মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৭
সীমান্ত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।আর মেঘলা সেতো ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা পাচ্ছে।সীমান্তর চোখে চোখ পড়লেই লজ্জা পাচ্ছে আবার সেখান থেকে সরে যেতেও পারছেনা।কি করে পারবে সীমান্ত যে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ।কিন্তু এখনো ওরা উঠেনি।মেঘলা উঠতে চাইছে কিন্তু সীমান্ত ছাড়ছে না।অনেক বুঝিয়ে অবশেষে মেঘলা ছাড়া পেলো।কোনো দিকে না তাকিয়ে ওর ব্যাগ থেকে একটা থ্রিপিছ নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়লো।আর…সীমান্ত এখনো বিছানায় শুয়ে হাসছে।কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেল।সাবিবার ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ডুকে দেখলো ফ্লোরেই জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে।শাড়িগুলো এখনো ফ্লোরে পরে আছে।সীমান্ত আলতো করে ওর চুলে হাত বুলাতে লাগলো।
হাতের ছোঁয়া পেতেই ঘুম ভেংগে গেল সাবিবার।ঘুম ভেংগে গতকালের কথা মনে পড়তেই সীমান্তর হাতটা মাথা থেকে সরিয়ে নিল।
সীমান্ত তবু মিষ্টি করে বলল,জান এখনো ঘুমালে হবে??বাসায় নতুন বউ আসছে নাস্তা বানাতে হবে না??
…….
কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না??তবে বলো না।আমি কি আর স্বাদ করে এইখানে আসছি বলো?নতুন বউকে রেখে পুরান বউয়ের কাছে আসতে ইচ্ছে করে বল!!
…….
চিন্তা করো না কয়েকদিন যাক তারপর তোমাকেও সময় দিবো রাতে।
………..
আমাকে দেখে এত বিরক্ত হচ্ছো জান!!কিছু করার নেই।কাল যা মজা পেয়েছি তারপর তোমার কাছে আসার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু নাস্তা তো রেডী করতে হবে।হাজার হোক তুমি নতুন বউয়ের ননদ।
সাবিবা প্রচন্ড ঘৃনা আর রাগে ফেটে পড়ছে।এই অমানুষটার সামনে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না।তাই উঠে চলে যেত নিল।
পিছন থেকে ওর হাতটা ধরে একদম নিজের কাছে এনে বললো,মেঘলার প্রতি বেশি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে যদি কিছু বলে দেও জান….কি হবে জানো তো??তাই সাবধান প্রয়োজন ছাড়া ওর সাথে কথা বলারই দরকার নেই।বলেই ছেড়ে দিল।
সাবিবা আর দাড়ালো না।চোখের পানি মুছে সেখান থেকে চলে গেল।
সীমান্ত আলমারি থেকে সাবিবার কিছু শাড়ি নিয়ে গেলো মেঘলার জন্য।
মুবিন হাসান,রুদ্র আর ওর বন্ধু মিলে পুরো এলাকায় সীমান্ত নামের কেউ আছে কিনা খোঁজ করতে লাগলো।চেহারার বনর্ণা দিলো,নাম ধাম যতটুকু জানে বললো কিন্তু কোনো হদিস পাওয়া গেলে না।কি করে যাবে?ওদের কাছে না আছে ঠিকঠাক ঠিকানা না আছে কোনো ছবি।ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে গেছে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মত।মুবিন হাসান প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে সীমান্তকে পাওয়া যাবে না।ফোন নাম্বারটাও এখনো অফ।রুদ্র মুবিন হাসানকে একটা চায়ের দোকানে বসিয়ে বন্ধুকে নিয়ে আশেপাশে খোঁজ করতে লাগলো।যতটা সম্ভব শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে সে।খুব করে রুদ্রর মনে হচ্ছে মেঘলা সীমান্তর কাছেই আছে।খুঁজতে প্রায় এলাকার শেষ সীমানায় চলে আসছে।এরপর অন্য একটা এলাকা।এইখানে একটা গ্রোছারী শপ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আর কোনো দোকান বা অন্য কিছুও চোখে পড়ছে না।রুদ্র ওর বন্ধুকে নিয়ে ওই দোকানেই গেলো।সীমান্তর বর্ণনা দিতেই দোকানদার বলে উঠলো,
বাবারা তোমরা যে বর্ণনা দিতেছ এমন একজনকে আমি চিনি।
রুদ্র খুশি হয়ে বলল,সত্যিই চিনেন??কি জানেন আপনি??আচ্ছা উনার নাম কি সীমান্ত??
হা হা সীমান্তই নাম।কিন্তু তোমাদের কি দরকার??
আপনি উনাকে চিনেন??খুব দরকার উনাকে।
চিনি বলতে মাঝে মাঝেই উনার স্ত্রীকে নিয়ে আসেন টুকটাক এটা সেটা কিনেন আবার মাসের বাজারও আমার থেকেই করে।দোকানদারের সাথে কাস্টমার এর যেমন সম্পর্ক তেমন আরকি।
রুদ্রর মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল।যাও একটা আশার আলো দেখেছিল এখন তাও শেষ।সীমান্ত তো বিবাহিত না।স্ত্রী থাকলে কি মেঘলার সাথে সম্পর্ক করতো!!
এই ছেলে কি ভাবছো?
কিছু না আঙ্কেল।আপনি কি sure উনার স্ত্রী আছে??
আমিতো এত কিছু জানিনা।দেখেতো মনে হয় স্বামী স্ত্রীই।প্রায়দিনই দেখি হাত ধরে মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় একটা যায়।বই টইয়ের ব্যাগ ও থাকে।
আচ্ছা আপনি কি উনার বাড়ি চিনেন?
চিনিতো।
কোথায় যদি বলতেন….
তোমাদের চিনি না জানি না তোমাদেরকে আমার কাষ্টমার এর ঠিকানা দেই পরে কিছু হলে আমাকে এসে ধরবে।
আপনি আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন।কোনো সমস্যাই হবে না আমরা তেমন কিছু করবো না।
জি আংকেল বিশ্বাস করতে পারেন।আর আমার বাড়িও এইখানেই।পাশের গলিতে।কোনো সমস্যা হবে না বিশ্বাস করতে পারেন।(রুদ্রর বন্ধু বললো)
দোকানদার ইতস্তত করে বলল,এই সামনের বিল্ডিং এর পরেরটায় থাকে।
কোন ফ্লোরে??
এত কিছু তো আমি জানি না।
ঠিক আছে আঙ্কেল ধন্যবাদ।
রুদ্র ওর বন্ধুর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলল,বন্ধু অনেক অনেক থ্যাংস।তুই আজ অনেক করলি।
আরে কি বলছিস।বন্ধুর জন্য এইটুকু করতে পারবো না??
রুদ্র স্মিত হাসলো।তাই তো বন্ধুর জন্য এইটুকু করাই যায়।
দুজন একসাথে হেসে উঠলো।
আচ্ছা শোন,সারাটা সকাল তো আমাদের সাথেই কাটিয়ে দিলি এইবার তুই বাড়ি যা বাকিটা আমরাই পারবো।
পারবি তো??
হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো।চিন্তা করিস না।
ঠিক আছে আমি তাহলে যাই।আর শোন যদি কোনো দরকার হয় আমাকে ফোন করিস কিন্তু।
ঠিক আছে বন্ধু।
রুদ্রর বন্ধু চলে গেল।রুদ্রও মুবিন হাসান এর কাছে গেলো।রুদ্রর খুব খারাপ লাগছে উনাকে দেখে।কি অবস্থা হয়েছে উনার।রুদ্র যেতেই তিনি ব্যাকুল হয়ে গেলেন।
কোনো খোঁজ পেলে মেঘলার??
মেঘলার খোঁজ না পেলেও মনে সীমান্তকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
মুবিন হাসান এর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।পাওয়া যাবে মানে??সীমান্ত তো বলেছিল এই এলাকাতেই থাকে।
আসলে আঙ্কেল আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।
কেনো??
রুদ্র দোকানদারের বলা প্রতিটা কথা উনাকে বললো।
মুবিন হাসান এর মুখে চিন্তার রেখা আরও গভীর হলো।দোকানদারের বলা সীমান্তই যদি ওই সীমান্ত হয় এবং মেঘলা ওর সাথে যায় তাহলে তো….তিনি ভাবতেও পারছেন না আর কিছু।
আঙ্কেল আগেই কিছু না ভেবে আমরা বরং ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি।
হুমম..ছোট করে একটা জবাব দিলেন শুধু।
তারপর সে বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
মেঘলা সবে গোসল করে বেরিয়ে এসে বেজা চুল মুছছিল।আর তখনই পেছন থেকে সীমান্ত ওকে জড়িয়ে ধরলো।মেঘলা কিছু বললো না।ও যেনো একদম ফ্রিজ হয়ে গেল।তবে খুব ভালোও লাগছে।
ভেজা চুলে মুখ ঘষতে লাগলো সীমান্ত।
আরে কি করছো?ভেজা চুলে এইভাবে মুখ দিয়ে রাখছো কেন??
তুমি কি জানো তোমাকে এখন এই চুল সমেত আস্ত খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
কি যা তা বলো না তুমি..
যা তা না জান।সত্যি বলছি।একটা মানুষকে এতটা সজীব আর মায়াময়ী কি করে লাগতে পারে!তোমাকে যতই দেখছি ততই তোমার প্রেমে পড়ছি নতুন করে।
মেঘলা এইবার প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে পিছন ফিরে সীমান্তর বুকে মুখ লুকালো।
সীমান্তও ওকে একদম নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
জান শোনো না….
হুম বলো…
সাবিবা তোমার জন্য কয়েকটা শাড়ি পাঠিয়েছে।আর বলছে যেটা তোমার ভালো লাগে ঐটাই পড়তে।
সত্যি??আপু নিজে দিলো??তারমানে আপু আর রেগে নেই?
না জান রেগে নেই কিনা জানি না তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
হ্যাঁ,আমি আস্তে আস্তে সব ঠিক করে নিবো দেখ।
আমি জানিতো জান।তবে জান….
কি?
এখনতো তোমাকে আবার শাড়ি পরতে হবে।
আমিতো পারি না।
কাল রাতে তো পড়ছো।
সেতো তুমি পরিয়ে…..মেঘলা পুরো কথা শেষ করতে পড়লো না।বেচারি লজ্জা পেয়ে গেল রাতের কথা মনে পড়তেই।
সেতো আমি এখনো পরিয়ে দিতে পারি!
মেঘলা আর কথা বাড়ায় না।ও ভালো করেই জানে সীমান্তর সাথে কথায় ও পারবে না।বলেছে যখন তখন শাড়ি পরাবেই।
সীমান্ত খুব যত্ন করে পাকা হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিলো মেঘলাকে।তারপর দুজন একসাথে রুম থেকে বের হলো।নাস্তা করার জন্য।
রান্নাঘরে সাবিবা কাজ করছে।ওর চোখ মুখ ফুলে আছে।হয়তো সারারাত কাদার জন্য।ওরা আসতেই ওর ভিতরটা মুচড়ে উঠলো।নিজের স্বামীর সাথে অন্য কাউকে সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো আল্লাহ তাআলা কোনো নারীকে দেয়নি।কিন্তু সাবিবাকে দিনের পর দিন এইসব মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে।ওর ভিতরটা ফেটে যায় তবু মুখে কিছু বলতে পারে না।নিরবে খাবার টেবিলে নাস্তা দিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে গেল।হয়তো কিছু একটা করছে।হয়তো নেহাৎই ব্যস্ততার ভান করে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা।
মেঘলার খুব খারাপ লাগছে।ওরা খাবে আর আপু কাজ করবে কেমন দেখায়…
ও খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে নিলে সীমান্ত বাঁধা দিলো।
কোথায় যাও?
আপুকে ডাকি আমাদের সাথে বসে খাবে।
ও পরে খাবে তোমাকে ভাবতে হবে না।
প্লিজ আপুকে ডেকে আনিনা!
নতুন বউ কিছু বলতেও পারছে না তাই হাতটা ছেড়ে দিল।
মেঘলা হেসে রান্নাঘরে গেল।
সাবিবা সেদিকে একবার তাকালো।তারপর নিজের কাজে মন দিল।
আপু চলো না আমাদের সাথে খাবে?তোমার ভাইয়া আর আমি না হয় ভুল করেছি কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে।তাই বলে রাগ করে থাকবে??
…
কথাও বলবে না আমার সাথে?
…….
আপু প্লিজ চলো না…
সাবিবার কোনো ভাবান্তর হলো না।একমনে কাজ করে চলেছে।
সীমান্ত এইবার উঠে এসে মেঘলার হাত ধরে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে বললো,কেনো বারণ করা সত্ত্বেও গেলে??এখন কি হলো??শুধু শুধু মন খারাপ হলো তোমার।
মেঘলা মাথা নিচু করে বসে রইল।
সীমান্ত এইবার মেঘলার মুখে খাবার তুলে ধরে বলল,জান খেয়ে নেও।মন খারাপ করো না তো।তোমার মন খারাপ আমার একদম ভালো লাগে না।
মেঘলাও চুপচাপ সীমান্তর হাতে খেতে লাগল।
সাবিবা সেদিক পানে তাকিয়ে আছে আর ওর দুচোখ বেয়ে নোনাজলের ধারা বইছে।
চলবে………..
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)