মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২

0
728

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২

মেঘলার মুখে জমে থাকা পানির ফোঁটায়,কাপা কাপা ঠোট দুটো থেকে চোখ সরাতেই পারছে না।ভিজে যাওয়া কাপড় গায়ের সাথে জুবুথুবুভাবে লেপ্টে আছে।মেঘলা খুব অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে যেনো নেশা ধরে যায়।রুদ্রকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘলা কিছুটা অসস্তিতে পড়লো আবার লজ্জাও পাচ্ছে।কখনোতো রুদ্র ওর দিকে ওভাবে তাকায় না।তবে আজ কি হলো?

মেঘলা কাপা কাপা গলায় বলল,কিরে ওভাবে কি দেখছিস জীবনে আমাকে দেখিসনি,মনে হচ্ছে গিলে খাবি??রুদ্র খুব লজ্জা পেলো।দ্রুত চোখ ফিরিয়ে বলল,দেখছি একটা মানুষ কতটা গাঁধী হলে মাঘ মাসের বৃষ্টিতে ভিজতে পারে!!কথায় কথায় আমাকে একদম গাঁধী বলবি না।গাঁধী বললে কি করবি?বলেই দেখ কি করি?তখনই গেট খুলে দিল মমতা হাসান।দুইজনের গলার আওয়াজ পেয়ে তিনি গেট খুলে দিয়েছেন।তিনি মেঘলার অবস্থা দেখে খুব রেগে গেলেন।চিৎকার করে যেই মেঘলাকে বকতে যাবেন তখনই রুদ্র আটকালো।সেই সুযোগে মেঘলা দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।আর রুদ্রকে মমতা হাসান বসার ঘরে বসিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন।গরম গরম দুই কাপ কফি নিয়ে এলেন।মমতা হাসান খুব ভালো কফি বানান।খেতে একটু বেশি মিষ্টি হলেও অসাধারন বানান তিনি কফিটা।বিশেষ করে রুদ্র এলে তিনি এই কফি টা সবসময়ই বানান রুদ্র পছন্দ করে বলে।তিনি কফি খেতে খেতে রুদ্রর সাথে টুকটাক কথা বলছে।ওর মায়ের খোজখবর নিচ্ছেন।

রুদ্র তৃপ্তি নিয়ে কাপে শেষ চুমুক দিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই আবার ধাক্কা মত খেলো।মেঘলা একটা ভারী শাল গায়ে চাপা দিয়ে গুটিগুটি করে এগিয়ে আসছে।মাথায় এখনো তোয়ালে পেঁচানো।রুদ্র আবার থমকে গেল।মেঘলা ওর চোখের সামনে এসে তুরি বাজাতেই ও চোখ সরিয়ে দেখলো মেঘলার মা নেই।এতে যেনো কিছুটা সস্তি পেলো তবে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আবার লজ্জা পেল।আজ মেঘলাকে তো নতুন দেখছে না তবে ওর কেনো বারবার এমন হচ্ছে?কেনো বারবার চোখ আটকে যাচ্ছে?হ্যাঁ এইটা ঠিক যে এইভাবে কখনো দেখেনি তাই বলে এমন কেনো হচ্ছে ওর?মেঘলা এইবার ওর কাঁধে হালকা হাতে ধাক্কা দিল,কিরে কি হইছে তোর?কি হবে আমার?কই হারাইয়া যাস,কি দেখছ?তোকে!নিজের অজান্তেই কথাটা বের হতেই রুদ্র থতমত খেয়ে গেল।মেঘলা চোখ ছোট ছোট করে আমাকে দেখার কি আছে,নতুন দেখছিস?রুদ্র এইবার নিজেকে সামলে খুব ভেবে উত্তর দিলো,তোর মত গাঁধীতো সচরাচর দেখা যায় না আর বলা তো যায় না এইরকম বিরল প্রজাতির একটা গাঁধীর খোঁজ পেয়ে হয়তো চিড়িয়াখানার লোকেরা এসে তোকে নিয়ে গেলে টাকা খরচ করে দেখার চেয়ে এখনই দেখে নিচ্ছি!!রুদ্র মেঘলার দিকে না তাকিয়ে হাসতে লাগলো।আর মেঘলা সেতো রাগে পুরো আগুন হয়ে আছে যেনো চোখ ঠিকরে আগুন বের হচ্ছে।প্রচন্ড রেগে যাওয়ায় মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছেনা।মেঘলাকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্র বুঝতে পারলো একটা বিকট শব্দে বাজ পড়তে পারে যেকোনো সময়।তাই কোনো দিকে গেটের দিকে দৌড় দিল আর জোরে বললো,সাবধানে থাকিস যেকোনো সময় চিড়িয়াখানার লোক আসতে পারে।

মেঘলাও তার দিকে রেগে ছুটে যেতেই গেটের কাছাকাছি যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেল।ততক্ষণে রুদ্র গেট পেরিয়ে অনেকদূর চলে গেছে তাহলে কার সাথে ধাক্কা খেল দেখার জন্য উপরে তাকাতেই একটা অচেনা ছেলেকে দেখতে পেলো।ছেলেটা বারবার সরি বলছে কিন্তু মেঘলা সেসব কানেই তুলছেই না যেনো রুদ্রর উপর হাওয়া রাগটা ছেলেটার উপর ঝারছে।ছেলেটা কিছুক্ষণ বুঝানোর চেষ্টা করলো এইটা একটা ইনসিডেন্ট আর এতে তার দোষ নেই উল্টো দিক থেকে দৌড়ে আসায় ধাক্কাটা লেগেছে।কিন্তু মেঘলা তার স্বরেই চেঁচাতে লাগলো।তাই ছেলেটা চুপ করে শুনেই যাচ্ছে তবে তার বেশ লাগছে পুরো ব্যাপারটা।মেঘলা এত জোড়ে চিৎকার করছে যে ওর মাও দোতলার খোলা গেট দিয়ে বসার ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছে।তার এই এক মেয়ের যন্ত্রনায় তিনি সত্যিই অতিষ্ট হয়ে গেছেন।তিনি দ্রুত নিচে নেমে গেলেন।যা ভেবেছেন তাই।চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলের সাথে লেগে পড়েছে।কিছুটা টেনে আনার মত করে মেঘলাকে টেনে সরিয়ে বললেন,কিছু মনে করো না বাবা আমার মেয়েটা একটু অবুঝ।ছেলেটা হেসে বলল,না আণ্টি আমি কিছু মনে করিনি।মেঘলা আবার তেড়ে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মমতা হাসান খুব কড়া একটা ধমক দিলেন।মেঘলা সে শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়ে রাগে গটগট করে উপরে চলে গেল তবে যাওয়ার আগে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে গেলো দেখে নেবে সে।ছেলেটা বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘলার যাওয়ার দিকে।

মমতা হাসান আবার বললেন,কিছু মনে করো না বাবা।না আণ্টি আমি সত্যি কিছু মনে করিনি।মমতা হাসান কিছুটা ভদ্রতা করেই বললেন,এইখানে কার বাসায় এসেছ?ছেলেটা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল,আসলে আমি মুবিন হাসান স্যার এর কাছে এসেছিলাম।মমতা হাসান খুব আগ্রহ নিয়ে বললেন,আমি উনার স্ত্রী আর যে তোমার সাথে চিৎকার করে কথা বলল সে আমাদের মেয়ে।ছেলেটি এগিয়ে এসে সালাম করল।বেচেঁ থাকো বাবা,তা কি মনে করে এলে?এসেছিলাম আমার ছোট বোনকে স্যারের কাছে পড়ানোর ব্যাপারে কথা বলতে।কিন্তু উনিতো প্রাইভেট টিউশন করান না।আমি সেসব জেনেই বাসায় এসেছি আলাদা করে কথা বলার জন্য।আচ্ছা,তবে উনিতো বাসায় নেই।কখন আসবেন?আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে।তাহলে আণ্টি..আণ্টি বলেই ডাকি কিছু মনে না করলে!!না না মনে করার কি আছে বলো।ধন্যবাদ আণ্টি,আজ তবে যাই।সেকি এক কাপ চা খেয়ে যাও।না আণ্টি অন্যদিন।ঠিক আছে..তোমার নামটাও জানা হলো না..আণ্টি আমার নাম সীমান্ত।মমতা হাসান হাসলেন।সীমান্ত বলে ছেলেটি চলে গেল।সেদিকে একবার তাকিয়ে তিনি উপরে উঠে এলেন।

স্কুল এখন বন্ধ।ঘরে বসেই পড়াশুনা করতে হয়।বিকেলে রুদ্র এলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের হতে পারে।এই যেনো মেঘলার শান্তি।এইরকম বন্ধী জীবন আর কতদিন কাটাবে!ভেবেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কবে যে পরীক্ষাটা শেষ হবে তবেই শান্তি।তবে ফেইল করলে আরো ভালো হবে তাহলে আর পড়াশুনা করতে হবে না কি মজাটাই না হবে!!ভাবতেই আনন্দে ওর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।কিন্তু বিপত্তি বাজিয়েছে রুদ্রটা।সে উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে পাশ করানোর জন্য।ছেলেটার ধৈর্য্যও আছে কতভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে।মেঘলার ওর জন্য মায়া হয়।তাই একটু পড়াশুনা এখন করে সে।এখন মেঘলা বসে আছে রুদ্রর জন্য।সেই যে গেল আজ দুইদিন তার আসার আর নাম নেই।আজ যদি না আসে তাহলে ওর বাসায় গিয়ে খোঁজ করবে।

চলবে…….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here