড়িতেই এসেছে চুরি করতে। কিন্তু কপাল খারাপ যে পরীর হাতেই ধরা পড়লো। যখন ওর হাত কাটার নির্দেশ দেওয়া হয় তখন সে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো। বারবার ক্ষমা চেয়েছিল,তার হাত যেন না কাটা হয়। কিন্তু কেউ শোনেনি। এখন কানাই পরীর প্রতি কৃতজ্ঞ হলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো কোন এক সময় পরীকে কৃতজ্ঞতা জানাবে।

নাঈমের চোখদুটো খুশিতে চকচক করছে পরীকে দেখে। এতক্ষণ ধরে মেয়েটার মধুর বানি শুনছিল সে। গলার স্বর টা সত্যি খুব সুন্দর। এখনও কানে বাজতেছে। কথা শুনে এখন পরীকে দেখার ইচ্ছা আরো প্রবল হচ্ছে। তবে পরীর কথাগুলো বেশি মুগ্ধ করেছে ওদের। শেখর নাঈমের কাঁধে হাত রেখে বলল,’এই মেয়েকে দেখা অতো সহজ হবে না নাঈম। আশা দেখছি এখানেই ছাড়তে হবে। নাহলে আশার জালে আমরাই পেচাবো।’

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে নাঈম বলল,’উহু এখন মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছা আরো গভীর হলো।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে আজকে ওরা জমিদারের বাগান বাড়িতে গেলো। সেখানেও অনেক মানুষের উপস্থিতি। তবে বেশ কয়েকজন একটু বেশি অসুস্থ তাই তাদের স্থানীয় একটা হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলল ওরা। এরইমধ্যে আরেকটা নৌকা এসে পাড়ে ভিড়লো। সেখান থেকে কয়েকজন লোক বেরিয়ে আসলো। তারা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে এগিয়ে গেলো নাঈমের কাছে। সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে নাঈম কিঞ্চিৎ হেসেই এগিয়ে গেলো। লোকটা সবিনয়ে হাত মিলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। বিপরীত দিক থেকে নাঈম ও হাত বাড়িয়ে দিলো এবং
বলল,’সেদিন আপনার নামটা জানা হয়নি আর নিজেরটাও বলা হয়নি। ব্যস্ততা দুজনেরই ছিল। যাই হোক,আমি নাঈম আহমেদ।’

বিপরীতমুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটাও হেসে জবাব দিল,’শায়ের।’
নামটা শুনে নাঈমের চোখ দুটো হালকা ছোট হয়ে এলো বলল,’শুধুই শায়ের?’

লোকটা আবারও হাসলো। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,’সেহরান শায়ের। আশাকরি এবার বুঝতে পেরেছেন।’

চলবে,,,,,,,,,,

সবার রেসপন্স আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here