মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৫

0
474

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৫

সকালে ভেবেছিল আজ দুপুরে বাসায় এসে আয়েশ করে একটা ঘুম দিবে।কিন্তু বাড়ি ফিরতেই ৩টা বেজে গেছে।এখন লাঞ্চ করে ঘুমানো যেত কিন্তু মেঘলা আবার যেতে বলেছে তাও খুব গুরত্বপূর্ণ কিছু বলার জন্য।না গেলেও যে ঘুমুতে পারবে তা না মেঘলা বাড়ি এসে নিয়ে যাবে তখন।তাই দুপুরে ঘুমের চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় চুপ করে শুয়ে আছে।আছরের আযান দিলেই মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে মেঘলার বাড়ি যাবে রুদ্র।কিন্তু কখন যে চোখটা লেগে এসেছে টের পেল না।যখন ওর ঘুম ভাঙলো তখন ও বুঝলো কেউ একজন তার চুল ধরে টানছে আর চিৎকার করছে।কি বলছে বা কি হচ্ছে প্রথমে না বুঝলেও কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো যখন চিৎকারের শব্দ স্পষ্ট হয়ে কানে আসলো।এ মেঘলা ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না।তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে ওঠে বসলো।রুদ্রকে দরফরিয়ে উঠতে দেখে মেঘলা ওর চুল ছেড়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়ছে।রুদ্র কিছু বুঝতে পারছে না এত রাগ কেনো করছে।সেতো সময়মতো যেতই।আগে আগেই বাসায় আসার কি দরকার আর এসেছে ভালো কথা ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা করার কি মানে??ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সব মাথার উপর দিয়ে গেলো।এখনো বুঝতে পারছে না এত রেগে গেল কেনো মেঘলা!

তুই পরে পরে এইখানে মহিষের মত ঘুমাচ্ছিস আর আমি তোর অপেক্ষায় বসে আছি??কোমরে হাত দিয়ে প্রায় চিৎকার করে বললো মেঘলা।
রুদ্র ঘুম ঘুম চোখে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘলার দিকে।একদম পুরো গিন্নি।তার মাও মাঝে মাঝেই ওকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে বকে।তবে মেঘলার মধ্যে কিছু একটা আছে যা ওকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
একদম আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি না।
রুদ্র লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।কি যে হয় ইদানিং ওর।
তোর কি আমার কথা কানে যায় না?
যায় তো।
তাহলে তোকে যে আসতে বলছিলাম আসলি না কেন??
আমি তো যেতাম ই….
একদম মিথ্যা বলবি না।
কি মিথ্যা বললাম সত্যি যেতাম।
সেটা কখন??
এই বিকেলে…
আচ্ছা..বিকেল কখন হয়?
আসর এর পর।রোদ পড়ে এলে।
রোদ পড়ে এলে নাকি সূর্য ডুবার পরে??
তোর মাথা গেছে কি সব বলিস না..
এখন কয়টা বাজে একবার দেখতো…..
মেঘলার কথা শেষ হওয়ার আগেই চারপাশ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো।
শুনতে পাচ্ছিস আযান দিয়ে দিছে।
আসরের আযান দিছে।আমি নামাজ পড়েই বের হতাম।
আজ্ঞে না,এখন মাগরিবের আযান দিচ্ছে।
কি??
জি….
মা আমাকে ডাকলো না কেন এতক্ষণ ঘুমিয়ে আছি।
ডাকবে কিভাবে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমালে।
তুই একটু বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
আমার হাতে এত সময় নেই বাসায় যেতে হবে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
তোর সে চিন্তা করতে হবে না,ট্রে হাতে রেহানা মাহমুদ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।
আণ্টি আযান দিয়ে দিছে বাবা বকবে দেরি করলে।
আমি তোর মাকে ফোন করে বলে দিছি আজকে তো এক্সাম শেষ তাই তুই কিছুক্ষণ আমাদের বাড়ি থাকলে যেনো তোর বাবা না বকে।আর তোর মাও বলছে তোর বাবাকে বুঝিয়ে বলবে।
You are great aunty…রেহানা মাহমুদ এর গলা জড়িয়ে মেঘলা বলল।
রেহানা মাহমুদও মেঘলাকে জড়িয়ে আদর করলেন।এখন তো আদর খাওয়ার সময় না মা নামাজ পড়তে হবে।
আসলে আণ্টি একটু প্রবলেম ছিল…
ঠিক আছে আর বলতে হবে না বুঝেছি।
মেঘলা স্মিত হাসলো।মায়েরা এমনই একটু বললে বাকিটাও বুঝে যায়।সব ব্যাপারেই।
তুই ড্রয়িং এ বসে নাস্তা শেষ কর।পুরোটা খেতে হবে কিন্তু।
তুমি না বললেও আমি পুরোটা খাবো।
পাগলী মেয়ে আমার বলেই রেহানা মাহমুদ চলে গেলেন নামাজ পড়তে।

রুদ্র ওদের কথার মাঝেই ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো।রুদ্র আজ ঘরেই নামাজ পড়বে।
মেঘলা উঠে ড্রয়িং রুমে বসল।আণ্টি এত ভালো চা বানায় মেঘলা রুদ্রর চা টাও খেয়ে নিল।

রুদ্র নামাজ পড়ে এসে দেখে চায়ের কাপ,স্নেক্স,কেক সব কিছু খাওয়া শেষ মেঘলা।ওর মায়ের হাতের রান্না বরাবরই মেঘলার পছন্দ।তবুও মেঘলাকে পিঞ্চ করার জন্য বলল,
তুই এমন রাক্ষসী!!এক কাপ চাও রাখলি না পর্যন্ত??
এই একদম আমার খাওয়ার দিকে নজর দিবি না,বলে কেকের লাস্ট পিছ মুখে পুরলো মেঘলা।
ঠিক আছে,ঠিক আছে।
কিচ্ছু ঠিক নেই।তুই কি বললি আমাকে??আবার বল।
তুই যেটা শুনেছিস সেটাই বলেছি।রাক্ষসী….
আমি রাক্ষসী…আমি…
হ্যাঁ,কোনো সন্দেহ আছে??
আণ্টি… ও আণ্টি….,(চিৎকার করে)
এই মাকে ডাকছিস কেনো??
দেখ না কি মজা দেখাই তোকে…আমাকে রাক্ষসী বলা আমাকে??
যা আর বলবো না।
এখন যখন বলেছিস তখন তো শাস্তি পেতে হবেই।আণ্টিইইই………..
রুদ্র মেঘলার মুখ চেপে ধরলো,
এমন করিস না।মা খুব রেগে যাবে।
উমমমম…..
কি সব সাউন্ড করছিস কথা বলতে পারিস না??
রুদ্রর পায়ে জোরে একটা লাথি দিতেই মেঘলার মুখ ছেড়ে দিয়ে,ব্যাথায় আউচ করে উঠলো।
কিরে কথা বলতে পারিস না?কি সব আউচ ফাউচ শব্দ করিস??
Revenge???
আমিও দেখে নিবো??
হ্যাঁ হ্যাঁ দেখ আমিও আন্টিকে ডাকি..আন……..
না না ডাকিস না।আর হবে না।
ঠিক তো?
একদম পাক্কা।
যা ছেড়ে দিলাম।
কি যেনো বলবি??
এত তাড়া কিসের??
তাড়া কই দিলাম??তুই ধীরে সুস্থে আস্তে আস্তে বল।
Huh… তোর এইসব পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে না।
তো বলিস না।
বেশি ইম্পর্ট্যান্ট না হলে না তোকে বলতামই না।
ঠিক আছে বলা লাগবে না।
একদম ভাব নিবি না।ছাদে চল।
ছাদে কেন??
আহা চল না…
ঠিক আছে চল।
দাড়া দাড়া…
আবার কি হলো….
রুদ্রকে চোখ মেরে চিৎকার করে বললো,আণ্টি পকোড়া কি আর কিছু অবশিষ্ট আছে??উত্তরের অপেক্ষা না করে রান্নাঘরে চলে গেল মেঘলা।
মেঘলার ডাক শুনেই রেহানা মাহমুদ পকোড়ার পুরো ডিসটাই বের করে রাখলেন।মেঘলা আসতেই সেটা ওর হাতে দিয়ে বললেন,পুরোটাই তোর।খেতে খেতে গল্প কর।
মেঘলা এক গাল হেসে ডিস নিয়ে বেরিয়ে এলো।
এইজন্যই বলছি তুই একটা রাক্ষ……..
আণ্টি…
না না কিছু না চল চল…
মেঘলা একটা বিটকেল মার্কা হাসি দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

রান্নাঘরে কাজ করতে করতে ওদের সব কথাই শুনলেন রেহানা মাহমুদ।সারাক্ষণ ওদের ঝগড়া লেগেই থাকে।তবুও ছেলে মেয়ে দুটিকে দেখলে এত ভালো লাগে।আর মেঘলা মেয়েটা…আমার পেটের মেয়ে না হলে কি হবে তারচেয়েও বেশি কিছু।বড্ড মায়া লাগে।দেখলেই মনটা ভরে যায়।কি মিশুকে চঞ্চল মেয়ে।যখনই আসে বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখে।ভালো না বেসে পারা যায় না।আপন মনে এইসব ভাবছেন আর রান্না করছেন রেহেনা মাহমুদ।তিনি যদি পারতেন তাহলে মেঘলাকে নিজের কাছেই রেখে দিতেন।তবে তাতো আর তিনি চাইলেন পারবেন না।মেঘলার মত একটা মেয়ে যদি থাকতো….কত ভালোই না হতো……মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রেহানা মাহমুদ।

চলবে…….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বেতাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here