মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_২৫.

0
1951

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_২৫.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

মাহতিমের কথা শুনে প্রচণ্ড লজ্জায় নত হলো মেহনূর। আঁটসাঁট হয়ে জিপের সিটে কুঁকড়ে বসে পরলো। এই লোকটা যে মারাত্মক লজ্জায় ফেলে দিয়ে খুব মজা পাচ্ছে সেটা মেহনূর ভালোকরে বুঝতে পারলো। মেহনূরের লজ্জা-করুণ মুখটা দেখে মাহতিম প্রশস্ত একটা হাসি দিলো। সেই হাসির দিকে তাকানো এখন মেহনূরের জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার, মেহনূর তাড়াতাড়ি নিজেকে আড়াল করার জন্য মাথাটা একটুখানি নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে নিলো। মাহতিম চুপচাপ সেখান থেকে সরে এসে জিপে উঠে বসলো। কি-পয়েন্টে চাবি ঘুরিয়ে দ্রুত জিপটা স্টার্ট দিয়ে ফেললো। মৃদ্যু একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকা জিপটা মূহুর্ত্তের মধ্যে শো করে জড়তা ভেঙ্গে দিলো। রেসোর্টের নিরবতা ক্ষুণ্ণ করে জিপটা গেট পেরিয়ে মেঠোপথ ধরলো। সৌভিকদের মাইক্রো এখন বেশ দূরত্ব নিয়ে এগিয়ে আছে, কমপক্ষে এক থেকে দুই গজের সমান হবে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই বলে মাইক্রোটা বেশ স্পিডের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। মাহতিম জার্নিটা উপভোগ করার জন্য ইচ্ছে করে জিপের স্পিডটা কমিয়ে দিলো, তুঙ্গস্পর্শী স্পিড না দিয়ে যথাসম্ভব নরমাল স্পিডে জিপ চালাতে থাকলো। মেহনূর জিপে সিটবেল্টটা বাধার জন্য প্রচণ্ড অস্বস্তি অনুভব করছিলো, বারবার সেটাকে দুহাতে টেনে ঢিলা করার চেষ্টায় ছিলো। এদিকে মাহতিম পুরোদমে ড্রাইভের দিকে মনোযোগ দিলে মেহনূরের দিকে মনোযোগ দিতে পারেনি। রাস্তাটা যতই পাকা হোক, সেখানে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত করা ছিলো, কিছু জায়গা আবার উঁচুনিচু বেখাপ্পা মতোন হয়ে আছে। এটুকু পথ খুব সাবধানে পার হওয়া লাগে। মাহতিম ড্রাইভের দিকে ধ্যান দিতেই মেহনূর খুব সর্তকতার সাথে সিটবেল্টটা খুলে ফেললো। সেটা মাহতিমকে একটুও বুঝতে না দিয়ে সিটের পেছনে ছেড়ে দিলো। অনেকক্ষণ পর শান্তিতে-স্বস্তিতে-আরামে বসতে পেরে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মেহনূর। রাস্তার দুধারে বিস্তৃত ধানক্ষেত যাচ্ছে এখন, ধানক্ষেতটা পেরুলেই লোকালয়ের রাস্তাটা এসে পরবে। মাহতিম একটা ছোট্ট চালাকি করে লোকালয়ের পাশের রাস্তাটা ধরে ফেললো, জিপটা আসল রাস্তা বাদ দিয়ে বাদিকের রাস্তাটা ধরেছে তখন। এই রাস্তাটা যে লং টার্মের রাস্তা, সে বিষয়ে মাহতিম আগে থেকে জেনে রেখেছিলো। মেহনূর এতোক্ষন অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো, প্রাকৃতিক দৃশ্যপট শান্তমনে উপভোগ করছিলো। কিন্তু রাস্তা বদলের ঘটনা দেখে সাথে-সাথে ওর ভ্রুঁদুটো কুঁচকে এলো। সেই কুঁচকানো ভ্রুঁ তুলে ডানে মুখ ফিরিয়ে মাহতিমের দিকে তাকালো। এদিকে মাহতিম জিপের সাইডবক্স থেকে ক্যানের বোতল নিয়ে ছোট-ছোট চুমুক দিচ্ছিলো। ডানহাতে ক্যান ধরে বাঁ-হাতে ড্রাইভ করতে ব্যস্ত ছিলো। মেহনূর ওর স্বাভাবিক ভঙ্গির অবস্থা দেখে ভ্রুঁ কুঁচকানো মুখে কৌতুহল কন্ঠে বললো,

– আপনি অন্য রাস্তা ধরলেন যে?

মাহতিম ক্যানে আরেক চুমুক দিয়ে সেটা ডানহাত থেকে বামহাতে চালান দিলো। ড্রাইভটাও তখন ডানহাতে করতে লাগলো। মেহনূরের উত্তরটা দুকানে শুনলেও না-শোনার মতো ভঙ ধরে থাকলো। মেহনূর ওর চুপটি দেখে ওর থেকে উত্তরের আশাটা ভঙ্গ করে বামে ফিরে তাকালো। চলতি জিপে ছুটে যাওয়া সময়গুলো নিরবে অনুভব করতে থাকলো মেহনূর। মাহতিম জিপের জার্নিটুকু উপভোগ্য করার জন্য গ্রামের এই রাস্তাটা ধরেছে, এই রাস্তাটা এখন জনমানবশূন্য বলে আরো চমৎকার লাগছে। মাহতিম ক্যানের অর্ধেক কোক খেয়ে সেটার মুখ কোনোমতো আটঁকে দিলো, লাল ক্যানটা জিপের সামনেই ঠিক গ্লাসের কাছে রেখে দিলো। মেহনূরের উদ্দেশ্যে কিছু জানার ইচ্ছায় প্রশ্নাত্মক গলায় বললো,

– তুমি সবসময় বড়দের মতো আচরণ করো কেনো?

কানের ছিদ্রপথে সুরসুর কথাটা যেতেই মেহনূর আচমকা চমকে উঠলো। চমকানো দৃষ্টি দিয়ে তৎক্ষণাৎ মাহতিমের দিকে ফিরে তাকালো। শান্ত মুখটা মিনিটের মধ্যেই কালো হয়ে ভাবশূন্য আকার ধারণ করলো। মাহতিম ড্রাইভের ফাঁকে-ফাঁকে মেহনূরের দিকে তাকাচ্ছিলো। ওটুকু তাকানোর মধ্যেই বুঝতে পারলো মেহনূর এমন প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেছে। ওর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে বেশ অনুভূতিহীন দেখাচ্ছে। মাহতিম জিপের স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে আবার প্রশ্ন করলো,

– তুমি যে একটা নরমাল মেয়ের মতো আচরণ করো না সেটা কি জানো না? বয়স কতো তোমার? মাত্র সতের চলছে, অথচ বিহেব দেখাচ্ছো একটা পচিঁশ বয়সী মেয়ের মতো। এটা কেনো করছো মেহনূর?

প্রশ্নগুলো শোনার পর থেকে হতভম্ব হয়ে আছে মেহনূর। মাহতিমের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই শুকনো গলায় ঢোক গিললো। ছোট্ট একটা ঢোক গেলার পর বুকভরা নিশ্বাস টেনে নিলো। কিন্তু মাহতিমের উত্তরগুলো কিভাবে দিবে সেই প্রস্তুতি ওর হচ্ছে না। মাহতিম সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

– তুমি আমার কাছে নিশ্চয়ই কোনোকিছু লুকাতে চাইবেনা। কিন্তু তোমার ব্যাপারে এ্যা-টু-জেড আমার জানা হয়ে গেছে। আমি যে সবকিছু জানি সেটা কি তুমি জানো? জানো না। আমি যেহেতু তোমার প্রতি সফট হয়ে গেছি, তোমার প্রতিটা ব্যাপারে আমার জানা হয়ে গেছে বুঝছো। তোমার বিষয়ে জানা কোনোকিছুই বাদ নেই মেহনূর আফরিন, তোমার ব্যাপারে এভ্রি ডিটেলস আমার ফোনের নোটপ্যাডে সেভ করা আছে। আমি এমনে-এমনেই তোমার প্রতি কনফেস করতে যাইনি। কালরাতেও যদি সবসময়ের মতো চুপ মেরে থাকতে, তাহলে দেখতে আমি তোমার সাথে কি করতাম। আজীবনের জন্য তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যেতাম। তুমি আমাকে চিনো না মেহনূর আফরিন। তোমার ব্যাপারে চিরুনি অভিযান চালানো আমার বহুআগেই হয়ে গেছে। এখন শুধু এটাই বলবো, নিজেকে বয়স অনুযায়ী চিনতে শিখো। এর চেয়ে বেশি ভাবতে গেলে তোমার জন্য সেটা খারাপ হবে। আগামীর দিনগুলো আমার সাথে কাটানোর জন্য প্রস্তুতি নাও। সবার আগে নিজের বিহেবিয়ার চেন্ঞ্জ করো। আমি যেহেতু তোমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের কাছাকাছি, সেহেতু তোমার কাছে যেগুলো সমস্যা মনে হবে, সেগুলো আমার কাছে নরমাল ব্যাপার। তাই শুধু একটা জিনিসই বলবো, তোমার দায়িত্ব নেওয়ার ক্যাপাব্লিটি আমার ভালোমতোই আছে। তোমাকে কিভাবে রাখতে পারবো সেটা আমার সঙ্গে এলেই বুঝতে পারবে। এখন শুধু বিয়ের জন্য যে প্রস্তাবটা রেখে দিবো, তাতে ‘ হ্যাঁ ‘ বলে দিবে। আমার কথা কি তুমি বুঝতে পেরেছো?

মাহতিমের কথা শুনে মেহনূর শুধু ঢোকের-পর-ঢোক গিলছিলো। মাহতিম এতোদিন ‘ অসভ্য ‘ আখ্যা পেয়ে শুধু নিচু-মুখে চলাফেরা করছিলো ঠিকই , কিন্তু ভেতরে-ভেতরে যে চালাকের সীমানা পেরিয়ে অন্য গণ্ডিতে চলে যাচ্ছিলো, সেটা আজ বুঝতে পারলো মেহনূর। মেহনূর নিজেকে শান্ত ভাবে স্থির রেখে অনেকক্ষন পর মুখ খুললো,

– আপনি আমার ব্যাপারে কি জানতে পেরেছেন?

মেহনূরের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে একপলকের জন্য তাকালো মাহতিম। ওর নিবিষ্ট করা আঁখিদুটোতে বহু প্রশ্নের ঢল দেখা যাচ্ছিলো তখন। মাহতিম ওর মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার সামনের দিকে তাকালো। স্ট্রিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে মেহনূরের দিকে বাঁ-হাতটা এগিয়ে দিলো। সেই এগিয়ে হাতটা এসে মেহনূরের ডানগালটা স্পর্শ করলো। মেহনূর হাতটার দিকে একপলক দৃষ্টি দিয়ে সোজা মাহতিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহতিম একমনে ড্রাইভ করতে থাকলে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,

– স্কুলের ওয়াশরুমে পুরো দুদিন আঁটকা ছিলে সেটা জানতে পেরেছি। আরো অনেক ব্যাপার জানতে পেরেছি, কিন্তু আজকে সেটা বলতে চাচ্ছিনা।

মাহতিম কথাটুকু শেষ করে মেহনূরের গালটা ছেড়ে দিলো। পূর্বের জায়গায় হাত এনে ড্রাইভ করতে লাগলো। মেহনূর পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলে মাহতিম আর কোনো কথা তুললো না। মেহনূর মাথা নিচু করে আচঁলটার শেষপ্রান্ত দিয়ে আঙ্গুলে খুট পাকাতে থাকলো। মাহতিম ছিমছাম সময়টা পালটানোর জন্য অন্য কথায় ফিরে এলো। সহজাত হাসিতে মেহনূরের উদ্দেশ্যে বললো,

– তোমার দাদাভাইয়ের কাছে কাল প্রস্তাব রাখবো ভাবছি। সেটা কি আজ করবো কিনা বুঝতে পারছিনা। কি করা যায় বলোতো? আজই কি সবকিছু ফাইনাল করে ফেলবো?

মাহতিমের কথায় বিন্দুমাত্র মনোযোগ দিলো না মেহনূর। ওর দিকে ফিরেও তাকালোনা একদম। মাহতিম ওর নিরবতা ভঙ্গ করার জন্য এবার অন্য সুরে বলে উঠলো,

– আচ্ছা মেহনূর, তোমার দাদাভাই কি আমায় পছন্দ করবে? আসলে তোমাদের এখানে শুনলাম, মেয়ের বয়স পনের পার হলে বিয়ের পিড়িতে তুলে দেয়। এটা নিয়ে অবশ্য টেনশন নেই, সমস্যাটা হচ্ছে অন্য দিকে। আল্লাহ্ না করুক, তোমার দাদাভাই যদি আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়, তখন তুমি কি সাথে যাবে?

মেহনূর নির্বাক ভঙ্গিতে চুপ থেকে আচঁলে খুট পাকাতে থাকলো। এদিকে মাহতিম উত্তরের জন্য বারবার মেহনূরের দিকে তাকাতে লাগলো। মেহনূর একটু সময় নিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলে দিলো,

– আমি কোথাও যাবো না।

এমন উত্তর শুনে চলন্ত জিপটা তুমুল স্পিডের মধ্যেই বিকট শব্দে থেমে গেলো! আকস্মিকভাবে ব্রেক কষার জন্য মেহনূর তাল সামলাতে না পেরে জিপের একদম সামনে যেয়ে বারি খেলো। মাহতিম দুহাতে শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে আছে, কর্ণধারে আচমকা অপ্রতিভ উত্তর শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিজেকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য শক্ত হয়ে বসে আছে। মেহনূরের দিকে তাকানোর আগে দ্রুত চোখদুটো বন্ধ করলো মাহতিম। শান্ত মেজাজটা চট করে বিগড়ে গেলে সেটা সামলানো বড়ো মুশকিল। মাহতিম চোখ বন্ধ করা অবস্থায় নিচের ঠোঁটটা অস্বাভাবিক কায়দায় কামড়ে ধরলো। স্টিয়ারিংয়ে দুহাত রেখে মাথাটা একটু নিচু করে নিলো। বেশ শব্দ করে দুঠোঁট ভেদ করে জোরেসোরে নিশ্বাস ছাড়লো। মাথা নিচু করা অবস্থাতেই জিপের সামনে থেকে ক্যানটা নিয়ে নিলো। ক্যানের মুখটা আলগা ছিলো বলে সেটা বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে খুলে ফেললো। ঢকঢক করে কয়েক ঢোক খেয়ে উত্তেজিত মেজাজটা শান্ত করলো। খালি ক্যানটা রাস্তার পাশে ছুঁড়ে মেরে মাথা তুলে বসলো মাহতিম। স্টিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে মেহনূরের দিকে তাকালো। মেহনূরের দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো মাহতিম! চোখের সামনে আবারও লালবর্ণের দেখা মিলেছে, মেহনূরের নিচের ঠোঁট থেকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত পরছে, ব্যথায় চোখদুটো খিঁচে আছে মেহনূর। শাড়ির আচঁলটা থুতনির কাছে চেপে থাকার জন্য রক্তের স্রোত আটকে যাচ্ছে, সেটা থুতনি গড়িয়ে টপটপ কলে নিচে তখন পরছেনা। মাহতিম তাড়াতাড়ি পাগলের মতো নিজের সিটবেল্ট খুলে মেহনূরের মুখটা কাছে টেনে আনে। জিপের স্টোর পকেটে যে টিস্যুগুলো ছিলো, সেগুলো দ্রুতগতিতে বের করতে থাকে। প্যান্টের ব্যাকপকেটে হাত ঢুকিয়ে ওয়ালেট বের করে। তাড়াতাড়ি ওয়ালেট খুলে এ্যালকোহল প্যাডের একটা প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলে। সাদা কাগজের ছোট্ট প্যাকেট থেকে তুলার মতো এ্যালকোহল প্যাড বের করে। প্যাডটা নিয়ে সেটা ওর কাঁটা ঠোঁটে চেপে ধরে। ওমনেই মেহনূর প্রচণ্ড ব্যথায় গোঙানির সুর তুলে কুঁচকানো চোখে কেদেঁ দেয়। রক্ত পরা বন্ধের জন্য কাটাস্থানে এ্যালকোহল প্যাডটা টিপ দিয়ে ধরে আছে মাহতিম। প্রায় কয়েক মিনিটের মতো ওভাবেই ধরে রাখার পর ঠোঁট থেকে প্যাডটা সরিয়ে ফেললো। রক্তাক্ত প্যাডটা রাস্তায় ফেলে দিয়ে আরেকটা প্যাকেট ছিঁড়ে নিলো। সেটা দিয়ে শেষবারের মতো জীবাণুমুক্ত করে ওর হাতে টিস্যুগুলো গুঁজে দিলো। মেহনূর তখন অশ্রুপূর্ণ চোখ খুলে তাকালে হাতের টিস্যুগুলো দেখতে পেলো। টিস্যুগুলো হাতের মুঠো থেকে ছেড়ে দিলে সেগুলো নিচে পরে গেলো। মাহতিম আড়চোখে ব্যাপারটা পুরোপুরি দেখলেও জিপ স্টার্টে ব্যস্ত হলো। এদিকে মেহনূর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দুচোখে তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে ধরলো। একবারের জন্যও সে মাহতিমের দিকে তাকালো না। মাহতিম এই ঘটনায় নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করলেও মুখ দিয়ে একটা কথা বললো না। পুরোটা রাস্তা একেবারে খামোশ থেকে মোল্লা বাড়ির সীমানার কাছে চলে আসলো। সৌভিকরা অনেক আগেই মোল্লা বাড়িতে পৌঁছে গেছে, তাই উঠোনের কাছটায় জিপ পার্ক করতে যেয়ে খালি মাইক্রোটা দেখতে পেলো। মাহতিম সারা রাস্তা শেষে এবার মেহনূরের দিকে তাকালো। মেহনূর কোনো কথা না বলে জিপ থেকে নামার জন্য পা বাড়িয়ে দিলো। ঠিক তখনই মাহতিম পেছন থেকে আদেশসূচকে বলে উঠলো,

– দাড়াও। আমি নামিয়ে দিচ্ছি।

মেহনূর কথাটা আমলে না নিয়ে এক ডাক দিয়ে শানাজকে ডাকলো। শানাজ ওর ডাক শুনে সাথে-সাথেই দৌঁড়ে এলো। শানাজের চোখেমুখে যে ভয় জড়ানো অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেটা দেখতে পেয়ে মেহনূর খুবই অবাক হলো। শানাজের হাত ধরে জিপ থেকে নামার সময় মেহনূর প্রশ্নটা করে বসলো,
– তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো বুবু? কিছু কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?

শানাজ মেহনূরের হাত ধরে ওকে নিরবমুখে নামিয়ে দিলো। মেহনূরের দিকে না তাকিয়ে আগে মাহতিমের দিকে তাকালো, মাহতিমও এদিকে কিছু একটা আচঁ করতে পেরে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু শানাজ সেদিকে না তাকিয়ে তখন মেহনূরের দিকে লক্ষ করে। মেহনূরের নিচের ঠোঁটটা কাঁটা দেখে কপালে ভাঁজ পরলো ওর। অস্থিরজনিত গলায় সঙ্গে-সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,

– ঠোঁটে কি হয়েছে মেহনূর? এভাবে ফুলে গেলো কি করে? কিভাবে ঠোঁট কাটলি তুই?

এই প্রথম শানাজের কথায় ভড়কে গেলো মাহতিম। মেহনূরকে যেভাবে জেরা করা হচ্ছে সেটা কেমন বেখাপ্পা লাগছে। প্রশ্ন করা পযর্ন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু সেই প্রশ্নের সাথে প্রচুর সন্দেহ মেশানো ছিলো। শানাজের কথাটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে মাহতিম বলে উঠলো,

– তুমি কি বলতে চাচ্ছো শানাজ? একজেক্ট কোন্ ইঙ্গিতে কথাটা তুমি বললে? তোমার প্রশ্ন করার স্টাইল তো আমার ভালো লাগলোনা।

শানাজ মেহনূরের হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। নতমুখে মাহতিমের উদ্দেশ্যে জোর দেখিয়ে বললো,

– আমাকে খারাপ ভাবে নিবেন না ভাইয়া। কিন্তু আপনাদের আসতে কি এতো টাইম লাগার কথা? আসতে কি একটু বেশি সময় হয়ে গেলোনা?

মাহতিম এবার কৌতুহল দৃষ্টি পরিবর্তন করে শক্ত দৃষ্টিতে তাকালো। বাঁ ভ্রুঁটা কপালের দিকে খানিকটা তুলে জিপ থেকে নেমে আসলো। শানাজের সামনে এসে হঠাৎ কি ভেবে বাড়ির চৌকাঠার দিকে তাকালো, ওমনেই ওর দৃষ্টিদুটো ভীষণভাবে তীক্ষ্ম হয়ে উঠলো। কপালের দুপাশ থেকে অসংখ্য ভাঁজ এসে ভ্রুঁ-দুটোকেও কুঁচকে দিলো। বাড়ির সবাই দরজার মুখে দাড়িয়ে আছে কেনো? মাহতিম ওদিকে দৃষ্টি রেখে পকেট থেকে ফোন বের করে নিলো। ফোনের পাওয়ার বাটনটা অন করে ফোনের স্ক্রিনটা চোখের সামনে ধরলো। একপলক সেদিকে তাকিয়ে খুবই ধীরগতিতে ফোনটা পকেটে ফেলে দিলো। হান্নান শেখের মুখের অবস্থাটা মাহতিমের কাছে পরিস্কার হয়ে উঠলো। মোল্লাবাড়িতে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে হয়তো। একটা বিরাট ঝড় আঘাত হানার জন্য বাজে ভাবে প্রস্তুত।

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here