#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪০ (শেষ পর্ব)
মোহের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তবুও যেন কোনোরূপ ভাবান্তর হলো না সামনে থাকা মানুষটির। সে স্থির হয়ে বসে আছে একমনে। মোহের অস্থির হয়ে উঠছে এবার। একহাতে নিজের চুল টেনে ধরে সে। স্বচ্ছ এবার মোহের দিকে দৃষ্টিপাত করে। কিছু বলতে চাইলে মোহ আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে,
“চুপ করুন আপনি। আর বলতে হবে না। দিতে হবে না কোনো বাহানা। এতোক্ষণ বাহানা বানালেন তাই তো? আমার আপনার মিথ্যে চাই না। আপনি কেমন মানুষ তা প্রমাণিত। আমার এখন ভাবতেও ঘৃণা লাগছে আপনার মতো মানুষ আমাকে ছুঁয়েছে আর আমিও সম্মতি দিয়েছিলাম। আপনি যদি এমনই হয়ে থাকেন তাহলে আমার জীবন নষ্ট করলেন কেন বলতে পারেন?”
“তুমি শান্ত হও আমি এটাই বলতে চাইছিলাম। কোনো বাহানা বানাইনি। এমন অশান্ত হয়ে যেও না।”
“আপনি আমাকে বলে আমি শান্ত হবো নাকি অশান্ত? এতো কিছুর পরেও আপনি বলে দেবেন? আপনার কোনো অধিকারই নেই আমাকে এসব বলার। দূরে থাকুন আমার দিকে।”
“ঠিক আছে থাকব! দূরে থাকব তোমার থেকে। বাট তুমি শান্ত হও। আর চিৎকার করো না প্লিজ! তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
বেশ গম্ভীর গলায় বলে স্বচ্ছ। সে এখনো এতটাই শান্ত যা দেখে আরো অবাক হয়ে চলেছে মোহ। তার মাথা কাজ করছে না। নিজের চোখমুখ মুছে নিয়ে মোহ কান্না দমন করার চেষ্টা করে বলে,
“ওহ মাই গড! আপনি দেখছি অনেক ভালো এক্টিং পারেন। ওয়াও! অন্যদিকে রিয়ানার সাথে টাইম স্পেন্ড করে আসছেন আরেকদিকে আমার কেয়ার নেওয়ার মিথ্যে নাটক করছেন। আপনার মতো মানুষের মিথ্যে কেয়ারের প্রয়োজন নেই আমার। আপনি কেন আমার সাথে এমন করলেন সেটা বলুন? কি দরকার ছিল এই বিয়ে, ওইসব নাটক! আমার মনে আশা জাগিয়েছিলেন যে ইয়েস, আমার জীবনে একজন আছে। যার কাঁধে মাথা রেখে বুড়ো বয়স পার করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারব। আমার জীবনে আস্ত একটা সুখের রাজ্য আছে। সেই রাজ্যের রাজা হচ্ছেন আপনি। কিন্তু আমি ভাবিও নি আপনার মনে তো এমন কিছু ছিলই না। আচ্ছা, এতসব করে পাবেন আপনি? উমম… আমার প্রোপার্টি? আমার বাবার বিজনেস? ইয়েস, আই গট ইট! আপনি শুধুমাত্র প্রোপার্টির জন্য এমন করেছেন। আপনার মতো একজন ডিজগাস্টিং পারসনের সাথে আমি থাকব না। আমি বাড়ি ফিরে যাওয়া মাত্র আমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসব। থাকব না আপনার মতো লোকের সাথে। ছিহ..!”
স্বচ্ছ এতোক্ষণ চুপচাপ কথা শুনে গেলেও ধীরে ধীরে কপালের রগ দপদপ করে জ্বলে উঠল তার। অসহ্য রাগ লাগছে এবার তারও। ধপ করে উঠে দাঁড়িয়ে মোহের বাহু জোরে চেপে ধরল সে। দাঁতে দাঁত পিষে মোহের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আর ইউ আউট ওফ ইউর মাইন্ড? যখন ইচ্ছে হলো বিয়ে করলে যখন ইচ্ছে হলো সম্পর্ক ভেঙে দিলে? ব্যাপারটা এতোটাই সোজা নাকি? আমি যদি দুশ্চরিত্র মানুষ হই তবুও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আমি যদি ডিজগাস্টিং হই তবুও এই ডিজগাস্টিং সহ্য করতে হবে। ইয়েস, তোমাকেই সহ্য করতে হবে।”
স্বচ্ছ যেভাবে মোহের হাতের বাহু চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে এখনি সেখানে ছিঁড়ে যাবে। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে মোহ। সেও রূঢ় হয়ে বলে,
“চোরের মায়ের বড় গলা! সেটা আজকে প্রমাণিত হলো।”
“হুঁশশ! বেশি কথা বলতে নেই। আমি যা বলছি তাই হবে।”
একহাতে মোহের মুখটাই হাত রেখে আলতো চেপে ধরে ধীর গলায় বলে স্বচ্ছ। মোহ তবুও মানে না। সরিয়ে দেয় সেই হাত। আর বলে,
“আপনার নাম হয়ত স্বচ্ছ। কিন্তু আপনি মানুষটা পুরোটাই পা থেকে মাথা পর্যন্ত অস্বচ্ছ। আপনার মধ্যে স্বচ্ছতার ছিটেফোঁটাও নেই। আপনার সঙ্গে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো।”
স্বচ্ছের ঘোলাটে বর্ণের চোখের দিকে চোখ রেখে কথাটা পরিষ্কার কন্ঠে বলে দিল মোহ। এবার মোহের চোখে ক্রোধ, অভিমান! ওপরদিকে স্বচ্ছের চোখে বিস্ময়, অসহায়তা। সব মিলিয়ে দুজনের মনে গড়ে থাকা এক সুপ্ত অনুভূতি ভেঙেচুরে পরে যাচ্ছে। সবটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
“ভেবে বলছো এসব কথা?”
থেমে থেমে বলা স্বচ্ছের ছোট্ট কথা যেন মোহের বুকে তীরের মতো বিঁধে গেল। অনুভব করল চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তার। শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। তবুও না দমে গিয়ে বলে ফেলল,
“ভাবাভাবির কি আছে? যা বলছি ঠিক বলছি।”
স্বচ্ছ ছেড়ে দেয় মোহকে। বেশ খানিকটা দূরে সরে এসে দাঁড়ায়। দুজনেই নীরব ভূমিকা পালন করে। মোহ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখভঙ্গি বোঝা বেশ কঠিন। এরপর আস্তে করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় স্বচ্ছ। মোহ সেই পানে তাকায়। সুখপাখিরা কোথাও যেন হারিয়ে গিয়েছে। চারিদিকে শুধু দুঃখ, যন্ত্রণা আর হাহাকার!
রাত প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। চারিদিক নিস্তব্ধ। কষ্টগুলো কোথাও ঢাকা পড়ে গেছে। আর কান্নার আওয়াজ আসছে না। বালিশে খামছে ধরে উপুড় হয়ে ঘুমিয়েছে মোহ। বেশ রুগ্ন অবস্থা হয়েছে তার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। চোখমুখের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের পাতা এখনো ভিজে। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
রুমের দরজা ঠেলে টলতে টলতে প্রবেশ করে স্বচ্ছ। অন্ধকারে চোখমুখ কুঁচকে আসে তার। হাতে থাকা সিগারেটের শেষ অংশ ফেলে দিয়ে শেষবার মুখ থেকে ধোঁয়া বের করে দুচোখ দিয়ে খুঁজতে থাকে মোহ কোথায়? চলে যায়নি তো? অজানা আশংকায় হালকা কেঁপে ওঠে সে। বিরবির করে বলে ওঠে,
“মো..মোহ মোহ কোথায়?”
চোখ ঢলে গিয়ে বেডের কাছে দাঁড়াতেই দেখতে পায় এক এক শুঁকনো মুখশ্রী। মুখে হাসি ফোটে স্বচ্ছের।
“এইতো ও এখানেই আছে। এখানেই আছে তো।”
স্বস্তির শ্বাস ফেলে মোহের দিকে হালকা নিচু হয় স্বচ্ছ। তার চোখেমুখে আলতো করে ফুঁ দিয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে। মাঝে মাঝে হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মোহের গাল, নাক, কপাল ছুঁইয়ে দিতে থাকে। কি রাগ মেয়েটার! মোহ নড়েচড়ে ওঠে। স্বচ্ছ এবার ধপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোহকে নিজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। সেখানেই ঘুম ভাঙে মোহের। হুড়মুড়িয়ে উঠে বসতে চাইলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছের হাত। স্বচ্ছকে দেখলেই মোহের মস্তিষ্ক চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলছে ঘৃণিত দৃশ্যগুলো।
“আবার শুরু করেছেন? সরুন। বেহায়া লোক!”
“আরো কিছু বাদ আছে? সেসবও বলো! বাট তবুও কাজের কাজ কিছুই হবে না। বেশ তো ঘুমোচ্ছিলে ঘুমাও।”
“সরুন তাহলেই ঘুমাবো। এভাবে আপনি আমায় স্পর্শ করলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো আমি।”
“বেরিয়ে যাবে কোথায়? শেষমেশ তো আমার কাছেই আসতে হবে।”
মোহ চুপ হয়ে যায়। তবে নিজেকে ছাড়ানোর বহু চেষ্টা করে। না পেরে কান্না এসে যায় তার।
“যেই হাত দিয়ে রিয়ানাকে স্পর্শ করেছেন সেই হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেন না। ঘৃণা লাগে আমার।”
স্বচ্ছ কিছুটা থমকে গেলেও চুপ থাকে না। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মোহকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মোহের ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে চুপ করে থাকে। মোহ বার বার বলা সত্ত্বেও যখন স্বচ্ছ নিজের কাজে অটল তখন চুপ হয়ে যায় মোহ। শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে জানালার বাহিরে।
রাত ঠিক কয়টা বাজে জানা নেই মোহের। রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে সে। স্বচ্ছের হাত ঘুমের মাঝে আলগা হয়ে যেতেই উঠে এসেছে সে। নিজেকে বার বার শান্ত রাখতে চাইলেও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। তার জীবন যেন ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। কোথাও সফলতা নেই। চোখে টলমল করছে পানি। ধীর পায়ে ছাঁদে উঠে আসে মোহ। ছাঁদে কেউ নেই সে ছাড়া। ছাঁদে আসতেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সে। এক ঝড়ে আবারও তার জীবন তছনছ হয়ে গেল। তার কান্নার আওয়াজ দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়ে। ছাঁদের একবারে কিনারে এসে দাঁড়ায় এসে। আকাশ পানে চেয়ে কান্নার বেগ কমে তার। তবে চোখ থেলে অনবরত পানি বেয়ে পড়ে যাচ্ছে। ছাঁদে কোনো রেলিং করেনি এখনো। চারিপাশে কোনো বাঁধ নেই। মোহ নিচের দিকে তাকায়। কি যেন মনে করে বসে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে কিনারে। একধ্যানে আকাশপানে চেয়ে বলতে থাকে,
“জীবনটা যখনই গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি তখনই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। যখনই কাউকে চেয়েছি তখনই সে দূরে সরে গেছে। যখনই যাকে যেমন ভেবে আমার বিশ্বাসের হাত বাড়িয়েছি তখনই সে আমার বিশ্বাসের হাত মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে।”
একটু থামে মোহ। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে ওঠে,
“আর কি বাকি রইল জীবনে? কেউ বাকি রইলো না যার কাছে থেকে আমি নিজেকে সুখী মনে করি। তাহলে এই জীবনের মানে কি?”
মোহ চুপ হয়ে গেল। মাথায় একটা কথা আসতেই হেঁসে উঠল সে। আপনমনে বলে উঠল,
“যেহেতু জীবনের কোনো মানেই নেই তবে জীবনে রেখে কি হবে? রাখার তো কোনো মানেই নেই! নেই নেই। তাহলে একটাই উপায়! এই জীবন গোছানোর ঝামেলা থেকে, সুখের আশায় বসে থাকার চেয়ে শেষ হয়ে যাওয়া ভালো।”
মোহ এবার নিজের মধ্যেই নেই। যেন এখনো যে একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। সেই ঘোর তাকে কত ভয়াবহ জিনিস ভাবিয়ে ফেলেছে সে বুঝতেও পারছে না। সে উম্মাদের মতো বলে ওঠে,
“আমি শেষ হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে আমি জানি! আমাকে শেষ হতে হবে।”
উঠে দাঁড়ায় সে। একেবারে কিনারায় এসে দাঁড়ায়। নিচটা ভালোভাবে দেখে নেয়। এটা বেশ কিছুটা ওপরে। তবে ওই রিসোর্ট না। রিসোর্টের মাঝেই আরেকটা রিসেপশনের বিল্ডিং। যেটা আরেকটি রিসোর্ট। ৫ তালা বিল্ডিং। এখান থেকে পড়লে মৃ-ত্যু তো হবেই। একবারে কিনারায় এসে দাঁড়াতেই এক দমকা হাওয়া ছুঁয়ে যায় মোহকে। নাকে হাওয়ার সাথে আসে এক চেনা ঘ্রাণ। চোখমুখ কুঁচকে ফেলে মোহ। তৎক্ষনাৎ একটা টান অনুভব করে সে। চোখ খুলে ফেলার আগেই ছিটকে এসে পড়ে কোথাও। হকচকিয়ে চোখ মেলে সে। চোখ মেলতেই ঠাস করে একটা শব্দ হয়। মোহের গালে তীব্র যন্ত্রণা হয়। ব্যথায় টনটন করতে থাকে বাম গাল। গালে আপনাআপনি হাত চলে যায় তার। মূহুর্তের মাঝে কি হয়ে গেল তা বোধগম্য হলো না মোহে। চোখ পাকিয়ে তাকাতেই এক বলিষ্ঠ হাত তাকে টেনে নিয়ে আরেক হাতে মোহের দুটো গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“নিজে তো মরতি সাথে আমার শ্বাস নেওয়ায় কষ্টকর করে দিতি।”
ভালোভাবে তাকাতেই মোহে বুঝতে বাকি থাকে না কিছুই। সেই ধূসর চোখের মানুষটিকে দেখে আবারও চোখ পানিতে ভরে আসে তার। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
“আমি বাঁচব না। আমার কিচ্ছু নেই এখানে। আমার জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত বিষাক্ত হয়ে উঠছে। তার কারণ শুধু আপনি।”
“শাট ইউর মাউথ। তোকে সুখি করার জন্য কতদূর অবধি গিয়েছি তুই জানিস? যেই মায়ের কথার কোনো নড়চড় হতে দিতাম না যেই মায়ের বিরুদ্ধে লড়ছি আমি জানিস সেটা? প্রতিটা মূহুর্তে নিজের সাথে লড়ছি।”
মোহ থেমে গেল। সাথে চোখের দৃষ্টিও স্থির হলো। এই কথার মানে কি? মায়ের অবাধ্য হয়েছে মানে কিছুই বুঝতে পারছে না মোহ। স্বচ্ছ আবারও একবার থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুলে বলে,
“ইচ্ছে তো করছে আরেকটা দিই কষিয়ে।”
কিন্তু থাপ্পড়টা দেওয়া হয়না স্বচ্ছের। মোহ তিক্ত হয়ে বলে,
“আর কি বাকি রেখেছেন এটাই তো বাকি ছিল। আমাকে এখন মারধর করে চুপ করিয়ে রাখতে চান তাই তে? যাতে রিয়ানার সাথে আপনার সম্পর্কের কথা কাউকে না বলি?”
“আবার কথা বলেছিস?”
“আমি থাকব না আপনার সাথে। ছাড়ুন আমাকে। আমি ম-রে যাব।”
মোহের জেদের সাথে পেরে ওঠে না স্বচ্ছ। মোহের মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে। মোহ বারংবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পেরে ওঠে না। এসেই বেতের চেয়ারে জোর করে বসিয়ে দেয় মোহকে। উঠে যেতে নিলে নিচ থেকে নিজের লাগেজ থেকে একটা মোটা দড়ি বের করতেই হতভম্ব হয়ে যায় মোহ। স্বচ্ছ দ্রুত মোহের আশপাশ দিয়ে তার হাত-পা বেতের চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে অন্য একটা চেয়ার নিয়ে নিজে মুখোমুখি হয়ে বসে। মোহ নড়াচড়া করতে থাকে আর চিৎকার করে বলে,
“আর কত কি রঙ দেখাবেন নিজের? আপনি তো গিরগিটিকে হার মানিয়ে দিলেন মি. আহিয়ান স্বচ্ছ। আজকাল দড়িও ব্যাগে রাখেন? নিশ্চয় এসবের জন্য তৈরি থাকেন?”
“এটাই আমার আসল রুপ মোহ। আমার ভয়াবহ রুপ। আর ব্যাগে তো দড়ি ক্যারি করতেই হয়। কারণ ভাইকে এটা দিয়ে মাঝেমাঝে বেঁধে রাখতে হয় যে।”
স্বচ্ছ থামে একটু। মোহের দিকে তাকায়।
“আমি যেই রুপেই থাকি না। আমার এই ভয়ানক রুপটাও একজনকেই ভালোবাসে। সে হচ্ছে মোহ। ভয়ানক রুপের আগুনও ঠান্ডা করে দিতে পারে ওই মোহ!”
মোহ ঢক গিলে এবার। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকায় সে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্বচ্ছ তাকে ইশারায় চুপ করিয়ে বলে,
“আজকে প্লিজ চুপ থাকবে? তোমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই না? আজকে পাবে সব প্রশ্নের উত্তর! প্লিজ চুপ করো। আমিও আজকে চাই। বুকের পাথরের মতো যেসব সত্যি লুকিয়ে আছে সেসব ভার কমিয়ে দিতে।”
মোহ না চাইতেও চুপ হয়ে যায়। উৎসুক হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছের দিকে। মোহও এটাই চায়। যদি কোনো সত্যি থাকে? মোহ যা ভাবছে সেসব যেন ভুল প্রমাণিত হয়! ফট করে স্বচ্ছের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মোহের।
“আমি মিসেস. রেবা অ্যান্ড মি. নেহালের নিজের সন্তান নয় মোহ।”
মোহ বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। স্বচ্ছ কি বলছে এসব? ওর মাথা কি ঠিক আছে? ছোট থেকে মোহ তো স্বচ্ছকেই ওই বাড়ির বড় সন্তান হিসেবে জেনে এসেছে তাহলে?
“আপনি কি বলছেন? আপনি মজা করছেন আমার সাথে? পাগল হয়ে গিয়েছেন? মদ খেয়েছেন? মাতাল হয়ে এসব বলছেন?”
“আমি সজ্ঞানে বলছি। আমি ওদের নিজের ছেলে নই। আমাকে এডাপ্ট করা হয়েছিল। আমার আসল মা-বাবা কে আমি জানি না। হবো হয়ত কোনো অল্প বয়সে ভুল করার ফসল। হবোই এমন কিছু একটা।”
“স্বচ্ছ!”
“ইয়েস! মায়ের যখন প্রথম সন্তান হয় তখন বহু কষ্টে হয়। কারণ মায়ের সন্তান হচ্ছিল না। অনেক কষ্ট করে একটা বেবি আসে মায়ের গর্ভে। তখন ওরা বিদেশে ছিল। যখন সন্তান হয় দুর্ভাগ্যবশত মারা যায় জন্মের পরেই। মা সেসব সহ্য পারেনি। পাগল হয়ে গিয়েছিল একপ্রকার। তাই বাবা মাকে সবসময় ঘুমের ইনজেকশন দিতে বাধ্য হতো। কিন্তু এভাবে কতদিন চলে? তারা বাংলাদেশে আসে। মাকে অবচেতন করে দেশে আনতে হয়। তারপরই অনাথ আশ্রম থেকে একটা বেবি এডাপ্ট করে তারা। সেই বেবি আমি ছিলাম। বড় হতে হতে মা আবারও সন্তানসম্ভবা হয়। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। সেকেন্ড বেবি জন্ম হয়। বেঁচেও যায়। সে ছিল সৌমিত্র। কিন্তু সমস্যা ঘটে তখন যখন সে বড় হতে থাকে। মা কখনোই আমাদের মধ্যে ফারাক করেনি। বরং বড় ছেলে হিসেবে আমাকেই ভালোবাসত বেশি। সৌমিত্র বড় হতে হতে ওর উদ্ভট আচরণ, অহেতুক রাগারাগি, পাগলামি শুরু হয়। সবটা অদ্ভুত লাগে, অস্বাভাবিক লাগে। তখন আমরা আমেরিকায় থাকতাম। সেখানেই পড়াশোনা আর বাকিসব! তারপর ডক্টর দেখানোর পর ডক্টর কনফার্ম করে সৌমিত্র অস্বাভাবিক। এক ধরনের সাইকো। যে নিজেকে সবসময় ঠিক মনে করে। তার চাওয়াটাকে ঠিক মনে করে। ও যা চাইবে তা যদি না দেওয়া হয় তাহলে ও নিজেকে আর বাকি সকলকে খু-ন করতে একবারও ভাবতো না। ওকে সাইকোলজিস্ট দেখানো হয় বড় বড়। ইভেন মেন্টাল হসপিটালেও ভর্তি করিয়েছিলাম। বাট লাভ হয়নি। ছোট বয়সে সে নার্সকে আর একজন ডক্টরকে খু-ন করে বসে। তাও ভয়াবহ ভাবে। আমরা ঘাবড়ে যাই। বিষয়টাকে অনেক কষ্ট করে ধামাচাপা দিই। মা তো ছোট ছেলেকে উম্মাদ। সে ওখানে নিয়ে আসে সৌমিত্রকে। ও যা যখন চায় তাই তখন দেওয়া হয়। ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাতেও লাভের লাভ হয় না। একদিন এক টিচারকেও খু-ন করে বসে সে মাথায় মেরে। সেটাও বহু কষ্টে ধামাচাপা দেওয়া হয়। ও বড় হতে থাকে। হঠাৎ করেই আবারও খু-ন। তখন বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়া যায় না। কারণ পাবলিক প্লেসে এই কাজটা করেছিল। ওর বয়স তখন ১৯ বছর। আমরা ভেবে পাই না কি করব! ওপরদিকে মা পাগল হয়ে গিয়েছিল। ছেলেকে উনি জেলে যেতে দেবেন না। তাই ষড়যন্ত্র করা হয়। যাতে আমাকেও শামিল হতে হয়েছিল। কারণ পরিবার বলতে তো এরাই ছিল। মা আমাকে এতো ভালোবেসে মানুষ করেছে। তার কোনো কথা আমি ফেলতে পারিনি। সেটা যত বড়ই অপরাধ হক। আমি যেন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম মায়ের ভালোবাসায়। ভাইয়ের কারণে। সেই ষড়যন্ত্রটা ছিল এক্সিডেন্ট।”
মোহের মাথা ঝিমঝিম করছে এসব শুনে। মোহের পরিবারের সাথে স্বচ্ছের পরিবারের সম্পর্ক ভালো না থাকায় এসব খবর জানত না সে। কেউই জানতো না। অথচ বছরের পর বছর এতো অন্যায় হয়ে এসেছে। আর স্বচ্ছ এডাপ্ট সন্তান ছিল ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে মোহের। সে তবুও অস্ফুটস্বরে বলে,
“এক্সিডেন্ট?”
“ইয়েস, এক্সিডেন্ট। তোমরা সকলে জানো যে সৌমিত্র এক্সিডেন্টে মারা গেছে। কিন্তু না। সৌমিত্র মারা যায়নি। ওটা নিছক একটা মিথ্যে ছিল। যার কারণে সকলের সামনে সে মৃত ঘোষণা হয়েছিল।”
“তা…তার মানে সৌমিত্র এ…এখনো…”
বলেই থেমে যায় মোহ। তার গায়ের লোম শিউরে উঠছে। কন্ঠস্বর আর কোনো শব্দ বের করতে চায় না। স্বচ্ছ নিজ থেকে শান্ত গলায় বলে,
“সৌমিত্র বেঁচে আছে এখনো। তারপর সৌমিত্রকে দেশে আনা হয়েছিল। আমি আরো বেশ কয়েক বছর বিদেশে কাটিয়ে দিই একা। তারপর দেশে ফিরি। ফিরে জানতো পারি সৌমিত্র দেশেও খু-ন করে বসে আছে। খুনের কারণ ছিল সৌন্দর্য। একটা মেয়ে যে অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু সৌমিত্র তার সাথে ইন্টিমেন্ট হয়নি বলে মে-রে ফেলেছিল তাকে। আর এসব কথা জানতো রিয়ানা আর তার ফ্যামিলি। কারণ ওরা আমাদের খুব কাছের ছিল। এসবে সাহায্য করেছে।”
মোহ যেন এক্ষুনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। স্বচ্ছ কি বলছে এসব?
“এতো বড় সত্যি আপনারা লুকিয়ে রেখেছিলেন?”
“বাধ্য হয়েছিলাম। শুধু তাই নয়। তোমার মোহও সৌমিত্রকে গ্রাস করেছিল। সেকারণেই ও তোমায় চাইতো সবসময়। মাও ওর চাওয়াটা গুরুত্ব দিতে দিতে ওর অন্যায়গুলোও মেনে নিতো। মা মরিয়ে হয়ে উঠল তোমার সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার জন্য। মাঝখানে এই সুন্দরীকে কখন নিজের করে চেয়ে বসলাম তা হয়ত জানা নেই। আর ওর সাথে কোনো মেয়েকে বিয়ে দিয়েও জীবনটা নষ্ট করতে পারতাম না। তাই বিয়ের দিন মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি করতে করতে এতো লেট হয়েছিল মোহ। তোমার জন্য আমি মা আর ফ্যামিলির বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম। যেই ভাইকে নিজের জীবন ভাবতাম তাকে লুকিয়ে মাকে বলেছিলাম বিয়েটা তোমার সাথে আমার না হলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেব আমি। শুধু তোমার জন্য!”
“আর কি কি বাকি আছে? আর কত রহস্য বাকি আছে?”
“এখনো অনেক জানার আছে তোমার। তোমার মনে পড়ে তোমার ঘরে প্রথম যেদিন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঢুকেছিলাম?”
মোহ মাথা নাড়ায়। স্বচ্ছ ক্ষীণ হেঁসে বলে ওঠে,
“মদ খেয়েছিলাম মায়ের প্রস্তাব শুনে। সেদিন রাগারাগি হয়েছিল মায়ের সাথে। মা যেদিনই তোমার সাথে সৌমিত্রের বিয়ের কথা তুলেছিল। তাই মাতাল হয়ে কত কি করেছি ঠিক নেই। আবার মনে পড়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলে তুমি? কেউ তোমাকে মারতে চাইছিল। তোমাকে কিছু হুমকি মেসেম পাঠাচ্ছিল? সেসব সৌমিত্র করেছিল। আর বাকি রইল রিয়ানার কথা? ওর সাথে ভোরে রিসোর্টে যাওয়ার কথা আর স্বামী স্ত্রী পরিচয় দেওয়ার কথা? ওই রিসোর্টে যেই রুমে আমরা গিয়েছিলাম সেখানে সৌমিত্র ছিল। ও আমায় ভোরে ফোন করে বলে ওখানে যেতে নয়ত এখানে এলে হয় তুমি বাঁচবে নয়ত সে। আমি উঠে যাই। যাওয়ার সময় রিয়ানাকে নিয়ে যাই। কারণ সাইকোলজিস্ট। ও সব প্রবলেম জানতো। আর যেহেতু সৌমিত্রকে পুলিশ খুঁজছিল তাই যেকোনোভাবে আমরা চাইছিল সৌমিত্র এখানে আছে সেসব জানাজানি যেন না হয়! তাই আমরা রিসেপশনিস্টকে টাকা দিয়ে বলি যদি ওই রুমের কথা কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন বলে ওই রুমে যারা আছে তারা হাজবেন্ড ওয়াইফ হয়। আইডিয়াটা রিয়ানার ছিল। যদিও আমার পছন্দের ছিল না। কারণ স্ত্রীর আসনে তো আমার মোহকে বসিয়েছি।”
মোহের এবার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কি বলবে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। দিশেহারা হয়ে গেল সে। স্বচ্ছ মোহের অবস্থা বুঝে চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে আসে। মোহের বাধম খুলতে খুলতে বলে,
“তবুও যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে ওই রিসোর্টে গিয়ে দেখে আসতে পারো। সৌমিত্র হয়ত এখনো ঘুমে।”
মোহ চুপ থাকে। এখন সে স্বচ্ছের চোখের দিকে তাকাতেও পারছে না। সে ভয়াবহ অপরাধ করে ফেলেছে বিশ্বাস না করে। স্বচ্ছ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
“একটু বিশ্বাস করলেও পারতে, মোহময়ী নারী!”
মোহ আরেকদফা থমকায়। ওই নামটা! বড্ড চেনা নামটা। মোহ আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলেই স্বচ্ছ তাকে থামিয়ে বলে,
“আমার ওপর বিশ্বাস যেদিন করতে পারবে সেদিনই ডাকবে। প্লিজ যেতে দাও! আর আজ সারাদিন নিজের সাথে লড়াই করেছি। এই সিদ্ধান্তে এসেছি সৌমিত্রকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেব। ওটা ওর আসল জায়গা। মা আর পুলিশ দুজনেই আসবে ভোরের মধ্যে। তোমাকেও আর সৌমিত্র জ্বালাবে না।”
মোহের কন্ঠস্বর আঁটকে যায়। স্বচ্ছ আর থামে না। বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। এবার অভিমান করার পালা স্বচ্ছের!
পরেরদিন ভোর বেলা…
জায়গাটা নীলগিরি। উঁচু পাহাড়ের ওপরে একটা রিসোর্ট। ভোরবেলা! চারিদিলে কুয়াশায় ভরপুর। মোহ বসে আছে নীলগিরির একটা রিসোর্টে। কাল থেকে স্বচ্ছের সাথে দেখা হয়নি তার। রিয়ানা বলেছে স্বচ্ছ নাকি নীলগিরি চলে এসেছে আর মোহকেও সাথে নিয়ে আসতে বলেছে রিয়ানাকে। তাই রিয়ানার সাথেই নীলগিরি অবধি এসেছে মোহ। তবুও স্বচ্ছের কোনো খবর পেলো না। আসার পথে রিয়ানার কাছ থেকে ক্ষমাও চেয়েছে মোহ। রিয়ানা হেঁসে বলেছে, ‘সমস্যা কোথায়? আমি হলে তো আমার হাজবেন্ডকে মেরেই ফেলতাম।”
গায়ে চাদর জড়িয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মুখটা ভার। এমন সময় রিয়ানা আসে। হাতে একটা নীল শাড়ি।
“জলদি রেডি হয়ে নাও দেখি?”
“কেন?”
“উঁহু প্রশ্ন করো না তো এসো!”
মোহ আর কিছু বলে না রিয়ানার কথায় রাজি হয়।
পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে মোহ। রিয়ানা তাকে নিয়ে যাচ্ছে। পরনে নীল পাতলা শাড়ি, নীল কাঁচের চুড়ি, নীল টিপ, কানের পিঠে কাটগোলাপ গুঁজে দেওয়া। কোঁকড়ানো চুপ মাঝে মাঝে উড়ছে। রাঙিয়ে দেওয়া হরিণী চোখে রাজ্যের আকাঙ্খা। গোলাপি ঠোঁট বারংবার কামড়িয়ে যাচ্ছে সে। নাকে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
হাঁটার মাঝেই নিস্তব্ধ রাস্তায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে লাগানো একটা কাগজে লিখে সেই চিরচেনা লিখা খুঁজে পায় মোহ। আরে এটা তো সেই লিখা! মি. চোরের লিখা!
“আমাকে খুঁজছ? মি. চোরকে খুঁজছ? সে তোমার আশেপাশেই এতোদিন থাকল তুমি ধরতেও পারলে না বোকা মেয়ে!”
মোহের বেজায় রাগ হলো। এই লোকটা কোত্থেকে উড়ে এলো? রিয়ানা এবার বলল,
“তুমি এবার এই সোজা পথ ধরে যাও। সঠিক মানুষের দেখা পাবে। আমি কাবাবে হাড্ডি হবো না।”
বলেই ফিক করে হেঁসে চলে গেল রিয়ানা। মোহ ভ্রু কুঁচকে সোজা হাঁটতে লাগল। সামনে পড়ল আরো কিছু লিখা।
“আমি একজন পরিচয়হীন মানুষ। আমাকে যদি মেনে নিতে পারো। এই পরিচয়হীন মানুষকে ভালোবাসতে পারো তাহলেই এগিয়ে এসো সোজা। নয়ত সেখানেই থেমে যাও।”
মোহ আরেক দফা থমকায়। ঢক গিলে চলতে শুরু করে। তার আশংকা সত্যি হচ্ছে। স্বচ্ছই কি তবে? সামনের আবারও কিছু লিখা।
“এগিয়েই আসছো? এসো তবে! আমার হৃদয়ে আমার মোহময়ী নারীর স্থান দেখিয়ে দেয় তবে?”
মোহ এবার একপ্রকার দৌড়েই এগিয়ে যায়। সামনে যেতেই একটা পুরুষকে দেখে থেমে যায় সে। পেছন ঘুরে আছে লোকটি। সামনে ফিরে তাকায়। স্বচ্ছ মুচকি হেঁসে এগিয়ে আসে তার দিকে। মোহের হৃদয়ে ধুকপুকানি বাড়তে থাকে। পরিবেশ জানান দিচ্ছে আজ প্রেমের বর্ষন হবে। সেখানে ভিজে যাবে মোহ ও স্বচ্ছ।
“আসতেই হলো এই পরিচয়হীন মানুষের কাছে?”
“তাকেই যে আমার লাগবে!”
“দেখে নাও তবে তোমার মি. চোরকে।”
হাত দুদিকে ছড়িয়ে বলে স্বচ্ছ। মোহ চোখ বড় বড় করে ফেলে।
“আপনি কি করে? আপনার লিখা তো চেক করেছিলাম আমি।”
“আপনি হয়ত ম্যাডাম! আমি বিভিন্ন রকম লিখায় দক্ষ।”
“তার মানে আপনিই?”
“মি. চোর। মোহময়ী নারীর মি. চোর।”
মোহ চোখ খিঁচে বন্ধ করে। মুখ দুহাত দিয়ে চেপে ধরে। কি আনন্দ হচ্ছে তার। স্বচ্ছ এবার পাহাড়ের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“যেদিন দেখেছিলাম এই মোহময়ী নারীকে সেদিনই তো আসল নেশায় মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম। হয়ত সে সেটা বোঝেনি। কতবার চোর অপবাদ পেয়েছি তার থেকে! তবুও বেশ লাগত তাকে রাগাতে। সে কি ভালোবেসেছে আমায়? আমার যে বড্ড ইচ্ছে ছিল তাকে #একটুখানি_সুখ নয়। সুখ রাজ্যের রানী বানাতে। আমি হবো তার রাজা। সে কি আমার রানী হতে প্রস্তুত?”
“সে প্রস্তুত। সেও সে মিলিয়ে গিয়েছে স্বচ্ছ নামক অস্বচ্ছ ব্যক্তিটার সাথে। তাকে ছাড়া যে এক মূহুর্তও ভাবতে পারে না। সে কি সেটা বোঝেনি? আমি যে তাকে ভালোবাসি।”
স্বচ্ছের ন্যায়ই চিৎকার করে বলে মোহ। স্বচ্ছ এবার মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায়। মোহের বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,
“কি বললে তুমি আবার বলো?”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি!”
স্বচ্ছের কানে ফিসফিসিয়ে বলল মোহ। স্বচ্ছ এক ঝটকায় মোহকে তোলে তুলে নিল। আনন্দের সাথে ঘুরতে শুরু করল মোহকে নিয়েই। তার আনন্দের শেষ নেই। সুখের শেষ নেই। মোহও আজ স্বচ্ছের গলা জড়িয়ে রয়েছে।
“আমিও যে ভালোবাসি এই মোহময়ী নারীকে। যার মোহ এই স্বচ্ছ নামক অস্বচ্ছ ব্যক্তিকে আবদ্ধ করেছে সারাজীবনের মতো।”
মোহের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস ফেলে মোহ। মোহ স্বচ্ছের ঠোঁটে চুপটি করে ঠোঁটের পরশ দিয়ে স্বচ্ছের বুকে মুখ লুকাই। আর বলে,
“এইতো আমার সুখ রাজ্যের রাজা। যে আমার একান্ত! যে আমার শুধু আমারি।”
মোহের লাল গালে দুটো আলতো চুমু খেয়ে বলে,
“আজকে শুধু এই রমনীকে ভালোবাসব। কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। কেউ না। কখনো কখনো তার গাল নামক যে স্ট্রবেরি আছে সেটা খেয়েও ফেলব।”
মোহ স্বচ্ছের বুকে কিল মেরে বলে,
“আপনি আর পাল্টাবেন না?”
“কখনোই না। বলেছি তো, আমার প্রেয়সীর এই লজ্জা চেহারা দেখার জন্য সারাজীবন অসভ্য থেকে যাব! অস্বচ্ছই থেকে যাব!”
খিলখিলিয়ে হেঁসে ওঠে দুজন। স্বচ্ছ মোহকে কোলে নিয়ে পাড়ি জমায় তাদের সুখের রাজ্যে। সেখানে রয়েছে ভালোবাসা আর সুখপাখিরা!
(সমাপ্ত)
]বি.দ্র. যেমন ইন্ডিং চেয়েছিলাম ঠিক তেমনটা দিতে পারিনি সময়ের অভাবে। তবে যা পেরেছি অবশ্যই জানাবেন কেমন লেগেছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক ছিল। আর এতোদিন যারা আমার এই গল্পটির পাশে ছিলেন তাদের ভালোবাসা অবিরাম। সামনে আমার পরীক্ষা দো’আ করবেন। ধন্যবাদ।]
আনিশার গল্পআলয় (সাবির পাঠকমহল)🤍