#বিষ_করেছি_পান(২০)
(কপি করা নিষেধ)
দুপর গড়িয়ে বিকেল।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা ছাড়িয়ে রাত হতে চললো এখনো রিতীর ফেরার নাম নেই। টেনশনে রুম্পা মৃদু শব্দে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।তমাল মা বোনকে চুপচাপ দেখে চলেছে।
ছুটি ছটফট করছে। একটু পর পর ছানোয়ার ফোন করলে কথা বলছে। ছানোয়ার গিয়েছে রিতীকে খুঁজতে। সঙ্গে আছে রতনের বাবা আর কাকা। ছানোয়ার ছুটির থেকে বার বার জেনে নিচ্ছে রিতী ফিরলো কিনা। মনে মনে দোয়া করতে লাগলো মেয়েটা যেনো তার সহি সালামতে এখনি বাড়ি পৌছায়। পৌছে ফোন দিয়ে বলে, বাবা তুমি কোথায় আমাকে খুজতে গিয়েছো?আমি বাড়িতে চলে আসছি। একটা অনুষ্টানে গিয়েছিলাম ফোন সাথে নেইনি তাই জানাতে পারিনি। কিন্তু সেই খবর শুনা ছানোয়ারের ভাগ্যে নেই। থানাতে ডায়রি লিখছে না। চব্বিশ ঘন্টা হবার আগে ডায়রি লিখেনা। থানার ভেতরে কিছু কনস্টেবল আড় চোখে ছানোয়ারকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। এদের আর কি ? চব্বিশ ঘন্টা হবার আগেই একেকটা মেয়ের সর্বনাশ হবে তারপর এরা গিয়ে উদ্ধার করবে। আইনের মানুষ না আছে কোন দয়া না আছে খারাপ লাগা। উপরে উপরে সান্তনা দিবে। আইনের লোক!ভোক্তভোগীরা না কিছু বলতে পারবে না কিছু করতে পারবে। ঐ যে চব্বিশ ঘণ্টার তৈরীকৃত নিয়ম। এভাবে হবেনা। রতনের কাকা ব্যবস্থাটা করে। ছানোয়ারকে রাজি করিয়ে কয়েকটা নোট চুপিচুপি দারগার হাতে গুঁজে দেয়। ছানোয়ার শিক্ষক মানুষ। দেশ গড়াই তার লক্ষ্য। ঘোষকে যতই না বলা হোক না কেনো মেয়েকে ফিরে পাবার জন্য তার মাথা এই ব্যাপারে কাজ করলো না। ছানোয়ার ভেতরে ভেতরে শেষ প্রায়। সেদিন যেদিন রিতীকে সকালে দৌড়াতে দেখেছিলো সেদিন থেকেই তার মনে কু ডাকা শুরু। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে রিতীকে মাঝে মধ্যে মোরের সামনে বখাটে সোহাগের দল উতক্ত করতো। মেয়েকে এতো বার জিজ্ঞেস করার পরেও চুপ করে গেছে। বাচ্চা মেয়ে তার ভয় পেয়ে বাপকে বলতে পারেনি। নিজে নিজেই বিপদ কাটিয়ে উঠতে চেয়েছে। আদৌ কি পারলো? ছানোয়ারের এবার হাউমাউ করে কাঁদতে বাকি আছে। বড় মেয়ে সব বাবা মায়ের প্রথম পাওনা অন্তপ্রাণ। রতনের বাবা কাকাই সবটা দেখছে। ডায়রি লেখা হলোনা। তবে দুজন পুলিশকে কাজে নামিয়ে দেওয়া হলো। দারগা উঠে এসে ছানোয়ারকে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
ছানোয়ার অকপটে সোহাগের নাম বলে দিলো। শুরু থেকে সবটা খুলে বললো। দারগা মাথা নাড়িয়ে নিজেদের কাজে লেগে পড়লো।
রাত দশটা নাগাদ রিতীকে উদ্ধার করা হলো শহরের কোনায় পুরনো এক বাড়ি থেকে। অন্ধকার রুমে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। সোহাগের এর চ্যালার ফোন ট্র্যাক করে খুঁজে পাওয়া গেছে তাকে।সেই বাড়িতে বসেই ডুকে ডুকে মদ গিলছিলো ছয়জন। সোহাগ ভয়ঙ্কর চোখে তার চ্যালার দিকে তাকিয়ে হুংকার ছাড়ে। ব্রিশি ভাষায় গালি দিয়ে চিল্লায়
— তোকে আমি ফোন খুলা রাখতে বলেছিলাম বান্দীরপুত?এই খেয়াল নিয়ে কাম করতে আসো? বের হ এর থেকে তোর নাটবল্টু যদি আজকে আস্ত রাখি!
পুলিশ ধমক দিলে পুলিশের উপর ধমক দিয়ে উঠে। অকথ্য গালি দিয়ে বাবাকে ফোন করতে বলে। তাকে ধরে রাখবে এমন কোন মায়েরপুত নাই। কার হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়েছে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে। চাকরি খাবে পুলিশের। সোহাগের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা না থাকা গর্হিত অপরাধ হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে।
প্রত্যেকটা রুম চেক করে ছোট্ট এক রুমে পাওয়া যায় রিতীকে। অন্ধকারেই বাবার অবয়ব দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ফোনের ফ্ল্যাসলাইটে ছানোয়ার গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। রিতীর গায়ে বোরখা নেই। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গাঁয়ে বোরখা চাপিয়ে বেরিয়েছিলো। বোরখার নিচে পড়ে ছিলো আকাশী রংয়ের প্লাজুর সাথে হলুদ রংয়ের গেঞ্জি। এখনো তাই পরা। গাঁয়ে উড়না নেই। আত্মা ধুক করে উঠে ছানোয়ারের। খুঁজে খুঁজে বোরখা হিজাব এনে হিজাবের উড়নাটা গলায় চাপিয়ে দেয় রতনের বাবা। রিতীকে বাইরে বের করে আনা হয়। চোখে মুখে পানি দেওয়া হয় নরমাল হবার জন্য। পুলিশ কিছু জিজ্ঞেস করতে চায় রিতীকে। রতনের বাবা হাত জোড় করে।
— দেখছেন তো আমাদের মেয়েটা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আপনারা কি জিজ্ঞেস করবেন? সব তো জানা আর নিজের চোখেই দেখলেন। প্লিজ আমাদের মেয়েকে যে অপহরন করেছে তার শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
পুলিশ গিয়ে গাড়িতে উঠে। সোহাগদের ছয়জনকে আগেই গাড়িতে উঠানো হয়েছে। রিতী স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষন সময় নেয়। চোখ খুলে বাবার দিকে তাকায়। কিছুক্ষন উদভ্রান্ত বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ কুঁচকে নেয়। বাবার চোখ মুখ ভীষন ক্লান্ত। সেই ক্লান্ত চোখে অসহায়ত্ত্ব ভর করেছে। রিতী তার কারনটা ধরতে পারেনা। দু বার বাবা বাবা ডাকলেও ছানোয়ার কথা বলেনা। চোখ দুটো ছলছল করে উঠে।সেই চোখ জোড়া দেখে রিতীর বুক ধক করে উঠে। তখনি খেয়াল হয় পাশে বসে কাকারা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কাকাদের দৃষ্টিও বাবার অনুরুপ। ছুটি একটু বোঝার চেষ্টা করেই মাথা ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ কিছুই হয়নি। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে। সে ঠিক আছে। এতোক্ষনের নিভু নিভু প্রাণ যেনো হাতের মুঠোয় চলে আসে। ছানোয়ার চোখ মুছে মেয়েকে বুকে জাপটে ধরে। শক্ত করে চাপ দেয় যেনো কলিজার ভেতর এক্ষুনি তুলে ফেলবে। কাউকে নাগাল পেতে দিবেনা। ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাবে। কাকা বলছে,
— রিতী ভয় পেও না মা। বাড়ি চলো। আমরা আছি সবটা দেখে নিবো।কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। কেউ কিছু বললে বলবে বান্ধবীর বাসায় ছিলে। এক্ষুনি ভুলে যাও। মাথা থেকে বের করে ফেলো। মাথায় চাপ সৃষ্টি হতে দিওনা। তুমি বুঝদার মেয়ে সব বুঝো।
রিতী তাই মানে। সবাইকে জানায় সে বান্ধবীর বাসায় ছিলো। রুম্পা ছুটিও তাই বলে। রিতীকে ভুলানোর জন্য ছুটি তো আছেই। সবটা ভূলে যেতে বলা যতটা সহজ ততোটা সহজ নয় ভুলে যাওয়া। বাইরে যতই দেখাক ভূলে গেছে ভেতরে ভেতরে তার রেশ ঠিকই রয়ে গেছে। মেয়েটা একটু একটু করে যন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনায় উদাসীনতা এসে গেছে। খাওয়া দাওয়া তার উচ্ছনে গেছে। রুম্পা টের পেয়ে মেয়ের যত্নে লেগে পড়েছে। ছানোয়ারও রিতীকে নিয়ে খোশমেজাজে মেতে থাকে। মুখে না বললেও বাবা মায়েরা যেনো সবই বুঝতে পেরে যায়। এর জন্যই তারা সবার উচ্চ আসনে স্থান পায়। রিতীকে পড়ার তাগিদ দিচ্ছে। সামনে বসিয়ে পড়াচ্ছে। রিতী বই সামনে নিয়ে থম ধরে বসে থাকলে এটা ওটা বলে মন ঘুরিয়ে পড়ায় মনোযোগ আনানোর চেষ্টা করছে। শেষমেশ এ ঘটনার রেশ ধরে মেয়ের রেজাল্ট যেনো না খারাপ হয় সেই ভয়ে আছে। রিতী কেমন মেধাবী তা সবারই জানা। জীবনে অনেক দূর পর্যন্ত পড়বে বলে এতো সপ্ন দেখা। এতোবড় একটা ঘটনা নিজের সাথে ঘটে যাবার পর কোন মেয়েই পারবেনা তৎক্ষনাৎ সেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে।
সেই দিনটা আতঙ্কের চেয়েও যেনো বেশীই ছিলো।
স্টুডেন্টে ভরা ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হয় এক ছেলে। ছেলেটাকে রিতী চিনে। সোহাগের সাথে মোড়ের দোকানে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। ছেলেটা এসেই জানায় মিল্লাদের তবারক নিয়ে আসা হয়েছে। স্টুডেন্টদের মাঝে বিলিয়ে দিতে চায়। দুপুর বেলায় অনেকেই শুকিয়ে আছে। তবারকের কথা শুনে স্টুডেন্টরাও উত্তেজনায় ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা। তুলি রিতীকে বলে,
— দোস্ত রিযিকের মালিক আল্লাহ। খুব ক্ষুধা লাগছিলোরে।
রিতী মৃদু হাসে। জনপ্রতি প্যাকেট দেওয়া হয়। গরম গরম দুটো সিঙ্গারা, দুটো পুরি, পাঁচ টাকার একটা কেক আর একটা ফান্টা। স্যার বলে,
— দশ মিনিট সময় দিলাম। তাড়াতাড়ি শেষ করবে। তারপর আমি পড়ানো শুরু করবো। স্যার ও চেয়ারে বসে খাওয়া শুরু করে। স্যারের জন্য দুই প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুধা লাগায় রিতীও খেয়ে নেয়। খাবার সময় নেক আপ ঠিকই খুলতে হয়। তা দেখে ছেলেটা চলে যায় মৃদু হেসে। বাড়ি ফেরার জন্য তুলিকে বিদায় দিয়ে বের হতেই কেউ রিতীর পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে।আরো দুজন এসে হাত পা ধরে তুলে নিয়ে যায় একটা বাড়িতে। চোখ মুখ খুলে দিতেই চোখের সামনে পড়ে সোহাগকে। সে কি রাগ! কি ভয়ঙ্কর! হিযাপের উপর দিয়েই চুলির মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ছোট্ট একটা রুমে। জানালা দিয়ে ক্ষীন আলোয় রিতীর চোখে পড়ে সোহাগকে রক্তিম মুখ খানা। রাক্ষস বা শয়তান যাই বলো তার থেকে দেখতে কম নয়। ফর্সা মানুষের চোখ মুখ লাল হলে ভয়ঙ্কর জলন্ত আগুন লাগে । সোহাগ গর্জে উঠে,
— লুকোচুরি খেলা হচ্ছে আমার সাথে? যে রুপের আগুনে আমি তৃষ্ণা মেটাতে চাই সেই রূপ ঢেকে রাখার সাহস কোথায় পাস তুই? খোল খোল বলছি এসব।
একটানে বোরখার পাড় ধরে ছিড়ে ফেলে। গা থেকে ছাড়িয়েই ক্ষান্ত হয়। সামনের চেয়ারটা পড়ে রয়েছিলো। পায়ের আগা দিয়ে তুলে ফেলে ধপ করে রিতীর সামনে বসে। ফাটা বাঁশের মতো চিৎকার করে বলে,
— ঐ গেঞ্জিও খুল। তোর হায়াত শেষ। আজকে তোরে বাগে পাইছি। অনেক রিকোয়েস্ট করছি শুনস নাই। এই জীবনে যা না করিনাই আজকে তাই করতে হবো আমাকে। মেয়ে মানুষরে জোর করা আমার কোন কালেই পছন্দ না। কিন্তু আজকে তোরে আমি জোর করবো।আমি যাদের চাই তারা বেশীক্ষন আমার থেকে দূরে থাকতে পারেনা। আর তুই দেড়টা বছর থেকে আমারে নাকানিচোবানি খাওয়াইতাছোস। আজকের পর থেকে তুই হবি আমার গোলাম। তরে যেমনে যেমনে বলমু তেমনে তেমনে চলবি। কি হলো খুল।কথা কানে যায়না?
রিতীর মুখে কথা নাই। বুকের উপর আড়াআড়ি হাত রেখে ঠকঠক করছে কাঁপছে অনবরত। রিতীর কাপাকাপি সোহাগের বিরক্ত লাগে। ধমকে বলে,
— ঐ কাঁপা কাপি কমা। কমা কয়তাছি। শালী তুই কি কম্প মেশিন? স্থির হ বলতাছি। থাম। এক্ষুনি থামবি।
রিতী থামার নামে তৎক্ষনাৎ জ্ঞান হারায়। যখন চোখ খুলে তখন নিজেকে নিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। ভাগ্যক্রমে এ যাত্রাই বেঁচে যায়। কিন্তু সোহাগের চেহারা মনে পড়লে বার বার কেঁপে উঠে।
রুম্পা এসে রিতীকে খাইয়ে দিয়ে যায়। পাশে বসে ছুটিও হা করে। কিছুদিন থেকে ছুটির ভালোই হয়েছে। নিজের হাতে আর খেতে হয়না। রিতীর সাথে সেও মায়ের হাতে খেয়ে নেয়। রুম্পা চলে যেতেই ছুটি ঝালে নাক টেনে বলে,
— বুঝলে আপু আমিও তোমার মতো একদিন গা ঢাকা দিবো। তারপর থেকে সবাই আমাকে তোমার মতো আদরযত্ন করবে।
— আমি গা ঢাকা দেইনা।
ছুটির কথায় রিতীর সোজাসাপ্টা উত্তর। দিন দিন রিতী কেমন রুড হয়ে যাচ্ছে।ছুটির ভালো লাগেনা। খুব ইচ্ছে করে প্রশ্ন করতে সেদিন কি হয়েছিলো? সোহাগ ভাই তোমার সাথে কি করেছিলো? সাহস হয়ে উঠেনা। কারণ রিতী আর হাসে না। রিতীর মুখে হাসি নেই মানে রিতীর মন ভালোনা। আর ভালো না মানে সোহাগকে তীব্র ঘৃণা এর একমাত্র কারন। ছুটি জানে কিছুটা। বাবার মুখে যতোটা শুনেছে ঠিক ততোটাই। তবে আসল ঘটনাটা নয় যেটা রিতী সোহাগ ছাড়া কেউ জানেনা। ছুটি সেসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। ফ্যানের দিকে দৃষ্টি রেখে আফসোস নিয়ে বলে,
— আপু তোমাকে বাবা মা কত আগলে রাখে আমাকে কেনো রাখেনা? আমার কি কখনো কষ্ট পায়নি?আমার দিকে কেনো সেভাবে নজর দেয়না?
— কারণ আমি চাইনা।
রিতীর কথায় ছুটি লাফ দিয়ে উঠে বসে। মুখ গোল গোল করে বলে,
— কেনো চাওনা?
— তোর জন্য আমি আছি। আর কাউকে লাগবেনা।
— কেনো লাগবেনা?
ছুটির এই একটার পর একটা বেহুদা প্রশ্নে রিতীর মেজাজ খারাপ হয়। তবুও ধৈর্য্য ধরে চেয়ার ঘুরিয়ে সরাসরি ছুটির মুখোমুখি হয়। কাট কাট গলায় বুঝিয়ে বলে,
— ধর তুই আমগাছে উঠার মতো এনার্জি পাচ্ছিসনা। কিন্তু তোর আমটা পাড়তে হবে এবং খেতে হবে। এখন না পাড়লে না খেলেও তোর কোন সমস্যা নেই। যখন এনার্জি হবে তখন পাড়বি বলে মনস্থির করে রেখেছিস। কিন্তু তোর বাবা মা তোকে এখনি ঠেলেই আমগাছে উঠিয়ে দিবে। কারন তারা তোকে নিয়ে বেশী সিরিয়াস হয়ে গেছে। আনান্য বিষয়ের থেকে আমটা পাড়া তাদের কাছে বেশী ইমপর্টেন্ট। কারন তোর এনার্জি দরকার। সেই আম পাড়বি আর তোকে তারা খাওয়াবে। সেই থেকে তোর এনার্জি হবে।ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোকে ঠেলে দিবে। নিজেদের ইচ্ছাতে তোকে চালাবে। সেসব বাদ দেই। এইযে দেখছিস বাবা মা আমাকে এতো পেম্পার করে এতে লাভ কি? তুই ভালোভাবেই জানিস এখনি আমার পেটে নাড়া দিয়ে উঠবে আর আমি গলগল করে সব বেসিনে ফেলে আসবো। আর বাবা যে এতো আমার মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করে আমাকে কিন্তু হাসাতে পারছেনা। কারন আমার হাসি আসেনা। এইযে তাদের এতো বাড়াবাড়ি আমার মাথায় চাপ লাগে। আমার অসহ্য লাগে। আমাকে কেনো তারা ছেড়ে দেয়না? আমার সময় প্রয়োজন। আমাকে সময় দিচ্ছে। আমি ঠিক হতে চাই। তাদের যত্ন ছাড়া আমি ঠিক হতে পারবোনা। তারা যা করছে আমার ভালোর জন্যই করছে । একটা সময় আমি তাদের যত্নে ঠিকই স্বাভাবিক হয়ে যাবো কিন্তু মাঝখানের এই দিনগুলো আমার কাছে কন্টকাকীর্ণ। এর থেকে যদি তারা আমাকে ছেড়ে দিতো, আমাকে মুক্ত করে দিতো, আমাকে আমার দুনিয়ায় ভালো থাকার সুযোগ দিতো তাহলে আমি শান্তিতে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারতাম। ছুটি আমার দম বন্ধ লাগছে। আমি আর রুমে থাকতে পারছিনা। আমি পড়াশোনা করতে পারছিনা। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি কাঁদতে পারছিনা। সেদিনের পর থেকে আমার কেনো কান্না আসেনা? পৃথিবীর সব বিষয়ে আলাদা আলাদা সলুশন থাকে। একটার সাথে আরেকটা মিলিয়ে দিলে হয়না। আমি আর পারছিনা। আমি সব বুঝি।বুঝেও নিজের জন্য কিছু করতে পারছিনা। কি করলে আমার বুকের উপর থেকে পাথরটা নামবে আমি জানি না। আমাকে হেল্প কর ছুটি। আমাকে পথ দেখা।
বলতে বলতেই রিতীর গা গুলিয়ে উঠে। পেটের ভেতর কিছুই যেনো হজম হয়না। দৌড়ে গিয়ে বেসিনে সব ঢালাও করে দেয়।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~