মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৬৫. #ফাবিয়াহ্_মমো . অংশ ০২.

0
1544

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৬৫.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

অংশ ০২.

মুখের উপর কেউ যেনো ঠাস করে চড় মারলো। কথার আঘাতটা মূহুর্তের ভেতর পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরলো। অকল্পনীয় চিন্তায় স্থির হলো মেহনূর। মুখে কোনো শব্দ নেই, তার শ্রীযুক্ত নমন চোখদুটো বরফের মতো জমে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় সাদা পাণ্ঞ্জাবীর মানুষটাকে শীতল চোখে দেখছে। বিষণ্ণ মুখ, চিন্তিত চাহনি, চোয়ালজোড়া থরথর করে কাঁপছে, এমন দৃশ্যপট মেহনূরের মধ্যে ঝড় তুলে দিয়েছে। একটু আগের বিষাক্ত কথাটা রি-রি করে কানে বাজছে, রক্তের দামাল স্রোতে ভেতরটা যেনো লন্ডভন্ড অবস্থা! মাথা নিচু করে দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর মৌনতা ভাঙ্গলো মেহনূর, পাষাণের মতো ব্যক্তির দিকে একপা এগিয়ে এলো। গরমের উৎকট যন্ত্রণায় সাদা পাণ্ঞ্জাবীর পিঠটা ভিজে দেহের খাপে-খাপে সিঁটিয়ে আছে, ঘাড়ের উপর বিন্দু-বিন্দু ঘাম কণাও দৃশ্যমান। ছাঁটা চুলগুলো ক’দিনের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে ঝলমল করে উঠেছে, সেই চুলগুলো এখন ঘামে ভিজে জবজবে অবস্থা। চুলের ভেতর আঙ্গুল চালিয়ে ভেজা গোড়াটা স্পর্শ করলো মেহনূর। বুকের ভেতর নিম্নচাপের ঝড়টা ঢিপঢিপ করে টের পাচ্ছে ও। হঠাৎ নতমুখটা অবসাদ দৃষ্টিতে মেহনূরের দিকে তুললো, মেহনূরের শান্ত চোখের ভেতর ম্লান দৃষ্টি মিলিয়ে চুপ করে রইলো। মেহনূর এসময় ভণিতা করলো না, কপালের সামনে বেপরোয়া চুলগুলো আঙ্গুলের ফাঁকে-ফাঁকে পিছনে ঠেলে দিলো। শান্ত অবস্থা ছিঁড়ে নমনশীল কন্ঠে বললো,

– আপনার তো অনেক ক্ষমতা। আমার মতো ভুলকে শুধু-শুধু জিইয়ে রাখবেন কেন? একেবারে মাটি শুদ্ধো উপড়ে ফেলুন। গ্রামের জঙ্গলি আগাছা কেটে ফেলাই ভালো।

থমথমে দৃষ্টিটা চট করে তীক্ষ্ম হলো। চেহারায় গম্ভীর ছাপ ফেলে শক্ত গলায় বললো,

– তোমাকে ওই ক্ষমতা দেখাতে চাই না। সহ্য করতে পারবে না।

ঠোঁট শক্ত করলো মেহনূর। ও যে খুবই দূর্বল, মাহতিম সেটা কৌশলের সাথে বুঝিয়ে দিলো। এমন বাঁকা কথার খোঁচাটা সহ্য করলো সে। মনে-মনে নিজেকে বললো, মাথাটা ঠান্ডা রাখতে হবে, মুখে-মুখে তর্ক করা যাবে না, পরিস্থিতি বেসামাল হলে বিশ্রী অবস্থা হতে পারে। লম্বা-লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ভেতরের ক্রুদ্ধ আগুনটাকে নিভিয়ে ফেললো মেহনূর, জিভের উপর ঠোঁট বুলিয়ে যথাসম্ভব বিনীতা হয়ে বললো,

– যদি সহ্য করতে না পারি, তাহলে এতো আদর দিয়ে যত্ন করছেন কেন? আপনার সবকিছু আমার সাথে কেন জড়িয়ে দিলেন?

মাহতিম দ্বিধাগ্রস্ত মুখটা অন্যদিকে ঘুরালো। অসহ্য যন্ত্রণায় নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে! নিজেকেই অশ্রাব্য-অকথ্য ভাষায় অপদস্থ করছে। দাঁত শক্ত করে চোখ বন্ধ করলো মাহতিম, ভেতরের দপদপানি অবস্থাটা কন্ট্রোল করতেই মেহনূর ফের বলে উঠলো,

– আপনি যদি তাড়িয়েও দেন, তাও আমি এখান থেকে একচুল নড়বো না। তার চেয়ে ভালো, আপনি আমাকে মে:রে ফেলুন, আমার লা:শটাকে গুম করে দিন।

বজ্রাহতের মতো চমকে উঠলো মাহতিম। শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোতটা যেনো কোষাগারে গিয়ে পৌঁছলো। অবচেতন মনটা ইতিমধ্যে দুঃসহ কল্পনাটা করে ফেলেছে। কি ভয়াবহ সেই চিন্তা! কি জঘন্য, কি নিকৃষ্ট ধরনের! ঠাস করে চড় লাগানোর জন্য হাত উঠালো মাহতিম, প্রচণ্ড রাগটা শরীরময় ছড়িয়ে গেলেও চূড়ান্ত মূহুর্তে হাত থামিয়ে ফেললো! মেহনূরের মুখটার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি ছুঁড়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। নিচের ঠোঁট কামড়ালো মেহনূর, অশান্ত মাহতিমের দিকে ভারি নিশ্বাস ছেড়ে তার কোলে এসে বসলো। দু’হাতে মাহতিমের মুখটা ধরে এক ঝটকায় নিজের মুখের কাছে আনলো। দু’হাতের তালুর নিচে শেভড্ গালদুটো গরম হয়ে আছে, ভ্রুঁর নিচে সুদৃঢ় চোখদুটো তপ্ত ক্ষোভে অটল। রাগের কারনে ঠোঁটদুটোর উপর দাঁতের দংশন চলেছে, যার সুবাদে ঠোঁটদুটো এখন টকটকে লাল। যদি সুছাঁদের ঠোঁটদুটোয় স্পর্শ মিলিয়ে দেয়, তাহলে রাগটুকু কি নিভিয়ে দেওয়া যাবে? এই মানুষটা কি একটু আগের বিষদিগ্ধ কথাগুলো তুলে নেবে? ঠোঁটের উপর থেকে চোখ সরিয়ে সুগভীর চোখদুটোয় দৃষ্টি বসালো মেহনূর। মাহতিমের ডান গালটা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে প্রসন্ন কন্ঠে বললো,

– ঠান্ডা হয়ে যান। আমি শুধু যন্ত্রণা বুঝানোর জন্য ওই কথাটা বলেছি। কিচ্ছু হয়নি। আমার দিকে তাকিয়ে থাকুন। বলুন কি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন? আপনি অস্বীকার করবেন না। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, আপনি ওই লোকগুলোর কথা শুনে টেনশনে আছেন। বলুন, চুপ করে থাকবেন না, আমাকে বলুন।

ডান গাল থেকে হাত নামিয়ে আঁচল টানলো মেহনূর। আঁচলের শেষ অংশ টেনে মাহতিমের ঘামার্ক্ত গলাটা মুছে দিলো। কপালের ডানদিকে কানের কাছটায় চুয়ে-চুয়ে ঘাম ঝরছিলো, সেই ঘামটুকু আঁচলে মুছে দিতেই হঠাৎ জীর্ণ গলায় বললো মাহতিম,

– ভয়টা তোমাকে নিয়ে পাচ্ছি।

কথা থেমে গেলো মাহতিমের। ওর ঘামে ভেজা চুলগুলোয় আঙ্গুল রাখলো মেহনূর। অসম্পূর্ণ উত্তর শুনে মাহতিমের দিকে একপলক তাকালো, পরক্ষণে চোখ সরিয়ে এমনভাবে চুল ঝাড়তে লাগলো, যেনো বাকি কথার মর্মও সে শুনেছে। অনেকটা দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে হাস্যমুখে বললো,

– আমার চারদিকে যেই অদৃশ্য বেড়িবাঁধ গেড়ে আছে, ওটাতো আনসারী সাহেবের অনুমতি ছাড়া খোলে না। উনার বিশেষ অনুমতি ছাড়া কেউ ঢুকলে কি জঘন্য আপ্যয়ন করেন, সেটার নমুনা আমি তরুণ ভাইয়ার কাহিনি থেকে বহু আগেই বুঝেছি।

গম্ভীরভাবে তাকিয়ে থাকা মাহতিম আচমকা হেসে ফেললো। তরুণকে বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে-পিটিয়ে কিভাবে শায়েস্তা করেছিলো, সেটা এমন মূহুর্তে মনে পড়ায় সত্যিই হাসি পাচ্ছে। মাহতিমের মুখে হাসির ছোঁয়া দেখে স্বস্তি পেলো মেহনূর, হলদে আলোয় উজ্জ্বল মুখটা দেখতেই হঠাৎ বাতি নিভে গেলো। পুরো পরিবেশটা একমূহুর্ত্তের ভেতর অন্ধকারে ডুব দিলো। চর্তুদিকে মূর্ছার মতো অন্ধকার দেখে বিচলিত হলো মেহনূর, ডানে-বামে তাকিয়ে কিছুটা অস্থির হলে ব্যাপারটা বুঝলো মাহতিম। মেহনূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

– লোডশেডিং।

উত্তরে মাহতিমের দিকে তাকালো মেহনূর। মুখটা এখন দেখা যাচ্ছে না। একজোড়া চোখ যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পেরেছে ও। ঝুপ করে অন্ধকার নামা পরিবেশটা চারধারে রহস্য করে দিয়েছে। বাড়ির বাইরে খোলা লনে অদ্ভুত এক নির্জনতা। দখিনের মন-মাতানো বাতাস যেনো সবটুকু গ্লানি টেনে নিচ্ছে, ভ্যাপসা গরমের তপ্তশ্বাসটা একটু যেনো কমলো। মাহতিমের কোল থেকে উঠতে নিলো মেহনূর, চট করে বাঁ-কাধে টান লাগতেই পিছু তাকালো ও। সাদা আঁচলটা কয়েক পাক পেঁচিয়ে ধরেছে মাহতিম। অন্ধকারে থেমে-থেমে দু’দফা তুড়ি বাজালো। ‘ আমার কাছে এসে চুপচাপ বসো ‘ কথাটার ইঙ্গিত দিলো সে। মেহনূর বাঁ-কাধে হাত রেখে আঁচলের পিনটা সামাল দিলো। চুপচাপ আগের মতো মাহতিমের কোলে এসে বসলো। মেহনূর টের পেলো, তার আঁচলটা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে, খুবই সন্তর্পণে নিরবে-নিভৃতে কোমরের দুপাশে হাত রাখছে। একটু-একটু সংকুচিত হচ্ছে মেহনূর। আজও সেই স্পর্শের কাছে ছোট্ট মনটা রাঙা হয়ে যায়, তার মুখখানাটা প্রথমদিনের মতো লজ্জার ভূষণে ঢাকা পরে। মাহতিমের আদর-স্পর্শ-সুখদ মায়ায় সম্মোহিত হয়। গভীর রাতে যখন সহসা তন্দ্রা ভাঙ্গে, তখন ওই মানুষটার বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে। একজোড়া সুঠাম হাতে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে, যেনো বুকের মধ্যে মুক্তো লুকিয়ে রেখেছে, তাকে দেখতে দেওয়া পুরোপুরি নিষেধ। পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে মেহনূর, অনেক সময় ধরে ঘুমন্ত মুখটা নিরীক্ষণ করে। কখনো-কখনো মুচকি হাসিতে মাহতিমের চুলে হাত বুলায়, কখনো-কখনো গালে টুপ করে চুমু খায়। এই টুকরো-টুকরো মূহুর্তগুলো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করছে। যখন মাহতিম চলে যায়, তখন অদ্ভুত ঝিম ধরানো রাতগুলোয় স্মৃতিগুলো স্মরণ করে মেহনূর। একেকটা মূহুর্ত নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই কখনো হাসে, কখনো আরো বেশি উদাসীনতা ভর করে। নিরবতা চিঁড়ে হালকা গলায় বললো মাহতিম,

– আমার ভাইটাকে মনে পরছে মেহনূর। কতদিন ওকে দেখি না। আমার চোখের সামনে বড় হলো, ওকে আমি বড় করলাম, অথচ আমারই চোখের সামনে চলে গেলো। কোন্ পাপের যে প্রায়শ্চিত্ত করলাম, নিজেই জানি না। ওর কথা মনে হলেই ভেতরটা ছিঁড়ে যায়। এতো কাছে ছিলো, তবুও কি ভাগ্য আমার, ওইটুকু কাছ থেকেও বাঁচাতে পারলাম না। আমার বাবা, আমার ভাই চলে গেলো, সেই যন্ত্রণা এখনো ধুকে-ধুকে সহ্য করছি। তোমার কিছু হলে আমি ম:রেই যাবো মেহনূর।

সাথে-সাথে মুখে ‘ স ‘ জাতীয় শব্দ করলো মেহনূর,

– সসস, এভাবে বলবেন না। নিয়তিচালিত ব্যাপারে কারোর হাত নেই। আপনি যে বুকে কষ্ট পুষে, মুখে হাসি রেখে চলছেন, সেটা কাছ থেকে না দেখলে কেউ বুঝবে না। আমার কিচ্ছু হবে না, ভরসা রাখুন। আমি জানি, আপনি কিছুই হতে দিবেন না।

হাস্য কন্ঠে বললো মাহতিম,

– এতো বিশ্বাস?

মৃদ্যু হাসলো মেহনূর। কোমর জড়ানো হাতদুটোর উপর নিজের হাতদুটো রাখলো, স্বগোতক্তির মতো বলে উঠলো,

– যতক্ষণ এই হাতদুটোর আশ্রয় আছে, ততক্ষণ কোনো ভয় নেই। সেদিন একা-একাই যে ব্যক্তি তিনটা গাড়ি সটকে দিয়েছে, আপনি তাঁর যোগ্যতার কি জানেন?

যোগ্যতার বিচার শুধাতে গিয়ে ঢোক গিললো মেহনূর। বেশ ফটফট করতে গিয়ে ভুলভাল কথা বলে ফেলেছে। কার সাথে বাচালের মতো আচরণ করছে, সেটা মিনিট খানেকের জন্য ভুলে গেছিলো। কোমর থেকে নিজের হাতদুটো উঠালো মেহনূর, ভয়ে-ভয়ে সামনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো। আবারও ল্যাম্পপোস্টের চিলতে আলোয় উজ্জ্বল মুখটা দেখতে পেলে অপরাধী চোখে তাকালো। কখন যে কোমর থেকে একটা হাত ঘাড়ে এসে পৌঁছলো, টের পায়নি মেহনূর। ঘাড়টায় মৃদ্যু চাপ খেয়ে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হলে মুখ নিচু করলো মাহতিম। মাথাটা বাঁদিকে কিন্ঞ্চি কাত করে গালে অনুরাগের ছোঁয়াটা চেপে দিলো। চোখদুটো নিমিষের ভেতর বন্ধ করলো মেহনূর, ভেজা পান্ঞ্জাবীর পিঠে হাতদুটো রেখে দিলো। থেমে-থেমে গলার কাছটায়, কাধের উঁচু হাড়টায় আদরটুকু ছুঁয়ে দিলো মাহতিম। আবারও দেহে শীতল উচ্ছাস লাগিয়ে দখিনা হাওয়া এলো। দূরের আকাশে মিটিমিটি তারার দিকে মুচকি হাসলো মেহনূর। মনে-মনে সাধুবাদ জানাতেই পরম আবেশে চোখ বুজে ফেললো।

– উনাকে পাওয়া যদি আমার অভিশাপ হয়, আমি বারবার অভিশপ্ত হতে প্রস্তুত।

.

আনসারী নিবাসটা ঘুমে কাবু। প্রতিটি ঘরের লাইট নিভে আছে। সবাই আমেজের ক্লান্তি শেষে গভীর নিদ্রায় ডুবেছে। আশেপাশে কোনো সাড় নেই, সব যেনো নিঃসাড়-নির্জীব হয়ে আছে। ঘড়ির কাঁটাটা টিক-টিক করে সেকেন্ডের হিসাবে ঘুরছে। রাত গভীর, সময় এখন তিনটা বেজে ত্রিশ। রাস্তার কুকুরগুলো দূর থেকে ঘেউ-ঘেউ করছে, আর্ত স্বরে ডাকছে দু-একটা কুকুর। গাছের ডালপালা নাড়ার আওয়াজ হয়, যেনো ডালে বসে কোনো অশরীরী জিনিস ওৎ পেতে আছে। মাটির গুল্ম পোকাগুলো তাক লাগিয়ে চেঁচাচ্ছে। গায়ে ‘ adidas ‘ ব্রান্ডের কালো টিশার্ট এবং সাদা ট্রাউজার পরে বেরিয়েছে। বাঁহাতে মোবাইল নিয়ে বিশেষ কলের জন্য অপেক্ষা করছে। মোবাইলের স্ক্রিনটা আছাড় মারার জন্য কোণাকুণি ভাবে ফেটেছে, আপাতত ফোনটা কোনোরকমে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কলের অপেক্ষায় সময় গুণছে। মুখ ঘুরিয়ে সোজা দোতলায় তাকালো। দৃঢ়তাপূর্ণ চোখদুটো ক্ষণিকের জন্য সতর্ক হলো। দোতলার বদ্ধ জানালায় সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা, স্র বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করলো। কিন্তু না, সন্দেহজনক কিছু নেই। সব নরমাল আছে, সব একদম ঠিকঠাক। কিছুক্ষণের ভেতর মোবাইলটার ডিসপ্লে জ্বলে উঠলো, স্ক্রিনের উপর স্পষ্ট অক্ষরে ‘ Incoming call ‘ লেখাটা পরে ফেললো। রিসিভে সোয়াইপ করে কলটা কানে রাখলো, ওপাশ থেকে আসল কন্ঠটা পাওয়ার জন্য চুপ রইলো সে। বাড়তি সতর্কতার জন্য নিজ থেকে কথা টানলো না। হঠাৎ ওপাশ থেকে শক্ত গলায় বললো,

– আমি কি মাহতিম আনসারীর সাথে কথা বলছি?

কন্ঠটা চিনতে পেরে ধীরস্থির ভাবে উত্তর দিলো মাহতিম,

– জ্বী,

চোখটা আবার ঘুরালো মাহতিম। দোতলার সেই বদ্ধ জানালার দিকে একপলক তাকালো। মেহনূর তাহলে টের পায়নি। ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটি বুঝদার ব্যক্তির মতো বললো,

– আপনার মতো পাওয়ারফুল পার্সন আমার হেল্প চাইছে, ম্যাটারটা ধরতে পারছি না আনসারী সাহেব।

দোতলা থেকে চোখ নামালো মাহতিম। উত্তর দিতে গিয়ে বাঁকা হাসলো, কন্ঠে সৌজন্যতা রেখে বললো,

– প্রত্যেকটা পাওয়ারফুল পার্সনের উইক পয়েন্ট থাকে, এটা জানেন তো? যখন শকুনের চোখ ওই উইক পয়েন্টে পরে, তখন কোনো পাওয়ারই কাজে লাগে না। আমার সিচুয়েশনটা কোন স্টেজে আছে, আশাকরি ইন্ট্রোডাকশান-নোট ছাড়াই বুঝেছেন।

ওপাশ থেকে স্বল্প হাসির শব্দ এলো। সম্মতি জানিয়ে বললো,

– আপনি এখন ডেসপ্যারেট সিচুয়েশনে আছেন। এমন দিনগুলো আমিও পাস্টে কাটিয়ে এসেছি। বাট আপনি যেটার হেল্প চাচ্ছেন, সেটা কোয়াইট ইম্পসিব্যাল। বলতে গেলে, আপনি ডেন্ঞ্জারাস ঝামেলায় পরেছেন। আমি এটার জন্যই আমার ওয়াইফকে পাবলিক্যালি ফেস করাতাম না। ইভেন, এখনো কিছু-কিছু জায়গায় রেসট্রিকশান রেখেছি।

মাথাটা কাজ করছেনা মাহতিমের। হুট করে চুপ হয়ে গেলে ওপাশের মানুষটা এবার স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

– কাম ডাউন আনসারী সাহেব। আপনার ওয়াইফ যদি বুদ্ধিমতি হয়, উনি আপনার অবস্থা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। তাছাড়া প্রবলেমটা যেহেতু একসেস লেভেলে চলে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে গোড়া থেকে ছিঁড়ে ফেলুন। আপনি তো এসবে যথেষ্ট এক্সপার্ট।

স্মিত হাসিতে মাহতিম হাসলো। ফোনটা বাঁ-কান থেকে ডান কানে পাস করে বললো,

– দ্যান আই হেভ টু কি:ল সাম পিপল্স। এটা ছাড়া অলটারনেটিভ নেই।

চলমান .

#FABIYAH_MOMO

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here