মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:১৪

0
418

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৪

আঙ্কেল আমি একটা কথা বলবো??
যার যা খুশি বলো।শুধু আমার মেয়েটাকে খুঁজে এনে দেও।
আঙ্কেল আপনি শান্ত হয়ে একটু বসেন।
মুবিন হাসান রুদ্রের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসলেন।
তখনই রেহানা মাহমুদ ট্রে হাতে উপস্থিত হলেন।
সেদিকে তাকিয়ে মুবিন হাসান আর্তনাতের সুরে বলে উঠলো,আপা আমার মেয়েটা কি করলো!!একটু বকাঝকাই করা হয়েছে তাই বলে…..
ভাই আপনি এইরকম ভেঙ্গে পড়লে ভাবির কী অবস্থা হবে??
আপনার ভাবি তো বিছানা নিয়েছে।এক কথা মেয়েকে এনে দেও।কিন্তু আমি তাকে কই পাবো??
মেঘলা এমন করবে ভাবতেও পারিনি।মা বাবার উপর রাগ হয়েছে আমার কাছে এসে কয়েকদিন থাকতো।কিন্তু এখন কোথায় গেলো?আমরা কোথায় খুঁজব?
এইটা ভেবেই আমি কূলকিনারা পাচ্ছি না।
বাচ্চা মেয়ে একা একা আর কতটুকু যাবে!!রুদ্র তুই কি জানিস?তোকে বলছে??
আম্মু মেঘলা তো আমার সাথে কথাই বলে না।ওই যে সেদিন আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো এরপর আর কোনো কথাই বলে না।হাজার চেষ্টা করেও বলতে পারিনি।
তাহলে এখন কোথায় খুজবো আমার মেয়েটাকে??মুবিন হাসান ধরে আসা গলায় বললেন।
আঙ্কেল একটা কথা বলতে চাইছি কিন্তু কতটা ঠিক হবে বুঝতেছিনা।কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি আপনাদের আরো আগে জানলে ভালো হতো….
কি কথা…..মুবিন হাসান রুদ্রর হাত ধরে বললেন…আমার মেয়েটাকে পাওয়া গেলেই হলো….
রুদ্র মাথা নিচু করে আছে,কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
কি বলবি বল রুদ্র….
মুবিন হাসান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আসলে আম্মু ওইদিন….
কোনদিন!!
লাস্ট এক্সামের দিন মেঘলা আমাদের বাড়ি এলো….
হ্যাঁ,হ্যাঁ মনে আছে মেঘলা একা বের হয়ে গেল….
কি হয়েছিল সেদিন..রুদ্র বলো আমাকে!!!মুবিন হাসান উদগ্রীব হয়ে গেলেন।
আসলে আঙ্কেল আপনার কাছে যে আপু পড়তে আসে তার ভাই…..
সীমান্ত!
হ্যাঁ আঙ্কেল।উনার ফোন নাম্বার আছে আপনার ?
আছে।কিন্তু এর সাথে সীমান্ত আসলো কোথা থেকে…..
আসলে কি করে বলি…..সীমান্ত নামের ছেলেটির সাথে মেঘলার কিছু একটা সম্পর্ক আছে…
কি বলছো এইসব খুলে বলো….তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
রুদ্র মাথা নিচু করে করে সেদিনের পুরো কথাগুলো বলল।মেঘলা আর সীমান্তের একটা সম্পর্ক চলছে।এইটা নিয়ে মেঘলার উপর রেগে যাওয়াতে মেঘলা রাগ করে আমার সাথে কথাও বলে না।
কি বলছো এইসব??আগে কেনো বলনি??
বলার মত ততটা আমি জানতাম না আর মেঘলা এমনিতেই আমার উপর রেগে ছিল তার উপর এইসব বলে দিলে আরো রাগ করতো।
মেয়েটা ভিতরে ভিতরে এতদূর চলে গেছে…আমার ইদানিং মেঘলাকে কেমন যেনো লাগতো ভাবতাম বাসায় থাকে হয়তো তাই…আমার মাথাতেও এইসব আসেনি।
আঙ্কেল শান্ত হোন প্লিজ।
রেহানা মাহমুদ রুদ্রর সব কথা মন দিয়ে শুনেছেন এতক্ষণ।এইবার তিনি মুবিন হাসানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
এখন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না ভাই।ঠান্ডা মাথায় সীমান্তকে ফোন করুন।বুঝার চেষ্টা করতে হবে মেঘলা ওর সাথে কি না।
ঠিক বলেছেন আপা।আমি তাহলে ফোন করে দেখি।
হ্যাঁ তাই করুন।

মুবিন হাসান সীমান্তর ফোনে try করেই চলেছে কিন্তু ফোনটা সুইটস অফ আসছে বারবার।তিনি অসহায়ের মতো রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছেন।
ইচ্ছে করে অফ করে রাখেনি তো?
কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।
আঙ্কেল আপনি কি ওদের বাড়ির ঠিকানাটা জানেন!!
জায়গার নামটা জানি শুধু।
এখন ফোনেই try করতে থাকেন।যদি না পাওয়া যায় তাহলে আমরা ওই এলাকাতেই যাবো কাল সকালে।
মুবিন হাসান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।বড্ড অসহায় লাগছে।

মেঘলা এসো ভিতরে এসো….
এইটা তোমাদের বাড়ি??
না এইটা সাবিবার বাড়ি।
তোমার বাসায় না নিয়ে আপুর বাসায়….
আমার বাসায় আস্তে আস্তে ম্যানেজ করবো।আপাদত আমরা এইখানেই থাকবো।
কিন্তু আপুর বর কি ভাববে…
সেসব ভেবো না।ও আমি ম্যানেজ করে নিবো।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু না…আমাকে ভরসা করতো??
হুমম…
তাহলে চলো।

সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠে এলো ওরা।কলিংবেল দেওয়ার প্রায় সাথে সাথেই গেটটা খুলে গেলো।যেনো অপেক্ষা করেই ছিল কখন কলিংবেলটা বেজে উঠবে..

গেট খুলেই সীমান্তকে উদ্দেশ্য করে হুড়মুড় করে বলতে থাকলো,তোমার এত দেরি হল কেনো??সেই কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছি…..
আহ সাবিবা থামতো…দেখ কে….
সীমান্তর কথা শেষ করতে না দিয়েই বলতে শুরু করল,তুমি আজকে কিছু খেয়ে এসছো নাকি?!তুই তোকারি করছো কেনো??
আমি কিছু খাই নি..তুই থামবি??দেখ সাথে কাকে নিয়ে আসছি….
সাবীবার হয়তো আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু পাশে কাউকে দেখে চুপ হয়ে গেল।সিড়িতে অন্ধকার থাকায় ভালোভাবে দেখাও যাচ্ছে না।আলতো করে শুধু বললো,কে??
ভিতরে গেলেই দেখতে পাবি….
সাবিবা রাগে গজগজ করে বলল,আর যদি তুই তোকারি করছো তো….
একদম চুপ।আগে ওকে ভিতরে নিয়ে যাই।বলেই মেঘলাকে হাত ধরে বললো,এসো ভিতরে এসো।
মেঘলাও চুপচাপ সীমান্তর সাথে ভিতরে ডুকে গেল।ওর কাছে সব কিছু কেমন যেনো লাগছে।আবার ভয় ভয়ও লাগছে।

সাবিবা গেট লক করে ড্রয়িং রুমে আসতেই চমকে উঠলো।প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো,
মেঘলা!!এত রাতে এইখানে??
হ্যাঁ,কি হইছে??
তুমি ওকে কোথায় পেলে??এত রাতে এইখানে স্যার জানে?
না জানে না।
তাহলে ফোন করে জানাও স্যারকে!
তার দরকার নেই??
কি বলছো দরকার নেই মানে?!স্যার তো ওকে খুঁজবে তাই না??
এত কথা বলতে বলছে কে??(সীমান্ত ধমকে উঠল)
ধমক খেয়ে একদম চুপ হয়ে গেলো সাবিবা।
ওই রুমে যা কথা আছে।
সাবিবা আর কিছু না বলে পাশের রুমে চলে গেল।
মেঘলা এইখানে একটু বসো।আমি ওকে সবটা বুঝিয়ে বলে আসছি।
আমার খুব ভয় করছে!
ভয়ের কিছু নেই জান।আমি আছি তো।
হুমম।
তাহলে চুপটি করে এইখানে বসো।আমি আসছি।
তাড়াতাড়ি এসো।একা একা বসে থাকতে পারবো না।
ঠিক আছে জান।বলেই মেঘলার কপালে একটা চুমু খেল।
মেঘলা কেপে উঠল।আর কিছু বলতে পারলো না।

তুমি ওকে কেনো আনছ এইখানে??নিশ্চয়ই আবার কোনো অঘটন ঘটিয়েছো?
আহ জান আমি কিছু করিনি।
তাহলে ওকে নিয়ে আসলে কেনো??
বলবো তো।বলার জন্যই এসেছি।
ঠিক করে বলো স্যার জানে?
না।
কি??স্যারকে কি বলবো বলতো??কালকেই তো আমি পড়তে যাবো।আমি এখনই স্যারকে ফোন করবো।মোবাইল বের করো।
এত অধৈর্য্য হলে হবে??
কি খেয়ালী করছো।বাচ্চা মেয়ে এত রাতে এইভাবে আমাদের বাসায় নিয়ে আসছ।স্যারকে জানাবো না?
না জানাবে না।শোনো কাল থেকে তোমার টিউশন পড়া অফ।
কি??
হ্যাঁ স্যার এর বাসায় তোমাকে আর যেতে হবে না।
আমার এক্সামের বেশিদিন বাকি নেই।আর কয়েকদিন পড়তে হবে।
অনেক পড়েছ জান।তাই দিয়েই এক্সাম দিবে।বেশি কথা বললে ইউনিভার্সিটি যাওয়া যেমন বন্ধ করেছি সেভাবে এক্সাম দেওয়াও বন্ধ করে দিবো।
আমার ভালো লাগছে না এইসব।কি করতে চাইছ খুলে বলবে প্লিজ?
আমি আর মেঘলা বিয়ে করেছি।
কি!!আর্তনাদ করে উঠল।
সহজ সাবলীল ভাষায় বলছি বুঝো নাই?
তোমার মাথা ঠিক আছে??সাবিবা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
আমার মাথা ঠিক আছে।আর তুমি কোনো ঝামেলা করলে তোমার ব্যবস্থাও আছে।
এই বাচ্চা মেয়েটাকেও ছাড়লে না??একবার আমার কথা ভাবলে না??
কি করবো জান।বাচ্চা মেয়েটাই তো আমার জন্য পাগল হয়ে বাড়ি ছাড়লো।এখন তুমিই বলো আমি এতটা নিষ্ঠুর কি করে হই??ফেলেতো আসতে পারি না।তাই বিয়ে করে নিয়ে এলাম।এমনি এমনি তো আনিনি।
কাদতে কাদতেই সাবিবা বললো,ওর বিয়ের বয়সটাও হয়নি।
বয়স কম তবে অতটাও কম না।আর যাই বলো একদম খাসা মাল।দেখলেই জিভে পানি এসে যায়।
সাবিবা আর সহ্য করতে পারলো না।অনেক সহ্য করেছে আর না।এই প্রথমবার সীমান্তের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিল।নিচুস্বরে চিৎকার করে বলল,আমার জীবনটা শেষ করেছে।আরও কত মেয়ের জীবন নিয়ে খেলেছো সব সহ্য করছি আর না।এই মেয়েটার জীবন নিয়ে খেলতে দিবো না।
সীমান্ত কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না।কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই ক্ষেপা পশুতে পরিণত হল।চোখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠেছে।সাবিবার চুলের মুঠি ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে টেনে আনলো।চাপা রাগে গজগজ করে বলল,তোর জন্য যদি আমার কাজে কোনো বেঘাত হয়…তোকে মেরে গুম করে দিবো।বলে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে রুমের গেট লক করে চলে গেল।
সাবিবা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে তবুও সীমান্তের এতটুকু মায়া হলো না।হাতটা বেকায়দায় পড়ায় অনেক ব্যাথা পেয়েছে।ফ্লোরে বসেই কাদতে লাগলো সাবিবা।ওর কপালটাই খারাপ।যাওয়ার কোনো জায়গাও নেই।থাকলে এই নরকে পরে থাকতো না।

চলবে………….

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here