মেঘলা আকাশে রূদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:০১

0
1957

মেঘলা আকাশে রূদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:০১

এইবারও পাশ করতে পারলি না?তুই সত্যি একটা গাঁধী।তোর দ্বারা কিছু হবে না।এই শোন আমি পাশ করিনি তোকে কে বলল?কে বলবে দেখাই যাচ্ছে তুই ম্যাথ এ গোল্লা পেয়েছিস।খবরদার গোল্লা পেয়েছি বলবি না।আমি ম্যাথ এ একটু কম পেয়েছি এই যা।ওই হল ফেইলই তো হল!!এই রুদ্র তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেনো?আমি রাগলে তোর কি?আমার অনেক কিছু,তুই আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড বুঝলি!বলেই মেঘলা রুদ্রর পিঠে একটা চাপড় দিলো।রুদ্র প্রচন্ড রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।এখন আন্টির সামনে কি করে যাবে সে?খুব বড় মুখ করে বলেছিল আন্টিকে এইবার মেঘলাকে ও ধরে ধরে ম্যাথ বুঝাবে।এইবার পাশ হবেই হবে।কিন্তু না এইবারও ফেইল করে বসে আছে।রুদ্র বুঝে পায় না,মেঘলার বাবা হলেন ম্যাথ এর প্রফেসর।আর উনার মেয়ের মাথায় ম্যাথ এর ম টাও নেই।আর মেঘলা মনের আনন্দে অন্যদের সাথে ফুচকা খেতে চলে গেলো।মাঠে দাড়িয়ে খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।পাশ ফেইল কোনটা নিয়েই তার মাথা ব্যাথা নেই।

মুবিন হাসান ও মমতা হাসান এর একমাত্র মেয়ে মেঘলা হাসান।মুবিন হাসান mathamatics এর প্রফেসর।মমতা হাসান আর পাঁচটা সাধারণ মহিলার মত স্বামী,সন্তান আর সংসার নিয়েই পরেই থাকেন।এক কথায় housewife।আর মেঘলার কাজ হল সাজগোজ,বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দেয়া আর ঘুরাঘুরি।পুরো এলাকাময় চষে বেড়ায়।খুব মিশুকে মেয়ে।ওর বন্ধুবান্ধব এর অভাব নেই।কিন্তু ওর বেস্টফ্রেন্ড হল রুদ্র।রুদ্রর একটাই প্রবলেম,সারাক্ষণ বড়দের মতো শাসন করে আর শুধু পড়া পড়া করে।মেঘলার ধারণা রুদ্র বড় হয়ে ওর বাবার মতো ইউনিভার্সিটিতে পড়াবে।হয়তো ম্যাথই পড়াবে।ও যা ভালো ম্যাথ এ।সারাদিন ম্যাথ নিয়েই হয়তো বসে থাকে।এর জন্যই ওর মা বাবা রুদ্রকে এত পছন্দ করে।রুদ্রর কথা বললে যেকোনো ব্যাপারে সাত খুন মাফ।

রুদ্র নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলে।ওর ভালো নাম রুদ্র মাহমুদ।মা রেহেনা মাহমুদের সেলাই এর সল্প উপার্জন আর রুদ্র কিছু ছোট বাচ্চা পরিয়ে যেটুকু পায় তা দিয়েই সংসার কোনোভাবে চলে যায়।ওর মায়ের চেষ্টায় ও এতদূর এসেছে।না হয় কবেই শেষ হয়ে যেত।রুদ্র যখন খুব ছোট তখন ওর বাবাকে হারায়।শুনেছে রোড অ্যাকসিডেন্ট এ মারা গিয়েছিল।ওর বাবাকে নিয়ে কোনো কথাই এখন আর ওর মনে নেই।মনে থাকবেই বা কি করে তখন সবে ওর বয়স এক বছর মতন।আর এখন ওর বয়স ১৬বছর। SSC দিবে এইবার।পড়ালেখা নিয়ে খুব সিরিয়াস।বিশেষ করে ম্যাথ খুব পছন্দ।অবসর সময়ে সিলেবাস এর বাইরের ম্যাথ করে সময় কাটায়।তবে খুব জেদি।আর অল্পতেই রেগে যায় তবে সে রাগ বেশিক্ষণ থাকেও না।তবে জেদ চেপে গেলে অন্য ব্যাপার।

মেঘলার বাবা মুবিন হাসান রুদ্রকে খুব পছন্দ করে।তিনি যেমন পছন্দ করেন তেমনি রুদ্রও উনাকে খুব পছন্দ করে।তিনি প্রায়ই ম্যাথ এর অনেক বই ওকে দেয়।মাঝে মাঝে ওর সাথে গণিতের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।সেসব রুদ্রর খুব ভালো লাগে সেজন্যই প্রায়ই মুবিন হাসান এর বন্ধের দিনগুলোতে মেঘলাদের বাড়ি যায়।মেঘলার মাও রুদ্রকে খুব পছন্দ করে।মেঘলা যতক্ষণ রুদ্রর সাথে থাকেন ততক্ষণ তিনি নিশ্চিন্ত থাকেন।কারণ মেঘলা যা দস্যি মেয়ে তার উপর পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ নেই।রুদ্রর সাথে থাকলে যাও একটু পড়ে আর এদিক সেদিক ছুটোছুটি কম করে।তবে মেঘলারও রুদ্রর মা রেহানা মাহমুদের সাথে খুব ভাব।নিজের মায়ের থেকে রেহানা মাহমুদের সাথে ভাব বেশি।আর রেহানা মাহমুদও তাকে নিজের মেয়ের জায়গায় বসিয়েছেন।বাড়িতে কিছু একটা স্পেশাল হলে মেঘলাকে না খাইয়ে নিজে মুখেও তুলবেন না।এ নিয়ে অবশ্য মেঘলা আর রুদ্রর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে যায়।তবে রুদ্র বেশি সুবিধা করতে পারেনা ঝগড়া করে।একে তো মেঘলা হার মানার মেয়ে তারউপর রেহানা মাহমুদ মেঘলাকেই সাপোর্ট করে যান।দুজনের হাজার অমিলের,হাজারো খুনসুটির মাঝেও দুজন দুজনকে বেশ বুঝতে পারে তাই হয়তো ওরা বেস্টফ্রেন্ড।

SSC পরীক্ষা শেষ হতে আর মাসখানিক সময় আছে।আজ স্কুলে মডেল টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।মেঘলা টেনেটুনে ৩৩ ও পায়নি।এই জন্য রুদ্রর খুব রাগ হচ্ছে।মেঘলার মা খুব টেনশন করে মেঘলা যদি পাশ করতে না পারে তাহলে মেয়েটাকে হয়তো এই বয়সেই বিয়ে দিবে।তাইতো রুদ্র আন্টিকে বলেছে মেঘলাকে ও ধরে ধরে ম্যাথ বুঝাবে যাতে পাশটা করতে পারে।কিন্তু মডেল টেস্ট এর রেজাল্ট দেখে রুদ্র খুব হতাশ হলো।এই মেয়েকে কি করে সে পাশ করাবে ভেবেই পাচ্ছে না।আরও বেশি করে সময় দিতে হবে,ধরে ধরে শুধু ইম্পরটেন্ট ম্যাথগুলো বারবার প্রেকটিস করাবো যাতে পাশটা করতে পারে।তবে আজ আর যাবে না।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে মেঘলার উপর।হয়তো আরো দুটো কঠিন কথা বলে ফেলতে পারে।পরে নিজেই কষ্ট পাবে।এই হলো আরেক সমস্যা।মেঘলার কষ্ট হয় বা মন খারাপ হয় তাহলে রুদ্রই কষ্টটা বেশি পায় যেনো।আর মেঘলার চোখে পানিতো ও সহ্যই করতে পারে না।আর মেঘলাও এর সুযোগ নেয়।রুদ্র একটু কিছু বলার আগেই মুখটা এমন করে যে রুদ্র আর কিছু বলতেই পারে না।আর বলবেই বা কি করে ওমন মায়া মায়া মুখের দিকে তাকিয়ে তো এমনিতেই কিছু বলা যায় না।আর সে মায়া মাখা মুখে যদি কালো মেঘ নেমে আসে তাহলেতো যে কারোরই মনে বিষাদ নেমে আসবে।আর রুদ্রর তো আরও বেশি কষ্ট হয়।শুধু কি মেঘলা ওর বেস্টফ্রেন্ড বলেই এমন হয়?নাকি এরচেয়েও গভীর কিছু আছে ওদের মধ্যে নাকি শুধুই রুদ্রর মনেই এমন হয়?তার উত্তর রুদ্রর অজানা।অবশ্য সে কখনো জানার বা বুঝতে চেষ্টাও করে না।

জানুয়ারি মাসে সচরাচর বৃষ্টি হয় না।যদিও বা হয় তা ঠিক বৃষ্টি না মনে হয় আকাশ ফুঁড়ে বরফের বড় বড় ফোঁটা পড়ছে।এইরকম বৃষ্টিতে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ ভিজতে পারেনা,আর কেউ যদি ভিজে তবে তার মস্তিষ্ক বিকৃত এটা রুদ্রর ধারণা।এই মুহূর্তে তার সামনে কাক ভেজা হয়ে ঠকঠক করে কাপছে মেঘলা।বৃষ্টি পছন্দ বলে কেউ মাঘ মাসের এইরকম বৃষ্টিতেও ভিজতে পারে তা রুদ্রর কল্পনারও অতীত।মেঘলা যখন ছাদ থেকে কাপতে কাপতে নামছে তখনই রুদ্র ছাতা ভাঁজ করে নক করতে যাচ্ছিল।তবে মেঘলাকে ভিজতে দেখে অবাক হলেও ওর দৃষ্টি আটকে যায় মেঘলার দিকে।

চলবে………..

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here