বেলাদোনা (৬)

0
290

#বেলাদোনা (৬)
#ফাতেমা_তুজ

মেয়েটি কেঁদে দেয় দেয়। রক্তিম হওয়া চক্ষুদ্বয় ইথানের মুখচ্ছটায় ঘুরপাক খাচ্ছে। লুসি নিজে ও এবার চুপ হয়ে গেছে। তবে ওদের মৌনতা দেখে প্রকৃতি গর্জে উঠলো। হুংকার তুলে নিয়ে নিলো বৃষ্টির প্রস্তুতি। ঠিক তখনি চোখ মেলে তাকালো ইথান। শরীর প্রায় অনেক টা অবশ হয়ে আছে। ম্যাও ম্যাও করতে করতে লাফাচ্ছে লুসি। দেখে মনে হচ্ছে এতো আনন্দিত তাঁর প্রিয় ফ্লেবারের ক্যাট ফুড দেখে ও হয় নি। হাত বাড়িয়ে দিতেই ইথানের কোলে ঝাঁপিয়ে পরলো লুসি ক্যাট। এবার বেলার ঠোঁটের কোনে ফুটেছে সরলতার হাসি। মেয়েটি অত্যধিক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। চোখের সামনে একটা মানুষ আর্তনাদ করছিলো তা যেন সহ্য ই হচ্ছিলো না। আলতো হাতে ভর দিয়ে গাছের গুঁড়ির সাথে আরেকটু চেপে বসলো ইথান। শরীরে শক্তি নেই একদম। সাহায্য চাওয়ার ভঙ্গিমায় তাকালো তবে বেলা নিশ্চুপ। কোন ভাবনায় ডুবে আছে কে জানে!
” আমাকে সাহায্য করো বেলা। ”

রেসপন্স নেই। বেলা কে মৃত বস্তু বিশেষ লাগছে। যে দাঁড়াতে তো পারে তবে কথা বলতে পারে না। ইথান আবার এক ই ভাবে ডাক দিলো। তবে বেলা স্বীয় ভাবনা তে গভীর সাগরে ডুবে আছে। শেষে নিজ মনোবল জুগিয়ে একাই উঠে পরলো ইথান। শরীর টা কিছু টা চাঙা লাগছে বই কি। তবে তুলনামূলক দূর্বল হয়ে আছে। ভারী আনন্দ হচ্ছে বেলার। এই জীবনে এক ব্যক্তি কে সে রক্ষা করেছে। সেটা যেই পেক্ষাপটের ভিত্তি তেই হোক না কেন।

সরঞ্জাম পূর্ণ গাড়ি টা বেলাদের ছোট কাঠের দোতলা বাড়ির সামনে এসে থামলো। হেবা বেরিয়ে আসতেই জাপটে ধরলো এলিজা। বিশ দিন হতে চললো মা কে ছাড়া। এ যেন কল্পনার ও অতীত। হেবা মৃদু হেসে এলিজার মাথায় স্পর্শ করলো। এলিজা খুশি তে আত্মহারা হয়ে পরেছে। খুশি ড্রাবল হলো গাড়ি ভর্তি জিনিস পত্র দেখে। এখানে নিশ্চয়ই ওর ফেবরেট আপেলের চিপস আর টুইক্স চকলেট ও নিয়ে এসেছে। বেলা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। হেবা নিজ থেকেই এগিয়ে এলো। বেলা কে মোলায়েম হাতে আলিঙ্গন করে বলল–
” মাই ডিয়ার ফ্লাওয়ার কেমন আছো? ”

” ভালো আছি মা। ”

” ফ্লাওয়ার! তোমাকে না বলেছি কেমন আছো জানতে চাইলে আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এ কদিনে অনেক সংস্কার হয়েছে দেখা যাচ্ছে। আমি কিন্তু এমন টা আশা করি নি। ”

” দুঃখিত মা। মনে ছিলো না। ”

” দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি তারপর ও কি করে মনে থাকে না বেলা? ”

ইষৎ মাথা নিচু করে ফেললো বেলা। দুদিন আগে ও হেবার কন্ঠে কেমন সতেজতা ছিলো। আজ একটু বেশিই রগরগা দৃঢ়। হেবা যেন বেলার মন পড়তে পারলো। তাই যথা সম্ভব নিজেকে প্রকান্তর করলো বিযুক্ত প্রসঙ্গে।

মারিয়ার উপর সব সময় ভরসা করে এসেছে হেবা। ভালো ছাড়া খারাপ হয় নি কখনো। আজ ও তেমন টাই দেখতে পেল। মনে মনে বেশ খুশি হলে ও বিনয় প্রকাশে নেই অজস্রতা।

পুরো দিনে একটা কাজ ও করতে হয় নি বেলার। সারা টা সময় হাঁটা চলা করেই কাঁটিয়ে দিয়েছে। মাঝে অবশ্য বই নিয়ে বসেছিলো যদি ও পড়াশোনা আপাততো বন্ধ তাঁর। তবে কিছু দিন পর ই এডমিশন টেস্ট। সেই চিন্তা গত দিন গুলো তে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। আজ একটু করে মনে হলো পড়াশোনা করা প্রয়োজন। দরজার বাহিরে থেকে কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বেলা চট করেই বুঝে ফেললো এটা এলিজা। মেয়েটি যখন কাঁদে বেলার বুক ভারী হয়। কন্ঠে মধু ঢেলে দিয়ে এলিজার পাশে বসলো সে।
” তোমার কষ্ট হচ্ছে এলিজা? ”

” আমার জন্য কিচ্ছু নিয়ে আসে নি মা। ”

” কষ্ট পেও না বোন। আমি তোমাকে এনে দিবো খুব দ্রুত। ”

” লাগবে না আমার। ”

অভিমানের রস নামিয়ে চলে গেল বাচ্চা টি।বেলা আর ফিরে যায় নি। বরং হেবার দেওয়া এক খানা বই হাতে নিয়ে বসলো ব্যলকনির পাশে। ইসলামিক বই, যেখানে ইসলাম ধর্ম সর্ম্পকে অল্পবিস্তর আলোচনা রয়েছে। কয়েক লাইন পড়েই বেলার মাথা ঘুরে গেল। এ সকল বিষয় তাঁর কাছে নতুন, যদি ও ভাষা গুলো সহজ সরল আর প্রাঞ্জল। তবে অনভ্যস্ত বেলার কাছে এ যেন এক বিশাল উপমা।

রাত অনেক টা গভীর। এই মাঝ রাতে ও হেবার ঘর থেকে রোশনাই ছড়াচ্ছে।সময় টা এখন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চকলেট দিবস। বহু দিন ধরেই চকলেট তৈরির ইচ্ছে পোষণ করেছিলো গত কয়েক দিনে সে বিষয়ে ধারণা ও পেয়েছে। তাই এবারের জাতীয় চকলেট দিবসে বিশেষ ধরণের চকলেট লঞ্চ করবে বলে মনস্থির করলো। তাঁর ই সাথে বেকারি টা আরেকটু প্রসার করা প্রয়োজন। কিছু কাজ শেষ করে নরম বিছানায় পা তুলে বসলেন হেবা। ভদ্র মহিলা অতীব সুন্দরী নয়। তবে চেহারায় কেমন আলোকসজ্জা থাকে সর্বদা। তাই হয়তো সকলের নিকট প্রিয় পাত্রী তিনি। অতীতের কিছু ঘটনা স্মরণে আসতে চাচ্ছে তবে হেবা আপাততো সেগুলো করে দিলো অগ্রাহ্য। সময় বহমান, সব কিছুর ই রয়েছে নির্দিষ্ট গতিপথ। কিছু রেসিপি দেখা কালীন তন্দ্রা লেগে গিয়েছিলো। তখনি বিকট শব্দে ধরমুরিয়ে উঠলেন তিনি। বিদ্যুত নেই। ঘরের চারপাশে হাতড়ানোর প্রয়োজন হলো না। কাছে পিঠেই ছিলো ম্যাচ লাইট। একটা কাঠি জ্বালিয়ে মোমবাতি তে ধরিয়ে নিলেন। ললাটে অতি চিকন ভাঁজের রেখা নিয়ে পদ আগালেন তিনি।

এই আঁধারে নিজের মা কে আশা করেনি এলিজা। হাতে থাকা কোকো বীজের বাক্স গরিয়ে পরলো মেঝের উপর। শীতল হাওয়া তে কুল কুল করে ঘামতে লাগলো বাচ্চা টি। কপট রাগ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হেবা
” এই মাঝ রাতে তা ও ঘন অন্ধকারে একা একা স্টোর রুমে চলে এসেছো এলিজা। অন্ধকারে এখন আর ভয় লাগে না? ”

” আমি চলে যাচ্ছি মা। ”

” দাঁড়াও এলিজা। ”

সটান হয়েই রইলো এলিজা। পা গুলো শিখরের সাথে জুড়ে গেছে মনে হয়। হেবা পুনর্সৃষ্টি ফেলে বলল–
” তোমার বয়স সাতের দ্বারে কড়া নাড়ছে। দ্বিতীয় শ্রেনির পাঠ চুকিয়েছো। পড়াশোনা তে ভীষণ মেধাবী হওয়া তে সব দিকেই ছাড় দেই। তাই বলে এমন নয় নিজ ঘরে রাতের আঁধারে চুরি করবে। ”

চোর শব্দ টা গাঁয়ে লাগলো এলিজার। তাঁর বয়স আসলেই কম। তবে মনের তো বয়স হয় না। এ যে ধারাবহিকতা বজায় রাখতে পারে না। সকালে এমনি তেই অভিমান জমে ছিলো এখন সেই অভিমান দ্যুতি পেয়ে ক্রমশ দেয়াল থেকে মহাপ্রাচীর হয়ে পরেছে। যারপরনাই ভাবে স্থান ত্যাগ করলো এলিজা। চোরা শ্বাস গুলো গোপন করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো হেবা।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার এক বিশেষ জাতের উদ্ভিদ কোকো, যাঁর বীজ থেকে উৎপন্ন হয় রকমারি স্বাদের চকলেট। ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চকলেট দিবস পালিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা তে চলকেট লঞ্চ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর সেই কারনেই কোকো বীজ সংগ্রহ করেছেন হেবা। এলিজা যে শেষ মেষ এই বীজের উপর হানা দিবে তা ভাবনার ত্রি সীমানায় ও আসে নি।

পরদিন খুব ভোরে শরীরচর্যার নাম করে বেরিয়ে পরলো বেলা। সারা রাত না ঘুমিয়ে কাঁটায় চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। ইথানের সেল ফোন নাম্বারে কল করলো। কয়েক বার রিং হওয়ার পর ফোন টা পিক করলো ওপাশে থাকা ব্যক্তি। রগরগা কন্ঠে বেলা বলল–
” লুসি ক্যাট এর মালিক বলছেন? ”

” বেলা! এই ভোর বেলা আমায় কল করেছো যে। কোনো বিপদ হয় নি তো?”

” না। সব কিছু ঠিক আছে। আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন? ”

” হ্যাঁ নিশ্চয়ই। কখন দেখা করবে বলো শুধু। ”

” এখনি। ”

মনে মনে আন্দাজ করলো ইথান। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে। না হলে হঠাৎ করেই এমন আচারণ করতো না। চিত্তে চিন্তা থাকলে ও ভঙ্গিমা এমন যেন অতিমাত্রায় স্বাভাবিক এটা। ইথানের বাড়ি থেকে এক ক্রোশ দূরে অবস্থান করছিলো বেলা। বার বার ঘড়ি তে টাইম দেখে চলেছে। আজ একটা সমাধান করেই ছাড়বে।

**প্রিয় পাঠক রা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন এটা বিদেশী প্লটের গল্প।**

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here