#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৮
সকালে ঘুমটা এক উষ্ণ আবেশে ভাঙে মোহের। বিছানার চাদরে এক অন্যরকম গন্ধে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় সে। এমন ঘ্রাণ তো তার বিছানায় থাকে না। এই ঠান্ডায় উষ্ণ গরম লাগছে তার। চোখ মেলতেই নিজের মুখশ্রীর একদম কাছাকাছি স্বচ্ছ নামক পুরুষটাকে দেখে চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেল তার। মাত্র এক ইঞ্চি ফাঁক রয়েছে তাদের মাঝে। যদিও স্বচ্ছ উপুড় হয়ে একহাত মোহের পেট জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুখটা মোহের দিকেই করে আছে সে। স্বচ্ছের ঘুমানোর ধরন দেখে হেঁসেই ফেলল মোহ। কিভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফাঁক করে ঘুমাচ্ছে সে। মোহের মুখ আঁচড়ে পড়ছে তার তপ্ত নিঃশ্বাস।
দরজায় আস্তে করে টোকা পড়তেই ধ্যান ভেঙে মাথা হালকা উঁচু করে দরজার দিকে তাকায় মোহ। সাদা পাতলা পর্দা ভেদ করে কাঁচ ও কাঠের সংমিশ্রণে দরজার ওপাশে একটি অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তার মানে কেউ ডাকতে এসেছে। ফট করে ঘড়ির দিকে তাকায় মোহ। দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা সুন্দর ঘড়িতে প্রায় সকাল নয়টা পেরিয়েছে। চক্ষু চরকগাছে পরিণত হয় তার। আবারও দরজায় টোকা পড়তেই আস্তে করে স্বচ্ছের হাতে হাত রেখে সেটা ধীরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মোহ যাতে স্বচ্ছের ঘুমটা না ভাঙে। কিন্তু ঘটে উল্টো ঘটনা। হালকা নড়েচড়ে উঠে স্বচ্ছ আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে মোহকে। এই মূহুর্তে স্বচ্ছকে জাগাতে চাচ্ছে না সে। হয় লোকটা তাকে লজ্জা পাইয়ে দিবে নয়ত নিজেই লজ্জায় পড়বে। মোহ জানে স্বচ্ছ লজ্জা পাওয়ার মানুষ নয়। তাই মোহ কেটে পড়তে চায় দ্রুত।
“ভাবসাব দেখো! যেন আমাকে সত্যি কোলবালিশ বানিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে এতো লেট হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। লোকটার সঙ্গে রাতে বের হওয়ায় ভুল হয়েছে আমার।”
কথাগুলো আপনমনে বিড়বিড় করে আবারও নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মোহ।
“আমি নিরুপায়। বড্ড নিরুপায়। আমি কখনো চাই না ফ্যামিলিকে ধোঁকা দিতে। কিন্তু… ”
চকিতে তাকায় মোহ। স্বচ্ছ চোখ বন্ধ করেই বিড়বিড়িয়ে চলেছে। চোখজোড়া সরু হয়ে আসে মোহের। স্বচ্ছ কি স্বপ্ন দেখছে? যার কারণে এসব বিড়বিড় করছে? আবারও পড়ল দরজায় টোকা। এবার বেশ জোরেসোরেই টোকা পড়ল। স্বচ্ছ নড়ে উঠে মোহের বাঁধন হালকা করে দিতেই মোহ আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে বেড থেকে নেমে এলো। তার গায়ে বর্তমানে শুধু লেহেঙ্গা। ক্লান্ত হয়ে সেভাবেই শুয়ে পড়েছে সে। গয়নাও খোলেনি। বোধহয় স্বচ্ছই খুলে দিয়েছে। ঠিক মনে নেই মোহের। গায়ে লেহেঙ্গার ওড়না জড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজার লক খুলতেই চোখের সামনে স্পষ্ট হলো সোহা। দুষ্টু হেঁসে সোহা জিজ্ঞেস করল,
“রাতে ঘুম হয়নি তাই না? সেজন্য ঘুম ভাঙতে দেরি হলো?”
“হ্যাঁ। ঘুমোতে পারিনি।”
কিছু না বুঝেই স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়ে দিল মোহ। সাথে সাথে সোহা ফিক করে হেঁসে উঠে বলে,
“হয় হয়! এমন হয়। প্রথম প্রথম বিয়ে। মাখো মাখো প্রেম।”
চোখ লজ্জায় ছলকে তাকায় মোহ। সোহার বয়স বড়জোড় ১৭-১৮ হবে। মেয়েটা এতোটুকুতেই পেকে গেছে। অথচ মোহ নির্বিকার সুরে উত্তর দিয়ে চলছিল। মোহ হালকা কেশে রাগি সুরে বলার চেষ্টা করল,
“দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো? আমি তোমার বড় না? মাইর লাগাবো।”
“হেহেহে! আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। অনেক লেট হয়ে গেছে এমনিতেই। নিচে সব আত্মীয়রা তোমাকে দেখার জন্য ওয়েট করছে। আর এসব শাড়ি, গয়না পড়ে এসো।”
বলেই নিজের হাতে থাকা শাড়ি আর জুয়েলারি বক্স ধরিয়ে দেয় সোহা। রানী গোলাপি জামদানী শাড়ি! একপলক শাড়ি দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিল মোহ। সোহা চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিল মোহ। স্বচ্ছের দিকে একবার তাকালো সে। নিজের বালিশটা জড়িয়ে এখনো গভীর ঘুমে বিভোর। সব জুয়েলারি বক্স রেখে শুধু শাড়ি আর তার সাথে ম্যাচিং জামাকাপড় নিয়ে ধীর পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে সে।
সকাল প্রায় এগারোটা। দুপুর হতে চলেছে। বিছানায় পাশে ঘুমের ঘোরে হাতায় স্বচ্ছ। পাশের জায়গাটুকু খালি। চোখটা হালকা করে মেলে সে। সূর্যের আলো সর্বত্র ছড়ানো। অদ্ভুত সুন্দর আলোকিত যেন আজকের পরিবেশ। চোখ খিঁচে ফেলল সে। এতোটা পর্দা মেলল কে? স্বচ্ছ সবসময় রুমটা কিছুটা অন্ধকার করেই রাখে। যে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিরক্তির সুরে বলল,
“হোয়াট দ্যা হেল! পর্দা এতো মেলল কে?”
চোখ কচলাতেই তার মনে হয় মোহের কথা। ভালোভাবে চোখ মেলিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিতেই যখন মোহকে পায় না তখনই দ্রুত উঠে বসে পড়ে সে। কোথায় গেলো মেয়েটা? হঠাৎ করেই তার মাথায় আসে সৌমিত্রে কথা! এখন সৌমিত্রের পরিস্থিতি ভালোভাবে জানা স্বচ্ছের। যেকোনো কৌশলে বাহিরে আসার চেষ্টা করে যাবে সে। স্বচ্ছ কিছুটা জোরে ডেকে ওঠে,
“মোহ?”
সাড়া পায় না সে। বড় নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা ছুটেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। করিডোর ধরে হাঁটতেই নিচে চোখ পড়ে তার। ড্রয়িংরুমের ডানপাশে রান্নাঘর! সেখানে চোখ, মন, চোখের পলক, পা জোড়া স্থির হলো তার। দূর থেকে গোলাপি আবরণে নিজেকে মুড়িয়ে নেওয়া এক নারীকে দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে স্বচ্ছের। দূর থেকে মোহকে একটা ছোট্ট পুতুল মনে হচ্ছে স্বচ্ছের। একটা পুতুলকে যেন গোলাপী শাড়ি আর গয়না পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আর পুতুলটা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু সে রান্নাঘরে কি করছে? ভ্রু কুঁচকে আসে স্বচ্ছের। ফ্রেশ হয়ে মোহের কাছে যাবে ভেবে ঘরের দিকে হাঁটা দেয় সে।
গালে হাত দিয়ে রান্নাঘরের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে মোহ। চোখেমুখে ক্ষীণ চিন্তার ছাপ। একধ্যানে গ্যাসের চুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে। কপালে বেয়ে বেয়ে ঘাম পড়ছে। গোলাপী শাড়ির আঁচল কোমড়ে বেঁধে রাখা। বেশ ভাবনায় মেতে থাকা মোহ আচমকা অনুভব করে তার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের সুগভীর উষ্ণতা। চমকে পেছনে তাকায় সে। জলপাই রঙের ফুল শার্ট পরিহিত ভ্রু উঁচিয়ে রাখা স্বচ্ছকে দেখে বুকে প্রথমে থুথু ফেলে বলে,
“আপনি? ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। এভাবে কেউ এন্টি নেয়?”
“স্বচ্ছ নেয় তো।”
চোখ টিপল স্বচ্ছ। মোহ আবারও মুখ বাঁকিয়ে চুলোর দিকে চোখ পাকায়। মোহের দেখাদেখি স্বচ্ছও চুলোর দিকে তাকিয়ে ভেবে বলে,
“এভাবে তো কোনোদিন নিজের বরের দিকেও তাকাওনি যেভাবে চুলোটার দিকে তাকাচ্ছো! কি আছে ওখানে এমন?”
“অনেক কিছু। আচ্ছা চুলোটা জ্বালিয়ে ওটার আঁচ কম করে কিভাবে?”
বেশ অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে স্বচ্ছকে প্রশ্ন করে মোহ। স্বচ্ছের ভ্রু কুঁচকে থাকার মাত্রাটা বাড়ে।
“কেন? সেটা জেনে কি করবে?”
“কি করব আবার? চুলো দিয়ে নিশ্চয় রান্নাই করে?”
“কে রান্না করবে? তুমি?”
“তা নয়ত কি? আমি যেহেতু চুলো জ্বালাচ্ছি সেহেতু আমিই করব।”
স্বচ্ছের চোখজোড়া বিস্ময়ে ভরে ওঠে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করে,
“তুমি তো রান্নাই পারো না। একটা রান্নাতে সাধারণত কি কি জিনিস ব্যবহৃত হয় সেটাও তো জানা নেই তোমার। রান্নাঘরে জীবনে ২-৩ বারের বেশি তো যাওনি। তুমি কি করে রান্না করবে? এই মেয়ে! কে বলেছে তোমায় রান্না করতে?”
মোহ নির্বিকার সুরে বলে,
“এটা তো নাকি নিয়ম। আপনার মা আর নানিমাও বলল। সকালে খেয়ে নিয়েছে সবাই। আপনি খাবেন না? আমাকে খাওয়ার সময় বলেছে দুপুরের রান্না করতে। নতুন বউদের নাকি রান্না করতে হয় প্রথম দিন?”
স্বচ্ছের ভ্রুজোড়ার সাথে চোখমুখও জড়িয়ে আসে বিরক্তিতে।
“এসব ফালতু নিয়ম কে মানতে বলেছে তোমায়? তুমি তো রান্নার ‘র’ জানো না। এসব নিয়ম মানতে হবেনা বেরিয়ে এসো রান্নাঘর থেকে।”
“নানিমা আর আপনার মায়ের কথা মানে বড়দের কথা অমান্য করব?”
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল স্বচ্ছ। পিছু ফিরে তাকায় সে। আবারও উল্টে এগিয়ে আসে মোহের দিকে। এগিয়ে আসতে আসতে মোহকে ঠেলতে ঠেলতে মোহকে ফিল্টারের সাথে ঠেকিয়ে ফেলে। কন্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলে,
“সিরিয়াসলি? আমিও তো তোমার বড়। আমার কথা খুব মানো না?”
“আপনি অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলবেন আর সেসব মানতে হবে? আর আপনি কি করে জানলেন আমি রান্না পারি না?”
গম্ভীর স্বচ্ছের চোখমুখের রঙ পাল্টাতে শুরু করে যেন। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
“বড়লোকের আদরের দুলালি মেয়ে কে রান্না শিখে? এটা তো কমন সেন্স! দেখো কিভাবে ঘামছো। তুমি তো অতিরিক্ত ঘামে অসুস্থ হয়ে যাও।”
বলেই সযত্নের সাথে মোহের কপালের ঘাম বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিল স্বচ্ছ। মোহ কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে বলে,
“এবার বলুন এটা কিভাবে জানলেন?”
আবারও স্বচ্ছ বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়তেই মোহ বলে,
“বলুন? এটা তো আপনার জানার কথা নয়। আপনার আর আমার সম্পর্ক গভীর হয়েছে মাত্র কয়েকদিনে। এর মাঝে এসব তথ্য কি করে জানলেন? এর আগে তো আপনি এই দেশেও থাকতেন না!”
“উফফ… এতো প্রশ্ন করো কেন তুমি? তোমার ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিলাম আমি। হ্যাপি?”
বিরক্ত নিয়ে কড়া কন্ঠে উত্তর দিতেই মোহও তেতে উঠে বলে,
“আমি এখনো উত্তর পেলাম না।”
“দেব না। কি করবে তুমি?”
মোহ আর স্বচ্ছের সঙ্গ কথায় পেরে না উঠে হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকল। স্বচ্ছ চুলোর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“তুমি হয়ত রান্না জানো না। বাট আমি কিন্তু জানি টুকটাক!”
“আপনি আর রান্না?”
বিস্ফোরিত সুরে বলল মোহ। স্বচ্ছ ফট করে চুলো ধরিয়ে বলল,
“এনি ডাউট সুন্দরী? একচুয়ালি, বিদেশে থাকতাম সেখানে মাঝে মাঝে রান্না করার আন্টি না এলে আমাকে একাই রান্না করতে হতো। আবার কফির বিষয়টা আছে। যেটা একা একা তৈরি করে খেতে হতো। দ্যাটস হুয়াই জানি কিছু কিছু রান্না।”
মোহ সুন্দর করে হেঁসে স্বচ্ছকে বিদ্রুপ করে বলে উঠল,
“বিশ্বাস হলো না।”
“ওকে দেন। কফি বানিয়ে দেখাচ্ছি। আমি তোমার থেকে বেটার রান্নাতে।”
মোহ চোখ গোলগোল করে তাকায়। সেও দেখতে চায় তার একমাত্র হাজবেন্ড কি আদোও রান্না জানে?
১০ মিনিটের মধ্যে কফি বানিয়ে তা মগে ভরে মোহের সামনে ধরল স্বচ্ছ। মোহ সরু চোখে তাকিয়ে আছে কফি মগের দিকে। কফির মগে অল্প একটু চিনি মেশানো। মোহ শুধু ভাবছে এটা খাবার পর তার কি হবে? স্বচ্ছ কিছুটা জোরে বলে উঠল,
“ও হ্যালো ম্যাডাম? আমি বানিয়েছি অনেকদিন পর তাও আপনার জন্য। সো আপনাকেই খেতে হবে।”
মোহ জোর করে হেঁসে কফির মগ হাতে নিল। ধীরে ধীরে ঠোঁট লাগালো মগে। কফি মুখে আসতেই চোখমুখ লাল হয়ে এলো তার। চোখমুখ ঝাঁকিয়ে স্বচ্ছের দিকে তাকালো সে।
“কেমন?”
দাঁত বের করে হেঁসে বলল স্বচ্ছ। রেগেমেগে হাতে থাকা মগ স্বচ্ছের হাতে ধরিয়ে বলে,
“আপনার কফি আপনিই খান। কি তেতো! নিজেও তেতো মানুষ। কফিটাও বানিয়েছেন তেতো।”
“ওহ তাহলে মিষ্টি চাই মোহ ম্যাডামের?”
“তা না হলে কি? তেতো কফি কেউ খায়?”
“ওয়েল! আমি দিচ্ছি মিষ্টি।”
বলে অদ্ভুত হাসি দেয় স্বচ্ছ। মোহ সন্দিহান হয়ে তাকালে হঠাৎ করেই মোহের চোখের ওপর হাত রাখে স্বচ্ছ। মোহ কিছু ভেবে ওঠার আগেই ঘটে যায় ভয়াবহ এক কান্ড! মোহের চিকন হালকা গোলাপী বর্ণের ঠোঁটে পরে স্বচ্ছের ঠোঁটের পরশ। উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে মোহের। অদ্ভুত ঘোরের আবেশে মেতে ওঠে সে। বুঝতেই পারে না কি হলো তার সাথে? যখন ঘোর ভাঙিয়ে চোখ খুলে ফেলে তখন দেখে স্বচ্ছ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। হেঁটে যাচ্ছে সদর দরজার দিকে। পিছু ফিরে সে মোহের দিকে আবারও ঠোঁটজোড়া সরু করে চুমুর মতো ইশারা করে দৃষ্টির অগোচরে চলে যায় সে। মোহ থম মেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। এটা কেমন মিষ্টি ছিল?
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যেবেলা। চারিদিকে লোকজনের সমাগম। আলোতে ঝলমল করছে পরিবেশ। জাঁকজমকভাবে সাজানো রিসোর্ট। চলছে মোহ ও স্বচ্ছের রিসেপশন। কথা অনুযায়ী রিসেপশনের অনুষ্ঠান ধুমধাম করেই করছেন মিসেস. রেবা ও নেহাল সাহেব। তবে তাদের ইচ্ছে ছিল না। অনুষ্ঠানের মধ্যমনি স্টেজের সোফায় বসে থাকা মোহ ও স্বচ্ছ। একের পর এক ছবি তোলাতে বিরক্ত তারা। তবুও পরিচিত কেউ এলে জোর করে হাসি ফুটিয়ে আলাপে ব্যস্ত ওরা। স্বচ্ছ ও মোহকে রাঙানো হয়েছে এবার বেগুনি রঙে। দুজনকেই মিলিয়ে সাজসজ্জা করিয়েছে সকলে। বেগুনি রঙের শাড়ি আর সাথে হালকা গয়না পড়ে সাজানো হয়েছে মোহকে। কোঁকড়ানো চুল বাঁকা করে খোঁপা করা। সেখানেই বার বার সুযোগ পেলেই খুঁচিয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ। দাঁতে দাঁত চেপে মোহ বার বার ইশারাই মানা করলেও কে শোনে কার কথা?
অফিসের লোকজন আসাতে খোঁচানো বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছ। সবাইকে স্বাগতম জানাতে যায় সে। অফিসের সকলে এসে ভীড় করে মোহ ও স্বচ্ছের সামনে। সবার দিকে তাকিয়েই সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে আলাপ করছিল মোহ।
“স্যার, আপনি এভাবে বিয়ে করবেন এক্সপেক্ট করিনি। লুকিয়ে বিয়েটা সেড়ে ফেললেন? তাও আমরা বান্দরবান থাকা অবস্থাতেই?”
অফিসের একজন হঠাৎ করতেই জিজ্ঞেস করল স্বচ্ছকে। স্বচ্ছ উত্তরে বলল,
“এইতো সব হঠাৎ করেই….”
“থাক, অন্তত এখানে তো ইনভাইট করেছেন তাতেই খুশি।”
বলেই সবাই হেঁসে ওঠে। মোহ অন্যদিকে তাকিয়ে বসে ছিল। ভীড় লোকজনের সমাগম একদমই পছন্দ না তার। শ্বাস নিতে যেন কষ্ট হয়। হাসাহাসিতে একবার অফিসের লোকজনের দিকে তাকালো মোহ। এতো ভীড়ের মাঝে এক কোণে তৎক্ষনাৎ তার মনে হলো চেনা মুখ রয়েছে। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেই স্তব্ধ হয়ে গেল সে। মস্তিষ্কের সবটা ফাঁকা হয়ে গেল মানুষটাকে দেখে। নিজমনে মোহ বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আয়মান!”
চলবে…
[বি.দ্র. কাল অসুস্থ হয়েছিলাম একটু বেশি। সেকারণে গল্প লিখেছিলাম বেশ কিছুটা কিন্তু পুরোটা লিখতে পারিনি। আজকে বেশ বড়ই পর্ব দিয়েছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]