মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২৯
সাবিবার শরীরটা সন্ধ্যা থেকেই কেমন যেনো খারাপ লাগছে।তাই ওকে মেঘলা রেস্ট করতে বলে একাই রাতের খাবার এর অ্যারেঞ্জ করছে।তবে সাবিবা তো বসে থাকার মেয়ে না।সামান্য শরীর খারাপ এর জন্য শুয়ে থাকবে নাকি?সে শুয়ে থাকতে তো পারলোই না উল্টা ড্রয়িংরুমে বসে সবজি কাটছে মেঘলার সাথে আর দুজনে গল্প করছে।মেঘলার কোনো কথাই সে শুনবে না এইভাবে বসে থাকতে মোটেই ভালো লাগে না।তাই মেঘলা আর বারণ করলো না,কিন্তু আজ রান্নাটা মেঘলা করবে বলে দিয়েছে,সেটা অবশ্য মেনে নিয়েছে।সাবিবার সাথে থেকে থেকে প্রায় সব রান্নাই মেঘলা করতে পারে এখন।একদম পাকা গিন্নি হয়ে গেছে যেনো।
আজকে রান্নার আয়োজন তেমন কিছু না।ঘরে যা ছিল তাই রান্না করলো।দুবোন মিলে খাবার খেয়ে আরেকটা প্লেটে খাবার বেড়ে ঢাকা দিয়ে রাখলো।ভালোবেসে না হোক মানবতার খাতিরে ওইটুকু করে ওরা।হ্যাঁ,খাবারটা সীমান্তর জন্যই বেড়ে রেখেছে।কখন আসে ঠিক নেই।মাঝে মাঝে খাবার খায় আবার মাঝে মাঝে খায় না।সে জন্যই মূলত খাবারটা বেড়ে রাখা।যেদিন খাওয়ার মন হবে সেদিন খাবার সামনে না পেলে সারাঘরময় এলোমেলো করে ফেলবে।যা খাবে তার চেয়ে বেশি নোংরা করবে।পরে ওদেরই সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে।তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই খাবার বেড়ে রাখে।
সাবিবা শুতেই ওর চোখ দুটো লেগে আসছে,টেনেও খুলে রাখতে পারছে না।ঘুমে চোখ দুটো পড়ে যাচ্ছে।শুয়ার পর পরই সাবিবা ঘুমিয়ে পড়ল।কিন্তু মেঘলার আজ বড্ড এলোমেলো লাগছে।কোনোভাবেই ঘুমাতে পারছে না।খাটে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু ঘুমই আসছে না।এইভাবে কতক্ষণ আর শুয়ে থাকবে!!একদমই ভালো লাগছে না।তাই উঠে জানালার পাশে দাঁড়ালো।বাইরেটা খুব শুনসান নিরব।সূক্ষভাবে কোনোকিছুর ডাক শুনা যাচ্ছে।হবে হয়তো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।অন্য কোনোকিছুরও হতে পারে।সেটা মেঘলা জানে না।আরেকটা শব্দ শুনা গেল,মনে হলো গেট খুলার শব্দ হলো।মেঘলা একবার সেদিকে কান দিয়ে আবার আপনমনেই রাতের প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।রাতের গভীরতার সাথে সাথে যেনো মেঘলা স্মৃতির গভীরে ডুব দিচ্ছে।কত সুন্দর ছিল ওর জীবনটা।মা বাবা আর রুদ্র।এই তিনটা মানুষ সবসময় আগলে আগলে রাখত কোনো কষ্ট যাতে ছুঁতে না পারে।কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।ছোট একটা ভুল পুরো জীবনটাই বদলে দিলো।না জানি ওরা কেমন আছে।খুব দেখতে ইচ্ছা হয় ওদের।কিন্তু নিয়তি আমাকে আজ কোথায় নিয়ে এলো……
এই তোমার বাসায় কেউ থাকে না??
থাকবে না কেনো??
তাহলে এইভাবে একটা অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসছ!!
এইটা কোনো বিষয়ই না।আমি রোজই এমন করি।
কি বলো??তোমার বাসার কেউ কিছু বলে না??
না।
কে কে আছে তোমার বাসায়???
দুইটা বউ।
কিহহ???দুইটা বউ থাকার পরও তুমি বাইরের মেয়েদের কাছে যাও???
হুহ এইসব কথা বাদ দিয়ে রুমে যাও।
আহা বলই না তোমার বউরা তোমায় স্যাটিসফাইট করতে পারে না??বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো রিনা।
সীমান্তর এইবার যেনো রাগটা মাথায় চড়ে বসবে।কিন্তু না সে নিজেকে সামলে নিল।আজকে পেটে টনিক কম পড়েছে কিনা।
রিনা থামতো।তুমি সামনের রুমটায় গিয়ে বসো আমি আসছি।
রিনা হাসি থামিয়ে একদম সীমান্তর কাছ ঘেঁষে হাতটা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদে ভেঙ্গে পড়া গলায় বলল,
ডার্লিং আমার যে বড্ড ক্ষিধে পেয়েছে।
সীমান্ত ব্রু কুচকে রিনার দিকে তাকালো।এ কেমন মেয়ে নিয়ে আসলো আজ।বড্ড বাজে বকে।বোধ হয় প্রফেশনাল না।মনে মনে ভাবছে আর বিরক্ত হচ্ছে।
ঠিক আছে আমি খাবার ব্যবস্থা করছি তুমি রুমের মধ্যে বসো।
তুমি কেনো খাবার ব্যবস্থা করবে???
তাহলে কে করবে??তুমি??
আমি কেনো??তোমার দুই দুইটা বউ থাকতে তুমি এইসব করবে??ওদের ডাকো।
ওদেরকে ডেকো না এইসবের মধ্যে।তুমি যাও আমি আসছি।
তুমিতো আচ্ছা বোকা!
সীমান্তর ব্রু জোড়া আরও সংকুচিত হলো।এই মেয়ে আসলেই বেশি বাজে বকে।
এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন??আমি কিছু ভুল বলিনি।তোমার বউরা তোমাকে খুশি করতে পারে না বলেই তো বাইরে এত টাকা খরচ করে সুখ খুঁজো।আবার ওদেরকে তুমি খাওয়াও পরাও আর টুকটাক ফরমায়েশ করাবে না???
ওরা আমার সব কাজই করে রাখে।এইসব তোমাকে ভাবতে হবে না।
জানি আমি বাইরের মেয়ে আমার এইসব বলা সাজে না তবু বলছি।তুমি বাসায় এসেছো কখন কই তোমার কোনো বউ কি আসছে??তোমার কি প্রয়োজন খোঁজ নিয়েছে??এমন কি তুমি রাতে খাবে কিনা বা তোমার জন্য কোনো খাবার ব্যবস্থা করেছে??করেনি তো।
আমার খাবার প্রতিদিনই টেবিলে ঢাকা দেওয়া থাকে।
হাহাহা….তুমিও না!!আসলেই বোকা তুমি।কেনো তোমার নিজের পছন্দে কিছু খেতে ইচ্ছে হতে পারে না??
পারে…
তবে তুমি কেনো ওদেরকে ডেকে বলছো না
ঠিক আছে বলবো অন্য কোনোদিন।
কেনো অন্যদিন??আজই বলবে আর এক্ষুনি।
আরে না না….আজ না…
তুমি চুপ থাকো।ওরা কোথায় থাকে আমাকে বলো আমি দেখছি।
সোজা গিয়ে একদম শেষের দিকের রুমটায় থাকে।কিন্তু তুমি কি করবে??
তুমি শুধু দেখো আমি কি করি।
সীমান্ত কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আর শোন..
হু
রিনা ওর ব্যাগ থেকে একটা কাগজে মুড়ানো বোতল বের করে সীমান্তর হাতে দিল।
সীমান্ত কিছু না বলে কাগজ সরিয়ে বোতলটা হাতে নিয়ে নির্বাক হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
রিনা আগ বাড়িয়ে নিজেই সিপি টা খুলে সীমান্তর দিকে এগিয়ে দিল।
সীমান্ত ক্ষানিক তাকিয়ে থেকে ডকডক করে গিলতে শুরু করলো।
আর রিনার চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠছে।
এই সময় আমাদের রুমে নক করছে কে???মেঘলার ভাবনায় ছেদ হলো।সে থমকে দাড়িয়ে আছে।সীমান্ত তো কখনো এদিকে আসে না।তাহলে আজ হটাৎ??কোনো কিছু হয়নি তো ওর??আপনমনেই আতকে উঠলো।এখনো যেনো মনের মধ্যে কোথায় একটা সূক্ষ অনুভূতি কাজ করে সীমান্তর জন্য।একবার সাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখলো।এতবার কড়া নাড়ার শব্দের মধ্যেও নড়ছে না মনে হয় শরীর বেশি খারাপ।থাক আপু ঘুমাক।আমিই দেখি কি হয়েছে।মেঘলা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে দরজা খুলে দিল।কিন্তু এ কে??অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘলা।
আপনি কে??
আমি যেই হই তুমি কি সীমান্তর ওয়াইফ??
মেঘলা এমন প্রশ্নে খুব বেশি ইতস্তত বোধ করছে।আসলেই তো আমি কি ওর বউ??
কি ভাবছ এত??শোনো সীমান্তর বউদের ডাকো।
মেয়েটার হাব ভাব দেখে বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা বিশেষ ভালো না।হয়তো সীমান্তর আজ রাতের পার্টনার।মেঘলা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
আপনি এইখান থেকে যান।পাশের রুমে আপনার কাজ এইখানে না।
শোনো মেয়ে আমার কাজ আমি জানি…সীমান্ত ওর বউকে ডাকতেছে ড্রয়িংরুমে,খুব দরকার নাকি…এক্ষুনি যেতে বলছে….
কথাগুলো বলেই মেয়েটা মুখের একটা অস্বাভাবিক ভঙ্গি করে চলে গেল।মেঘলা কিছু বুঝতে পারছে না।এদিকে আপু ঘুমে ডাকতেও ইচ্ছা করছে না।কিন্তু এখন কি করব??লোকটা তো আমাদের কখনো ডাকে না,আজ তবে কেনো খুঁজছে??ঠিক আছে তো মানুষটা??যতই খারাপ হোক সেতো মানুষ,তার সমস্যা হলে তো দেখা উচিত??মেঘলা যেনো অতল ভাবনায় ডুবে গেলো।
চলবে………
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)