#বেলাদোনা (১৮)
#ফাতেমা_তুজ
মাস খানেক অক্লান্ত পরিশ্রমে বেলার ঠিকানা পেয়েছে ইথান। খবর টা যে শতভাগ সত্য এ নিয়ে ছিলো দ্বিধা । মেয়ে টি কে এশিয়া মহাদেশের খুব ছোট একটি দেশ বাংলাদেশে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। খবর টা পুরোপুরি সত্য কি না সেটাই যাচাই করতে এয়ারপোর্ট এ নিজে এসেছে ইথান।বেলার পরিচয় গোপন রেখেছেন স্মিথ। তবে শেষ রক্ষা যে হলো না। সেটা ভাবতেই ক্রুর হাসি ফুটলো ইথানের চকচকে গালে। বরার্ট কে সাথে নিয়ে আজ ই রওনা হবে বাংলাদেশ। যেখানে আছে প্রিয় কিংবা অপ্রিয় নারী বেলাদোনা।
সন্ধ্যার ফ্লাইটে বাংলাদেশে এসেছে ইথান। ফর্সা মুখ টা এই আবহওয়ায় নেতিয়ে পরা গাছের মতো ডুবে আছে। রবার্ট নিজে ও বিচলিত অস্থির। চট্রগামে যাওয়ার পূর্বে এই শহর টা কে দেখতে চায় ইথান। এতে রবার্ট প্রতিবাদ করে উঠলো।
“তোমার কি মনে হয় তুমি একটু বেশিই কনফিডেন্স হয়ে পরছো তাই না। দেখো ইথান এই প্রজেক্ট টা কোনো সাধারণ খেলা না। এটার পেছনে কতো শ্রম, মূল্য দিতে হয়েছে সেটা ভুলে যেও না। ”
” তোমার কি মনে হয় আমি বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি? ”
” আমি সেটা মিন করি নি।”
” সে যাই হোক। এখন সময় নষ্ট না করাই উত্তম। ”
বেলার একটা ছবি নিয়ে বসে আছে ইথান। লাল ঠোঁট টা কেমন শুকিয়ে গেছে।প্রাণহীন লাগছে কেমন। লাগার ই কথা। ইউ এস এ থাকাকালীন বেশির ভাগ সময় ই ঠোঁটে লিপ বাম লাগাতে হতো যাতে শীতের প্রকোপে ঠোঁট না ফাঁটে। এখানে এসে সেটা ভুলেই গেছে যেন। ইথান একটু একটু বেলার ছবি কুচি কুচি করলো। চোখ দুটো রক্তিম। দরজায় নক করে রবার্ট বলল–
” তুমি কি নিচে গিয়ে খাবার খেতে চাও ইথান? ”
” না। খাবার পাঠিয়ে দাও। ”
” একটু সমস্যা। ”
” সমস্যা! কিসের সমস্যা? ”
” এখানের ডিস গুলো নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। ”
” হুয়াই? ”
” নিউ ডিস। তুমি আসলে ভালো হয়। ”
ইথান মলিন গলায় উত্তর করলো–
” তুমি যাও আমি আসছি। ”
শাফায়াতের জন্মদিন আজ। বেশ আয়োজন করে অনুষ্ঠান হবে। বেলার জামাকাপড় নেই তেমন। লিমা বেগম নিজ থেকেই শাড়ি নিয়ে এসেছেন। বেলা কে বেশ চিন্তিত দেখালো। লিমা বেগম হাসি মুখে বললেন–
” আমি পরিয়ে দিবো টেনশন করো না। ”
” স্যরি আপনি কি বললেন আমি বুঝতে পারি নি। ”
” বললাম শাড়ি পরিয়ে দিবো। ”
” আন্টি আমি বুঝি নি। ”
বেলার হতাশ কন্ঠ। লিমা বেগম চিন্তিত হলেন। শাড়ি রেখে এলেন ছেলের খোঁজে। প্রচন্ড ব্যস্ত ছেলেটা কে টেনে হিচড়ে বের করে আনলেন। বেলা তখন শাড়ি উল্টে পাল্টে দেখছে। শাফায়াত আর লিমা কে দেখে উঠে পরলো। আলতো হেসে মাথার স্কাফ ঠিক করলো।
” বেলা তুমি বাংলা শিখে নাও প্লিজ। মা কখনোই পারবে না ইংরেজি শিখতে। ”
” আমি শিখতে চাই কিন্তু — ”
” চিন্তার কারন নেই আমি শিখিয়ে দিবো।”
” আচ্ছা। ”
” আপনার মা কি বলছিলেন আমায়? ”
” মা বলেছেন তোমায় শাড়ি পরিয়ে দিবে।”
” কিন্তু আমি যে — ”
” শাড়ি তে কমফর্ট নও তাই তো? আর স্কাফ? সেটার জন্য ও ব্যবস্থা আছে। মা খুব ভালো হিজাব পড়াতে পারেন। শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে হিজাব করে দিবে। ”
শুকনো হাসলো বেলা। লিমা বেগম একটু কাছে এসে দাড়ালেন। বেলার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বাহু তে হাত রাখলেন।
” আসো। ”
” কি? ”
” কাম কাম ”
কথা টা বলেই লিমা বেগম বিরস হাসলেন। মায়ের কান্ডে শাফায়াত ও না হেসে পারে না। এমনি তে লিমা বেগম বেশ চুপচাপ। তবে বেলা আসার পর থেকে প্রাণখোলা হয়ে গেছেন।
ঢাকা তে শাফায়াতের ভারসিটি। সেই কারনে অনুষ্ঠান টা এখানেই হবে। প্লেনে করে সন্ধ্যায় চলে এলো সবাই। শহর টা ঘোরা হয় নি বেলার। সময় সুযোগ ছিলো না। হোটেলে এসে শাড়ি পরিয়ে দিলেন লিমা বেগম। হালকা করে সেজে নিলো বেলা। এক টা বিষয় পরিলক্ষিত হলো বাংলাদেশ এর মানুষ তুলনামূলক বেশি মেকাপ করে। মোটা পরদের মতো প্রসাধনী লাগায় মুখে। সেটা অবশ্য যার যার শখ। তবে বেলার মনে হলো এরা যদি কম সেজে একটু প্রাণখোলা থাকে তাহলে আরো বেশি সুন্দর লাগবে। স্মিথ এসে বেলার পাশে দাড়িয়েছেন। মেয়ের মাথা তে হাত রাখলেন তিনি।
” ইউ লুকিং বিউটিফুল সুইট হার্ট। ”
” ধন্যবাদ বাবা। ”
” মায়ের সাথে কথা বলবে? ”
” মা কল করেছে? ”
বেলার উৎসুখ দৃষ্টি। ফোন এগিয়ে দিলেন স্মিথ। গলা ধরে আসে বেলার। বহু কষ্টে কান্না দমিয়ে বলল–
” কেমন আছো মা? ”
” ফ্লাওয়ার। কত দিন পর তোমার কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। কষ্ট হয় ফ্লাওয়ার। ”
” আমি ও ভালো নেই মা। তোমায় ছাড়া আমি একটু ও ভালো নেই। ”
” মিস ইউ ফ্লাওয়ার। ”
উত্তর করলো না বেলা। মুখে হাত চেপে ধরলো।হেবা বুঝতে পারলেন মেয়ে টা কাঁদছে। ওনার ও ভীষণ কান্না এলো। আর কথা হলো না দুজনের। স্মিথ কল কেটে বেলা কে এক হাতে বুকে জড়িয়ে নিলেন। সান্ত্বনার সুরে বললেন–
” মাই সুইট হার্ট। কান্না করবে না প্লিজ।
মদের গ্লাস টা নাকের কাছে নিয়ে ঘষে চলেছে ইথান। পাশে বসা রবার্ট। ইথান তাচ্ছিল্য হেসে শুধালো–
” বেলার বাবা আব্দুল্লাহ। ইরাকের বাসিন্দা রাইট? ”
” তেমন টা বলেছিলো মারিয়া। ”
” ফালতু! মারিয়া আমাদের সাথে প্রবঞ্চনা করেছে।”
” আমার মনে হয় না। ”
” এতো টা সিউর হলে কি করে? ”
” বুলেট নিজে খোঁজ নিচ্ছে। মারিয়া প্রবঞ্চনা করতেই পারে না।”
” সেটাই। তবে মারিয়া প্রবঞ্চনা না করলে কে করলো? ”
” আমার মনে হয় মারিয়া কে বুঝ দেওয়া হয় উল্টো। ”
রবার্ট এর কথা কে মূল্য দিলো ইথান। ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না ঠিক। মূলত কি হয় না হয় সেটা বোঝার উপায় নেই। কাচের গ্লাসে লালটে রঙের তরল ঢেলে নিয়ে এক নিশ্বাসে চুমুক দিলো। সামনে তাকাতেই বেলার হাস্যউজ্জ্বল মুখ খানা ভেসে উঠলো। ইথানের অধরে হাসি। কখনো বা ক্রুর কখনো বা তৃষ্ণা। সব মিলিয়ে একাকার হয়ে পাল্টে গেল মুখের ভঙ্গি। ইথান কে চেপে ধরলো রবার্ট।
” ইথান কি করছো টা কি! এতো মানুষের মাঝে আমরা আগাতে পারি না। ”
সচকিত হয় ইথান। সত্যিই তো কি করতে যাচ্ছিলো সে। বেলা হেসে যাচ্ছে অবলীল ভাবে। শাফায়াত আর ওর মাঝের দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি। বাঙালি পোশাকে বেলার রূপ যেন উতলে উঠে। আবেদনময়ী লাগে মেয়েটি কে। প্রথম বারের মতো বেলা কে অন্য দৃষ্টি তে অবলেকন করে ইথান। হীম হয়ে যায় শরীর। থরথর করে কেঁপে উঠে সে। চোখ দুটো লাল বর্ণ। রবার্টের হাতে কাঁচের ভাঙা বোতল তুলে দেয়। রবার্ট হাবলার মতো তাকিয়ে দেখে ভাঙা কাঁচের বোতলে লাল তরল।
” ইথান তোমার হাত– ”
হাত উচিয়ে বাধা দেয় সে। রবার্ট এর চোখ বড় বড়। ইথানের শরীর থেকে নির্গত হচ্ছে স্বচ্ছ লাল তরল। যার ফোটাতে রঙিন হয় মেঝে।
শাফায়াতের পরিবারের সকলে এক সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। জুলফিকার সাহেব এর এক টাই ছেলে। ছোট্ট এক সংসার। দুই ভাই ছিলেন ওনারা। ছোট ভাই মারা গেছেন বহু পূর্বে। সে হিসেবে বাবার সব সম্পত্তির মালিক তিনি। আর তারপর তার ছেলে শাফায়াত। শাফায়াতের সামনে কেক আনা হয়েছে। ভিন্ন ডিজাইন এর কেক দেখে সকলেই হা।
” কেক টা কোন ব্র্যান্ড এর? ”
শাফায়াতের কথায় মুখ টিপে হাসলেন রিমা বেগম। বেলা তখন সরল চোখে তাকানো। শাফায়াত আবার বলল–
” কোথা থেকে এনেছো মা? কোনো নাম তো নেই। ”
” নাম থাকবে কি করে?এটা যে স্পেশাল হাতে স্পেশাল করে বানানো। ”
” মানে? ”
” বেলা বানিয়েছে। ”
শাফায়াত গোল চোখে তাকালো। এ চোখে যেন বিস্ময়! সে এতোই অবাক যে তার মুখের কথা হারিয়ে যায়। কেবলি তাকিয়ে থাকে। ধ্যান ভাঙে বন্ধুদের টানে। আবার ঘোরে চলে যায়। আনমনেই বলে উঠে
“বেলা তুমি কেক বানাতে পারো! আগে কেন বলো নি? ইস কি মিস করলাম এতো গুলো দিন। ”
** দীর্ঘদিন গল্প দেই না। লেখালেখির এক বছরে এমন বিরতি দেই নি কখনো। তবে সৃষ্টিকর্তা এবার আমাকে বিরতি দিয়েই ছাড়লেন। আমার ফোন চুরি হয়ে গেছে। ছোট বোনের ফোনের কিবোর্ডের এক টা শব্দ লিখতেই আমার মাথা ঘোলা। তারপর ফোন টা ও দেয় না হাতে। গভীর রাতে লুকিয়ে চুরিয়ে একটু একটু করে লিখলাম প্রায় ছয় দিন। আবার কবে দিবো জানি না। এমন টা সত্যিই আমার কাম্য ছিলো না। তবে এ কথা ও মানতে হবে ভাগ্যের বেশি কে দিবে? **
চলবে