আমার বিসিএস ক্যাডার বয়ফ্রেন্ড রেখে আমি কখনোই একজন আনকালচার, গেঁ*য়ো, সামান্য আয়ের মাদ্রাসার শিক্ষক কে বিয়ে করতে পারব না বাবা। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। তুমি ভাবলে কি করে বাবা যে মেয়ে হাজার হাজার ছেলের ক্রাশ সে কি না বিয়ে করবে একজন অশিক্ষিত , আনস্মার্ট ছেলেকে? কখনোই না।
সামান্য আয়ের একজন মাদ্রাসার শিক্ষক যে নিজের ইচ্ছায় তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এইটা তোমার সৌভাগ্য। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে কোনদিন বিয়ে দিতেই পারব না। সারাজীবন আমার ঘা*ড়ে বসে থাকবে। তুমি যা করে বেড়াচ্ছো, তোমার জন্য তো আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারি না।সবাই বলে আমি নাকি তোমাকে শিক্ষা দিতে পারি নি। আমার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সবাই। অথচ তোমার বোন শীতল কে দেখ ওর নাম যেমন শীতল তেমনি মেয়েটা ও শীতল প্রকৃতির।
কাকে আমার বোন বলছ বাবা?শীতল তো আমার আপন বোন নয়। আমার স*ৎ বোন।এক গাছের ছা*ল যেমন অন্য গাছে জোড়া লাগে না , তেমনি স*ৎ কখনো আপন হয় না।তাই আমার সাথে কখনো শীতলের তুলনা করবে না। তোমার যেহেতু ছেলেটা কে অনেক পছন্দ হয়েছে তাহলে তোমার শীতল প্রকৃতির মেয়ের সাথে তার বিয়ে দাও। আমাকে নিয়ে পরে আছো কেন? আমি আবার ও বলছি বাবা, আমি এই বিয়ে করতে পারব না।
দিন দিন অনেক নি*র্ল*জ্জ হয়ে গেছ তুমি। বাবার সামনে বয়ফ্রেন্ডের কথা বলতে ও দ্বিধাবোধ করছো না।
তোমার বিয়ে এই ছেলের সাথেই হবে, এইটাই ফাইনাল। আমি আর তোমার বাঁ*দ*রা*মি সহ্য করতে পারছি না।
আমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছি বাবা।তাই আমার জীবনের সমস্ত সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারো না। তাছাড়া লাইফ আমার, সংসার ও করব আমি। তাহলে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি কেন নিতে পারব না?
তোমার হয়তো একজন বিসিএস ক্যাডারের আয়ের সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই,থাকলে আমাকে কখনো একজন সামান্য আয়ের মাদ্রাসার শিক্ষকের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হতে না।
টাকা কখনো মানুষ কে সুখ দিতে পারে না।এ কথা টা আজ না বুঝলে ও একদিন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে।
আমি কুয়াশা রহমান। হিসাববিজ্ঞান নিয়ে অনার্স করছি ।বলতে গেলে আমার নিজের প্রচেষ্টায় আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমার বয়স যখন আট বছর তখন আমার আম্মা মা*রা যায়। আমার আর কোন ভাই বোন ছিল না। আম্মা মা*রা যাওয়ার পর থেকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠি আমি। যে বয়সে অন্য মেয়েরা মায়ের আঁচল ধরে বেড়াতো আমি সেই বয়সে নিজে নিজে চলতে শিখেছি।বাবা তার ব্যবসায়ের কাজে বেশি ভাগ সময় বাইরে থাকত। আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না তখন। মায়ের শাসন, আ*দ*র, ভালোবাসা ছাড়া হয়ে উঠতে লাগলাম একটা উ*শৃ*ঙ্খ*ল প্রকৃতির মেয়ে।
আম্মা মা*রা যাওয়ার এক বছর পরে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী অনেক ভালো একজন মহিলা, নামাজ পড়ে পর্দা করে।শীতল তার প্রথম স্বামীর মেয়ে।শীতল ও তার মায়ের মতো নামাজি, পর্দাশীল,ভদ্র । কিন্তু তাদের কে আমি কখনো আমার আম্মার জায়গা আমার বোনের জায়গা দিতে পারি নি।
তারা চাইত আমাকে তাদের শিক্ষা দিতে। কিন্তু আমার কাছে আধুনিক, আমার উ*শৃ*ঙ্খ*ল জীবন টা বেশি ভালো লাগতো।
ও হো আমার আর ও একটা পরিচয় আছে।যার জন্য আমার বাবা সমাজে মুখ দেখাতে পারে না। আমি একজন টিকটক সেলিব্রিটি। টিকটকে আমার প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ফলোয়ার্স। বর্তমানে রাতারাতি সেলিব্রিটি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় টিকটক।অল্প সময়ে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাপটি। বর্তমানে ফানি ও শর্ট ভিডিওর সর্ব বৃহৎ অ্যাপ এটি। বিভিন্ন গানের অংশ, সিনেমা , নাটক বা কৌতুকের ডায়ালগগুলোর সঙ্গে অভিনয় করে রাতারাতি হাজার হাজার ফলোয়ার পেয়ে যাচ্ছে অনেকেই। আর এই টিকটকে ফলোয়ার বাড়ানোর নে*শা*য় আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১ সপ্তাহ আগে
বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী হঠাৎ করে প্র*চ*ন্ড অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে অসুস্থ অবস্থায় দেখে আমার আম্মার মৃ*ত চেহারা
চোখের সামনে ভেসে ওঠে। খুব মায়া হয় তার জন্য। বাসায় কেউ না থাকার কারণে তাকে নিয়ে আমার হসপিটালে যেতে হয়। ডক্টর দেখিয়ে বের হয়ে দেখলাম আনুমানিক ২৪_২৫ বছর বয়সী এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে এবি নে*গে*টি*ভ ডোনার খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার মায়ের জন্য। একজন ডোনার নাকি র*ক্ত দেওয়ার কথা বলে তাদের থেকে টাকা নিয়ে পরে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। মহিলা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মানসিক ভাবে অনেক ভে*ঙ্গে পরেছে। কারণ এবি নে*গে*টি*ভ গ্ৰুপের র*ক্ত জোগাড় করা এক ধরনের অসম্ভব ব্যাপার। অনেক টা সোনার হরিণের মতো। পৃথিবীর মাত্র ১% মানুষের র*ক্ত এবি নে*গে*টি*ভ। এমন অবস্থায় যদি ডো*নার পেয়ে ও ডো*নার মিসিং হয়ে যায় তাহলে তো রোগীর জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।
এদিকে ডক্টর এসে বললেন, তাড়াতাড়ি র*ক্তের ব্যবস্থা না করলে রোগীকে বাঁ*চা*নো যাবে না।
আমি ভাবলাম আমার টিকটকে ফলোয়ার বাড়ানোর এই এক সুবর্ণ সুযোগ। ভাগ্যক্রমে আমার র*ক্তের গ্রুপ এবি নে*গে*টি*ভ। একবার যদি আমি ব্লা*ড দেওয়ার ভিডিও টিকটকে আপলোড করি আমার ফলোয়ার সংখ্যা তরতর করে বেড়ে যাবে।
যদিও আমি ইনজেকশনে ভ*য় পায় তবু ও ভ*য় কে জয় করে এক ব্যাগ র*ক্ত দিলাম আমার নিজের স্বার্থে।
কিন্তু আমি কখনোই ভাবিনি সামান্য এক ব্যাগ র*ক্তের ঋণ শোধ করতে আন্টি টা আমাকে তার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাইবে।
যদিও আন্টি টা খুব ভালো। তাদের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। আংকেল প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন । দুই ছেলে মেয়ে তার।মেয়ের নাম নাদিয়া। পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়েছে।একটা মেয়ে বাবু ও আছে।
আর ছেলে রাজ। যদিও আমি দেখিনি তবে শুনেছি দেখতে অনেক আনস্মার্ট, মুখ ভর্তি দাড়ি। মাদ্রাসার লাইনে পড়াশোনা করেছে। আর এখন মাদ্রাসার একজন সামান্য আয়ের শিক্ষক।
বাবা যে এই রাজের মধ্যে কি দেখেছে আল্লাহ জানে।এই ছেলে নাকি আমাকে অনেক সুখে রাখবে। অথচ তার যে বেতন তাতে আমার এক মাসের পার্লার খরচ ও হবে না। কিন্তু আমি কিছুতেই এই রাজ কে বিয়ে করতে পারব না। প্রয়োজনে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাবো।
শাফিনের সাথে আমার পাঁচ বছরের রিলেশন। শাফিন বলেছিল ,সে বিসিএস ক্যাডার হতে পারলে আমাকে বিয়ে করবে। অথচ আজ যখন শাফিন কে ফোন করে বললাম শাফিন, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তুমি প্লিজ কিছু একটা করো। তুমি তো বলেছিলে ,তুমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমাকে বিয়ে করবে। তাহলে এখন দেরি না করে চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।
কুয়াশা আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না। আমাদের সমাজে একটা মানসম্মান আছে। আমার বাবা কখনোই তোমার মতো মেয়েকে তার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিবে না। তোমার মতো আধুনিক, উ*শৃ*ঙ্খ*ল মেয়ের সাথে প্রেম করা যায় , কিন্তু বিয়ে করা যায় না। আল্লাহ জানে কোন পাগলে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?
বাহ্ শাফিন। তোমরা ছেলেরা প্রেম করবে আধুনিক স্মার্ট মেয়ের সাথে ,আর বিয়ের সময় খুঁজবে দ্বীনদার , পর্দাশীল ,নামাজি মেয়ে , ব্যাপার টা কিন্তু দারুন। রিলেশনের এতো গুলো বছরে তোমার একবার ও মনে হয়নি আমি তোমার যোগ্য না, আমাকে তোমার পরিবার মেনে নিবে না। কিন্তু যখনই তুমি বিসিএস ক্যাডার হয়ে হয়ে গেলে তখনই তোমার আমাকে নিয়ে সমস্যা শুরু হল।কারন কি জানো ? এখন শুধু মেয়েরা না মেয়ের আম্মারা ও তোমার পিছনে লাইন দিবে , তাদের মেয়েটা কে একজন বিসিএস ক্যাডারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।কই আমি ও তো একজন টিকটক সেলিব্রিটি। তোমার থেকে হাজার গুণ ভালো ছেলেরা আমার জন্য পা*গ*ল। তবুও তো আমি তোমাকে ছেড়ে যায় নি। আসলে ভালোবেসে সবাই পাশে থাকতে পারে না।পাশে থাকার জন্য সাহস লাগে। যা তোমার মধ্যে নেই। যায় হোক অনেক কথা বলে ফেলেছি কিছু মনে করো না, রাখছি বাই ভালো থেকো।
অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না বিয়েটা আটকাতে। অবশেষে রাজি হয়ে গেলাম বিয়েতে। কিন্তু মন থেকে মানতে পারলাম না।
চলবে?
#ভালোবাসি_প্রিয়
#অপরাজিতা_রহমান
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন