মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৩
আজ তিনদিন ধরে রুদ্র লজ্জায় মেঘলার সামনে যায় না।কি করে যাবে সে সেদিন যা হলো!আর মেঘলাকে তো রোজই দেখি কই কখনো তো এমন হয়নি।তাহলে সেদিন কেনো এমন হলো?কেমন যেন একটা নেশা নেশা ব্যাপার ছিল মেঘলার মধ্যে যেটা আগে কখনোই দেখিনি।অবশ্য কোনোদিন তো সেভাবে খেয়ালও করিনি।তবে সেদিন যে কি হলো!!এইসবই আনমনে ভাবছে রুদ্র আর তখনই অস্পষ্ট সরে মায়ের ডাক পড়লো।রুদ্র ভালো করে বুঝলো না কি বলছে।কিছুটা নড়ে চড়ে বসে চিৎকার করে বলে উঠলো,মা ডাকছছ….পুরো কথাটা শেষ করার আগেই কলারে টান অনুভব করে রুদ্র।কলারে হাত দেওয়ায় রেগে যায় রুদ্র।কটমট করে তাকায় যে কলারে হাত দিয়েছে তার দিকে।যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলার ধরে প্রচন্ড ঝাকুনি দিয়ে অপরজন চিৎকার করে উঠলো,
– তোর সমস্যা কিরে?আজ তিনদিন ধরে তোর কোনো খোজ নেই,কি সমস্যা তোর?দিব্যি সুস্থ ভালো মানুষ বসে আছিস!বসে বসে আবার,ধ্যান করা হচ্ছে!!কি নিয়ে এত ভাবছিস??কার কথা ভাবতে ভাবতে তিনদিন কেটে গেল?বল আমিও একটু শুনি।
– (কলার ধরায় যতটা রেগে গিয়েছিল তার কিছুই অবশিষ্ট নেই।কিন্তু আজও মেঘলার দিকে তাকাতে পারছেনা আবার চোখ সরিয়েও নিতে পারছে না।)
চুপ করে না থেকে বল…
(মেঘলার এই রাগী চোখের দৃষ্টিতে নেশা ধরে যাচ্ছে।এই রকম করেতো বহুবার তাকিয়েছে মেঘলা তবে আজ কেনো এমন হচ্ছে!!)
(আরও রেগে গেলো)তুই জবাব দিবি না তো?
(গলাটা কেপে কেপে উঠছে।কাপা কাপা গলায় বলল)কি জবাব দিবো??
(হঠাৎই গলাটা নরম হয়ে এলো)তুই জানিস আমি ভেবেছিলাম আমার জন্য তোর হয়তো জ্বর হয়েছে।ওইভাবে বৃষ্টির মধ্যে এলি আবার যাওয়ার সময় ছাতাটাও নিলি না।আমার কি খারাপ লাগছিল তোর জন্য তাইতো জ্বর নিয়েও তোর খোঁজ নিতে আসলাম আর তুই…
তোর জ্বর?এখন কি অবস্থা?কই দেখি দেখি…(হাত বাড়িয়ে কপালে হাত দিল)
(এক ঝটকায় হাত সরিয়ে)আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।
তুই আমাকে নিয়ে ভাবিস বুঝি!
না ভাববো না তো,আর ভাববো না।তুই যেমন সেলফিশ ওমন হয়ে যাবো।(গাল ফুলিয়ে বলল)
গাল ফুলিয়ে রাখলে না তোকে একদম রসগোল্লার মত লাগে ইচ্ছে করে একদম কপ করে গিলে ফেলি।
মেঘলা প্রচন্ড রেগে রুদ্রকে মারতে নিবে তার আগেই রেহানা মাহমুদ ট্রে নিয়ে ঢুকলেন।এদের এই ঝগড়া দেখে তিনি অভ্যস্ত।তাই তিনি ট্রে টা রেখে মেঘলাকে পাশে বসিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর আছে কিনা?না এখন জ্বর নেই।এবার বললেন,কি হয়েছেরে মা?আণ্টি তোমার ছেলে বলে কি না আমি রসগোল্লা আমাকে নাকি কপ করে গিলে ফেলবে।বলেই মেঘলা মুখটা কাদো কাদো করে ফেললো।রুদ্র কিছু বলবে তার আগেই রেহানা মাহমুদ ওকে খুব জোড়ে একটা ঝাড়ি দিলেন আর বলে দিলেন এরপর মেঘলাকে কোনোভাবে জ্বালালে তিনি আরো রেগে যাবেন।তারপর তিনি মেঘলাকে আদর করে এটাওটা মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন।মেঘলার সাথে আরও কতক্ষণ গল্প করলেন।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি রুদ্রকে বললেন মেঘলাকে বাড়ি দিয়ে আসতে।
সীমান্ত অনেক বুঝিয়ে মুবিন হাসান কে রাজি করিয়েছেন পড়ানোর জন্য।মুবিন হাসান রাজি হতেন না তবে সবটা শুনে খুব মায়া হলো তাই রাজি হয়ে গেলেন।একটা মেয়ে এতবছর এত পরিশ্রম করে সাধনা করে এতদূর এসে থেমে যাবে তা তিনি মানতে পারছেন না।তবে মেয়েটার বরের উপর খুব রাগ হচ্ছে।কেমন মানুষ বউকে পড়াশুনা করতে দিবে কিন্তু কলেজে যেতে দিবে না।অন্য কোন সাবজেক্টে পড়লে তাও বাসায় বসে পড়লেই হতো কিন্তু mathematics একা একা কি করা যায়!কিছুটা হেল্প এর প্রয়োজন হয়।মুবিন হাসান সীমান্ত বলে ছেলেটিকে জানিয়ে দিলেন তিনি সপ্তাহে তিনদিন পড়াবেন।বিকালের দিকে নিয়ে আসতে।ছেলেটিও খুব খুশি মনে বের হয়ে গেল।বোনের জন্য কতটা ভাবে দেখে মুবিন হাসান এরও ভালো লাগলো।
রুদ্র আর মেঘলা যখন মেঘলাদের বাড়ির কাছাকাছি এলো তখন সেই ছেলেটিকে ওদের বাড়ির গেট থেকে বের হতে দেখে রেগে যায় মেঘলা।রুদ্রকে রেখেই তালবিহিনভাবে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।আজ আর ছাড়বে না ছেলেটিকে।একেতো জ্বর থেকে সবে ভালো হলো দুর্বল শরীর তারউপর বেসমালভাবে হাটায় কিছুদূর গিয়েই তাল হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।রুদ্র দ্রুত এসে ওকে টেনে তুললো।সামনে থাকা ছেলেটিও এগিয়ে এলো।এতে যেনো মেঘলা আরও ক্ষেপে গেলো,কিন্তু ব্যাথা পেয়েছে অনেক উঠতেই পারছে না।রুদ্রকে তাড়া দিয়ে বলল,তাড়াতাড়ি এইখান থেকে নিয়ে চল আমাকে।রুদ্র আর মেঘলা যখন সামনে পা বাড়ালো ছেলেটি পিছন থেকে বলল,কোথাও লাগেনি তো?মেঘলার মাথায় তিরতির করে রক্ত উঠে যাচ্ছে।এর জন্যই তো ও পড়ল আবার জিজ্ঞেস করছে।দাত মুখে খিচে যেই বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র মেঘলাকে থামিয়ে দিল।মেঘলার এহেন রূপ দেখে রুদ্রই বলল,ও ঠিক আছে।তারপর মেঘলাকে টেনে নিয়ে গেল।রুদ্র পুরো ব্যাপারটা কিছুই বুঝলো না।ছেলেটিকে দেখে মেঘলা হটাৎ এত রেগে তার দিকে তেড়ে যাচ্ছিল কেন আর ছেলেটিই বা কেন এগিয়ে এলো?হয়তো নেহাৎই সাহায্য করতে।কিন্তু মেঘলা রেগেছিল কেনো?এইসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে আগে মেঘলাকে উপরে দিয়ে আসতে হবে মনে হচ্ছে খুব ব্যাথা পেয়েছে।
মেঘলাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে মমতা হাসান ঘাবড়ে গেলেন।তাড়াতাড়ি এসে ধরে সোফায় বসালেন।মেঘলাকে উনার বিশ্বাস নেই কি জানি কি করেছে বলবে না তো সত্যিটা।রুদ্রকেই জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?রুদ্র স্বাভাবিকভাবেই বলল,তাড়াহুড়া করে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেছে।এই কথাটা মেঘলা বললে তিনি হয়তো বিশ্বাস করতেন না কিন্তু রুদ্র বলায় এক কথায় বিশ্বাস করলেন।তিনি মেঘলার পায়ে গরম পানির সেক দিচ্ছেন আর হড়বড় করে বলছেন,এত বড় হয়েছে এখন ঠিক করে হাঁটতে পারেনা।সবকিছুতেই তার হড়বড় করা চাই।একটু সুস্থির হয়ে থাকতে পারে না।মমতা হাসান এর চিৎকার শুনে মুবিন হাসান ড্রয়িং রুমে এলেন।মেঘলার পায়ের অবস্থা দেখে তিনিও ঘাবড়ে গেলেন।এইটুকু সময়ে পা ফুলে উঠেছে।মুবিন হাসান স্ত্রীকে থামিয়ে বললেন,এখন চিৎকার চেচামেচি না করে ওকে নিয়ে আগে হসপিটালে যাওয়া দরকার।রুদ্রর দিকে তাকালেন।রুদ্রও যাওয়ার জন্যে দাড়িয়েই আছে।মমতা হাসানকে বাসায় রেখে তিনজন বেরিয়ে পড়লো।এক্সরে করিয়ে দেখলেন তেমন কিছুনা ব্যাথা পেয়েছে তবে খুব বেশি।ডক্টর full bed rest নিতে বলেছে আর কিছু মেডিসিন দিয়েছে।
রেহানা মাহমুদ অস্থির হয়ে একবার গেটের সামনে যাচ্ছেন আবার বারান্দায় দাড়িয়ে পায়চারি করছেন।কিন্তু অস্থিরতা কমছে না।এইখান থেকে মেঘলাদের বাড়ি যেতে আসতে 20মিনিটও লাগে না সেখানে এখন রাত 9.00টা ছুঁই ছুঁই এখনো রুদ্র আসলো না।রুদ্র যেরকম ছেলে সে কোথাও বসে আড্ডা দিবেনা তাও এত রাতে।তাহলে এত দেরি কেনো করছে?যত সময় যাচ্ছে তত টেনশন বাড়ছে।তিনি কী একবার মেঘলাদের বাড়ি যাবেন?হ্যাঁ,আর দেরি করে কাজ নেই 9.00টা বেজে গেছে।উনি বেরিয়ে পড়লেন মেঘলাদের বাড়ির দিকে।
চলবে……..
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)