মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২৫

0
489

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৫

আজ দুদিন হয়ে গেল সীমান্ত বাড়ি ফিরে না।ওদের দুইজনকে ভিতরে রেখে বাইরে থেকে লক করে সেই যে বেরিয়ে গেছে আর ফিরেনি।ভাগ্যিস বাসায় চাল ডাল ছিল।তাই ওদের খাওয়া পড়া চলে যাচ্ছে।কিন্তু এইভাবে কয়দিন থাকবে??সীমান্ত যদি ফিরে না আসে??এইখান থেকে পালানোর কোন উপায়ও নেই।কারও হেল্প নিবে তারও সুযোগ নেই।বাসায় একটা ফোন পর্যন্ত নেই।
বাসাটাও বসতি এলাকা থেকে অনেকটা ভিতরে।এইখান থেকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না।সবে সবে কাজ শেষ হয়েছে।এখনো কেউ উঠেনি বাসায়।সীমান্তর কোনো এক বন্ধুর বাড়ি এটা।নিজেদের থাকার জন্য করেছিল।কিন্তু কোনো একটা কারণে তারা এক্ষুনি এই বাসায় উঠেনি।আর সীমান্তরও সে সময় তাড়া ছিল নতুন বাসার তাই ওর বন্ধু ওকে এইখানে থাকতে বলেছে।
যখন প্রথম এই বাসায় আসে মেঘলার খুব পছন্দ হয় বাড়িটা।লোকালয় থেকে অনেকটা ভিতরে।নিরিবিলি,সুন্দর একটা পরিবেশ।বারান্দায় বসে প্রকৃতি দেখেই অনেকটা সময় অনায়েশে কাটিয়ে দেওয়া যায়।সব মিলিয়ে ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।কিন্তু আজ এই পরিবেশই ওর কাল হলো।আজ যদি বাড়িটা লোকালয়ে হতো তাহলে হয়তো কারো সাহায্য নিয়ে এই জাহান্নাম থেকে ঠিক বের হওয়া যেত বা পুলিশের সাহায্যও নিতে পারতো।কিন্তু এখন কিছুই পারছে না।
একে তো এমন বন্ধিদশা তার মধ্যে সাবিবার জ্বর।কোনো মতেই জ্বর কমছে না।মাথায়ও অনেক ব্যাথা পেয়েছে।সব মিলিয়ে ওদের বেসামাল অবস্থা।সীমান্ত কোথায় আছে?কবে ফিরবে?আদেই ফিরবে কি না কিছু জানে না ওরা দুজন।ওরা অপেক্ষা করছে।কিন্তু কিসের অপেক্ষা??সীমান্তর নাকি এইখান থেকে মুক্তির??জানা নেই ওদের।ঠিক এই মুহূর্তে এইসব কিছুই মাথায় আসছে না।অনিশ্চয়তার মাঝে অপেক্ষা করছে।শুধুই অপেক্ষা…বেচেঁ থাকার অপেক্ষা।

সারারাত ঘুম না হওয়ার কারণে খুব বেশি উস্কোখুস্কো দেখাচ্ছে ছেলেটাকে।কি যে হলো ওর।খাওয়া ঘুম কোনো কিছু ঠিকভাবে করে না।এইভাবে চলতে থাকলে তো ছেলেটা অসুস্থ হয়ে যাবে।রেহানা মাহমুদ ইদানিং খুব বেশি চিন্তা করে রুদ্রকে নিয়ে।করবে নাই বা কেনো??রুদ্র দিনদিন কি যে হয়ে যাচ্ছে।সারাদিন কলেজ,টিউশন করানো,বাসায় এসে কোনো রকম কিছু মুখে দিয়ে পড়তে বসে।অনেক রাত অবধি পড়াশুনা করে।প্রায় রাতেই ঘুমায় না।ঠিকমতো দুদণ্ড কথাও বলে না।ওর শরীরও অনেক ভেঙ্গে গেছে।চোখ মুখ বসে গেছে।ওর সাথে খোলাখুলি কথা বলতে হবে।সেই ভাবনায় তিনি বসে আছেন।নাস্তা করার সময়ই তিনি কথা বলবেন।

কোনরকমে গোসল করে একবারে কলেজের ড্রেস পরে রেডি হয়ে বের হল নাস্তা করার জন্য।রুদ্র সারাদিনে আর খাওয়া গোসল কোনোটারই সময় পাবে না।সকালে তাই নাস্তা করেই বের হয়।রোজকার মত আজও তেমন নাস্তা করার জন্য বসলো।কিন্তু আজ ওর মায়ের মুখটা অন্যরকম লাগছে।বুঝতে পারছে কিছু বলবে।কিন্তু কি বলবে??জিজ্ঞেস করবো??না থাক বলার হলে আম্মুই বলবে।বেড়ে রাখা খাবারটা নিয়ে সবে এক লোকমা খেলো।তখনই রেহানা মাহমুদ এসে পাশে বসলেন।আলতো করে মাথায় হাত রাখলেন।
একটা কথা বলবি?
কি কথা??খেতে খেতেই রুদ্র জবাব দিলো।
তুই কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস??
কি লুকাবো আম্মু??
জানি না।তাইতো জানতে চাচ্ছি।
আমার কি লুকানোর থাকতে পারে??
আমার মন বলছে তুই কিছু আড়াল করতে চাচ্ছিস।
কি যে বলো না তুমি আম্মু..
আমি ঠিক বলি।আমি আমার ছেলেকে বুঝি।
রুদ্র হাসলো।
হাসিস না তো।বল আমাকে কি হইছে তোর?
আম্মু আমার কিচ্ছু হয়নাই।শুধু শুধু চিন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করো না।
সাধ করে কেউ চিন্তা করে না বাবা।যখন বাবা হবা তখন বুঝবা সন্তানের জন্য মা বাবার কি চিন্তা হয়।
সবই বুঝলাম কিন্তু তুমি অকারণ চিন্তা করে নিজের ক্ষতি করছো এইটা নিয়ে তো আমার টেনশন হয়।
মমতা হাসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তুই আমাকে বলবি না এইতো??
বলার কিছু থাকলে বলতাম।
ঠিক আছে।তুই নাস্তা শেষ কর।আমি আমার কাজ করি।বলেই উঠে যেতে নিয়ে আবার বসে বললেন,
তুই কি মেঘলার জন্য চিন্তা করিস??
রুদ্র কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।সত্যিই তো ও ভাবে মেঘলাকে নিয়ে।কিন্তু আম্মু বুঝলো কি করে??
আমি জানি তুই ওর কথাই ভাবিস।
আম্মু আমি ওর কথা ভাবছি না।আর কথা মাথায় আনতেও চাই না।
কিন্তু আমি তো জানি…
আম্মু আমি এইসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।
রেহানা মাহমুদ চুপ হয়ে গেলেন।আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলেন।

রুদ্র চুপচাপ খাবারটা মুখে দিয়েই বের হয়ে গেল।আর বেশিক্ষণ এই মুহূর্তে বাসায় থাকা যাবে না।আম্মু হয়তো কিছু বুঝে ফেলবে।মেঘলার পুরো বিষয়টা এখনো মানতে পারছি না।খুব কষ্ট হয়।বুকের ঠিক বা পাশটা চিনচিন করে।যতটা পারা যায় নিজেকে ব্যস্ত রাখি।তবুও ঠিক চলে আসে ভাবনায়।কেমন আছে মেঘলা??ভালো থাকার কথা না।তবুও মনে প্রাণে চাই ভালো থাকুক মেঘলা।

রেহানা মাহমুদ ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর গেট লক করে একটা চেয়ারে বসলেন।তিনি জানেন রুদ্রর এই পরিবর্তন মেঘলার জন্যই।এতটা কষ্ট পাচ্ছে শুধু মাত্র ওরই জন্য।কিন্তু এই কষ্ট পাওয়ার কারণ কি??মেঘলার ভুল সিদ্ধান্ত নাকি অপমান করাটা??নাকি এর বাইরেও আরো কোনো কারণ আছে।

সাবিবার জ্বর অনেকটা কমেছে।এই পাঁচ ছয়দিনে মেঘলা অনেক কিছু করেছে।সাবিবার দেখাশুনা করেছে।এখন সে অনেকটাই সুস্থ।রান্না করেছে।সংসারের যাবতীয় কাজ করেছে।মাত্র কদিনের ব্যবধানে হটাৎ করেই অনেক বড় হয়ে গেছে।সব কিছু গুছিয়ে সাবিবার পাশে এসে শুয়ে পড়ল।সারাদিনের ক্লান্তিতে আপনাতেই চোখ বুজে এলো।তাই অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।

অস্পষ্টভাবে একবার মনে হলো কেউ দরজা খুলছে।হয়তো মনের ভুল হবে।এত রাতে কি আর জানোয়ারটা আসবে?এই ভেবে মেঘলা আবার শুয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ শুনতে পেল।ইতস্তত করে মেঘলা উঠে বসলো।পাশে তাকিয়ে দেখে সাবিবা ঘুমাচ্ছে।আমি একবার কি বের হয়ে দেখবো??পরক্ষণেই ভাবছে যাওয়া কি ঠিক হবে??আপুকে একবার ডাকবো?না থাক আপু এখনো অসুস্থ।ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।ডাকা ঠিক হবে না।যা আছে কপালে একাই যাব।মেঘলা উঠে বসলো।পা টিপে টিপে ড্রয়িংরুমের দিকে গেলো।ড্রয়িং রুমের লাইট অন করাই ছিল।সে আলোতে মেঘলা স্পষ্টভাবে দেখলো দরজা ঠেলে দুটো ছায়ামূর্তি ভিতরে ঢুকছে।মেঘলার হাত পা কাপছে।চোর ডাকাত কিংবা কোনো মানুষরূপী জানোয়ার আসলো না তো??এমন একটা জায়গায় আমরা দুটো মেয়ে মানুষ কোনো বিপদ হলে কি করবো??আপুও তো অসুস্থ।এক জানোয়ার আটকে রেখে গেছে।অন্য জানোয়ার এসে খুবলে খাবে না তো??ভয়ে মেঘলার বুক কেপে কেপে উঠছে।

আহা!দেখে পা ফেলো,সুইটহার্ট!

চাপাস্বরে একটা মেয়েলি আওয়াজ শুনলো মেঘলা।কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।কে এলো এত রাতে??দুটো ছায়ামূর্তির একটি মেয়ে আর অন্যজন কে??অনিশ্চিতভাবে সামনের দিকে পা ফেলতে লাগলো।

চলবে………

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here