মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৫৩.

0
1869

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৫৩.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

হারিকেনের পলতেটা বাড়িয়ে দিয়ে বিছানায় আসলো মেহনূর। দুপুর থেকেই নাকি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, পুরোটা গ্রাম অন্ধকারে ডুব দিয়েছে। কখন কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল হবে জানা নেই। ছোট থেকেই দেখেছে গ্রামে একটুখানি হেরফের হলেই বিদ্যুৎ চ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে বিদ্যুৎ যাওয়ার রহস্যটা আজও ধোয়াশা রয়ে গেছে। জানালার কপাটটা দুহাতে চাপ দিতেই খটাশ করে খুলে গেলো। ভেতরে ঢুকলো এক পশলা অন্ধকারযুক্ত আবছা আলো। গায়ে পাতলা-নরম কাথাটা টেনে জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো সে। আকাশ পরিষ্কার, কিন্তু আকাশটা অদ্ভুত মায়াজালে রহস্যঘেরা নভোমণ্ডল ঠেকছে। মনের ভেতর তীব্র উৎকন্ঠায় জানান দিচ্ছে, ‘ এখানে আসাটা ঠিক হয়নি, এখানে আসাটা একদম ঠিক হয়নি ‘। এমন অদ্ভুত মনোভাবের উদয় দেখে দারুণ বিচলিত হলো মেহনূর। তার ছোট্ট মাথাটা আস্তে-আস্তে গূঢ় বিষয়গুলো ধরার চেষ্টা করলো। মাহতিম আনসারী, সে একজন নৌসদস্যের বিশেষ বাহিনীর কর্মকর্তা। তার পেশাজীবনটা ব্যস্ততায় ভরা থাকলেও সে কখনো পিছুটান ভুলেনা। সে যে বয়সে বড়, তার ধ্যান-জ্ঞান-চিন্তা-অভিজ্ঞতা সবকিছুই দূরদর্শী, তবুও সে মেহনূরের প্রতি কটাক্ষসূচক অবহেলা দেখায়নি। তার শক্ত চেতনার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আগেভাগে ঠাহর করা যায়না। সে খুবই ঠান্ডা মাথায় একেকটা কাজ করে, তার ওই নিষ্পাপ-হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে কেউ তার গভীর চিন্তার আয়তনটা মাপতে পারবেনা। জানালা থেকে মুখ সরিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকালো মেহনূর। সোজা হয়ে শুতেই বুকের উপর কাথা ও কাথার উপর দুহাতের আঙ্গুলগুলো আষ্টেপৃষ্টে রাখলো সে। একে-একে ভাবতে লাগলো, রজনী ও অনামিকা দুচোখে তাকে সহ্য করতে পারেনা। এমনকি যতোবার অনামিকার সাথে তার চোখাচোখি হয়েছে সেখানে অনামিকার চোখে কেবল হিংস্রতাই দেখেছে। রজনীও তাকে একা পেলে যথেষ্ট অত্যাচার করে। এসব ঘটনা লজ্জায় কোনোদিন মাহতিম বা অন্যকারো কাছে বলেনি মেহনূর, না বলার ফলে তার সরল মনটায় গভীর একটা দাগ কেটেছে। কক্সবাজার গিয়েও মাহতিমকে একমিনিটের জন্য শান্ত দেখেনি। কি একটা চিন্তায় সবসময় বিভোর হয়ে থাকতো। তার বিভোর ভাবটা মিথ্যা হাসির কারসাজিতে ঢাকা পরলেও মেহনূরের কাছ থেকে চোখ এড়াতে পারেনি। এবার গ্রামে পাঠিয়ে যেই অপ্রত্যাশিত কাণ্ডটা ঘটালো, এতে আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে মাহতিম ভয়ানক কিছু লুকাচ্ছে। গ্রামে পাঠানোর মতো স্পর্ধা মাহতিমের হবার কথা নয়। যেখানে সে নিজেই মেহনূরকে দূরে রাখতে নারাজ ছিলো, আজ ইচ্ছে করেই বহু মাইল দূরে গ্রামের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সৌভিকের আচরণেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাচ্ছে ব্যাপারটা খুবই গুরুতর। বাড়িতে দাদাভাই নেই, তিনি সম্ভবত গাঁয়ের কোনো কাজ দেখতে আবার বেরিয়ে পরেছেন। এই মূহুর্তে দাদাভাইয়ের সাথে মাহতিমের উটকো চিন্তার কারণটা আলোচনা করলে হয়তোবা দাদাভাই বুদ্ধি দিতে পারবেন। একমাত্র দাদাভাইয়ের কাছেই সব সমস্যার সমাধান থাকে। না, এবার আর দেরি নয়। সকল লজ্জা মাটি করে কাল সকালেই দাদাভাইয়ের সাথে মাহতিমকে নিয়ে আলোচনা করতে যাবে। এইসময় বাইরে ‘ ঘেউ ঘেউ ‘ করে কুকুর ডেকে উঠলো, বাতাসে গাছের শাখা-প্রশাখা নড়েচড়ে পাতার মর্মর আওয়াজ তুললো। লম্বা একটা জার্নি করেও চোখে ঘুম আসছেনা। চিন্তায়-চিন্তায় তার মাথাটা ঘুমহীনায় ঘন হচ্ছে। আঙ্গুলগুলো আলগা করে বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিলো, টেনে বের করলো এন্ড্রয়েড ফোনটা। ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই মাহদির কাছে ফোনের বিষয়বস্তু শেখার স্মৃতিগুলো মনে পরলো। এই আধুনিক যন্ত্রটা চালাতে প্রথম-প্রথম খুব যন্ত্রণার হলেও এখন এটা চালাতে বেশ পটু মেহনূর। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব শুধু মাহদির। একজন অনভিজ্ঞ মানুষকে অভিজ্ঞ করার পেছনে যতটুকু ধৈর্য্য-শ্রম-ইচ্ছা ঢালা লাগে সবটাই শুধু মাহদি করেছিলো। পাকনাটা কোনো অংশে মেহনূরকে পিছিয়ে রাখেনি। একটা মোবাইল ফোন চালানো দ্রুততার সাথেই শিখিয়ে দেয়, একটা কম্পিউটার হুটহাট দরকারে কিভাবে অন করতে হয় তাও শিখিয়ে গিয়েছে। শহুরে কায়দা বোঝার জন্য, ধরার জন্য মাঝে-মাঝে ফারিনকে কল দিয়ে বুদ্ধি সংগ্রহ করতো। সেই বুদ্ধি মেহনূরের সাথে আলাপালোচনা করে দু-একটা খাটিয়ে ফেলতো। মেহনূরকে ‘ বউ ‘ ডাকার স্বভাবটা মুছতে পারেনি কেউ, খোদ মেহনূরই মাহদিকে বলে-কয়ে ‘ ভাবী ‘ ডাকাতে পারেনি। সবসময় মাহদি বলতো,

– ভাইয়া তো তোমার চেয়ে বড়। বড় মানেই আগে-আগে বুড়ো। বুড়ো হলেই হাড়গোড় ভেঙ্গে ম-রে যাবে। আমিও ততদিনে হ্যান্ডসাম হয়ে যাবো, এরপর তোমাকে বিয়ে করবো। ঠিক আছে না?

এমন উত্তর শুনে কাধে বা মাথায় আলতো করে চাপড় মারতো মেহনূর, একগাল হেসে দিয়ে কখনো-কখনো মাহদির ফর্সা গালদুটো টেনে দিতো। চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ছাড়লো সে, চোখের পাতা ভিজে উঠার আগেই নিজেকে ঠেলা দিয়ে শক্ত করলো। ফোনটা অন করে তর্জনী চালাতে-চালাতে একটা কল বসালো, ফোনটা কানের কাছে ধরতেই নিচের ঠোঁট কামড়ে রাখলো। খুব স্বাভাবিক আওয়াজে রিং হচ্ছে কিন্তু কল ধরছেনা। বাজতে-বাজতে কলটা কেটে যেতেই স্ক্রিনের দিকে তাকালো। কলটা কেনো ধরেনি? এই মাঝরাতে তো ডিউটি থাকার না। এই সময় সে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। ফোনটাও কলের জন্য নরমাল মুডে রাখে। ওই লোক কি তাকে কল দিতে ভুলে গেলো?প্রচণ্ড রাগ লাগছে! ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়। সে কি ফেলনা নাকি? কটমট রাগ নিয়ে আবার কল দিলো মেহনূর, এবারও একই কাণ্ড ঘটিয়ে কলটা কেটে গেলো। পরপর দুবার ব্যর্থ হয়ে হতাশার বদলে অদ্ভুত জেদ চেপে ধরলো। কোনোদিকে না ভেবেই ডিরেক্ট অন্য একটা নাম্বারে কল বসালো সে। একবারও ভাবলো না কলটা দেওয়ার পর কি দশা হতে পারে। কলের কয়েকটা টোন যেতেই রিসিভ হলো, সৌজন্যতার সাথে পুরুষ কণ্ঠটা বললো,

– হ্যালো,

মেহনূর যথাসম্ভব ভদ্রতা রেখে বললো,

– আপনার স্যার কোথায়?

চমকে যেতেই ভ্যাবাচ্যাকা গেলো কণ্ঠটা। থতমত সুরে বললো,

– ক-ককি? কাকে চান?

ঢোক গিলে স্বাভাবিক গলায় বললো মেহনূর,

– আমি আনসারী সাহেবের স্ত্রী বলছি। উনি যদি ফ্রি হন তাহলে বলে দিবেন উনার স্ত্রীর নাম্বারটা ব্লকলিস্টে ফেলে দিতে। ভালো থাকবেন। রাখি, আল্লাহ্ হাফেজ।

কলটা টুপ করে কেটে যেতেই স্থির হয়ে গেলো নোমান। সময় ও পরিস্থিতির গণ্ডি হঠাৎই যেনো তালগোল পাকিয়ে ফেললো। ডানকানে এখনো ফোনটা চেপে রেখে একদৃষ্টিতে অন করা কম্পিউটারে তাকিয়ে আছে। সে বসে আছে মাহতিমের ডেষ্কে, তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের জন্যে। জোরে শাওয়ার ছাড়ার আওয়াজ হতেই সৎবিৎ পেলো নোমান, হালকা একটা ঝাঁকুনি খেয়ে কান থেকে ফোন সরিয়ে ফেললো। সত্যিই তার বসের বউ কল দিয়েছিলো? এটা কি বসের মুখে শোনা সরল-সহজ বউ? সরল-সহজ বউ হলে হালকার-উপর-ঝাপসা মেরে ধমক দেয়? বাম হাত উঠিয়ে নিজের বাঁগাল বরাবর চড় মারলো নোমান, তবুও বিশ্বাস হতে চাইছেনা! নোমান তড়িৎ গতিতে ডেষ্ক থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমের সামনে গেলো, ভেতর থেকে জোরালো শব্দে শাওয়ারের আওয়াজ ভেসে আসছে। ধপধপ করে দরজায় আঘাত করলো নোমান, নূন্যতম হেলদোল না রেখে বলতে লাগলো,

– স্যার, স্যার আপনি এক্ষুণি বাইরে আসুন। ম্যাডাম বলেছে তাঁর নাম্বারটা এক্ষুনি ব্লকে ফেলতে।

আকাশ থেকে পরার মতো চমকে যায় মাহতিম। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে প্রচণ্ড আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,

– তুমি কি বলছো? কে বলেছে?

মাহতিমের কথা আংশিক বুঝলো নোমান। দ্রুতগতিতে উত্তর দিয়ে বসলো,

– স্যার, আপনার ম্যাডাম বলেছে।

নোমানের বেকুব মার্কা কথা শুনে গা জ্বলছে মাহতিমের! এই ছেলে সামান্য উত্তরটাও ঠিকঠাক মতো দিতে পারেনা। মাহতিম রাগ দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,

– আরে কোন্ ম্যাডাম? আমার মা না আমার বউ?

নোমান এতোক্ষন পর বোকামিটা বুঝতে পারলো। জিভ কামড়ে চোখ খিঁচে সাথে-সাথে জবাব দিলো,

– স্যার, আপনার বউ।

ঠোঁট গোল করে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো মাহতিম। হাত বাড়িয়ে শাওয়ারের স্পিডটা ধীর হাতে কমাতেই হঠাৎ কিছু একটা মনে পরলো। ‘ এক মিনিট ‘, কথাটা মনে মনে বলতেই স্থির হয়ে গেলো সে। চোখ বড়-বড় করে তাড়াতাড়ি শাওয়ারের নবটা বন্ধ করতে লাগলো মাহতিম। সর্বনাশ! সাংঘাতিক! সে ভুলে গেছে! একদম ভুলে গেছে!

.

ছোট্ট চারকোণা কাঠের টেবিলটার উপর হারিকেন রাখা। হারিকেনের হলুদাভ-কমলা রঙটা রুমের অন্ধকার কাটিয়ে দিচ্ছে। সুন্দর গোছানো রুমটার দু-দুটো জানালাই খোলা। গ্রামাঞ্চলে অন্ধকার নামলেই জানালা খোলার ছোটোখাটো রেওয়াজ আছে। রেওয়াজ হয়তো বাতাসের জন্য অথবা রুমের ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটানোর জন্য চলে। বিছানার মাঝখানটায় বসে আছে দুজন। দুজনই মুখোমুখি হয়ে আছে। নতমুখে বসে আছে সৌভিক, দৃষ্টি তুলে তাকানোর ক্ষমতা তার নেই। নিজের কোলের উপর শানাজের হাতটা দুহাতের ভেতর শক্ত করে ধরে রেখেছে। যেনো আলগা করে ধরলেই শানাজ পালিয়ে যাবে। চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে সৌভিকের দিকে তাকিয়ে আছে শানাজ। অনেকক্ষণ যাবৎ দুজনের মধ্যে গম্ভীর নিরবতা চলছে। সৌভিকের আকস্মিকভাবে জাপটে ধরার ফলে একটু কেঁদে ফেলেছিলো শানাজ, আপাতত সে রাগী-রাগী ভাব দেখানোর অনর্থক চেষ্টা চালাচ্ছে। সৌভিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতেই তার গালে হাত রাখলো সে। বিমর্ষ মুখের গালটা আঙ্গুলের স্পর্শে ছুঁয়ে দিতেই মুখ তুললো সৌভিক। শানাজের সাথে চোখাচোখি দৃষ্টি রেখে তাকালে শানাজ মলিন হাসি দিয়ে বললো,

– অনেক শুকিয়ে গেছো। এর আগেরবার এতো খারাপ অবস্থা দেখিনি।

ফ্যাকাশে ঠোঁটে কাষ্ঠ হাসলো সৌভিক। সেই হাসিতে বলে ফেললো,

– এর আগেরবার তুমি ছিলে না। এখনো আছো।

চুপ রইলো শানাজ। একটু থেমে আবার বললো,

– যোগাযোগ তো তুমি বন্ধ করেছো সৌভিক। আমি বেহায়ার মতো যোগাযোগ রাখতে চেয়েছিলাম, একবারও তোমার কাছ থেকে সাড়া পাইনি।

শানাজের কথায় কোমল করে সায় দিলো সৌভিক। মাথাটা উঁচুনিচু দুলিয়ে শানাজের হাতটা টেনে ঠোঁটের উপর রাখলো। চোখ বন্ধ করে আলতো স্পর্শ করে বললো,

– আমাদের সম্পর্কটা আগানো মানে বিরাট ঝামেলা টানা। তুমি কি ঝামেলা টানতে চাচ্ছো?

শানাজ মোটেও এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। গাল থেকে হাতটা চট করে সরালো সে, অপ্রস্তত ভাবটা প্রকাশ করে গমগম রাগ দেখিয়ে বললো,

– কেনো? আমার সাথে যখন সম্পর্ক করতে গিয়েছো তখন এই খেয়াল ছিলো না? তখন কি মনে পড়েনি এই সম্পর্কটাই একদিন ঝামেলার মতো হয়ে যাবে? তখন এই হুঁশ-জ্ঞান কোথায় গিয়েছিলো তোমার? আজকে কোন্ সাহসে তুমি ঝামেলা টানার বলছো?দোষ কি আমার ছিলো নাকি তোমার ছিলো? কেনো তোমার দোষের জন্য আমি কষ্ট পাবো? আমি তো তোমার পিছু-পিছু বেহায়া হতে যাইনি! তুমিই এমন সব কাজ করেছো যার জন্য আজ আমার এমন দশা। একমাত্র তুমি এমন যন্ত্রণায় আমাকে ফেলে গিয়েছো সৌভিক! দায়ী তো তুমি।

শানাজের ক্ষিপ্ত মুখ দেখে কিছু বলতে গিয়েও শেষপর্যন্ত নিজেকে আঁটকে ফেললো সৌভিক। কথাটা বলতে নিজের বিবেক পযর্ন্ত কাঁপছে! শানাজকে কিভাবে আসল সত্যটা বলবে? ওর দাদা যে নিজেই সৌভিককে কল দিয়ে যোগাযোগ নষ্ট করতে বলেছে এটা কি ঠাস-ঠাস বলা যায়? শানাজ হয়তো আন্দাজও করতে পারবেনা আজকের এই মনোমালিন্যের জন্য ওর দাদা কি ধরনের কথা উচ্চারণ করেছে। ওই বুড়ো লোকটাই আজকের জন্য সর্বেসর্বা দায়ী! সৌভিক যদি যোগাযোগ নষ্ট না করতো তাহলে পুরো ব্যাপারটা মাহতিম ও মাহতিমের পরিবারের কাছে বিশ্রী ভাবে ধরা পরতো। মাহতিম অবশ্যই সৌভিকের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতো, কিন্তু বাকিরা কি তা করতো? সৌভিক কথাটা মিথ্যে করে বললো,

– আমি ক্যারিয়ার নিয়ে বিজি ছিলাম শানাজ। তখন আমার লাইফে একটা বেস্ট অপোরচুনিটি চলে এসেছিলো। তাই —

আর বানিয়ে-বানিয়ে বলতে পারছেনা সৌভিক। এভাবে কঠিন সত্যকে মিথ্যার চাদরে ঢাকাটা তার জন্য কষ্টকর। সৌভিকের কথা ও নিরবতা শুনে ওর গালে একটা চড় মারতে মন চাচ্ছিলো। সম্পর্ক করার সময় এইসব ক্যারিয়ার-ফ্যারিয়ার হেনতেন কোথায় চলে যেতো? তখন কি ভুলেও মনে পরতো না, আমার ওমুক একটা ক্যারিয়ার আছে, তমুক একটা ঝামেলা আছে? চড়ের ইচ্ছাটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাটাকাট আওয়াজে বললো শানাজ,

– তুমি আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যাও সৌভিক। তোমার ভেতর যদি লজ্জা থাকে, আর তুমি যদি ভদ্রঘরের সন্তান হয়ে থাকো, তাহলে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও। পারলে সকালেই আমাদের বাড়ি থেকে চুপচাপ কেটে পরবে। মেহনূরের কাছে কোনো অভিযোগ করার দুঃসাহস দেখাবে না! আমার বোন আর বোন জামাইকে এসবের ভেতর ঢুকালে তুমিও আমার জঘন্য রূপ দেখে ছাড়বে। চলে যাও এখান থেকে। ভুলেও আমার কাছে লজ্জাহীনতা পরিচয় দিতে এসো না।

নিজের অসহায় অভিব্যক্তি লুকাতে পারলো না সৌভিক, চট করে শানাজের দিকে থমথমে দৃষ্টিতে তাকালো। শানাজের মুখের উপর রাগের আস্তরটা লেপ্টে আছে, সেখানে টান-মায়া সবকিছু লুপ্ত। শানাজ কোনোখানে না তাকিয়ে সোজা তর্জনী তুলে দরজার দিকে তাক করলো। সরাসরি মুখের উপর বললো,

– বেরিয়ে যাও।

মাথা হেঁট করে বিছানা থেকে নামল সৌভিক। ফ্লোরে পাদুটো ফেলে দাঁড়িয়ে পরতেই একবার মাথা ঘুরিয়ে পিছু চোখে দেখলো, এরপর পা চালিয়ে দরজাটা খুলে ভারী বুক নিয়ে চলে গেলো সে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে ডানে মোড় নিতেই পেছন থেকে হিঁচকে কান্নার আওয়াজটা পেলো, মেঝের দিকে দৃষ্টি নত রেখে একপা-একপা করে চলে যেতে লাগলো।

.

সকালটা শান্ত। পাখপাখালির কলরবে চারপাশটা মুখর। আকাশের বুকে অগ্নিপিণ্ডটা আলো বিকিয়ে চলছে, মাঠে-ঘাটে সোনালি আলো ছড়িয়ে ধাবমান আছে সূর্য। গ্রামের মানুষগুলো অলসতা ছেড়ে নাস্তা পানি সেরে নিজ-নিজ কাজে ব্যস্ত হচ্ছে। এদিকে ফসলি জমিতে চাষীদের হরদমে কাজ চলছে। শেফালী তার মেয়েকে নিয়ে দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছে, এই আত্মীয় আবার কেমন আত্মীয় সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কেউ। সাবা কলেজের একটা মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে চলে গেছে। কলপাড়ে হাত-মুখ ধুয়ে শানাজের হাতটা ধরলো মেহনূর, শানাজ একহাতে মেহনূরকে ধরে রেখে অন্যহাতে মেহনূরের মুখটা গামছায় মুছে দিচ্ছে। দুবোনের দৃশ্যটা দূর থেকে দেখছে দুধ দুয়ানো সুজলা। কেউ কি বলবে ছোটটার এখন বিয়ে হয়ে গেছে? এখনো দুবোনের ভেতর ভারী আশ্চর্যজনক মহব্বত দেখা যায়। সুজলার অন্যমনস্কতার দিকে দৃষ্টি দিতেই মাহমুদার নজরে দূরের দৃশ্যটা চোখে পরলো। বাছুরের মুখে কচি ঘাস ধরে প্রশান্ত গলায় বললো,

– এদের দেখলে পরানটা জুড়িয়ে যায়।

মুখ ফিরিয়ে মাহমুদার দিকে একগাল হাসলো সুজলা। দু’পাটি ধবধবে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,

– এখন কোমরটা বাঁধো ছোটো বউ। বিয়ে তো দিয়েই দিলে। এখন নাতী-পুতির মুখ দেখার জন্য সময় গুনতে থাকো।

সুজলার কথায় সেও হাসলো তখন। অন্যদিকে হান্নান শেখের জন্য চিন্তিত মেহনূর শানাজের উদ্দেশ্যে বললো,

– দাদাভাই কখন আসবে বুবু? সেই রাত থেকেই দাদাভাই বাড়ি নেই। এমন দেরি তো আগে কখনো করতে দেখিনি। দরকার পরলে সকালের নাস্তাটা মুখে দিয়ে তারপর কাজে বেরিয়ে যায়। তুমি কিছু জানো?

ভেজা গামছা নিজের কাধে ফেলে মেহনূরকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। শান্ত স্বরে বললো,

– তোর এই গাঁইয়া বুবুকে বিশ্বাস করলে সমস্যার কথাটা বলতে পারিস। অন্তত তোর চিন্তার চাকা কিছুটা হলেও থামবে।

সিড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলতেই কপাল কুঁচকালো মেহনূর, শানাজের হাতটা ঝাঁকুনি দিয়ে কপট দেখিয়ে বললো,

– খুবই বাজে কথা বুবু! এই গাঁইয়া আবার কেমন শব্দ? তুমি এসব বলে-বলে আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছোনা ?

মেহনূরের কথায় হাসি দিয়ে উপহাসের ভঙ্গিতে বললো,

– ধুর পাগলী, দূরে ঠেলাঠেলির কি আছে? তুই তো এখন দূরেই থাকিস। শহরে থেকে-টেকে পাকা হয়ে গেছিস সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আগে চড় মা’রলেও তোর মুখে খই ফুটতো না, আর এখন ভাইয়ার সাথে উঠ্-বস্ করে কত চালু হয়েছিস ভাবা যায়? আমার কাছে এলি তাও ঘুরঘুর করে দাদাজানকে খুঁজছিস, এটার ইঙ্গিত বুঝি বুঝবোনা?

শানাজের হাত ধরে দোতলা সিড়িতে পা রাখলো মেহনূর। শানাজের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,

– তুমি একটু বেশি খোঁ’চাচ্ছো না?

ড্যাবড্যাব চাহনিতে হা হয়ে গেলো শানাজ। অবাক হয়ে বললো,

– ওমাগো, কার মুখে খোঁ’চার কথা শুনি? তুই দেখি চপর-চপর কথা বলতে শিখেছিস। সবই তোকে ভাইয়া শিখিয়েছে তাইনা? ঠিকই করেছে। তোর মতো আস্তো বোবা নিয়ে সংসার করা যায় নাকি? চল্ উপরে চল্। উপরে যেয়ে আমার কাছে সব ঝেড়ে-কেশে হালকা হয়ে বলবি। কাল রাত থেকে দেখছি তোর মুখটা ভার। কি নিয়ে টেনশন করছিস ওটা তোর দেবরের জন্য জিজ্ঞেস করিনি। এখন চল, সব ফটফট করে বলবি।

শানাজের সাথে বহুদিন পর খোলামেলা কথায় বসলো মেহনূর। শানাজের হাতে খাবারের প্লেট, সে ডাল চচ্চরিতে ভাত মাখিয়ে চালাকি করে মেহনূরকে টপাটপ খাইয়ে দিচ্ছে। মেহনূর খাবার চিবোতে-চিবোতে সবটুকু কথাই বলে দিলো। অনামিকার ঘটনা থেকে শুরু করে এই গ্রামে আসার ঘটনা পযর্ন্ত বললো। সব শুনে শানাজের কপালে একটু পরপর ভাঁজ পরছিলো। হঠাৎ শানাজ দরজার দিকে তাকাতেই দ্রুত সেটা ছিটকিনি মেরে লাগিয়ে দিলো। ‘ দেয়ালেরও কান থাকে ‘ প্রবাদটার মতো শানাজ একটু সতর্ক কন্ঠে বললো,

– তুই আপাতত চুপ থাক্। মাহতিম ভাইয়াকে কিচ্ছু বলিস না। ভাইয়া যে তোকে এখানে পাঠালো, আমার মনেহচ্ছে ভাইয়া নিজেই এখানে আসতে যাচ্ছে। দেখিস ভাইয়া ঠিকই আসবে। পুরো কাহিনী শোনার পর মনেহলো ভাইয়া তোকে কিছু একটা থেকে দূরে সরাতে চাচ্ছে। সেটা ওই রজনীও হতে পারে, আবার অন্য কেউ। আচ্ছা একটা কথা বলতো, তুই কোন আক্কেলে ভাইয়ার কাছে ওই অনামিকার কাহিনী জানতে চেয়েছিলি? তোর কি ঘিলুতে এটুকুও কাজ করেনি তার আত্মসম্মানে ঘাঁ লাগবে?

– আমি তো তখন পুরো ঘটনা জানতাম না বুবু। নীতি আপু যখন পুরো ঘটনা বললো, আমার তখন এতো খারাপ লেগেছিলো, বলে বোঝাতে পারবোনা। ওইদিন আমার উপর ক্ষেপতে গিয়ে হাতটা কি করেছিলো, ওটা ভুলবো না বুবু। ওইদিনের পর থেকে নিজের কাছে ওয়াদা করেছি আর কখনো ওরকম করবো না।

– তোর শ্বাশুড়ি কবে যাচ্ছে?

– সোমবারে টিকিট। মার শরীর যে কি খারাপ হয়েছে। রাতে ঘুমের ট্যাবলেট দিলেও শেষরাতে জেগে যায়।

– খুব কাঁদে, নারে? মাহদিটা অনেক চন্ঞ্চল ছিলো। বাচ্চাটা আর নেই ভাবতেই বুকটা খালি লাগে। ভাইয়ার মনে খুব কষ্ট আছে মেহনূর। তোর বরটা আসলেই খুব শক্ত, তুইযে বললি একটুও কাঁদেনি আমার খুব অবাক লাগছে। আমি যদি ভাইয়ার জায়গায় থাকতাম অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পরে থাকতাম। সেখানে দ্যাখ, নিজের ছোটো ভাইকে দাফন করে শান্ত ভাবে কাজে ফিরে গেছে। ভাইয়ার সাথে খবরদার উঁচু গলায় কথা বলবি না, খুব সম্মান করবি। আমাকে সকাল-সকাল ফোন দিয়ে কি বলেছে জানিস?

মেহনূর খাবার চিবোনো বাদ দিয়ে উৎসুক হয়ে বললো,

– কি বলেছেন?

শেষ লোকমাটা গোল-গোল করতেই শানাজ বলতে লাগলো,

– বলেছে, ‘ শোনো বড় শ্যালিকা, আমার বউটার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবে। আমি আসার পরপরই যেনো সুস্থ দেখতে পাই। যদি টাষ্কটা ঠিকঠাক মতো করো, তাহলে তুমি যা চাইবে তাই-ই দিবো। ‘

শানাজ একদম নকলবাজের মতো অভিনয় করে দেখালো। অভিনয় দেখে হাসতে-হাসতে বললো মেহনূর,

– তারপর?

ঠিক তখনই দরজার কাছ থেকে উত্তর ছিঁটকে এলো,

– তারপর আমি দেখা করতে খুব দেরি করে ফেললাম দাদু।

চমকে গিয়ে শানাজ-মেহনূর দুজনেই দরজার দিকে তাকালো। দেখলো হান্নান শেখ সদ্য গোসল সেরে সুতির পাণ্ঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়ে আছেন। দুজনেই খুশীতে গদগদ হয়ে উঠলো, এবার দাদার সাথে জম্পেশ আড্ডা চলবে।

.

সময়ের কাটা ও সপ্তাহের বার অজান্তেই চলতে লাগলো। বিরতিহীন সময়ের গণ্ডিটা ধীরে-ধীরে কঠিন দিনের দিকে এগোচ্ছে। খুব নির্ঝঞ্ঝাটে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি দিলো মারজা, তার চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়ার জন্য সদা-সর্বদা নীতি-প্রীতি সঙ্গে থাকবে। আমেরিকার ঘাঁটিতে চিকিৎসার সুবাদে দেশে থাকবেনা কয়েক মাস। খাঁ খাঁ বিরান ভূমির মতো শূন্যতায় ছেয়ে গেছে পুরো আনসারী নিবাস। বাড়িতে বিশ্বস্ত চাকর সিরাজ কাকা তদারকিতে আছেন, সাবু খালা দেশের বাড়িতে ভাতিজির বিয়ে খেতে গেছেন। আরো যতো চাকর-বাকর ছিলো তাদের যাওয়ার আগে ছুটি দিয়ে গেছেন মারজা, শুধু ছুটি চাননি সিরাজ কাকা। তিনি সকলের অনুপস্থিতিতে বাড়ির দেখভালের কাজ নিজ হাতে করতে ইচ্ছুক। মারজা যাওয়ার পরপরই বিদায় নিয়েছে রজনী, সে তার ভাইয়ের জন্য উত্থাল নির্বাচনে সাহায্য করতে ছুটেছে। রজনীর নির্দেশে জাফলং বেড়াতে গিয়েছে অনা। অপরদিকে গ্রামের মাটিতে ফিরতে পেয়ে প্রাণবন্ত হয়েছে মেহনূর। তার গোমড়ামুখো ভাব কেটে গিয়ে স্বচ্ছ চন্ঞ্চলতার ভাবসাব দেখা দিচ্ছে। মায়ের সাথে, বড় মার সাথে, সাবা ও শানাজের সাথে সহজ হয়ে গেছে মেহনূর। সকলের সেবা ও যত্নের কঠোরতায় সুস্থ হচ্ছে সে। নিউমোনিয়ার মতো রোগটা সারতে-সারতে শূন্য স্কেলে এসে পৌঁছেছে। এখন দেহে কেবল মাংসের ঘাটতি। উপন্যাসের বইগুলো এখন আগের রুক্ষ লাগেনা, মাঝে-মাঝে পড়তে-পড়তে গভীর স্মৃতিতে ডুবে যায়। কখনো মাহতিমের দুষ্টু কথাগুলো ভেবে বই হাতেই খিলখিলিয়ে হাসে, কখনো মাহতিমের চিন্তায় মুখ কালো হয়ে বই নামিয়ে রাখে। আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে গেলে মনে হয়, এই বুঝি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, এই বুঝি পেছন থেকে কাধে মুখ গুঁজে দিলো। কিন্তু দিনশেষে কেউই তার গা কাঁপিয়ে শিরশির অনুভূতিটা জাগাতে আসেনা, কেউ সম্মোহন দৃষ্টিতে মুগ্ধ করে হাসি ছুঁড়ে তাকায় না। দিনে-রাতে যখনই মাহতিম একটুখানি অবসর পায় তখনই মেহনূরের খোঁজ নেয় সে। মেহনূর প্রতিবারই জিজ্ঞেস করবে,

– কবে আসছেন?

মাহতিম হরহামেশার মতো একই উত্তর দেয়,

– এইতো আর কিছুদিন।

কয়েক মিনিটের জন্য মনে হতো কালই চমকে দেওয়ার জন্য মাহতিম আসছে। আবার, মন থেকে জবাব আসতো, অপেক্ষা করিস না, সে আসবে না। রাতে ঘন্টার-পর-ঘন্টা কথা বললেও মেহনূরের কাছে শূন্য-শূন্য ঠেকে, যেনো কত কথা বলার ছিলো, সেগুলো নিষ্ঠুর সময়ের জন্য ফুড়িয়ে গেছে। একদিন রাতে ঠকঠক করে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। মেহনূর চমকে গিয়ে অদ্ভুত শিহরণে লাফিয়ে উঠলো, বইটা নির্দয়ের মতো ফেলে রেখে তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে লাগলো। প্রশস্ত এক হাসি দিলেও মনটা ভীষণ মুষড়ে পরলো তার। হাসিটা মন থেকে উঠে গেলেও ঠোঁট থেকে মুছলো না। সে তার দাদাভাইকে দেখে কেনো মন থেকে খুশী হলো না? দাদাভাইয়ের জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে খুব খুশী হতো? দাদাভাই সেদিন রাতে উদ্ভট কথা বললো,

– দাদুভাই, যদি তোমাকে সবসময়ের জন্য আমার কাছে রেখে দেই তাহলে তুমি থেকে যাবে?

বিষণ্ণ ভারাক্রান্ত মেহনূর কোনোকিছু না ভেবে চুপ ছিলো। মাহতিমের ‘ আসবো-আসবো ‘ করে আশাভঙ্গের কথাগুলো মনে পরতেই অন্যমনষ্ক গলায় বলেছিলো,

– আমি থাকবো।

অন্যমনষ্ক মেহনূর যদি একটুখানি সজাগ হতো, যদি একটু বুঝতো তাকে এমন প্রশ্ন কেনো করা হচ্ছে, তাহলে সে বুঝি লাগেজ ফেলেই পালিয়ে যেতো। হান্নান শেখের ধূর্ত ইচ্ছাটা যদি মাইন্ড রিডিংয়ের মতো ধরা পরতো, তাহলে মেহনূর আর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকতে পারতো না। গোল-গোল চাহনিতে বরফের মতো জমে যেতো সে। হান্নান শেখ নিজ রুমে ফিরে আসতেই তোশকের নিচ থেকে ফোন, ক্যালেন্ডারের সবশেষ পাতা থেকে স্কচট্যাপে আঁটকানো সিম, মস্তিষ্কের ভেতর থেকে হাতড়ে বের করা মুখস্ত নাম্বার একত্র করলো। কলটা ডায়ালে দিতেই তিন-থেকে-চারবার বাজার পর রিসিভ হলো। হান্নান শেখ ওরফে কালাম সরদার নিচু গলায় বললো,

– খবর কি সজীব্বা?

সজীব নামের ছেলেটা ঘ্যাটঘ্যাট করে বিশ্রী হাসি দিলো। ফচ্ করে একদলা পানের পিক ফেলে বললো,

– আফনের মা’ল দেহি নায়কের লাহান। হেরে ট’পকাইতে বহুত কসরত করন লাগবো। এই লিগ্গা সোইপ্পার দলডারে আইতে কইছি। হা’লারা মিডিসিন লইয়া আইতাছে। পেডে চা’ক্কু হান্দায়া মুচুড় মারলেই দ’ম শেষ। কুনো টেনশান নাই মামু। আফনে নিচ্চিত থাহেন।

– চলমান .

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : ধৈর্য্য, অপেক্ষা, সংযম। ভালোবাসা সবার প্রতি ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here