মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২২
বেশ কয়েকদিন ধরে এ বাড়িতে কিছু অন্য রকম হচ্ছে।বেশ কিছু বদলও লক্ষ্য করছে সীমান্ত।মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটছে ওর আড়ালে।সেটা চোখে পড়েও পড়ছে না ওর।
সাবিবা আগের মতো মিয়ে থাকে না।সবসময় যেনো আনন্দে থাকে।
আর মেঘলা এমনিতে ঠিকঠাক।কাছাকাছি গেলেই অন্যরূপ।কেমন পালাই পালাই ভাব।ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
দুজনের মধ্যে ভাবও হয়েছে বেশ বুঝা যাচ্ছে।
মেঘলা হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছে সাবিবাকে।
দুজনে ফিসফিস করে গল্পও করে।মাঝে মাঝে মনে হয় হাসাহাসি করছে।যখনই সীমান্ত সামনে যায় দুজনই চুপ।
আড়ালে একটা কন্সপেরেছি চলছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই সীমান্তর।কিন্তু কথা হচ্ছে মেঘলা কি সব জেনে গেছে??যদি জানত তাহলে হয়তো এতটা হাসিখুশি থাকতো না।ভাব ভঙ্গিতে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।আর ও জানবেই বা কি করে??সাবিবার এত সাহস হবে না ওকে জানানোর।তবুও স্বস্তি পাচ্ছেনা কোনোভাবেই সীমান্ত।খালি মনে হচ্ছে কিছু একটা হচ্ছে ওর আড়ালে।আজ তো কোনো কাজ নেই সারাদিন বাসায় থেকে এদের উপর নজর রাখতে হবে।তারপর যা করার করবো।আর আজ রাতেই সাবিবার ঘরে যেতে হবে।ভালো করে চেপে ধরলেই সব বেরিয়ে আসবে।
মেঘলা দেখতো তোর বরের কিছু লাগবে কিনা??অনেকক্ষণ ধরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার বর বলছো কেনো তোমার ওতো বর।
খুব পেকেছ তাই না!
পাকবই তো যে এক্সপার্ট বর আমাদের….
আর বেশি কথা না।যা দেখে আয়।না হয় আবার কি না কি ভেবে নিবে…
কি ভাববে ভয় পাই নাকি!!
সাবিবা মেঘলার দিকে ঘুরে করুন স্বরে বলল, আমি চাই না আমার মত তোর উপরও অত্যাচার করুক।তুই কিছু জানিস বুঝানোর কি দরকার??
আমার এই লোকটাকে একদম সহ্য হয় না আপু।
ধৈর্য্য ধর বোন আমার।সব ঠিক হয়ে যাবে।
কবে হবে??
এত অল্পতে হাপিয়ে গেলে হবে??আরও কঠিন পরীক্ষা সামনে আমাদের।
হুহুহ..নিজের ভুলের কারণে আজ ….
এইসব কথা এখন থাক।এখন আগে দেখ..আমার সাথে তো রাতে ছাড়া কথা বলবে না।
হুমম যাচ্ছি।
যাচ্ছি বলে এইভাবে দাড়িয়ে আছো কেন??
ইচ্ছে করে না যেতে..
না করলেও যাওয়া লাগবে।
গুটি গুটি পায়ে মেঘলা এগিয়ে যাচ্ছে।এই লোকটাকে একদম সহ্য হয় না ওর।এত বড় বন্ড,প্রতারককে কারোরই সহ্য হওয়ার কথা না।
কিছু লাগবে তোমার??
…..
কিছু বলছি…(একটি জোরে)
চিৎকার করছো কেন??
কিছু বলছি তো।
কি বলছো??
শোননি?
না।আবার বলো।
কি এত ভাবছিলে??কার কথা ভাবছো শুনি??
কার কথা ভাববো??তুমি ছাড়া আর কারো কথা ভাবার অবকাশ আছে আমার!!
বেটা লুচু..ডপের পর ডপ দিয়েই যাচ্ছে….আবার কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করার চিন্তা করতেছে আল্লাহই জানেন।
কি বিড়বিড় করছ??
কই কিছু না তো?
আমি না তোমাকে ইদানিং বুঝতে পারি না।কেমন যেন হয়ে গেছ…
কেমন হয়ে গেছি??
এই সারাক্ষণ কাজ করো,এদিক সেদিক থাকো।আমার কাছে আসো না….
সংসারের কাজ শিখছি।এইটা কি খারাপ??কত দিন আপু করে খাওয়াবে?
সে ঠিক আছে।কিন্তু আমার দিকে কোনো খেয়ালই নেই তোমার।
কে বলছে খেয়াল নেই!খেয়াল না থাকলে কি জিজ্ঞেস করতাম তোমার কি প্রয়োজন??
আমি ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছি না।আমি তো তোমার বর…আমার সাথে তোমার….
কি??
তুমি জানোনা না কি??
না জানি না।এখন জানতে চাইও না কিছু লাগলে বলো।আমার অনেক কাজ আছে।
আমার কিছু লাগবে না।শুধু তোমাকে লাগবে।আমার পাশে একটু বসো।
বললাম না কাজ আছে।কিছু না লাগলে গেলাম।
সীমান্তর কথা পুরোপুরি উপেক্ষা করে সেখান থেকে সরে গেলো মেঘলা।
অবাক হয়ে দেখা ছাড়া সীমান্তর এ মুহূর্তে কিছু করার নেই।হটাৎ করে একটা মানুষের এতটা পরিবর্তন কি করে হয়??সত্যিই বুঝতে পারছে না সীমান্ত।সাবিবার মত এরও একটা শিক্ষা দিতে হবে।
আসসালমুআলাইকুম আম্মু।
ওয়ালাইকুমআসসালাম।
কেমন আছো আম্মু??
আমি ভালো আছি।তুই কেমন আছিস??
আমিও ভালো আছি।
তোকে এইভাবে দূরে রাখতে একদম ভালো লাগছে না।সারাদিন এত পরিশ্রম করে কি খাস না খাস?কেমনে থাকিস??এইসব চিন্তায় চিন্তায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
আম্মু তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না।এই শুক্রবার আমি তোমাকে আনতে যাব।
এই শুক্রবার!!রুদ্র তোর মাথা ঠিক আছে?হাতে মোটে ৭দিন আছে।এর মধ্যে এত কিছু গোছগাছ কিভাবে করবো??
আম্মু তুমি এত ভেবো না তো।তুমি যেটুকু পারো করো আমি তো বৃহস্পতিবার রাতে আসবই।আমি এসে বাকিটা করবো।
সে বুঝলাম।কিন্তু থাকার ব্যবস্থা করতে হবে তো??আমি তো আর তোর সাথে উঠতে পারবো না।বন্ধুদের সাথে থাকিস তুই।
আম্মু আমি সব ব্যবস্থা করেই তোমাকে আনতেছি।
আমি তোর কিছুই বুঝি না।হুট করে এইভাবে ঢাকায় গেলি এখন আমাকেও নিয়ে যাবি।এইখানে কি সমস্যা ছিল??
আম্মু এইসব কথা এখন থাক।আমি রাখছি,এখন পড়তে বসবো।
আচ্ছা।আর শোন ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবি।নিজের খেয়াল রাখবি।
ঠিক আছে,তুমিও তোমার খেয়াল রেখো।
মমতা হাসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কি থেকে কি হয়ে গেল।মেঘলাটা এমন একটা কাজ করবে কখনো ভাবিনি।আর আমার ছেলেটাও কেমন একটা হয়ে গেল।তাও তো আমি আমার ছেলের খোঁজ খবর জানি।কিন্তু মেঘলার মা বাবা তো তাও জানে না।ওর মা বাবার যে কি অবস্থা চোখে দেখা যায় না।উনাদের এমন অবস্থায় রেখে যেতেও ইচ্ছে করছে না।আবার না গিয়েও উপায় নেই।ছেলেটাকে অত দূরে রেখে থাকতে ইচ্ছে করে নাকি।কি খায় না খায়,সারাদিন কি না কি করে,এতসব চিন্তা ভাবনা নিয়ে আর থাকতেও পারছিনা।তবে খুব কষ্ট হয় মেঘলাটার জন্য।কেমন আছে মেয়েটা??আমারই এত মনে পরে ওর মা বাবার তো আরও বেশি মনে পড়ে।আমার ছেলেটা তো সহ্যই করতে পারলো না।সব কিছু ছেড়েছুঁড়ে চলে গেল।ওর মনের মধ্যে কি চলছে এখন!!খুব কষ্ট পেয়েছে।আমিতো ওর মা..আমি তো বুঝি ওর মনে কি চলছে।সবকিছু থেকে পালিয়ে থাকতে চাইছে।ছোট থেকেই আমার ছেলেটা শুধু কষ্টই পেলো।জানি না এরপর কি হবে!!
চলবে…….
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)