বেলাদোনা (২৫)

0
622

#বেলাদোনা (২৫)
#ফাতেমা_তুজ

বেলার বিয়ে টা যেন একটা রহস্য। এই যে তিন মাস আগে বিয়ের দুদিন আগে বিয়ে ভাঙলো আজ ঠিক তিন মাস পরে এসে প্রায় তেমন ই দৃশ্য। বেলার বিয়ে ভেঙেছে তবে ইথানের সাথে হয়েছে। শাফায়াত কে কোথাও পাওয়া গেল না। ইথানের অধরে তৃপ্তির হাসি। স্মিথ আর জুলফিকার সহ রিমা বেগমের হদিস নেই। সবাই যেন এক একটা গুহায় লুকিয়ে। বেলা হন্তদন্ত হয়ে আসলো। ইথান ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বেলার গালে হাত রাখলো। বেলার তো খুশি হওয়ার কথা তবে বেলা খুশি নয়। মাথায় আজ স্কাফ নেই। চুলের খোপায় লাল রঙের কিছু ফুল গোজা। ইথান এক বার ডাকলো তবে সাড়া দিলো না বেলা। শাড়ির আঁচল মেলে ছুটতে লাগল। অনেক টাই সম্মানিত লেখক স্যার শরৎচন্দ্রের দেবদাস উপন্যাসের মতো। পারু যেমন করে ছুটছিলো ঠিক তেমন করেই ছুটছে বেলা। নিশ্বাস গুলো চারপাশে ছন্দ তুলে। ইথান চুপচাপ থেকে ফোন বের করে। এই কাজ টা করতে তাকে অনেক প্ল্যান করতে হয়েছে সত্য। তবে শেষ দিকে এসে পাখি যেন নিজ থেকেই ধরা দিলো। বড়ই চিন্তা জনক ব্যাপার। তবে সেসব চিন্তা এখন আমলে নিতে চায় না সে। বুলেটের বুকের সাথে বুক মিশিয়ে হাসলো।
” দীর্ঘদিন ঘুমাই না। এবার একটু ঘুম এর প্রয়োজন। ”

” ব্যবস্থা করি তবে? ”

” অবশ্যই। ”

” আর বেলার কি করবো? ”

” তাকে ঘুরতে দাও। ঘুরে ফিরে আমার কাছেই আসবে। তবে দেখে রেখো, ফুলের টোকা ও যেন না লাগে। মাইন্ড ইট আমার প্রাণ পাখি সে। ”

বুলেট গা দুলিয়ে হাসলো। ইথান কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে। বেলা কে যেতে দেখে কেমন যেন আনন্দ হয়। বুলেট এবার বোম ফাটায়–
” বাসর করবে না ইথান? ”

” আজকের দিন টা থাক, তারপর না হয় শুরু হবে। ”

” বড় পাগল ছেলে তুমি। ”

” আর তুমি আমার পাগলাটে সঙ্গী। ”

পুরো এলাকায় ছুটছে বেলা। কোথাও কারো চিহ্ন নেই। বেলা ভেবে পায় না কি থেকে কি হয়ে গেল। শাফায়াতের সাথে সকালে ও কথা হলো। সেই ছেলেটা ও এখন নিখোঁজ! পুরো দুই ঘন্টা ঘুরে বাড়ি ফিরে বেলা। ইথান তখন ঘুমোচ্ছে। বেলার চোখ দুটো নিষ্প্রাণ। ইথান হঠাৎ জেগে উঠে। বেলা কে কাছে ডাকে। বেলা বলে–
” সবাই কোথায়? ”

” কি বলছো এসব! স্বামী স্ত্রীর ঘরে অন্য কেউ থাকবে কেন? ”

” একদম মজা না। আপনি কি করেছেন ওদের সাথে। ”

” রেগে যাচ্ছো কেন বেলা। ”

” আপনাকে আমার ঠিক লাগছে না ইথান। আপনি এমন কেন বলেন তো? ”

ফিচেল হাসে ইথান। একটু কাছে এসে বেলার কপালে শুষ্ক অধর ছোয়ায়।
” বলেন না সবাই কোথায়। ”

” সবাই ঠিক আছে বেলা। শুধু একটু সময় নিয়েছিলাম তাদের থেকে। ”

” আপনি মিথ্যে বলছেন। ”

” এখনো অবিশ্বাস করো আমায়? ”

” আমি আসলে –”

” আচ্ছা আসো, আমি সবার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। কারো গায়ে একটা আঁচড় ও পরে নি। শুধু তোমায় নিজের করে নিতে আমি গুম করেছি সবাই কে। ”

বেলার চোখ শীতল হলো। ইথানের সাথে বেরিয়ে এলো। বাসা থেকে এক মাইল দূরে এক টা বাড়ি। সেখানেই সবাই আছে আর অক্ষত ও আছে। বেলা স্বস্তি পেল। শুধু শুধু ইথান কে ভুল বুঝেছিলো।

” ওদের সাথে দেখা করবে না বেলা? ”

” হ্যাঁ। কিন্তু ওরা কি আদৌ মেনে নিবে আমাদের? ”

” কেন নিবে না। আসো আমার সাথে। ”

বেলা একটু থমকে দাড়ালো। ইথান মৃদু হেসে বেলার কপালে কপাল ঠেকালো। তারপর বলল–
” দুঃখিত বেলা। আমি আবার তোমায় মিথ্যে বলেছিলাম। ”

” মিথ্যে কি মিথ্যে? ”

” আমি কিন্তু আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। আমায় কিন্তু মাফ করতে হবে। ”

” আগে বলেন কি করেছেন। ”

” আরে বাবা কিছু করি নি। শুধু একটু লুকোচুরি করেছি। ”

বেলার চোখে ভয় যোগ হলো। ইথান মুখ টিপে হাসছে। তখনি বুলেট এসে বেলার নিকটস্থ হলো। লম্বা করে সালাম দিয়ে বলল–
” মানুষ ভালোবাসার জন্য কত কিই না করে। ইথান সত্যিই তোমায় খুব বেশিই ভালোবাসে বেলা। ”

” হুম। কিন্তু — ”

” বাকি টা আমি বলছি আসো। ”

বেঞ্চে বসানো হয় বেলা কে। বুলেট কে ইশারায় সবাই কে নিয়ে আসতে বলে। বেলা চুপচাপ থাকতে পারছে না। বার বার প্রশ্ন করছে ইথান তাকে কি মিথ্যে বলেছে।
ইথান বেলার অধৈর্য হওয়া দেখে হাসলো। আলতো করে নাক স্পর্শ করে বলল‍–
” বলছি বাবা। ”

” বলেন না। ”

” কালকের ঘটনা। তোমার হলুদ ছোঁয়ার পর পর ই তোমার আড়ালে আমি সকলের কাছে উপস্থিত হই। সকল কে বোঝানোর চেষ্টা করি। যুক্তি দিয়ে বুঝাই আমি তোমায় ভালোবাসি। প্রথমে জুলফিকার আঙ্কেল রাজি হচ্ছিলেন না। পরে তিনি রাজি হয়ে যান। আর হেবা আন্টি ও বুঝতে পারেন সব টা। সর্বশেষ তিনি ও সম্মতি দেন এই বিয়ে তে। সব থেকে বেশি হেল্প করেছে শাফায়াত। আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। তোমার থেকে লুকিয়েছিলাম শুধু তোমাকে চমক দেওয়ার ছোট ইচ্ছে থেকে। সত্যি বলছি শুধু তোমায় সারপ্রাইজড করার জন্য এমন টা করেছি। প্লিজ মাফ করে দাও আমায়। ”

হতবাক হয়ে রইলো বেলা। উত্তর দেওয়ার আগেই সকলে উপস্থিত হলো। বেলা আলগা পায়ে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর রিমা বেগমের কাছে গেল। ভদ্রমহিলা মুখ চেপে কান্না করছেন। বেলা আলতো হাতে স্পর্শ করলো।
” আন্টি কষ্ট পেয়েছেন? ”

” না রে মা। আমি যে তোকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমার ছেলের বউ নাই বা হলি আমার মেয়ে তো থাকবি সব সময়। ”

” সব সময় থাকবো আন্টি। ”

বেলা দেখলো একটু দূরে হেবা দাঁড়িয়ে। চোখ ছলছল করে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরলো। হেবা শীতল কন্ঠে বলল
” আমি বোধহয় ভালো মা না ফ্লাওয়ার। ”

” কেন এমন বলছো তুমি। ”

” এই যে তোমার সাথে জোর করেছি আমি। ধর্মের জন্য বার বার নানান চাপ দিয়েছি। এমন কি — ”

” থাক না মা। আমি পুরনো কথা মনে করতে চাই না। আর আমি ইসলাম কে সম্মান করি। খুব সুন্দর এটা। ”

” ধন্যবাদ ফ্লাওয়ার। ইথান তোমায় সত্যিই খুব ভালোবাসে। ”

বেলা ঠোঁট ছড়ালো। ইথান বুকে হাত গুজে দিয়ে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে যে ভাষা হারিয়ে ফেললো।হেবা ইথানের হাত আর বেলার হাত এক করে দিয়ে বলল–
” সুখী হও এই প্রার্থনা। ”

” দেখলেন মিসেস সবাই কে কেমন রাজি করিয়ে ফেলেছি। ”

” বড় কাজের কাজ করেছেন। তখন তো আমায় ভয় ই পাইয়ে দিয়েছিলেন। আমি তো ভেবেছিলাম– ”

” কি ভেবেছিলে? তোমার ইথান আবার খারাপ হয়ে গেছে তাই না। ”

” উহু আপনি খারাপ নন। ”

” আমি ভালোবাসি বেলা। ”

” আমি ও বাসি। ”

” উহু বলো ইথান আপনাকে ভালোবাসি। ”

” বয়েই গেছে আমার। এতো তামাশা করে বল‍তে পারবো না। ”

” বাংলা সিরিয়াল দেখে শিখোছো এসব তাই না? ওকে এবার এই বাংলা বর কে দেখবে। ”

হেসে উঠলো বেলা। হঠাৎ করেই এতো টা সময় পর শাফায়াত এর কথা স্মরণে এলো। বেলা বলল–
” শাফায়াত? ”

” সেটাই তো। আমাদের দুজনের হাত মিলিয়ে কোথায় গেল ছেলেটা। ”

রিমা বেগম এগিয়ে এলেন। তিনি জানালেন শাফায়াত তাকে এই মুহুর্তেই কল করেছিলো। সে নাকি কোনো এক বন্ধুর বাসায় আছে। বেলা শ্বাস ফেললো। ইথান এবার বেলার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসলো। বেলা বলল–
” দূরে থাকেন। ”

” বললেই হলো। এতো কষ্ট করে তোমায় পেয়েছি। ”

” আর আমি বুঝি কষ্ট করি নি? ”

” হু হু করেছো তো। তুমি আমার সব থেকে প্রিয় ফুল বেলা। আমার মাথার মনি বেলাদোনা। ”

” আচ্ছা। ”

” হু বেলা। কতো দিন মনে হয়েছে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলবো। কতো দিন তোমাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি তার হিসেব রাখা হয় নি। যদি রাখতাম তাহলে তোমায় দেখাতে পারতাম। ”

বাসর সাজানো হয় নি আজ। আগামী কাল ইউ এস এ ব্যাক করবে আর তারপর নাকি বাসর সাজানো হবে। এই দিন নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো বেলার। হয়তো তা পূরণ হয়েছে তবে কেমন যেন তিক্ত এর স্বাদ। ইথান গার্ডেনে কার্ড খেলার আয়োজন করলো। বেলার সাথে কার্ড খেলার ইচ্ছে হয়েছে নাকি। বেলা বসলো এক পাশে আর অপর পাশে বসলো ইথান। কার্ড খেলা শুরু হলো। ইথান খুব ভালো খেলোয়ার। প্রথম বার জিতে গেল। বেলা তখন মুখ গোমড়া করলো। ইথান বলল
” আরেক টা হয়ে যাক? ”

” ওকে। ”

আবার শুরু হলো খেলা। তবে এবার হেরে গেল ইথান। ইচ্ছাকৃ হারা। বেলা লাফিয়ে উঠলো যেন। ইথান মৃদু হেসে বলল–
” কাল এর শোধ নিবো। ”

” শোধ তো আমি নিবো এবার। ”

বেলার কথা কেমন ঠেকলো ইথানের। বেলা হেসে বলল–
” আপনার শোধের শোধ। ”

” দুষ্টু হয়ে গেছো তুমি? ”

” একটু একটু। ”

” তাহলে আমি এবার একটু দুষ্টুমি করি। ”

টুপ করে বেলার গালে চুমু খায় ইথান। এতে অবশ্য বেলার রাগ কিংবা লজ্জা হয় না। সে নির্লিপ্ত ভাবে ইথান কে দেখে শুধু। ঠিক কতো টা নিষ্পাপ লাগে এই মুখ টা। তবে আদৌ কি নিষ্পাপ নাকি এর পেছনেই লুকিয়ে আছে পাপের থেকে ও বড় পাপ? কি হতে চলেছে এবার বেলার জীবনে?

[ প্রথম খন্ডের সমাপ্তি ]

গল্প কিন্তু শেষ না। এর দ্বিতীয় খন্ড আসবে। ঠিক এই পার্ট এর পরের পার্ট থেকেই শুরু হবে। যেখানে পেয়ে যাবেন সব রহস্যের সমাধান। তবে কাল থেকে আসবে নতুন গল্প ইনশাআল্লাহ। সবাই সাপোর্ট করবেন। আর বেলার জীবনে কি হতে চলেছে এর জন্য করতে হবে দ্বিতীয় খন্ডের অপেক্ষা।

গ্রুপ : Fatema’s story discussion
পার্সোনাল আইডি : https://www.facebook.com/fatema.tuz.9469

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here