মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:১৩

0
420

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৩

হাইওয়ের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে সীমান্ত আর মেঘলা।মেঘলা নাক টেনে টেনে কেঁদেই চলেছে।সীমান্ত ওকে শান্ত করতে চাইছে।কিন্তু পারছে না।তাই মেঘলাকে কান্না করতে দিয়ে সীমান্ত পাশে বসে আছে।মেঘলাকে এইভাবে দেখে ওর নিজেরও কেমন একটা লাগছে।দুইদিন ধরে ফোন অফ আর আজ হাতে ব্যাগ নিয়ে উপস্থিত।এইখানে আসতে বললো তাও ওর মায়ের ফোন থেকে।ব্যাগে মনে হচ্ছে কাপড় আছে।সীমান্ত কিছু একটা আচ করতে পেরে চুপ করে আছে।মেঘলা কিছুটা শান্ত হতেই সীমান্ত মেঘলার মুখটা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিল।দুহাত মেঘলার দুইগালে রেখে নরম গলায় বলল,
তুমি ঠিক আছো তো?
মেঘলা মাথা নাড়ল।কিন্তু হ্যাঁ নাকি না বললো বুঝা গেলো না।
তোমার ফোন অফ কেনো??
……….
বাসায় কিছু হয়েছে??
মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
কি হয়েছে জান আমাকে বলো।না বললে বুঝবো কী করে??
এই দুইটা দিনে যা শুরু করল……আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।
কেনো জান কী হইছে??
আম্মু..আম্মু…আমাকে….(কান্নার জন্য হিচকি উঠে গেছে ঠিকভাবে কথা বলতেও পারছে না।)
মেঘলা রিলেক্স.. নেও পানিটা খাও।
এক ডোকে ক্ষানিকটা পানি খেয়ে নিল।গলাটা ভিজানোর জন্য।
এইবার বলো কি হয়েছে।
আম্মু আমার থেকে মোবাইল জোর করে নিয়ে গেছে।দিতে চাইনি বলে মেরেছেও।বলছে…..
কি তোমাকে মারছে???
হুম..
অনেক মারছে??অনেক কষ্ট হচ্ছে??
হুমম……
আর কি বলছে??
বলছে ফেইল করে এখন বসে বসে ফোন টিপি কেন??লজ্জা করে না??
ফেইল করলে ফোন ইউজ করা যায় না?
আমি জানি না।বলছে এখন থেকে ফোন ইউজ করা,বাইরে যাওয়া,ঘুরাঘুরি,আড্ডা সব বন্ধ।
এইটা কেমন কথা?
জানো আমি তাও মেনে নিছি।কিন্তু এই দুইদিনের মধ্যে এত এত কথা বলছে যেটা সহ্য করার মতো না।আমি আর পারছিলাম না।নজরবন্দি করে রেখেছে।এইভাবে রাখলেই কি পাস হয়ে যাবো বলো??
মানুষের উপর মানুষ এমন করে?তাও আবার নিজের মা??সামান্য একটা ব্যাপার ফেইল করেছো।
জানি না।
কিন্তু তুমি আমাকে এইখানে আসতে বললে যে??
তোমার কথা ভেবে তোমার কাছে চলে এলাম।ও বাড়ি আর ফিরবো না আমি।
একদম ঠিক করেছ।কিন্তু বের হলে কি করে?
মেঘলা চোখ মুছে বললো,আম্মু দুপুর বেলা ঘুমায় আর আব্বু কলেজে থাকে।সেই সুযোগে আমি আম্মুর ফোন থেকে তোমাকে মেসেজ করে বের হয়ে আসছি।
খুব ভাল করছো জান।চলো আমার সাথে।
কোথায়??
আমার বাসায় আমার সাথে থাকবে।
আমাদের বিয়ে হয়নি আর আমি তোমার বাসায় যাব??সবাই কি ভাববে?
তাই তো জান।এইটা তো ভাবিনি।কি করা যায় বলোতো??
চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।
বিয়ে??তুমিতো অনেক ছোট কিভাবে বিয়ে হবে??
আমি জানি না।
আচ্ছা দাড়াও আমাকে ভাবতে দেও।

মমতা..মমতা….
…..
মেঘলা….মেঘলা…
…..
কি ব্যাপার সব কোথায় গেলো??গেট টা সটাং করে খুলে রেখে সব কোথায় গেলো??মমতা…..এইভাবে ঘরের মধ্যে বসে আছো??দরজা পর্যন্ত খোলা।
……
কিছু হয়েছে??এইভাবে বসে কাদছ কেনো??কিছু বলছি তোমাকে জবাব দিচ্ছ না কেনো?
মেঘলা ঘরে নেই!
নেই মানে?আশেপাশে কোথাও আছে।এরজন্য কান্না কাটি করার কি আছে।
আশেপাশে নেই।
রুদ্রকে ফোন করে খোঁজ নেও ওর বাসায় গেছে কি না??
কোনো লাভ হবে না খোঁজ করে।
অন্য কারো বাসায় গেছে….
ও কারও বাসায় ই যায়নি।
তাহলে কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে নিঃশ্চয়ই….
না না না নেই কোথাও নেই,বলেই কেঁদে উঠলেন মমতা হাসান।
আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।তাহলে কোথায় যাবে??
মমতা হাসান একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন।
কি এইটা কি আছে এতে??
পড়েই দেখ….

আব্বু আম্মু,

পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।তোমরা তো কত মান্য ব্যক্তি।তোমাদের মেয়ে ফেইল করেছে এইটা খুব লজ্জার ব্যাপার।তোমরা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছো না।এইসব তো আমি হতে দিতে পারি না।তাই আমিই চলে যাচ্ছি।আমাকে আর খোঁজও না।তোমরা ভালো থেকো।

ইতি
তোমাদের অযোগ্য মেয়ে

মুবিন হাসান দপ করে বসে পড়লেন।তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন যেকোনো সময় লুটিয়েও পড়তে পারেন।মমতা হাসান এগিয়ে এসে ধরলেন।

কাজী অফিসে বসে আছে মেঘলা,সীমান্ত আর সীমান্তর চারটা বন্ধু।কাজী সাহেব বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন না।একেতো বাচ্চা মেয়ে তার উপর কোনো অভিভাবক নেই।সীমান্তর বন্ধুরা টাকা পয়সা দিয়ে রাজি করালো।তবুও পুরোপুরি ভাবে করা গেলো না।ধর্মীয়ভাবে বিয়ে সম্পূর্ণ হলেও ওদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করা গেলো না।মেঘলার এখনো ১৮বছর হয়নি তো তাই।তবুও বিয়ে হয়েছে এই ডের।কয়েকদিন পর তো কাবিননামা পেয়ে যাবে পরে যখন মেঘলার ১৮ হবে তখন রেজিস্ট্রি করিয়ে নিবে বলে আশ্বস্ত করল কাজী সাহেবকে সীমান্ত।কাজী সাহেবের সাথে সব রকম কথা বলে টাকা মিটিয়ে এইবার ওরা বের হলো।সবদিক সামাল দিতে গিয়ে রাতও হয়ে গেছে।এখন বাড়ি ফেরার পালা।না মেঘলা নিজের বাড়ি না যাবে শ্বশুরবাড়ি।মেঘলা আর সীমান্তকে রিক্সায় তুলে দিয়ে বন্ধুগুলো যে যার মতো চলে গেল।

হুট তোলা রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন।কিন্তু সেদিকে মেঘলার কোনো খেয়াল নেই।তবে সীমান্তও নিজে থেকে কিছু বলছে না।রাতের ঠাণ্ডা বাতাস মাঝেই মাঝেই এসে মেঘলার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ভিতরে তার তোলপার হচ্ছে।মেঘলার আজকে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে।মনে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষটাকে একবারে পেয়ে গেলাম।সারাজীবনের জন্য।কিন্তু কবুল বলার সময় গলায় আটকে আসছিল।বারবার আব্বু আম্মুর মুখটা ভেসে আসছিলো।বহু কষ্টে সে কবুল বলেছে।কিন্তু কবুল বলার পর থেকে ভিতরে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েই চলেছে।না পারছে সবটা মেনে খুশি হতে আর না পারছে সব কিছু অস্বীকার করে চলে যেতে।এ প্রতিক্রিয়া ওকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।না জানি আব্বু আম্মু আমাকে না পেয়ে কি করছে?কত কষ্টই না পাচ্ছে….আবার মনে হচ্ছে হয়তো এতটা কষ্টও পাচ্ছে না।ওতো ফেইল করেছে ওর জন্য আবার কষ্ট হবে কেনো…এইসব কিছুকে সঙ্গী করে আর ভালোবাসার মানুষটাকে পাশে নিয়ে মেঘলা শুরু করতে যাচ্ছে একটা নতুন জীবন।যাচ্ছে একটা নতুন পরিবারে।যাদের কাউকেই সে চিনে না।কে বা কারা আছে সেখানে তাও কখনো শুনেনি সীমান্তের থেকে।যে বা যারা আছে তারা কিভাবে নিবে মেঘলাকে তাও অজানা।হয়তো মেঘলাকে মেনে নিবো আবার নাও নিতে পারে।আবার সীমান্তর কথা ভেবে মেনেও নিতে পারে।সবটাই অজানা।অজানার পথে পাড়ি জমালো মেঘলা।

চলবে………..

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here