সাজানো বিয়ে❤
২য় পর্ব
লেখকঃ নিহান হোসেন নীল।
-কি হল কথা বলছো না ? কোথায় তুমি ?
-আমি ?
-শ্বশুর বাড়ি ??
আমার বুকটা মনে হল এখনই ফেটে যাবে ।
আমি শ্বশুর বাড়ি এটা আমার বাপ জানলো কিভাবে ?
-তুমি থাকো ওখানে আমি আসছি তুমি এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছ । তার উপর শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠছ,ঘর জামাই হয়ে ! তুমি থাকো আমি আসছি !!আব্বা ফোন রেখে দিল ।ফোন রাখার পর নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
-কি হয়েছে ?
-আমার আব্বা আসছে !
-মানে ? উনি জানলেন কি ভাবে ?
-আমি কিভাবে বলবো ?
আমি উঠে পড়লাম । এখানে থাকা এখন একদম নিরাপদ নয় । আমার অবস্থা আসলে খারাপ । নিশির আব্বা বলল,,,
-আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন ?
-আপনি আমার বাবা কে চিনেন না ? উনার মত রাগি মানুষ আমাদের এলাকাতে আর একটাও নাই ! আমাকে যদি এখন এখানে পায় একদম চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ! আমাকে এখন পালাতে হবে । যে করেই হোক !!
-আরে পালাবে কেন ?
নিশির বাবা কি যেন ভাবলো !
-আচ্ছা ঠিক আছে । তোমাদের তো হানিমুন হয় নি ! আর মার অবস্থাও এখন মোটামুটি ভাল । তোমরা এক কাজ কর, সিলেট চলে যাও ! ঠিক আছে ! ওখানে আমার একটা বাংলো বাড়ি আছে । ওখানে কয়দিন থেকে আসো ! আর আমি এদিকে তোমার বাবার জন্য ওয়েট করি । উনি আসলে না হয় ওনাকে সামলাবো আমি !
আমি আর কিছু ভাবলাম না । আসলে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমার কেবল মনে হচ্ছে আব্বা আসার আগে আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে !
আমি জলদি ঘরের দিকে রওনা দিলাম । নিশি আমার পেছন পেছন এল !!
বাবা আমার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন তার ব্রিটিস আমলের বন্দুক নিয়ে ! আমি দৌড়াচ্ছি প্রানপনে কিন্তু যতই দৌড়ানোর চেষ্টা করছি কেন জানি খুব বেশি এগিতে পারছি না । প্রতি মুহুর্তে বাবার দোনালা বন্দুকটা এগিয়েই আসছে। আমি তো টেনশনে পড়ে গেলাম ।
-এই একটু আস্তে দৌড়াও !
আমি ডান দিকে তাকিয়ে দেখি আমি কেবল একা দৌড়াচ্ছি না আমার সাথে নিশিও দৌড়াচ্ছে । সব চেয়ে অবাক হওয়ার কথা নিশি দৌড়াচ্ছে বউ এর সাজে । যেন বিয়ের আসর থেকে আমি ওকে নিয়ে পালিয়েছি । নিশির পরনে লাল রংয়ের একটা ল্যাহেঙ্গা । আর সারা শরীর জুড়ে গহনা ভর্তি !! গহনার ভারে ঠিক মত দৌড়াতেও পারছে না ।আমি বললাম,,,
-তুমি এরকম গহনা আর ল্যাহেঙ্গা পরে দৌড়াচ্ছ কেন ?
-গাধার মত প্রশ্ন করবে না । গহনা ফেলে দৌড়ানোর থেকে গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভাল !
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম । পেছনে একজন বন্দুক নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর এই গহনার পেছনে লেগে আছে ! আশ্চর্য মেয়েদের সাইকোলজি !! আমি দৌড়াতে দৌড়াতেই হোচট খেয়ে পরে গেলাম । ভেবেছিলাম খুব ব্যাথা লাগবে কিন্তু ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । বিছানায়উঠে বাসেও দেখলাম বুকের ভিতর কেমন ধরফর করছে ! মাই গড !!
যদি এই স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায় !! তাহলে উপায় আছে !!অবশ্য সত্যি হবার সম্ভাবনা কম !! আব্বা এখানে আসতে পারবে না !
মনটা একটু শান্ত হলে বিছানা ছেড়ে জানালায় কাছে আসলাম । বাইরে তখনও খুব বেশি আলো ফোটে নি । বাড়ান্দার দিকে চোখ পড়তেই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । এই সকাল বলা নিশিকে দেখলাম বারান্দায় উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে , হাতে একটা কাচের মগ ! ভিতরের তরলের রং দেখেতো মনে হচ্ছে কফি ! কি রে ভাই চা বাগানে বেড়াতে এসে কফি খাচ্ছে !!
আমি বারান্দার বেড়িয়ে এলাম ! আামর পায়ের আওায়জ পেয়ে নিশি আমার দিকে ফিরে তাকালো !
-চারিদিকে চা বাগান রেখে কেউ যদি তার মাঝখানে কফির মগ নিয়ে বসে থাকে তাহলে তাকে কি বলা উচিত?
ধোয়া ওঠা কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে নিশি আমার দিকে তাকাল ভাল করে।
কাল নিশিকে যত খানি চিন্তিত মনে হচ্ছিল আজ ততখানি মনে হচ্ছে । নিশি বাংলোর বারান্দায় বসে আছে পা ঝুলিয়ে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম ।
-এই চা বাগানে কফি পেলি কোথায় ?
নিশি এবারও কিছু বলল না । কাচের মগটা আমার পাশে রেখে সামনে তাকাল ।
-জানিশ এই জায়গা আমার খুব পছন্দের । এখানে বসে থাকলে মনে হয় বসেই থাকি । আর সকালবেলাটা কি যে চমৎকার লাগে এখানে বসে থাকতে !
-হুম তাই তো দেখছি । শ্বশুর মশাই জব্বর একখ্যান বাড়ি কিনছে !
নিশি আমার দিকে তাকাল ।
-খুব আনন্দে আসিছ মনে হচ্ছে ! কাল তো লেজ গুটিয়ে কেমন দৌড় মারলে !দেখলাম তো আমি ! আর এখন ?
-আসলে এখন কেন জানি আর ভয় লাগছে না । মনে হচ্ছে না যে আব্বা এখানে আসতে পারবে ! আর সকাল বেলা এমন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল !! আর ……
-আর ?
-আর সকালবেলা তোকে এই এখানে বসে থাকতে দেখে কেন জানা খুব ভাল লাগল । মনে হল .. মনে হল যে গল্পের কোন নায়িকা বসে আছে বারান্দায় । একটু একটু করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে । চমৎকার একটি গল্পের শুরু ।
মগটা তুলে এবার আমি চুমুক দিলাম । আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো চিতকার করে উঠবে । কিন্তু কিছু বলল না । আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । তারপর,,,
-বলল চল ঐ দিকটা যাই ।
বলেই নিশি বারান্দা থেকে ঘাসের উপর লাফ দিল ।
-দাড়া ঘুরে আসছি ।
-আরে এই খান দিয়ে আয় না ।
-স্যান্ডেল পরে আসি ।
নিশি বলল,,,,
-আমি খালি পায়ে আসতে পারলে তুই পারবি না ? আর সকাল বেলায় খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা । আয় ।
আমি ওখান থেকেই নিচে নেমে এলাম । নিশির সাথে হাটতে লাগলাম । সত্যি বলব কি আমি কখনও ভাবি নি আমার জীবনে এমন দিন আসবে ! এমন একটা চমৎকার একটা দিন । আমরা দুজন এমন সুন্দর সকালে হাটছি পাশাপাশি । নিশি টুকটাক কথা বলছে । আমি চারিদিক দেখছি । চারিদিকের পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে ফেলছে । হাটতে হাটতে আমি দাড়িয়ে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য । নিশি তখনও কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে । আমি যে দাড়িয়ে পরেছি ও এইটা লক্ষ্য করে নি । যখন লক্ষ্য করলো তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
-কিরে দাড়িয়ে পরলি কেন ?
আমি একটু দৌড়ে ওর সামনে এসে দাড়ালাম । নিশি আবার বলল,,,
-দাড়িয়ে পড়লি কেন ?
-তোকে দেখছিলাম ।
নিশি আবারও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ।
দিন ভালই কাটতে লাগলো । সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই নিশির সাথে । সকাল বেলা একসাথে হাটতে বের হই খালি পায়ে, রাতে একসাথে জোঁছনা দেখি দুজন ! জীবনটা কেন জানি খুব সুন্দর হয়ে গেল । কিন্তু কয়দিনের জন্য ! এই মিথ্যা আর কয়দিন !!এখান থেকে ফিয়ে গেলে আবার তো,,, আচ্ছা এই মিথ্যা টা কি সত্যি হতে পরে না ? ছিঃ কি ভাবছি ?নিশি শুনলে কি ভাববে ? তবে চিন্তা টা আবার আমার মাথায় এলো । ঐদিন রাতে বারান্দায় বসে ছিলাম দুজন । বাইরে খুব সুন্দর জোঁছনা উঠেছে । আমি মাঝে মাঝে নিশির দিকে তাকাচ্ছি ।নিশি তাকিয়েই আছে বাইরের দিকে ! হঠাৎ নিশি বলল,,,
-কাব্য ঘুম আসছে !
-ভিতরে যাবি ।
-না ভিতরে যেতে ইচ্ছা করছে না । তোর কোলে মাথা রেখে একটু শুব ?
আমি একটু অবাক হলাম । হেসে বললাম
-শুবি ? শো !
নিশি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো । আমি আস্তে আস্তে নিশির মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম । আমার মনে মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হতে লাগলো ! আশ্চার্য ভালা লাগার অনুভুতি !!
-কাব্য !
-হুম !
-আমি একটা অন্যায় করেছি । তুই কি আমার উপর রাগ করবি ?
-কি করেছিস ?
নিশি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো ।
-কি হল বল !
চলবে,,,,,
নিহান হোসেন নীল
“““““““““““““