মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২১
সীমান্ত কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছে।
রোজকার দিনের মতো মেঘলা ওকে বিদায় দিয়ে মেইন ডোর লক করে দিল।
সাবিবা এক মনে কাজ করছে রান্নাঘরে।ওর চুল বেয়ে এখনো পানি পড়ছে।যার অর্থ বুঝার মত বোধ মেঘলার এখন হয়েছে।
মেঘলা এসে পাশে দাড়ালো।
সাবিবার এতে বিশেষ কোনো হেলদোল হলো না।ও ওর কাজেই ব্যস্ত।
মেঘলা একদম নিরব হয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেল।অন্যদিনের মতো কথা বলার কোনো চেষ্টাও করছে না।কোনো কাজ করার বায়নাও করছে।সাবিবার বিষয়টা ভালো লাগছে না।পাশ ঘুরে মেঘলার দিকে তাকাল।কিন্তু তৎক্ষণাৎ ও চমকে উঠলো।মেয়েটা পাশে দাড়িয়ে নিরবে কাদছে।ভিতরটা ছেত করে উঠলো।মেঘলা কিছু বুঝে যায়নি তো??এই মেয়েটাকে সে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে।ওকে কষ্ট পেতে দিবো না।
সাবিবা হাতটা ধুয়ে মেঘলার হাত ধরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।সোফায় বসিয়ে পাশে বসলো।
কিছু হয়েছে??
……
আমাকে বলো??
……..
যেকোনো সমস্যা আমাকে বলতে পারো..
…….
এইভাবে কান্না করলে হবে??
……..
আমাকে বলো!আমি তো তোমার বড় বোনের মতোই।
কথাটা শুনা মাত্রই সাবিবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাদতে লাগলো মেঘলা।
এই বোকা মেয়ে কি হয়েছে বলো??
মেঘলা এখনো সাবিবাকে আকড়ে ধরে ফুপিয়ে কাদঁছে।
ঠিক আছে আগে কান্না করে হালকা হয়ে পড়ে আমাকে বলো।
মেঘলা অনেকক্ষণ ধরে কাদলো।এখন একটু হালকা লাগছে।এই মুহূর্তে এই একটা মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই ওর।মাথা তুলে সাবিবার একটা হাত ধরে ওর দিকে তাকাল।এখনো নাক টেনে কেঁদেই চলেছে।
সাবিবা মৃদু হাসলো ভরসা দিতে।তারপর আরেকটা হাত আলতো করে মেঘলার মাথায় রেখে বলল,
কি হয়েছে??বাড়ির জন্য মন খারাপ??
না সূচক মাথা নাড়াল।
তাহলে কি বর কিছু বলেছে??
আবার মাথা নাড়ল।
তাহলে?শরীর খারাপ লাগছে?
না আপু আমি একদম ঠিক আছি।
তাহলে কাদঁছো কেন??
তোমার জন্য!!
আমার জন্য!!
হ্যাঁ,আপু তোমার জন্য।
আমি তো কিছু বলিনি তোমাকে!
কেনো বল না?সব বলবে।তুমি আমি দুইজন তো একই।কেনো একা একা এত কষ্ট পাচ্ছ??
ওর কথার কিছু বুঝতে পারছে না।কি বলতে চাইছো কিছু বুঝতে পারছি না।আমার আবার কিসের কষ্ট??
হ্যাঁ,আপু তোমার কষ্ট!কি করে এত কিছু সহ্য করছো??কেনো করছো??
মেঘলা বোন আমার…আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না।
আপু আমি সব জেনে গেছি।
সাবিবা আতকে উঠল।শক্ত করে মেঘলার হাত চেপে ধরলো।কি জানো তুমি??
সব আপু সব।সব মানে সব।দিনের পর দিন যা তুমি মুখ বুঝে সহ্য করছো??কেনো তুমি মুখ বুজে সব সহ্য করছ,মেনে নিচ্ছ কেনো??
মেঘলা বোন আমার শান্ত হও।
আপু আমি শান্তই আছি।আমি এই অন্যায় আর হতে দিবো না।তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।
কি সব বলছো??আমার কিসের কষ্ট?কোনো কষ্ট নেই আমার।
আপু আর আড়াল করো না।আমি জেনে গেছি।গত রাতে সব শুনেছি আমি।
সাবিবার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।এই ছোট মেয়েটার কাছ থেকে এইসব শুনতে খুব কষ্ট হচ্ছে… মানতেও কষ্ট হচ্ছে।ওর মুখে তো এখন এমন কথা থাকার কথা না!!কিন্তু কি ভাগ্য ও নিজেও এর স্বীকার।আর ও আমার কথা ভাবছে।
আপু তুমি আর কাদবে না।তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।আজ থেকে তুমি আর একা নও।আমিও তোমার সাথে আছি।
সাবিবা দুহাতে মেঘলাকে বুকের মাঝে আকড়ে ধরল।
মেঘলাও চুপটি করে রইলো বুকের মাঝে।ভরসা খুঁজার চেষ্টা।
আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন।সব সময় মনে রাখবে তোমার এই বড় বোন তোমার সাথে আছে।তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না।
বুক থেকে মাথা সরিয়ে অভিমানী গলাতে বলল,তুমি তো আমাকে শুধু মুখে মুখেই ছোট বোন বলছো।মন থেকে তো আর বলছো না।
সাবিবা ব্রু কুচকে তাকাল।
এইভাবে তাকানোর কিছু হয়নি।তুমি কি কখনো শুনেছ ছোট বোনকে কেউ তুমি করে বলে??
সাবিবা এইবার হাসলো।তাই তো,খুব ভুল হয়ে গেছে।আর হবে না।এইবার থেকে তুই..এইবার তো বুকে আয়…..
মেঘলা ঝাপিয়ে পড়ল বোনের বুকে।আমার জীবনে আজ কিছুতো ভালো হলো।তোমার মত একটা বড় বোন পেলাম আর কি চাই আমার।
সাবিবাও পরম মমতায় ছোট বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বেশ কয়েকটা টিউশন জোগাড় করে ফেলেছে রুদ্র।ওর এক ক্লাসমেট এই ব্যাপারে অনেক হেল্প করেছে।এইখানকার টিউশনগুলোর ভালো দিক হলো এরা ভালো আমাউন্ট দেয়।কিন্তু ওর খুব প্রেসার যাচ্ছে।সবে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে।নিজেরই পড়াশুনার কত চাপ।তারপর আবার টিউশন করা….বড্ড বেশি হিমশিম খাচ্ছে।তবুও পারতে হবে।এই মাসের মধ্যেই একটা বাসা নিয়ে মাকে আনতে হবে।ওই এলাকায় ফিরে যাওয়ার মত কোনো পিছুটান আর রাখবে না।প্রিয় বন্ধু,বেস্ট ফ্রেন্ড এইসব তো শুধু মুখে মুখেই ছিল।মন থেকে কি এমন সম্পর্ক হয়!!বন্ধুত্বের উপর কেমন যেন একটা বিদ্বেষ পরে গেছে।এ জীবনে হয়তো আর কারও বন্ধু হতে পারব না।বা চাইব না হতে।বেস্ট ফ্রেন্ড তো একজনই হয়।সবাই কি হতে পারে বেস্ট ফ্রেন্ড!!পারে না।আচ্ছা মেঘলা কি শুধুই আমার ভালো বন্ধু ছিল??নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু??ওর জন্যে কি আমি গভীর ভাবে কিছু ফীল করি??হয়তো করি হয়তো না।মেঘলার চড় মারাটা কি আমার ওর উপর বিদ্বেষ এর কারণ নাকি ওর জীবনে অন্য কারও উপস্থিতি আমি মানতে পারছি না??মেয়েটা সত্যি বড় হয়ে গেছে।ওর আর কারো প্রয়োজন নেই।একাই পারে সব সিদ্ধান্ত নিতে।কিন্তু ওতো মস্ত বড় বিপদে আছে।আমি কি করে ওই জাহান্নামে ফেলে এলাম??আমার ওকে ঐভাবে রেখে আসা ঠিক হয় নি।আরও দুটো চড় খেয়েও যদি ওকে নিয়ে আসতে পারতাম……কেমন আছে ও এখন??ঠিক আছে তো??ওই অমানুষটা কোনো ক্ষতি করে দেয়নি তো??মেঘলাকে নিয়ে ভাববো না বলেও ওকেই নিয়েই ভাবছি।রাতগুলো কেমন দুঃস্বপ্নের মত হয়ে গেছে।দিন শেষে চোখ দুটো বুজলেই যে ওর মুখটা ভেসে উঠে।এক্ষুনি হয়তো অভিমানে গাল ফুলিয়ে আমাকে মারতে আসবে।আমি পারছি না কোনো ভাবেই পারছি না মেঘলার ভাবনা আপনাতেই চলে আসছে।সারাক্ষণ শুধু একটাই নাম মাথায় সাইরেন বাজিয়ে চলেছে….মেঘলা….মেঘলা……মেঘলা…..
চলবে……..
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)