মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৩৮
মুবিন হাসান এর চোখে বিস্ময়।
এ কাকে দেখছেন উনি!!
উনার সেই ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।এতটাই বড় হয়ে গেছে যে আরেকটা প্রাণ নিজের মাঝে বহন করছে।
মাঝে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে।
কত কি বদলে গেছে।
পরিবর্তন যেনো চোখে ভাসছে।
হাসি খুশি প্রানোউচ্ছ্বল মেয়েটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে।
শুকিয়ে গেছে।চোখে মুখে প্রাণ নেই।
তার থেকেও বড় কথা এত বছর পর মেয়েকে দেখছন থানায়!!
পুলিশ স্টেশনে কেনো??
এত বছর পর মেয়েকে দেখে ওনার এখন কি করা উচিৎ!!
ছুটে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া নাকি কড়া করে কিছু কথা শুনানো??
কিন্তু মুবিন হাসান কোনোটাই করলেন না।আসলে করার মতো অবস্থা নাই।
হাজারটা ফর্মালিটিজ করা লাগছে।জবাবদিহী করতে হচ্ছে।
এই মেয়েটা কি আপনার??
জি!
মেয়ের সাথের মেয়েটাকে চিনেন।
জি!
কি হয় আপনার??
আমার ছাত্রী।প্রাক্তন ছাত্রী।
আপনি কি জানেন আপনার মেয়ে এইখানে কেনো??
জি না!
তারপর সব কিছু মোটামুটি ওসির থেকে শুনে নিলেন।
একজন বাবার জন্য এইসব শুনা কতটা সহনীয়??
মুবিন হাসান মাথা নিচু করে শুধু শুনে গেলেন।
মেয়েটা এতগুলো বছর এত কিছু সহ্য করেছে??
চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।কিন্তু চোখ ফেটে বেরিয়ে আসছে না।
মেঘলার মনেও একই প্রশ্ন ঘুরছে।
এত বছর পর বাবাকে দেখেছে….ঠিক কি করবে এখন??
জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদবে??
নাকি পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইবে???
বাবা কি ওকে ক্ষমা করবে???
ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নাকি এইখানেই ফেলে যাবে??
ছটফট করছে।কি করবো??কি করা উচিত??
সাবিবা যেনো ওর মনের কথা বুঝতে পারল।
ওর কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলল,
এত ভাবিস না।স্যার তো তোর বাবা,তোকে অনেক ভালোবাসে।ঠিক বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
সাবিবার হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।
চোখের ভাষায়ও আশ্বস্ত করল সাবিবা।
সকল ফর্মালিটি শেষ করে এইবার ফিরার পালা।
মুবিন হাসান মেঘলাকে কিছু বললেন না।
শুধু সাবিবাকে বললো,তুমি যা করলে তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো।
স্যার এইভাবে বলবেন না।
মুবিন হাসান কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলেন।মাগো তুমিও আমাদের সাথে চলো।
সাবিবা শুরু থেকেই ইতস্তত করছে।ওর যাওয়ার জায়গা নেই বলে কি মেঘলার সাথে যাওয়া ঠিক হবে??এইটা তো একপ্রকার স্যার এর উপর চেপে বসা??
কিন্তু মেঘলার জোরাজুরি আর মুবিন হাসান এর বলায় না করতে পারল না,রাজি হয়ে গেল।
মেঘলা বাড়ি ফিরছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে নিজের বাড়ি যাচ্ছে।
সেখানে ওর সাথে কি হবে,কে কি বলবে জানে না।
তবুও খুব খুব ভালো লাগছে।
মা কি খুব কাদবে ওকে দেখে??বকবে নাকি রেগে গিয়ে কয়েকটা চড় টর দিবে!!
যতই বকুক মারুক আমি ঠিক সহ্য করে নিবো।
সবাই আমার জন্য বোধ হয় অপেক্ষা করছে।কতদিন পর দেখবো মাকে,আন্টিকে,রুদ্রকে!!
আচ্ছা বাবার সাথে রুদ্র কেনো এলো না??
ওকি আমার উপর এখনো রেগে আছে??নাকি বাবা ওকে কিছু বলেনি??
রুদ্র কি আগের মত আছে নাকি পরিবর্তন হয়ে গেছে??
যা কিছু হোক ঠিক মানিয়ে নিবো।
পেটের উপর আলতো করে হাত রাখলো।যখন জানবে ও মামা হবে তখন একটুও রাগ করে থাকতে পারবে না নিশ্চয়ই।
বেবীর কথা মনে পড়তেই অমানুষের কথা মনে পড়লো।না জানি কি অবস্থায় আছে।কিন্তু তার জন্য খারাপ লাগছে না।খুব ঘৃনা হচ্ছে লোকটার জন্য।
ভাবলেও অবাক লাগছে এই লোকটাকে ভালোবেসে বাড়ি ছেড়েছিল!!
মা বাবাকে কষ্ট দিছেছিল।
বেস্ট ফ্রেন্ড এর গায়ে হাত তুলেছিলো।
এই লোকটা কি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য???
কি করে আবার এই লোকটার ছলনায় বিশ্বাস করছিল??
অল্পের জন্য ওর সন্তানের জীবন….
না আর এইসব ভাবতে পারছে না।
তেল পেটে চিনচিন ব্যাথা করছে।এইটুকু সময়ের মধ্যে কম দকল তো যায়নি।
শরীরটা আর নিতে পারছে না।
সীমান্তের বাড়িতে যখন পুলিশ পৌঁছালো তখন শেষ রাত।
মেঘলারা থানা থেকে বের হওয়ার পর পরই পুলিশ অ্যাকশনে বের হয়েছে।
বাড়িটা বাইরএ থেকে তালাবন্ধ।
তালা ভেঙ্গে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলো।
পুলিশ ভিতরে তল্লাশি চালাচ্ছে।
সাবিবার ভাষ্য মতে ওর বরকে মাথায় আঘাত করে তার ঘরেই ফেলে রেখে ওরা পালিয়েছিল।
ঠিক সেভাবেই সীমান্তকে পুলিশ অজ্ঞান অবস্থায় পেল।বহু চেষ্টা করেও জ্ঞান ফেরানো গেলো না।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আঘাত পেয়েছে।এর মধ্যে কি জ্ঞান ফিরেনি??
মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে বুঝা যাচ্ছে।কপাল বেয়ে গালে অবধি শুকনো রক্ত চটচট করছে।
তাৎক্ষণিক তাকে রেসকিউ করে নিয়ে যাওয়া হলো।
কিন্তু অফিসার কয়েকজনকে নিয়ে পুরো বাড়ি সার্চ করলেন।
সন্দেহজনক বেশ কিছু ডকুমেন্ট পেলেন।একটা ভাঙ্গা ফোন,অনেকগুলো সিম কার্ড,একটা ছোট নোট বুক তাতে অনেকগুলো নাম্বার,কিছু প্যাকেট দেখে নেশাজাতীয় কিছু মনে হচ্ছে,অনেকগুলো ড্রিংকস এর বোতল কিছু খাওয়া কিছু ইনটেক আরও ছোটখাটো অনেকগুলো সন্দেহজনক জিনিষ পেলেন।
সেগুলো নিয়ে ওনারা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং বাড়িটা সিল করে দিয়ে গেলেন।
বাড়ির আশপাশটাও ভালো করে দেখে নিলেন।
বাড়িটা পরিত্যক্তই বলা চলে।
অর্ধেক কাজ হওয়ার পর কোনো কারণে বাড়িটার কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং বহুবছর ধরে এইভাবেই পরে আছে।
লোকালয় এইখান থেকে অনেকটা দূর।
আরো আশ্চর্য এর বিষয় হলো আশেপাশে এত আবাদি জমি পরে আছে তবু এইখানে কোনো চাষবাস নেই।
বাড়িটার মতোই চাষ যে বহুবছর হয় না তা ভোরের মৃদু আলোতে বেশ ভালোই বুঝা যাচ্ছে।
অফিসার শুধু রাতের জবানবন্দির কথা ভাবছেন।
এতগুলো বছর ধরে দিনের পর দিন দুটো মানুষ এইখানে বন্ধি ছিল কিন্তু কেউ সেটা টেরও পায়নি।
আর না পাওয়াটাও স্বাভাবিক।বাড়িটার অবস্থানই সেরকম।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে এমন জায়গা ঠিক করা হয়েছে।
Pre planning!!!
কিন্তু প্রশ্ন হলো নিজের বিয়ে করা স্ত্রীদের কেনো এইভাবে আটকে কিংবা লুকিয়ে রাখবে??
কি উদ্দেশ্য??
কেনো রাখবে??
এই বাড়িতে কি আরও কেউ ছিল??
মনে হচ্ছে না সেরকম।
তাহলে কি উদ্দেশ্যে শুধু এই দুইজনকেই আটকে রাখা হলো??
তার উত্তর সিমান্তই দিতে পারবে।তার জ্ঞান না ফেরা অব্দী কিছুই জানা যাবে না।
কিন্তু যতটুকু ক্লু আছে তার থেকে ইনভেস্টিগেশন করে কিছু পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
অফিসার এর কেনো যেনো মনে হচ্ছে বড় কোনো রহস্য রয়েছে এর মধ্যে।
ভোরের আলো ফুটছে।
বাড়িটা থেকে লোকালয়ে এসেছে অনেকক্ষণ।
স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে কথা বলা কিছু তথ্য পাওয়া গেলো।
কিন্তু তারা সীমান্ত কিংবা সাবিবা মেঘলা সম্পর্কে কিছু জানে না।
তাদের সাথে কথা বলে এইটুকু বুঝা গেছে,বাড়ির মালিককে কে বা কারা ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে।
বাড়ির মালিককে কেউ চেনে না।
অন্য কোনো এলাকা থেকে এসে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য এমন জায়গায় বাড়ি করতে চেয়েছিল।
কিন্তু কেউ বা কারা ভয় দেখিয়ে এই জায়গা ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
তাও বছর বিশেক আগের ঘটনা।
অফিসার যেনো কিছুটা বুঝতে পারলেন।কিন্তু সাবিবা আর মেঘলাকে আটকে কিংবা লুকিয়ে রাখার কারণ বুঝতে পারছে না।
এইখানটাতেই যেনো সব ধোঁয়াশা।
চলবে……..
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=169467331959466&id=140699218169611