#বেলাদোনা (১৯)
#ফাতেমা_তুজ
বাংলার হাওয়া মন প্রাণ জুড়ে মেখে চলেছে ইথান। শহর থেকে অনেক টা দূরে এসে গাড়ি পার্কিং করেছে। এ অঞ্চলে নেই বড় বড় দালান। আছে শুধু কয়েক টা বড় ছোট খুপরি ঘর। বোধহয় জেলে দের আস্তানা। সামনেই নদী। টলমল করছে জল। ইথানের চোখ দুটো খোলা। বড় বড় চোখের পাপড়ি গুলো থেকে থেকে নড়ে। দারুণ লাগে ওকে। রূপে গুনে অন্যান্য শুধু নারী রাই নয় পুরুষ রা ও হয় এর জ্বলন্ত উদারণ ইথান। বুকে হাত গুজে গোপন করে নিশ্বাস। ফোন বেজে চলেছে সমান তালে। হাতের র’ক্ত হাতেই শুকিয়ে গেছে। তরল গুলো আঠালো আকারে পরিণত। শরীরের ব্যথা ভুলে গেছে। মনে হচ্ছে প্রাণ নেই ধরে। ফোন রিসিভ করলো এবার।
” বলো রবার্ট। ”
” কোথায় চলে গেছো তুমি? ”
” জানি না। ”
” লোকেশন বলো। ”
” আমার সামনে বিশাল এক গাছ। নেটে দেখেছিলাম এ গাছের নাম বট। পেছনে নদী। সামনে ছোট ছোট ঘর। ডান পাশে ধান ক্ষেত। ”
” এটা কেমন লোকেশন! জায়গার নাম বলো প্লিজ। ”
রবার্ট কে লোকেশন না পাঠিয়েই কল কেটে দিলো ইথান। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো মাঝ রাত্রি অব্দি।
শুনশান পরিবেশে বেলার অস্বস্তি হচ্ছে খুব। মেয়েটার শরীর থেকে চন্দন কাঠের সুভাস আসে। সেই সুভাসে ইথানের শরীর শিহরিত। মেয়েটির হাত চেপে ধরে খুব নরম ভাবে। বেলা ঝটকা মেরে সরে আসে। এতে বিন্দু মাত্র হেলদোল নেই। সে জানে এখনি বেলা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বেলে উঠবে
” স্পর্শ করবেন না আমায়। আপনার মতো নিজ মানুষের সাথে কোনো স্বক্ষতা নেই আমার। ”
” মন থেকে বলছো? ”
” না বলার তো কিছু নেই। যে ব্যক্তি আমাকে মা’রতে চায় তাকে কেন আমি বন্ধুর মতো মনে করবো। আপনি তো আমার শত্রু। ”
” হ্যাঁ সেটাই তো। তোমার এক মাত্র শত্রু আমি। ”
কাছে এগোয় বেলা। ইথানের কলার চেপে ধরে। রগে রগ জেগে উঠেছে মেয়ে টির। বাঘিনীর মতো করে বলে উঠো–
” কেন এসেছেন এখানে? মা’রবেন, তো মে’রে ফেলুন। এতো ঝামেলা আমি নিতে পারছি না আর। ”
ইথান নিশ্চুপ। বেলার চোখ দুটো ভরে গেছে মুক্ত দানার মতো জলে। কলার চেপে ধরেই বুকে মাথা গুজে দেয়। ইথান চুপচাপ। মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। বেলা চোখের জল মুছে হাতের তালু তে।
” মে’রে ফেললে এখুনি মা’রুণ। না হলে পরে সময় পাবেন না আর। ”
” ফিরে যাও। ”
” কেন মা’রবেন না আমায়? ”
” সোজা হোটলে ফিরে যাও। ”
” তবে কেন তুলে নিয়ে এসেছেন? ”
” যা বলি চুপচাপ শোনো। ”
শেষের কথা টা এতো টাই জোরে বলে যে ভরকে যায় বেলা। এক সেকেন্ড দেড়ি না করে চলে যায়। ইথান তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টি তে। চোখ মুখ কঠোর। রাগে নাকের পাটা লাল। কেউ যেন লাল রঙ দিয়ে রঙ তুলি এঁকেছে।
সারা রাত এপাশ ওপাশ করে গেছে শাফায়াত। ছেলে টা পরিশ্রমি। এই যে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করেই বেরিয়ে ছিলো কাজে। বাবার বিজনেস এর ছোট এক অংশের দায় ভার ওর উপর। ভালোই সফলতা এসেছে। তবে শেষ রাত্রি তে এসে শাফায়াতের ঘুম হারাম। সকাল সকাল বেলার রুমের করিডোরে এসে হাজির। বেলা আট টায় ঘুম ভেঙেছে মেয়ে টির।শাফায়াত কে দেখে অবাক ই হলো।
” সকাল সকাল তুমি এলে যে? কোনো সমস্যা হয়েছে শাফায়াত? ”
” কিছু প্রশ্ন ছিলো বেলা। ”
ভ্রু কুঁচকে বেলা বলল–
” হ্যাঁ বলো না। ”
” এখানে না বাহিরে। ”
মাথায় স্কাফ টেনে শাফায়াতের সাথে এলো বেলা। দুজনের মাঝে বিরাজ করছে বিচলিত ভাব। হোটেল থেকে বেরিয়ে বেলা বলল–
” এবার তো বলো। ”
” কাল রাতে এক টা ছেলে ছিলো তোমার সাথে। ঠিক এখান টায় দাঁড়িয়ে ছিলে তোমরা। ”
” আসলে– ”
” হ্যাঁ আর না? ”
” হুম। ”
” তাকে ভালোবাসো? ”
বেলার চোখে বিস্ময়। শাফায়াত অপেক্ষা করছে উত্তরের।
” প্লিজ বেলা বলো আমায়। ”
” না বাসি না। ”
শীতল হলো শাফায়াতের চোখ। বেলার বাহু তে ধরে বলল–
” আমি দেড়ি করতে চাই না বেলা। আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। প্রথম দিন থেকে ভালোবাসি। ”
” শাফায়াত। ”
” জোর নেই শুধু বলবো পারলে ভেবো দেখো। ”
দ্বিধা নিয়ে শাফায়াতের হাত ধরলো বেলা। চোখ বন্ধ করে বলল–
” আমি রাজি। ”
ভিডিও ফুটেজ টা এই নিয়ে আটাশ বার প্লে করেছে ইথান। শাফায়াত আর বেলা একে অপরের হাত ধরে আছে। এখানেই সমাপ্তি এই ফুটেজের। সন্ধ্যায় এই ফুটেজ টা পাঠিয়েছে ইথানের লোক। এখন রাত প্রায় দশ টা। পুরো সময় জুড়ে পালন করেছে স্বঘোষিত কথার নিষেধাজ্ঞা। ত্রস্ত পায়ে উঠে পরলো। হাতের রিমোট টা ফেলে রাখলো ডিভানে। ঘুম প্রয়োজন। ক্লান্তি তে চোখ বন্ধ হয়ে গেল মুহূর্তেই।
শাফায়াতের সাথে সম্পর্ক হলো আজ দুদিন। এর ই মাঝে এমন খবর শুনতে হবে তা যেন ছিলো কল্পলোকের বাহির। শাফায়াত নিজে ও হতভাগ। বেলার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝালো ” আমি কিছুই জানি না। ”
চিন্তিত দেখালো বেলা কে। জুলফিকার সাহেব ছেলের দিকে নজর দিলেন। হাজার হোক ছেলের মতামত জানা জরুরি।
” তুমি কি বলো শাফায়াত? বেলা কে বিয়ে করতে কোনো অসুবিধা? ”
” আসলে বাবা। ”
” ছোট করে বলো। হ্যাঁ বা না। ”
নিরুপায় দেখাচ্ছে শাফায়াত কে। সাহায্যের জন্য বেলার দিকে তাকালো। মেয়েটির দু চোখ নিবদ্ধ চকচকে সাদা মেঝের মধ্য ভাগে। একাই সিদ্ধান্ত নিলো।
” আমার কোনো সমস্যা নেই বাবা। ”
” আলহামদুলিল্লাহ্। বেলা তোমার কি মতামত। ”
দোটানায় রয়েছে বেলা। সহজ করতে স্মিথ কাছে এলেন। চোখ দুটো বড্ড মায়াবী দেখালো। মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন তিনি। বললেন
” তোমার মা চেয়েছেন সব সময় মুসলিম ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। শাফায়াত কে কোনো অংশে কম মনে হয় না। আমার মনে হয় তুমি ভাবতে পারো।”
” হু সেটাই। বেলা তুমি সময় নিয়ে জানিয়ে আমাদের। ”
জুলফিকার সাহেব এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনি ঝটপট উত্তর করলো বেলা।
” আমার কোনো সমস্যা নেই আঙ্কেল। ”
সকলের চোখে খুশির মেলা। রিমা বেগম সকলের মুখের পানে তাকালেন। যখন বুঝতে পারলেন বেলা রাজি তখন জাপটে ধরলেন বুকে। বেলার কপালে চুম্বন করে নিলেন কয়েক বার।
” আমার সোনা মা। ”
কথা শেষ করে জ্বিভ কাটলেন। বললেন
” এই শাফায়াতের বাবা। এর ইংরেজি কি হবে গো? ”
” আন্টি আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলেছেন। ”
বেলার গলায় স্পষ্ট বাংলা শব্দ। সকলেই হা হয়ে গেল। শাফায়াত মাথা চুলকিয়ে বলল–
” আমি ওকে বাংলা শিখাচ্ছি। ”
বেলার ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে আছে শাফায়াত। ছেলেটার দেহের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। বেশ অন্যরকম লাগছে। অনুভূতি গুলো গলায় এসে আটকে যায়।
” বেলা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা প্ল্যান করি চলো। ”
” এখন? ”
” হু। ”
” এতো দ্রুত প্ল্যান করে কেউ? ”
” কি যে বলো তুমি। আমাদের এখানে তো অনলাইন রিলেশনে ও বাচ্চার নাম ঠিক করে ফেলে। আর আমাদের তো বিয়ে ঠিক। ”
শাফায়াতের কথায় হেসে কুটি কুটি বেলা। এমন টা ও হয় বুঝি? মানুষ এতো টা ভেবে ফেলে! নিশ্বাস যেখানে নিশ্চিত না সেখানে আবার বাচ্চার নাম।
চন্দ্র বিলাসের মাঝে বেলার ফোন বেজে উঠলো। শাফায়াতের চোখে ঘুম। বার বার টলে আসে। সে উঠে পরলো। বেলা ফোন এর স্ক্রিনে তাকিয়ে কল কাটলো। এটা যে ইথান তা বেশ বুঝতে পেরেছে। ফোন সুইচ অফ করবে তখনি একটা ম্যাসেজ এলো।
” পিক আপ দ্যা ফোন। আদার ওয়াইস…”
বেলা চটজলদি ম্যাসেজ লিখলো–
” আদার ওয়াইস কি? ”
” আদার ওয়াইস আই উইল কিস ইউ। ”
হাত থেকে ফোন পরে গেল বেলার।কানের কাছ থেকে আসে গরম নিশ্বাস। ইথানের উপস্থিতি অনুভব হয়েছে। ছেলেটা একদম গাল ঘেষে। ক্লিন সেভ করা মসৃণ গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। বেলার গালে ঘষা দিতেই ককিয়ে উঠে বেলা।
” উহহ ব্যথা পাই। ”
” ব্যথা পাওয়ার জন্যই তো দিয়েছি মিস বেলাদোনা। ”
” ছাড়ুন আমায়। ”
” ছেড়ে দিবে? ”
” ছাড়ুন বলছি। ”
” ওকে। ”
বেলার হাত ছাড়ার বদলে শক্ত করে চেপে ধরলো ইথান। পেছন থেকে ঘুরিয়ে একদম ছাদের কর্নারে নিয়ে এলো। এক হাতে বেলার হাত টা আলগা করে ধরে বলল–
” ছেড়ে দেই এবার? ”
ঝুকে আছে বেলা। দোতলা ছাদ থেকে পরলে মৃত্যু হবে নিশ্চিত। ভয়ে আতঙ্কে ঘাম ঝরছে মেয়েটির সর্বাঙ্গে। ইথান ভ্রু কুচকে থেকে একটু ঝুকলো। বেলার টলটলে চোখের কোন বেয়ে নেমে আসা পানি টুকু শুষে নিলো অধরে। বেলার চোখ তখন বড় বড়। ইথানের শুষ্ক ঠোঁট বেলার কম্পমান ঠোঁট বরাবর। বেলা স্তম্ভিত হয়ে কথা হারিয়ে ফেললো। দুজনের অধরের দূরত্ব এখন কয়েক সেন্টিমিটার।
** খুব কষ্ট করে লিখলাম। নিজের ফোন না থাকলে যা হয়। পাঠক রা গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। **
চলবে