#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩
ঘুমটা উড়েই গেল স্বচ্ছের কথা শুনে মোহের। কর্ণকুহরে এখনো বাজছে কথাটি। চোখজোড়া পলকহীনভাবে স্থির হয়ে রয়েছে স্বচ্ছের ওপর। স্বচ্ছ আজ নির্বিকার। তার ঠোঁটের কোণে পুরোপুরি হাসি না দেখা গেলেও হাসির রেশ বিদ্যমান। একটু আগেই ঠান্ডায় কাঁপছিল মোহ। কথাটি কানে আসার সাথে সাথে ঘামতে শুরু করেছে সে। এই মূহুর্তে নিজেকে কেমন লাগতে পারে সেইভাবে কল্পনা করতে থাকল মোহ। এলোমেলো আর জোট পাকানো চুল, ফুলে ওঠা আর তেলতেলে চোখমুখ! ভাবতেই ভ্রু কুঁচকে এলো তার। অন্যকেউ দেখলে নিশ্চয় এই ভোর রাতে পেত্নী ভেবে হার্ট অ্যাটাক করেও বসতে পারে।
“আমার এখনো মনে হয় আপনি ঠিক নেই। নিশ্চয় ড্রিংকস করে এখন চোখে হুরপরীর আবির্ভাব ঘটেছে। আমি মোহ চিনতে পারছেন তো?”
“তুমি যদি আমার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতে তাহলে তুমি নিজেও সেই মোহের তাপে জ্বলে যেতে। কিন্তু আমি তোমাকে দেখাতে চাই না। তুমিও যদি লোভে পড়ে যাও? এই লোভটা আমি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক।”
মোহ এবার চাদর হাত দিয়ে খামছে ধরে। দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে সে। তার মস্তিস্কে শব্দ ভান্ডার শূন্য হয়ে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কি বলা যায়। এটা কেমন ভিন্ন অনুভূতি? আর স্বচ্ছকে চিনতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে মোহের। কি হয়েছে লোকটার আজকাল? অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে চমকে দেয়। আর মোহের মনেই বা কি হয়েছে? কেন সে জবাব দিতে পারে না? কেনই বা স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনেই যায়?
“এ…এই সময়ে কে…কেন এসেছেন? সবে তো ভোর। ঘুম পাচ্ছে না আপনার? আপনি নিজের এক বাদুড় আমাকেও বাদুড় বানাচ্ছেন?”
খানিকটা দম নিয়ে কথাগুলো আঁটকে আঁটকে বলে মোহ। স্বচ্ছ এবার সত্যিই হাসে। আবার খানিকটা বিচলিত কন্ঠে বলে,
“দেখতে আসছিলাম তুমি আছো নাকি মাটির সাথে মিশে গেছো!”
“মানে?”
“মানেটা খুব ইজি। সেদিন যে পরিমাণে শুঁকিয়ে গেছিলে আমি ভেবেছিলাম এতোদিনে খাওয়াদাওয়ার অভাবে তোমাকে দেখতে পাওয়া যাবে না। তোমায় দেখতেই এলাম আরকি!”
বিদ্রুপের সুরে বলে স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে মুখটা ভার করে ফেলে মোহ। বিরক্তির সুরে বলে,
“দেখা হয়েছে? আমি বেঁচে আছি। এখন যাচ্ছি।”
“আরে ওয়েট! এতো তাড়াহুড়ো কীসের? একদিন না ঘুমালে এমন কিচ্ছু হবে না।”
“কিচ্ছু হবেনা মানে? আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। বাহিরে কি ঠান্ডা। বৃষ্টির পর বাতাসটা আরো ঠান্ডা লাগছে।”
মোহ পিছু ঘুরে যায় বাড়ির গেটের দিকে যাবার জন্য। পেছন থেকে স্বচ্ছ বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“এক প্রেয়সীকে দেখবার তৃষ্ণায় কত যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি তার কি খেয়াল আছে? এক উন্মাদ যে তাকে একটা পলক দেখার পরই নিজে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে সে কি জানে? জানে না হয়ত! জানলে এমন ঘুমানোর বাহানা দিতো না।”
স্বচ্ছের কোনো কথা স্পষ্ট না শোনালেও পিছু ফিরে তাকায় মোহ। স্পষ্ট জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বললেন?”
“ইয়াপ! গাড়িতে বসো।”
অকপটে বলল স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলেও দাঁড়ালো সে। মোহকে ইশারা করে গাড়ির ভেতরে বসতে বলল। মোহ এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। এবার সত্যি স্বচ্ছের ওপর রাগ হচ্ছে তার খামখা এই ভোরবেলা সুন্দর মাখো মাখো ঘুম নষ্ট করে কি পাচ্ছে সে? স্বচ্ছের যে নিজেরও ঘুম পেয়েছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চোখজোড়া হালকা ফুলে উঠেছে তার। আর চোখের সাদা অংশে লাল রঙের হাতছানি। সেটা মোহের নজর এড়ায়নি। মোহ জানে স্বচ্ছ এই শহরে ছিল না। স্বচ্ছের এমন বিধ্বস্ত রুপ দেখে বুঝেও নিয়েছে রাতেই চট্টগ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েছিল স্বচ্ছ। সারারাত জেগে ড্রাইভ করে তবেই এখানে এসে পৌঁছেছে। মোহ হাফ ছেড়ে বলে,
“সিরিয়াসলি? এই ভোর বেলা কোথায় যাব? একটা ভালো সাজেশন দিচ্ছি বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আর সকাল বেলা যদি বাড়িতে সবার ঘুম ভেঙে আমায় না দেখতে পায় তাহলে কি হবে জানেন?”
“ঘুম ঘুম করছো কেন? বাউ ইনি চান্স তুমি আবার এটা ভাবছো না তো যে আজকে বিয়ের পর সারা রাত তোমায় ঘুমাতে দেব না? তাই এখনই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাবার করে ফেলতে চাইছো? তাহলে জানিয়ে রাখি তোমায় টাচ করায় আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সারা রাত নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারো। জাস্ট আমার বুকের ওপর উঠে এসো না। তোমার তো ঘুমানোর স্টাইল ভালো না। যখন তখন লাথি মেরে ফেলেটেলে দিতে পারো। লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে আমার। তুমি গাড়িতে বসবে হ্যাঁ কি না?”
শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে স্বচ্ছ। কিন্তু আগের কথাগুলো শুনে অলরেডি মোহ বিষম খেয়ে বসে আছে। স্বচ্ছ যে এডভান্স ভাবতে ভালোবাসে সেটা বুঝে নিয়েছে মোহ। কন্ঠ শান্ত হলেও মোহের বুঝতে বাকি থাকে না যে এখন যদি সে আপত্তি করে তাহলে লোকটা এমন কিছু ঘটাবে যা তাকে গাড়িতে সঙ্গে যেতে বাধ্য করবে। মোহ এবার উপায়ন্তর না পেয়ে বলে,
“যাচ্ছি তো।”
গাড়িতে উঠে বসে মোহ। স্বচ্ছও সময় নষ্ট না করে তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রথমে চোখ বড় বড় করে রাস্তার দিকে চোখ পাকিয়ে থাকলেও মাঝরাস্তায় ঝিমাতে থাকে মোহ। এক পর্যায়ে জানালায় ঠেস লাগিয়ে ঘুমিয়েই পড়ে সে। বাঁকা দৃষ্টিতে মোহকে দেখে একহাতে তাকে নিজের দিকে টেনে নেয় স্বচ্ছ। মোহ নেতিয়ে পড়ে তার কাঁধে। মোহের মাথা আলতো করে একহাতে চেপে ধরে। মাথা ঘুরিয়ে নিজমনে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দেয় মোহের মাথায়। তারপর কাতর সুরে বলে,
“আর কতদিন যে চোরের মতো করে তোমায় ছুঁতে হবে জানা নেই আমার। কিন্তু তুমি জানালায় মাথা রেখে কেন ঘুমিয়েছো প্রেয়সী? তোমার জন্য এই মানুষটা যে অধীর আগ্রহে বসে থাকে জানা নেই তোমার? মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে একটু ছুঁইয়ে দিলেও তো পারো।”
“কুম্ভকর্ণের ফিমেল ভার্সন? ঘুম কি এবার ভাঙবে না আপনার?”
ঘুমটা হালকা হয়ে আসে মোহের। চোখমুখ জড়িয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,
“মিমি, যাও প্লিজ। আরেকটু!”
“হোয়াট দ্যা…! আমার কন্ঠস্বর কি ছোট ফুপির মতো?”
পুরুষালি কন্ঠে হকচকিয়ে ঘুম ভেঙে তাকালো মোহ। তার মতে তার ঘরে পুরুষ আসবে কোথা থেকে। চোখ মেলে আবছা দৃষ্টিতে আশপাশটা দেখতেই সবটা স্মরণে এলো। পাশ ফিরে স্বচ্ছের দিকে তাকায় মোহ। স্বচ্ছ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে। মোহ তাকাতেই সে নিজের কাঁধে হাত দিয়ে একটু ম্যাসাজ করে বিচলিত ভঙ্গিতে বলল,
“উফফ…একটা অ্যাডভান্টেজ নিতেও তো দেখছি ছাড়ো না। সারা রাস্তা কাঁধে ঘুমিয়ে ঠিক কাটিয়ে দিলে। আমার ওপর মায়া দয়াও নেই তোমার।”
মোহ জবাবে কিছু বলতে নিলেই থামিয়ে স্বচ্ছ বেরিয়ে বলে,
“আই হ্যাভ নো টাইম। কাম ফাস্ট।”
চোখ কচলাতে কচলাতে বাহিরে বের হয়। সামনে একটা রিসোর্ট দেখে হতভম্ব হয় সে। তড়িৎ গতিতে স্বচ্ছের দিকে দৃষ্টিপাত করে ভয়ার্ত সুরে বলে,
“এখানে কি করতে এসেছি আমরা?”
স্বচ্ছ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোনো কাজেই এসেছি অবশ্যই।”
“রিসোর্টে কি কাজ? আমি বাড়ি যাব।”
“ভয় পাচ্ছো?”
স্বচ্ছের প্রশ্নে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয় মোহ। কয়েকটা ঢক গিলে মনে সাহস জুগিয়ে মৌনতা পালন করে সে। আচমকা স্বচ্ছ তার হাত ধরে একপ্রকার টেনেই ভেতরে নিয়ে আসে। মোহের বুক ধক করে ওঠে এবার। স্বচ্ছের মনে কি চলছে তা বোঝা দায়।
“দেখুন আমি ভালোই ভালোই বলছি আমায় বাড়ি যেতে দিন। আমার এখানে ভালো লাগছে না।”
কথাটুকু কান পর্যন্ত পোঁছায় না স্বচ্ছের। রিসোর্টের ভেতরে এনে একটা ঘরের সামনে এসেই থামল সে। এবার মোহের দিকে তাকিয়ে আবারও ভেতরে ঢুকে গেল মোহকে নিয়ে। ঘরে ঢুকতেই মোহের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে সে। কিছু বলবার আগেই সে দেখতে পায় বেডে থাকা একটা হলুদ রঙের সুন্দর লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে স্বচ্ছ। চুপ হয়ে যায় মোহ। স্বচ্ছ তার দিকে এসে তার হাতে লেহেঙ্গা গুঁজে দিয়ে বলে,
“নাও। পড়ে নাও। ফাস্ট।”
“এটা কেন? মানে আপনি কি করতে চাইছেন?”
“তোমার প্রশ্নের ঝুড়ি কখনো শেষ হবে না? মেয়েরা যে কতটা বাঁচাল হয় সেটা তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। আরে বাবা, যা বলছি সেটা করলেই তো বুঝতে পারবে যে কি করতে চাইছি আমি! এখন প্রশ্ন করলে মুখে সেলাই করে দেব মিলিয়ে নিও।”
বলেই বেরিয়ে যায় স্বচ্ছ। মুখ ফুলিয়ে লেহেঙ্গা উল্টেপাল্টে দেখে মোহ। হলুদ পোশাকে স্টোনের গর্জিয়াস কাজ করা। প্রায় বেশ ভারি লেহেঙ্গা! দেরি না করে গেট লাগিয়ে স্বচ্ছের কথায় চেঞ্জ করে নেয় সে।
গেট খুলতেই স্বচ্ছকে দেখে খানিকটা চমকে যায় মোহ। মাতাল ভরা চাহনি স্বচ্ছের। একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মোহকে দেখে নেয় সে। হলুদ রাঙা মেয়েটির সৌন্দর্য ভাঁজে ভাঁজে বোঝা যাচ্ছে। একপা দুইপা করে এগিয়ে আসে স্বচ্ছ। এমন দৃষ্টিতে খানিকটা ভড়কে যায় মোহ। পিছিয়ে আসতেই আচমকা স্বচ্ছ ধরে ফেলে মোহের বাহু। ভয়ে ভরা দৃষ্টি মোহের। তাকে এনে লাইটিং এর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দেয় স্বচ্ছ। হাতে চিরুনি নিয়ে মোহের মাথার চুলে চালিয়ে আলতো করে আঁচড়ে দিতে থাকে। মোহ ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে সোজা হয়ে বসে থাকে। কি চায় স্বচ্ছ তার মস্তিষ্কে আসছে না। এই রহস্যময় মানুষটার ফাঁদে পা দিতে দিতে জড়িয়ে গেছে সে। স্বচ্ছ আনমনে বলে,
“এই রিসোর্ট আমার এক বন্ধুর। সেজন্যই এখানে আনা সহজেই সম্ভব হয়েছে।”
“কিন্তু এখানে আমার কারণ?”
স্বচ্ছ আয়নার মাধ্যমে মোহের দিকে তাকায়। স্নিগ্ধময় চেহারা তার। হলুদ রঙে জ্বলজ্বল করছে। যেন সে চারিদিকটা আলো ছড়িয়ে রেখেছে। স্বচ্ছ হালকা নিচু হয়ে মোহের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“বিয়ে মানে হাজারো স্বপ্ন। একটা মেয়ের অনেক অনেক স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে এই বিয়েতে। আমার কাছে #একটুখানি_সুখ চেয়েছিলে। আমি চাই তোমায় প্রতিদিন মূহুর্ত সুখ অনুভব করাতে। তোমার মুখে সেই হাসিটা দেখতে যেই হাসিটা দেখলে আমি নিজেও প্রাণভরা শ্বাস নিতে পারব। সুখ রাজ্যের সকল সুখপাখি আমি তোমার হাতের মুঠোয় এনে দিতে চাই। তার জন্য এক ছোট্ট প্রচেষ্টা। কখনো কখনো তো আমায় বিশ্বাস করতেই পারো সুন্দরী!”
ঘনঘন চোখের পলক ফেলতে থাকে মোহ। সে কিছুটা অনুতপ্ত। সে আসলেই স্বচ্ছের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল কিছু মূহুর্তের জন্য। মাথা নত করে বলল,
“আই এম সরি।”
“সরি দিলে হবে না। এটার হিসাব তোলা রইল। অন্য কোনোদিন হিসেব করব। এখন বলো তো বেণী কিভাবে করে?”
“বেণী?”
“হু বলো!”
“আপনি বেণী করবেন?”
বিস্ময়ের সুরে বলে মোহ। স্বচ্ছ মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হ্যাঁ বলো।”
স্বচ্ছের অদ্ভুত আনন্দে বেশ আনন্দ পায় মোহ। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে স্বচ্ছকে দেখিয়ে দেয়। বেশ সময় নিয়ে কোনোমতে বেণী করে দিতে সক্ষম হয় সে। মোহের একপাশে বেণী ঝুলিয়ে দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের নিচ থেকে বেশ কয়েকটা কাঠগোলাপ বের করে মোহের বেণীর ফাঁকে ফাঁকে সযত্নে গুঁজে দেয় সে।
স্বচ্ছের পাগলামিতে স্তব্ধ মোহ। এ কেমন উন্মাদ লোক? বর্তমানে কাঁচা ফুলের গয়না দিয়ে মোহকে জড়িয়ে দিতে ব্যস্ত সে। কানে আলতো ছুঁইয়ে ফুলের কানের দুল, গলায় ফুলের মালা আর মাথায় সুন্দর করে ফুলের গাজরা গুঁজে দেয় স্বচ্ছ। মোহের হাত ধরে টেনে দাঁড় করায় সে। উঠে দাঁড়ায় মোহ। স্বচ্ছ মুখ ফসকে বলেই ফেলে,
“ফুলের মোড়ানো আরেকটি ফুল।”
সঙ্গে সঙ্গে চোখমুখ লাল হয়ে যায় মোহের। লজ্জায় দ্রুত সরে যেতে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটে তার। লেহেঙ্গার নিচের অংশ একটু বেশি বড়। মাটি ছুঁয়েছে। স্বচ্ছ মৃদু হেঁসে আচমকা কোলে তুলে নেয় মোহকে। মোহের চোখজোড়া এবার কপালের উঠে যায়। স্বচ্ছের ঘাড় জড়িয়ে ধরে। আর বিপাকে পড়ে বলে,
“কি করছেন?”
“যা করছি করতে দাও। নয়ত তোমারই ক্ষতি।”
আবারও নিরব হয়ে যায় মোহ। আজ সে বাকরুদ্ধ। যেন বোবা হয়ে গেছে। তাকে ঘর থেকে নিয়ে বের হয় স্বচ্ছ। হাঁটতে হাঁটতে মোহের কানে ধীর কন্ঠে বলে,
“তোমার দিকে তাকাতেও আমার ভয় করছে। একবার যদি তোমার সেই ঘোলাটে দৃষ্টিতে ফেঁসে যাই তাহলে প্রেম নেশা গাঢ় হয়ে যাবে। মগ্ন হয়ে যাব মোহ নামক মেয়েটিতে। এই স্বচ্ছ নামক অস্বচ্ছ ব্যক্তি মরিয়া হয়ে উঠবে তোমায় পেতে। না তাকানোই ভালো কি বলো?”
স্বচ্ছের শার্ট খামচে ধরে মোহ। মুখ দেখানোর অবস্থাতে নেই সে। এমন কথা বলে তাকে মিশিয়ে না দিলেও পারত! স্বচ্ছের বুকের সঙ্গে মিশে যায় মোহ।
আলো ফুটতে শুরু করেছে। পরিবেশে এখনো শীতলতা ভাব। রিসোর্টের টেরিসে স্বচ্ছ মোহকে এনেছে। মোহকে আসনে বসিয়ে দিল সে। সামনে হলুদের বাটি। মোহের পায়ের নিচে পানি থইথই করছে। পাশে ছোটখাটো কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ দেরি না করে হলুদের বাটি নিয়ে হাতে হলুদ ভরিয়ে বেশ গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিল মোহের ডান গাল। হালকা কেঁপে উঠল মোহ। চোখ বুঁজে ফেলল সে। এ এক প্রগাঢ় অনুভূতি। যা বলার কোনো নির্দিষ্ট শব্দ যেন হয়নি। অনুভব করাই শ্রেয়! স্বচ্ছ মোহের দিকে খানিকটা ঝুঁকে মোহের নাকে নাক ঠেকিয়ে বলল,
“হ্যাপি বডি ইয়োলো ডে হবু মিসেস. আহিয়ান স্বচ্ছ!”
চলবে…
[বি.দ্র. জানি দিতে লেট করে ফেলেছি। তবুও দিয়েছি। আমি একটু অসুস্থ। মাথাব্যথা হালকা সেড়ে যাবার পরই লিখতে বসেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর সবাই রেসপন্স করবেন।]