মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৫
মেঘলা ও ঘরের কিছুই শুনলো না।একরকম অস্বস্তি একরাশ ভয় নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।ভিতরে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে তারচেয়েও শতগুণ বেশি মা বাবার কথা মনে পড়ছে।এতক্ষণে কি হচ্ছে সেখানে কিছুই জানা যাচ্ছে না।খালি মনে হচ্ছে এইরকম অবস্থায় একমাত্র রুদ্রই পারবে সব দিক সামলে নিতে।কিন্তু রুদ্র তো ওর ভালো চায় না তাই হয়তো কিছু করবে না।খুব কান্না পাচ্ছে।আবার ক্ষুধাও লাগছে।অন্যদিনের চেয়ে ক্ষুধাটা একটু বেশিই লাগছে।কিন্তু কেনো??আচ্ছা সীমান্ত আসলে আমি কি আমার বাসায় ফোন করার জন্য বলবো??হুমম বলে দেখবো।ও যেটা ভালো বুঝবে তাই করবে।ওতো আমার থেকে সবকিছু ভালো বুঝে।ওকে বলে দেখি।মেঘলা আপন মনে ভেবেই চলেছে।চোখ থেকে গড়িয়ে দুয়েক ফোঁটা অশ্রুও পড়ছে।হুমম কান্না করছে।বাড়ির জন্য,মা বাবার জন্য।সীমান্ত ওর পাশে বসে আছে খেয়াল করেনি।গালে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই বাস্তবে ফিরে এলো।সীমান্ত দুহাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে মেঘলাকে একদম ওর কাছঘেঁষে বসিয়ে বললো,
কাদছ কেনো??বাড়ির কথা মনে পড়ছে??
হুমম…
চিন্তা করো না কয়েকদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
বলছো??
হুমম জানপাখি।কিছুদিন গেলে এমনি মেনে নিবে আমাদের।
আব্বু খুব রাগী তুমি তো জানো না।
যত রাগীই হোক মেয়েকে কি ফেলে দিবে নাকি।
জানি না।আপু কি বললো??
সীমান্ত চমকে উঠলো।মেঘলা কিছু শুনে ফেলেনি তো?নাহ এই মেয়ের এত বুদ্ধি নাই যে আগাইয়া যাবে কথা শুনতে।
কি হলো কিছু বলছো না কেনো??
না কিছু না।
তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো??কিছু কি হয়েছে??
না জান কিছু হয় নি।আমি সব ম্যানেজ করে দিবো।
আপু কোথায়??আপু কি রাগ করে আসছে না??
একটু রাগ করেছে ও নিয়ে ভেবো না।
হুমম।একটা কথা বলি??
হ্যাঁ বলো অনুমতি চাইছো কেনো?
আমি বাসায় কি একবার কল করবো??
না একদম না।কিছুটা চিৎকার করে উঠল সীমান্ত।
মেঘলা আতকে গেলো।
সীমান্ত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,জান এক্ষুনি কাউকে জানানো যাবে না।ঝামেলা হতে পারে।
মেঘলা কপাল কুচকে তাকালো।
শোনো জান।
হুমম।
কিছুক্ষণ আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে মানে আজকে আমাদের বাসর রাত।এখন এইটা নিয়েই ভাব।সকালে ঠাণ্ডা মাথায় কি করবো সেটা ভাবা যাবে।
মেঘলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
লজ্জা পেলে আমার বউটাকে যা লাগে না….একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।
খেয়ে ফেলার কথা শুনেই মেঘলার ক্ষুধারা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো।আমতা আমতা করে বলল,আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে।
তোমার ক্ষুধা লাগছে আর তুমি আমাকে এখন বলছো??তাও আমতা আমতা করে??
মেঘলা স্মিত হাসলো।
তুমি একটু বসো আমি এক্ষুনি খাবার আনছি।আর এইটা এখন থেকে তোমার সংসার।যখন যা লাগবে নিজে নিয়ে নিবা।
আমার সংসার??
হ্যা জান তোমার।
কিন্তু এইটা তো আপুর শশুরবাড়ি।
এ মেয়ের দেখি টনটনা জ্ঞান ও আছে,মনে মনে বললো।
জবাবের অপেক্ষায় মেঘলা চেয়ে আছে।
আরে জান এখন তো আমরা এইখানেই সংসার শুরু করবো।এখন খাবারটা আনি।জেরা করার জন্য সারারাত পরে আছে।
মেঘলা আর কথা বাড়াল না।সত্যিই ক্ষুধাটা বেশিই লেগেছে।
মমতা হাসান বারবার মেঘলা মেঘলা করে ডেকে উঠছে।এক বেলাতেই একদম নেতিয়ে গেছেন।কখনো কি ভেবছিলেন এমন কিছু হবে??কষ্টে উনার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।মুবিন হাসান একদম নিরব হয়ে গেছেন।তিনি ভাবছেন,রুদ্র যেটা বললো তা যদি সত্যি হয়??অন্য কিছুও হতে পারে।কিন্তু যেটাই হোক একটা মেয়ের জন্য একা বাহিরে রাত টা খুব সুবিধার না।খারাপ মানুষের তো অভাব নেই।সীমান্ত ছেলেটাই বা কেমন??তাও তিনি জানেন না।মেয়েটাকে সশরীরে সুস্থভাবে যতক্ষণ না দেখতে পারছেন ততক্ষণ উনার শান্তি হবে না।আর মমতাকে এখনই কিছু বলা যাবে না।আগে কালকে গিয়ে খোঁজ করে দেখি।ওখানে নাও তো থাকতে পারে।তিনি একবার মমতা হাসান এর দিকে তাকালেন।মেয়ের শোকে মিয়ে গেছে।ওর এখন ঘুম দরকার।তিনি উঠে রান্নাঘর থেকে খাবার আনলেন।ওষুধের বক্স থেকে স্লিপিং পিল নিয়ে এলেন।
মমতা উঠ।
….
খাবারটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো।
আমি খাবো না ঘুমাবোও না।
এমন পাগলামি করো না।
তুমি আমার মেয়েকে এনে দেও।
কাল সকালে বের হবো খুঁজতে।তারপর হসপিটাল এ খুজবো…
হসপিটালে কেনো খুঁজবে আমার মেয়েকে?
বলাতো যায় না..ভালো খারাপ কিছু একটা…
কিচ্ছু হবে না আমার মেয়ের কিচ্ছু হবে না।
মমতা কথা না বাড়ানোর দরকার নেই।
খাবো না আমি।
ঠিক আছে ওষুধটা খেয়ে নেও।
না আমি খাবো না।আমার মেয়েকে এনে দেও।
মমতা যেটা বলছি করো।
মমতা হাসান এবার চুপ হয়ে গেলেন।ওষুধ টা মুখে পুরে এক ঢোক পানি খেয়ে নিলেন।
মুবিন হাসান উঠে এসে খাবারটা ফ্রিজে রেখে মেঘলার ঘরে গেলেন।
রুমটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এমন কখনো হয়নি মেঘলা কখনো কারো বাড়ি গিয়ে এক রাত একা থেকেছে।সবসময় নিজেদের সাথে রাখতেন।সারা ঘরটায় যেনো বিষণ্ণতা বিরাজ করছে।মেঘলার ঘর এ ঘুরতে ঘুরতেই ওর ফোনটার কথা মনে পড়লো।ওইটা তো মমতা নিয়ে নিয়েছে।রুদ্রর কথা যদি সত্যি হয় তাহলে ফোনটা থেকে অনেক কিছু জানা যাবে।তিনি আর এক মুহুর্ত নষ্ট করলেন না।ছুটে নিজের ঘরে এসে আলমারি থেকে মোবাইল বের করে বারান্দায় চলে গেলেন।
কললিস্টে একটাই নাম্বার দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সীমান্তর।উনার ফোনেও সেম নাম্বার আছে।তার মানে রুদ্রর কথা ঠিক??
তিনি ইনবক্সে ডুকলেন।সেখানে এমন এমন টেক্সট ছিল যা চোখে দেখার মত না।কয়েকটা মেসেজ দেখেই বুঝে গেলেন মেঘলা সীমান্তর মধ্যে অনেক গভীর সম্পর্ক।মেয়েটা ভিতরে ভিতরে এতদূর চলে গেছে!!কপালে একটা হাত রেখে চুপচাপ বসে আছেন।পুরুষ মানুষের নাকি কাদতে নেই।কিন্তু আজ উনার খুব কান্না পাচ্ছে।চেপে রাখতে পারছেন না।মমতা এতক্ষণে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।ওষুধের ইফেক্ট হয়তো কাজ শুরু করে দিয়েছে।বাহিরের মনে হচ্ছে অমাবস্যা।ঘুটঘুটে অন্ধকার।বারান্দার আলোটাও নিবিয়ে দিলেন।তিনিতো পুরুষ মানুষ তিনি তো বাবা।কোনোভাবেই দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না।
জান তুমি শাড়ি পড়তে পারো??
নাহ।একা একা কখনো পড়িনি।আম্মু পরিয়ে দিত।কিন্তু কেনো??
তোমাকে শাড়ি পড়া দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।
আমি তো পারি না।
আমি পড়িয়ে দেবো।
যাহ তা হয় নাকি?
কেনো হবে না জান?আমিতো তোমার বর হই।
আচ্ছা তুমি এখন শাড়ি পাবা কই??
কেনো সাবিবার শাড়ি পড়বে।
আপু কি দিবে??
কেনো দিবে না??
না মানে আপু সেই যে রুমের দরজা লাগিয়েছে এখনো তো খুলেনি।আমরা একা একা খেয়ে নিলাম।কি যে ভাবছে আপু!!আর এখন শাড়ি দিবে??
কিচ্ছু ভাবছে না জান।আর ও রাগ করেছে তাই বলে কি শাড়ি দিবে না??অবশ্যই দিবে।
কিন্তু….
কোনো কিন্তু না।তুমি চুপ করে এইখানে বসো।আমি শাড়ি নিয়ে আসছি।তারপর তোমাকে মন ভরে সাজিয়ে দিবো।
মেঘলা মুচকি হেসে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
সীমান্ত একবার সেদিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সাবিবা মাথা তুলে তাকালো।তখন যেখানে ফেলে রেখে গিয়েছিল এখনো সেখানে বসেই কাদঁছে সাবিবা।মাথা তুলে সীমান্তকে দেখেই ওর ভিতরটা ঘুলিয়ে যাচ্ছে।একটা বাজে নোংরা মনের মানুষ।ভিতরে ডুকেই সীমান্ত আবার দরজা লাগিয়ে দিল।এক পায়ে ভর দিয়ে সাবিবার সামনে বসলো।ঘৃণায় সাবিবা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।সীমান্ত দুই আঙ্গুল দিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরে বলল,
আমাকে দেখলে এত ঘৃনা হয় জান?
গোঙানির মত আওয়াজ বের হলো ওর মুখ থেকে।
কিন্তু জান যতই ঘৃনা করে কি লাভ সেইতো আমার মুখটাই তোমাকে দেখতে হবে।চড় মেরেছ তাই না জান??এইবার দেখ তোর সাথে কি কি হয়!
সাবিবাকে ছেড়ে দিয়ে আলমারির চাবি খুঁজতে লাগলো।চোখের সামনে রেখেও এইখানে ওইখানে হাতড়াতে লাগলো।চাবি না পেয়ে আবার রেগে গেল সীমান্ত।হুংকার দিয়ে বলল,
চাবি লুকিয়ে রেখেছিস??কি এমন আছে ওতে??,
চাবি দিয়ে কি করবে??
তোর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে আমার??চাবি দে এক্ষুনি।
চোখের সামনে রেখে আমাকে কেনো এইসব বলছো?আলমারির চাবি আলমারিতেই ঝোলানো।
সীমান্ত কিছু না বলে আলমারি খুলে ঘাটাঘাটি শুরু করলো।কোন শাড়িটা নিবে।একটা একটা করে শাড়ি বের করছে আর ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলছে।
কি করছো এসব??এইগুলো এইভাবে ফেলছ কেনো?
যা কিছু আমার পছন্দ না সেগুলো এইভাবেই ছুঁড়ে ফেলি।
একটা নিশ্বাস ছেড়ে সাবিবা বলল,একসময় তো তুমি ই পছন্দ করে এইগুলো কিনে দিয়েছিলে।
তখন পছন্দ ছিল এখন আর নেই।
হুঁহ….এইগুলো এখন গোছাবে কে??
একটা ফিনফিনে পাতলা শাড়ী বের করলো।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শাড়িটা দেখে হাসলো।মনে ধরেছে শাড়িটা।ওইটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,কি যেনো বলছিলে??
এইগুলো কে গুছাবে??আর এই শাড়ি কেনো নিয়ে যাচ্ছ??
সহজ কথায় জবাব দিচ্ছি…এই শাড়িটা পরিয়ে নতুন বউয়ের সাথে বাসর করবো।আর তখন তো তুমি বোর হবে তাই না??তুমি সারা রাত কি করবে বলতো??তাই এইগুলো এলোমেলো করলাম।যাতে তোমার রাতটা ভালো কাটে সুইটহার্ট।
তুমি এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে কিছু করো না প্লিজ।
আমি কি করবো কি করবো সে নিয়ে না ভেবে তুমি তোমাকে নিয়ে ভাবো।না হয় কি হবে ভাবতেও পারবে না।আর হ্যাঁ মেঘলাকে কিছু বলার চেষ্টা করলে জিভ ছিঁড়ে নিবো।বলেই গেটটা লক করে চলে গেল।
সাবিবা বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লো।আর অঝোরে কাদতে লাগলো।
চলবে……….
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)