মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২৩

0
383

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৩

আনুমানিক তখন মাঝরাত।কারও আত্মচিৎকার ভেসে আসছে।মনে হচ্ছে প্রাণপণে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে কেউ।চিৎকারের শব্দ মৃদু থেকে এখন আর্তনাতে পরিণত হয়েছে।কানে প্রচন্ড জোরে এসেই লাগছে।এরকম শব্দের মাঝে যে কারোরই ঘুম ভেঙে যাওয়া স্বাভাবিক।মেঘলারও তাই হলো।কান ফাটানো অর্তনাতের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।
ঠিক কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।স্বপ্ন নাকি বাস্তবে আছে তাও বুঝতে পারছে না।ঘামে ঝুবুথুবু অবস্থা।পাশে টেবিল ক্লকে সময় দেখার চেষ্টা করলো।কিন্তু অন্ধকারে কিছু বুঝতে পারলো না।ওটা আবার স্বস্থানে রেখে দিল।
প্রচন্ড পানি পিপাসায় ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে।অন্ধকারে হাতড়ে পানির গ্লাসটা নিল।ডক ডক করে পুরো গ্লাসের পানিটা খেয়ে নিল।কিন্তু এতেও পিপাসা মিটছে না।আবার এখান থেকে উঠে যেতেও ইচ্ছে করছে না।ঠিক ইচ্ছে করছে না তা না।কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছে।কিছুটা অস্থির লাগছে আর সাথে কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে।
বালিশে হেলান দিয়ে বসলো।এখনো অস্থির অস্থির লাগছে।এত ভয়ঙ্কর স্বপ্নও হয়!!
কিছু সময় যাওয়ার পর একটু স্বাভাবিক বোধ করছে মেঘলা।আরেক গ্লাস পানি না খেলেই না।বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তখনই মেঘলার খেয়াল হলো ওর পাশে সীমান্ত নেই।এত রাতে এইখানে নেই…..তারমানে আপুর ঘরে আছে।ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো।করবে না কেন?হাজার হোক স্বামী তো,অন্য কারো পাশে সহ্য করা যায় নাকি??বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো।জীবনটা কি থেকে কি হয়ে গেল!!একটা ভুলের জন্য আজ…হুহ…নিজেকে এইসব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে হবে।থেমে গেলে চলবে না।
মেঘলা ডাইংরুমের দিকে পা বাড়ালো।পরপর দুই গ্লাস পানি খেলো।তবুও তৃষ্ণা মিটছে না।একটা বোতলে পানি ভরে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো।ঠিক তখনই ওর কানে ধস্তাধস্তির শব্দ এলো।বুঝতে বাকি নেই আপুর ঘর থেকে আসছে।অমানুষটা কি আপুকে মারধর করছে নাকি??আর একটু এগিয়ে যেতে লাগলো।সাবিবার ঘরের দিকে।

আর কতবার বলবো আমি মেঘলাকে কিছু বলিনি।ও আমার ছোট বোনের মত…ওর কাছে আমি তোমার নোংরামির কথা বলবো কি করে??
নেকামি….ছোট বোন….এইসব আলগা পিরিত আমার সামনে করবি না।
ঠিক আছে করবো না।
এই তুই আমার মুখে মুখে জবাব দেছ…এত সাহস তোর…..
তুমি যা বললে তার জবা…
আবার মুখে মুখে তর্ক করে…ঠাসসসসসস……কোনো কথা বলবি না।যা বলব শুধু তার উত্তর দিবি।
এত জোড়ে চড় দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে আলমারির সাথে বারি খেলো মাথায়।মাথাটা একদম ভনভন করে ঘুরছে।
এই তাকা আমার দিকে তাকা বলছি….
…..
তুই…তুই যদি কিছু নাই বলবি তাহলে মেঘলা আমার থেকে দূরে দূরে থাকে কেন??বল…
সেটা তো আমার জানার কথা না।তুমি আর তোমার নতুন বউ জানো।
চালাকি করার চেষ্টা করবি না।
আমি কোনো চালাকি করতে পারি না।সেটা তুমি ভালো পারো।
খপ করে চুলের মুঠি ধরে হেচকা টান দিয়ে সাবিবাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
এমনিতেই মাথায় ব্যাথা পেয়েছে তার উপর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরায় ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে।
তুই কি ভাবিস আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি??
চুল ছাড়ো,ব্যাথা পাচ্ছি।
ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো এই ব্যবস্থা।সত্যি কথা বল,না হয় আরও কত ব্যাথা পাবি তার কোনো হিসাবও নাই।
আমি কিছু বলি নাই,বলি নাই,বলি নাই…আর কতবার বলবো…
চুলের মুঠি আরও শক্ত করে চেপে ধরলো।
আআআ…ছাড়ো….
বল সত্যি কথা বল….
সত্যি বলছি…
তোর সাথে ওর এত ডলাডলি কিসের তাহলে??
ছাড়ো….বলছি..
এইবার সীমান্ত মুঠিটা ছাড়লো।বল….
মেয়েটা সারাদিন বাসায় থাকে,একা একা ভালো লাগে না তাই আর কি আমার সা….
তাই আর কি তুই একদম ওর সাথে গলাগলি শুরু করে সব বলে দিছস…
আমি কিছু বলি নাই।
আবার মিথ্যা কথা…..সামনে থাকা পানির গ্লাসটা ছুঁড়ে মারল সাবিবার দিকে।
মা…গোগোগো…..
সীমান্ত যেনো নিজের মধ্যেই নেই।জানোয়ারের পরিণত হয়েছে।
দরদর করে রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে সাবিবার কপাল থেকে।
এতে সীমান্তর কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।

গোঙানির শব্দ স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।নিশ্চয়ই আপুর কিছু হয়েছে।এইখানে এইভাবে দাড়িয়ে থাকার কোনো মানে নেই।যা হবার হবে।আজ আর চুপ করে থাকবে না।আমার কথা ভেবে আপু এত কষ্ট সহ্য করবে!!এইটা আর হতে দেওয়া যাবে না।বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছে মেঘলা।খুব সাহস নিয়েই দরজায় হালকা করে টোকা দিল।
একবার,দুইবার,তিনবার….কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।মেঘলার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিচ্ছে।
আপু ঠিক আছে তো??প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে,ভয়ও লাগছে আপুর কথা ভেবে।আল্লাহ আপু যেনো ঠিক থাকে।
এইবার জোরে জোরে টোকা দিতে লাগলো।
গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কোন রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
মেঘলা এইবার চিৎকার করে ডাকতে লাগল।
আপু..আপু…
….
গেটটা খুলো না…..
…..
আপু ও আপু ঠিক আছো তুমি???
……..
ভিতর থেকে কেমন যেন শব্দ আসছে আপু….
……
আপু আমার খুব ভয় লাগছে..
…..
প্লিজ আপু প্লিজ গেট খুল…
……
আপু…
……
আপু আমার কথা শুনতে পাচ্ছ???
……
আপু আমার সত্যিই খুব ভয় লাগছে।তুমি ঠিক আছো….
…..
মেঘলা কাদঁছে।অঝোরে কাদঁছে।ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে।সব হারিয়ে আপুকে পেয়েছি।সেই আপুর কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাচব???আল্লাহ আপু যেনো ঠিক থাকে।আল্লাহ দেখো তুমি আমার আপুকে।ওই অমানুষটা আমার আপুকে মেরে ফেলবে।আল্লাহ বাঁচাও আমার আপুকে!!

সাবিবা হাতে ভর দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু জানোয়ারটা ওকে আটকে রাখছে।দুহাতে শক্ত করে মুখটা চেপে ধরে রাখছে।যার জন্য কথাও বলতে পারছে না।মেঘলার ব্যাকুল কান্না শুনতে পাচ্ছে,ওর প্রতিটা কথা শুনতে পাচ্ছে।কিন্তু কোনো কিছু করতে পারছে না।বলতেও পারছে না।
ভয়ও হচ্ছে।একবার যদি জানোয়ারটা বুঝতে পারে তবে মেঘলার উপর আমার মতই অত্যাচার করবে।ছোট মানুষ এমন পরিস্থিতি দেখে না জানি মুখ ফস্কে কিছু বলে ফেলে…..তাহলে এই জানোয়ারটা তো ওর উপরও অত্যাচার করবে……
চোখের পানি আর কপালের রক্ত মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারব…জানি না…কিন্তু যতক্ষন পারি এরমধ্যে কিছু একটা করতে হবে।

সীমান্তের শক্তির সাথে সাবিবা পেরে উঠছে না।তবুও প্রাণপণে চেষ্টা করছে এইখান থেকে বের হওয়ার।ওর দৃষ্টি এখন থেমে গেছে পাশে থাকা কেচিটার উপর।একবার ওইটা ধরতে পারলে…..
সীমান্তর নজর এখন সামনে…এই সুযোগেই বেড সাইড টেবিলের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিল।ওই অবস্থায় হাতড়ে কেচি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা…..

চলবে……

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here