মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১২
রুদ্ররা সবে বাড়ি ফিরলো।রাতও হয়ে গেছে।কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল রুদ্র।অনেকদিন পর বাড়িতে ফিরে নিজের বিছানাটায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ বুঝে আসছে রুদ্রর।এমনিতেও খুব টায়ার্ড লাগছে।তারউপর আগামীকাল এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট।যতই ভালো পরীক্ষা দেক টেনশন তো হচ্ছেই।তাই শুয়ে আয়েশ হয়েও হচ্ছে না।সারাদিনের ক্লান্তিতে ইচ্ছে করছে শুয়ে থাকতে কিন্তু রেজাল্টের চিন্তায় পারছে না।
রেহানা মাহমুদ চা বানিয়ে আর হালকা কিছু খাবার বাইরে আসার সময় কিনেছিলেন তাই নিয়ে রুদ্রর রুমে এলেন।রুদ্রর পাশে বসে বললেন,
টেনশন হচ্ছে খুব?
হুমম আম্মু অনেক।
এখন টেনশন করে কি হবে?যা করার আগেই করেছো।এখন চিন্তা করলেই কি না করলেই কি?যা হবার তাই হবে।
তবু আম্মু টেনশন হচ্ছে।
রুদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন,যা হবার হবে এত টেনশনের কিছু নেই।খাবার টা খেয়ে নে।আর কিছু কি করবো রাতে?
না না আম্মু আর কিছু লাগবে না।এতেই হবে।
ঠিক তো!
হুমম আম্মু।
এই মেয়ে তোর কি এতটুকু ভয়ডর নেই?কালকে তোর রেজাল্ট দিবে আর বসে বসে সারাদিন ফোনটা টিপেই চলেছিস।কথা নেই বার্তা নেই একা হাসতে থাকোস!কি এত দেখিস ফোনে তুই??
আহ আম্মু ভয়ডর করবে কেন?যা লিখছি তাই পাবো।তাহলে আগে থেকে চিন্তা করে মনমরা হয়ে বসে থাকার কি আছে?
দেখবো তো কি পাস তুই!!ফেইল কইরা আসিস দেখিস কি করি তোর!একটা রিক্সাওয়ালা ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিবো।
উফফ আম্মু তোমার জ্বালায় একটুও শান্তি পাই না।সারাক্ষণ কানের কাছে ভাঙ্গা রেডিওর মত বেজেই চলেছ।
হ্যাঁ আমিতো ভাঙ্গা রেডিওই।আমার কথা তো তিতা লাগে।দেখ কি হয় কালকে।
দূর এইখানে আর থাকাই যাবে না।মেঘলা হনহন করে নিজের রুমে গিয়ে গেটটা লাগিয়ে দিল।
মমতা হাসান সেদিকে তাকিয়েই আছেন।এই মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় তার জীবন যায় যায় কিন্তু এর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।এর কপালে যে আল্লাহ কি রাখছে আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
অনেকদিন পর আজ আবার স্কুলে এসেছে সবাই।সবার চোখে মুখে আতংক।মেঘলা আর রুদ্রর দেখা হয়েছে।কিন্তু মেঘলা না দেখার ভান করে সরে গেছে।রুদ্র অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু লাভ হয়নি।মেঘলা রুদ্রকে এড়িয়ে যাচ্ছে।রেজাল্ট আউট হওয়ার পর একবার মেঘলাকে দেখছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু পরক্ষণেই মেয়েটা যেনো উবে গেল।রুদ্র অনেক খুঁজলো পেলো না।পুরো স্কুলের কোথাও মেঘলা নেই।মেঘলার রেজাল্ট ভয়ঙ্কর খারাপ হয়েছে।খারাপ কি ওতো পাশই করেনি।রুদ্র বুঝলো মেঘলা খুব কষ্ট পেয়েছে আর ভয়ও পাচ্ছে বাসায় কি হবে না হবে।এত ভালো রেজাল্টের পরও রুদ্রর আনন্দ হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ও A+ পায়নি ওই ফেইল করেছে।মেঘলা নির্ঘাত ম্যাথ এ ফেইল করেছে।এখন আংকেল কি করেন!!রুদ্র ওর মাকে ফোন করে ওর রেজাল্ট জানালো।রেহানা মাহমুদ মেঘলার রেজাল্ট জানতে চাইলেন কিন্তু রুদ্র পরে বলবে বলে কেটে দিলো।ওর এখন স্কুলে বসে আনন্দ করার সময় না।আগে মেঘলাকে সামলাতে হবে।রুদ্র স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়লো।উদ্দেশ্য মেঘলাদের বাড়ি।
মুবিন হাসান থমথমে মুখ করে বসে আছেন।কিছুটা দূরত্ব রেখে মমতা হাসান দাড়িয়ে আছেন।আর মেঘলা মাথা নিচু করে কাদো কাদো মুখে মুবিন হাসান এর মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে।
সবই আমার কপাল বুঝলে মমতা,সবই কপাল।
স্বামীর কথা শুনে একবার তার দিকে তাকালো।কিন্তু কিছু বললেন না মমতা হাসান।
কোনো কিছুর অভাবতো রাখিনি তারপরও…..সত্যিই এইটা আমার কপাল।বলেই মুবিন হাসান উঠে চলে গেলেন।
মমতা হাসান মেঘলার সামনে দাঁড়ালেন।
এতবার বললাম মেঘলা একটু পড়ালেখা কর।ঘুরাঘুরি করার সময় অনেক পাবি।এই যে ফেইল করলি একটা বছর নষ্ট হলো বল কার ক্ষতি হল??
………
এখন কান্নাকাটি করলে কি হবে?যা করার তো করলিই শান্তি হয়েছিস??
………..
এত এত সমস্যার মাঝেও তোর কোন চাওয়াটা অপূর্ণ রাখছি বল তো?ভেবেছি মেয়েটা কষ্ট পাবে,পড়াশুনার ক্ষতি হবে।আমরাই শুধু ভেবে গেছি।আমাদের কথা ছাড় তোর নিজের ভালোটাও বুঝলি না??
………..
এখন মুখ দিয়ে কথা আসে না তাই না??তোর আব্বুর দিকে দেখছিস??কি ভেবেছে আর কি পেলো??কতটা কষ্ট পেলো??
…………
রুদ্রকে দেখ…নিজে এত কষ্টে থেকে হাজারো টানা পোড়ন এর মধ্যে থেকেও ঠিক পড়াশুনাটা করছে আবার তোকেও পড়ানো লাগছে তার।আবার দেখ ভালো একটা রেজাল্ট করছে!করেনি বল?তোর বয়সীইতো?
এতক্ষণে মুখ খুললো মেঘলা।
আমি রেজাল্ট খারাপ করছি আমাকে মারো বকো যা ইচ্ছা করো।রুদ্রকে টেনে আনছ কেনো??
কারণ রুদ্রকে টানার মত হাজারটা কারণ আছে।
এই রুদ্র রুদ্র রুদ্র করে আমার মাথাটা আর নষ্ট কইরো না।
বলেই নিজের রুমে গিয়ে গেট লক করে দিল।
মমতা হাসান এখনো মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বলেই চলেছেন,এইবার একটা যেমন তেমন একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।এরপর বুঝবে ঠেলা।সুখে থেকে তো দিশা পায় না………………..
অনেকক্ষণ হয়েছে রুদ্র এসেছে।কিন্তু ভিতরে যায়নি।ভিতরে কথার শব্দ শুনা যাচ্ছে।যাবে কিনা বুঝতে পারছে না।ওকে নিয়ে মেঘলার এত কথা কেনো শুনতে হবে??মেঘলার কষ্টতো হবেই।আর এখন যদি আণ্টি শুনে আমি A+ পেয়েছি তাহলে মেঘলাকে আরও বকবে।না আজ আর যাওয়া ঠিক হবে না।রুদ্র নিরবে চলে গেল।
এত খারাপ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।তোমার মা বাবা সামান্য ফেইল করায় তোমার সাথে এমন করলো??আবার রুদ্রর সাথে তুলনা করছে??আচ্ছা উনারা কি তোমার নিজের মা বাবা??
নিরবে চোখের পানি ফেলছে মেঘলা।এতক্ষণ ফোনে সীমান্তকে সব বলেছে মেঘলা।
মেঘলা জান আমার একদম কাঁদবে না।এবার পাশ করনিতো কি হইছে আগামীবার পাশ করবে।
যদি সত্যি সত্যি বিয়ে দিয়ে দেয় কি করবো আমি?
আমি আছি তো জান।এত কেনো ভাবছো?
তুমি বুঝতেছ না আমাকে বিয়ে দিতে চাইলে আমি কি করব?তোমার কথা বললে আব্বু আমাকে মেরেই ফেলবে।
তাহলে বলার দরকার কি?তুমি সোজা চলে আসবে আমার কাছে।
কিভাবে আসবো?বললেই আসা যায়?
হুমম যায়।
আমার এখন এইসব ভালো লাগছে না।সহ্য করতে পারছি না।আম্মু এখনো বকেই চলেছে।
তোমার এইসব সহ্য করা লাগবে না।আমার জানটার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।
সহ্য না করে কি করবো??
তুমি আমার কাছে চলে আসতো জান।
কি যে বলো না….
I’m serious জান।তুমি চলে আসো।
হইছে এখন রাখি।আবার ফোন হাতে দেখলে আম্মু আরও বকবে।
ঠিক আছে জান।কিন্তু আমি যেটা বলছি ভেবে দেখো।তোমাকে এইসব সহ্য করতে হবে না।আমার কাছে চলে আসো।কোনো কষ্ট দিবো না তোমাকে।তুমি বললেই আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।বুঝছো জান??
হুমম খুব বুঝছি।এখন রাখি।বলেই মেঘলা ফোনটা কেটে বারান্দায় গিয়ে বসলো।
সীমান্ত হাসলো।যেনো বড়শিতে মাছ গেথেছে।বড্ড কুৎসিত দেখাচ্ছিল তাকে।
চলবে………..
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)