শবনম(পর্ব ১৯) সায়লা সুলতানা লাকী

0
155

#শবনম(পর্ব ১৯)
সায়লা সুলতানা লাকী

বেশ আনন্দ উদ্দিপনা নিয়ে কাজ শুরু করে প্রথম দিনই পড়ে গেল বিপদে। ছোট বাচ্চা পালা খুব সহজ কাজ। এটা ও নিজের বাচ্চা পেলেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। কিন্তু এখন রোগীদের ফুট ফরমাস পালন করা, তাদের এটো আবর্জনা নিজ হাতে পরিস্কার করা যেন নিজের রুচির উপর খুব ভারি হয়ে পড়ল। একতলা পুরো বাড়িটা ঝাড়ুমোছার কাজটা পেলেও ভালো হত কিংবা এখানকার রান্নাবান্নার কাজটা। প্রথম দিন থেকেই বুঝে গেল যে এখানে রান্নার বিশেষ কোন কাজ নাই। এখানকার রোগীরা নিজেদের খাবার বাড়ি থেকেই আনিয়ে নেয়। আর যারা চাকরি করে তারাও বাসা থেকেই খেয়ে আসে। এখানে চুলার কাজ হল টুকটাক পানি গরম করা আর মাঝেমধ্যে রং চা বানানো। এই কাজের জন্য আলাদা কাউকে রাখার দরকার নাই তাদের। উপায়ন্তর না দেখে শেষে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটাই নিতে হল। সেখানেও আবার বাছ বিচার হল। যেহেতু শবনম নতুন তাই ওর কোন পছন্দ রইল না, পুরোনো দুই আয়া নিজেদের সুবিধা মতো কাজ ভাগ করে নিয়ে বাকিটা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিল।
ওই সময়টাতে শবনমের খুব দুলালের কথা মনে পড়েছিল, ও সবসময় বলত- “এই দুনিয়া অইল আজব জায়গা। এইহানে টিকতে অইলে শক্ত অইতে অইব। নরম পাইলেই মাইনষে খালি যাতবো। এত যাতবো যে পিষ্যা ফালাইব। ”
এখন সেই কথাটা নিজের সাথে মিলালো। কিন্তু এখনই নিজেকে শক্ত করতে পারল না। মনে হল কারো সাথে রেষারেষি করে এখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আগেতো নিজের দাঁড়াবার একটা জায়গা লাগবে এরপর না হয় শক্ত হওয়া যাবে। এখন না হয় মানুষ ওকে নরম পেয়ে পিষতে থাকুক। এতটুকুতো ওকে সহ্য করতেই হবে বেঁচে থাকার জন্য। তাই হাসিমুখেই সবটা মেনে নিল।

সকালের কাজ শেষ করে সব রুমে রুমে গামলা বালতি পৌঁছে দিয়ে ফিরতেই দেখল এক গর্ভবতী মা নাকে ফিনাইলের গন্ধ পেয়েই হরহর করে বমি করে ভাসালো ফ্লোর। আর তা দেখে পুরোনো আয়ারা সব কেটে পড়ল পরিস্কারের ভারটা নতুন আসা শবনমের উপর দিয়ে। বমি পরিস্কার করতে গিয়ে বুঝল এটা কতটা কষ্টের কাজ। এমন কাজ কখনও করতে হবে তাইতো ও ভাবেনি, নিজের বমি ছাড়া আর কখনও কারো বমি পরিস্কার করতেও হয়নি। এখন রোগীর বমি দেখে নিজেরই পেট গুলিয়ে সব বেরিয়ে আসতে চাইল তার উপর এগুলো আবার পরিস্কার করতে হবে। এ যেন মরার উপর খাড়া ঘা। কোনো রকমে কাজ শেষ করে নিজেও বাথরুমে গিয়ে একচোট বমি করে বাঁচল। নাক থেকে যেন ওই গন্ধই কাটাতে পারল না বাকিটা সময়। আর তাই তেমন কিছু খাওয়াও হল না অভক্তিতে। কেবিনগুলোর এঁটো পরিস্কার, কফ থুতু পরিস্কার করা যেন এক সময় ওর জন্য অভিশাপের মতো মনে হল। কিন্তু ছাড়তেও সাহস পেল না। সুবিধা মতো কাজ না পেলে এটা ছাড়া যাবে না তা ভালোই বুঝল। চাকরির প্রথম দিনেই এমন পরিস্থিতিতে পড়ে বিশাল এক তেঁতো অভিজ্ঞতা নিজের ঝুলিতে পুড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করল।

সারাদিনতো কাজের মাঝে কেটেই গেল এক ভাবে। এরই মধ্যে শিফট পরিবর্তন হল, নতুন দল এল মাতৃসদনে। ওর যেহেতু যাওয়ার জায়গা নাই তাই আপাতত কয়দিন ও এখানেই থাকবে সেভাবেই কথা হল। অবশ্য এরজন্য ওকে সব শিফটেই কাজই করতে হবে। ও তাই মেনে নিয়েছিল। অচেনা জায়গায় একা একা বাসা ভাড়া করে থাকতে ওকে মরিয়মই মানা করেছিল। ওর বুদ্ধিতেই ও এই থাকার আবেদন করেছিল।

এখান যে দুই আয়া এল তারা খুব একটা পাত্তা না দিলেও দুপুরে যে সিস্টার এল সে খুব ভালো আচরন করল শবনমের সাথে। কাজের ফাঁকেই নাম পরিচয় জেনে নিল৷ নিজের সংসার সম্পর্কে কথা হল কিছু, যার কারনে তাকে শবনমের খুব আপন বলে মনে হল। নাইট ডিউটিতে যে নার্স দুইজন এল তাদের একজন মুক্তা রানী, বেশ হাসিখুশি ওই দিদি, অন্য জন একটু খিটখিটে মেজাজের । রাতে যখন শবনম নিজে থেকেই এসে তাদের পাশেই ঘুমানোর কথা বলল তখন ওই দিদি সাথে সাথেই সম্মতি জানাল যদিও তা শুনে অন্য জন কেমন যেন একটু কটমটিয়ে তাকাল। আর তাতেই শবনম প্রথম ধাক্কায় ভয় পেয়ে গেল। জহুরা আয়া ওকে ইশারা করে ডেকে জানাল যে তাদের পাশে শুলে কলি সিস্টার রাগারাগি করবে। আরও বলে দিল রাতে অন্য যেকোন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে। তবে তা যেন ডাক্তাররা না দেখে। এদিকে এই সদনে তিনজন পুরুষ ছাড়া এখনও কোন পুরুষ দেখে নাই। তিনজনের মধ্যে আবার পিয়ন মজনু ভাই খুবই আন্তরিক, যতবার মুখামুখি হয়েছে ততবারই ডেকে খোঁজ খবর নিয়েছে। সিকিউরিটি গার্ডে যে আছে সে একটু কেমন জানি, তার চোখের দৃষ্টি একটুও ভালো না। মনে হয় তার চোখ অনেক কথা বলে। একবার ডেকে জিজ্ঞেস করে বলেছিল “এত অল্প বয়সে বিধবা হইছোস, তোর বাপ মায় তোরে আবার বিয়া দিলো না ক্যা? গ্রাম থেইক্যা এমন যুবতী মাইয়ার একলা ঢাকায় আসাটা ঠিক হয় নাই।”
তার উত্তরে ও তেমন কিছু বলতে ইচ্ছে করেনি।

আর বাকি যেজন আছে সে অফিসার স্যার, অফিস এডমিন।প্রথম যখন সকালে শবনম এসেছিল এখানে তখন এই লোক ছিলো না। তখন যে ছিল তার বয়স বেশি ছিল না। অল্প বয়সি চেংরা ছেলে। ঝটপট কথা বলে, কাজও ঝটপট। খুব দ্রুতই অফিসিয়াল ফর্ম পূরণ করে শবনমের সাক্ষর নিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছিল। আর সারাদিনে ওর সাথে দেখাও হয় নাই। কিন্তু আজ যে আসছে তার বয়স শবনমের ছোট চাচার মতো। ওই লোক এসেই শবনমকে ডাকিয়ে নানান ধরনের গল্প জুড়ে দিল। একটু অস্বস্তি লাগলেও শবনম তার প্রতিটা কথারই জবাব আস্তে আস্তে দিয়েছিল। ওর নরম শরম স্বভাবের কারনেই কী না এই লোক বেশ ফায়দা নিল। অযথা তার পাশে বসিয়ে রসালো গল্পে আটকে রাখল অনেকটা সময়। রাতে নতুন রোগী ভর্তি সংক্রান্ত কোন ঝামেলা নাই। আর তাই এই লোকের তেমন কোন কাজও নাই। গল্প করার ছলে জানাল তার বৌ গ্রামে থাকে। সে শহরে একটা মেসে ভাড়া থাকে। মাসে একবার বাড়ি যায়। তখনই শুধু বৌকে কাছে পায়। তার বিবাহিত জীবন বড় যন্ত্রনার বড় কষ্টের। শবনম চুপ করে শুনল সব। এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখানোতে বেচারা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হল। আর তাই শবনমকে তাড়িয়ে রেডিও নিয়ে বসল গান শুনতে।
শবনম ফিরে আসতেই ফিরোজা আয়া হাসতে হাসতে ওকে ডেকে বলল
“কিরে মাইয়া তুই স্যারের দুঃখ দেইখ্যা দেহি আহা তুহা করলি না? তোর দিলে কী একটুও মায়া লাগে নাই তার দুঃখে?”
“ক্যা, দুঃখ লাগব ক্যা। হের যদি এতই কষ্ট লাগব তাইলে হের বৌরে এইহানে লইয়া আইলেই পারে! এত কিচ্ছার কী দরকার? হের যেমুন দুঃখ লাগে, হের বৌয়েরও দুঃখ লাগে। হের বৌ যায়নি অন্য বেডার লগে মনের দুঃখের গল্প শুনাইতে?…”
“ও আল্লাহ! এই ছেমড়ির দেহি চোপা আছে! কেমন চোপা লাড়ায়। এমন কথা স্যারের সামনে কইলে কইলাম তোর চাকরি ডিসমিস। সাবধান চাকরি বাঁচাইতে অইলে চোপা সামলাইছ। ”

ফিরোজা আয়া আর কথা বাড়ালো না। নিজে ঘুমানের জন্য বিছানা পেতে শুয়ে পড়ল। শবনম আর অন্য কোথাও না গিয়ে তার পাশেই কাপড় টা বিছিয়ে শুয়ে পড়ল।
“ও আল্লাহ তুই এই কাপড়ের উপর কেমনে শুবি? ঠান্ডা লাগবোতো? তোর লেইগ্যা কইলাম আমি ফ্যান বন্ধ করুম না। তাইলে মশায় কামড়াইব।”
“বুবু, আপনে ঘুমান। ফ্যান বন্ধ করতে অইব না। আমার ঠান্ডা লাগলে আমি উইঠ্যা যামু। আমার লেইগ্যা ভাইব্যেন না।”
ফিরোজা আর ফিরে তাকায় না শবমমের দিকে। নিজে চাদর মোড়া দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়ে। শবনমও চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। যদিও যখন ও একা হয় তখন শুধু ভেতরটায় হাহাকার করে। বড় একা লাগে তখন। নিজের ফেলা আসা জীবন পেছন থেকে আকঁড়ে ধরে। আজ এই চাকরিটা পেয়ে মনে এক অন্যরকম সাহসের যোগার হল। অন্তরের কোনো এক জায়গায় মেয়েদেরকে কাছে পাওয়ার এক অদম্য আশার আলো ক্ষীণ হয়ে দেখা দিল। চোখে ভাসতে লাগল মেয়েদের চেহারাগুলো। ভালোমতো ছন্দা বা স্বপ্না কাউকেই দেখতে পেল না। বারবারই চোখ ঝাপসা হয়ে এল। কখন যে চোখ লেগে গেল তা বোঝতে পারল না।

হঠাৎ ঘুম ভাঙল শবনমের গায়ে কারো স্পর্শ পেয়ে। হাতটা ঠিক অন্ধকারে কোনদিকে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই শবনম জোরে এক চিৎকার দিয়ে উঠল “কে? কে?” বলে।
আর তখনই বাতেন মানে এডমিন অফিসার স্যার ওর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললেন
“আস্তে আস্তে, হায় হায়রে এইডার গলায় এত জোর কেন? এই তুই নতুন মেয়ে শবনমতো? ”
“হ স্যার, আমিই। তয় আপনে আমার গায়ে অতান ক্যা? এইডা আবার আপনের কেমন অভ্যাস?”
“চুপ, চুপ বেক্কল মেয়েছেলে । কী বলোছ আবোল তাবোল? মাথা ঠিক আছেতো? আমিতো আসলাম তোরে ডাকতে? ৩০৯ নম্বার রুমের মহিলার মনে হয় ব্যথা উঠছে। তুই উইঠ্যা গিয়া দেখতো! ডিউটি ফালায় রাইখ্যা ঘুমাইলে হইব?”
“ও আইচ্ছা আইচ্ছা, স্যার আমি বুঝতে পারি নাই, যাইতাছি অহনই যাইতাছি। আপনে যান স্যার।”

বাতেন চোখেমুখে বিরক্ত ফুটিয়ে উঠে দাঁড়াল। এরপর চারপাশ একবার চোখ বুলিয়ে আবার শবনমের দিকে তাকাল
“আহা! তোর শোয়ার ব্যবস্থায়তো কিছু নাই? এইভাবে কী আর ঘুমানো যায়? আচ্ছা দাঁড়া দেখি তোর জন্য কী করা যায়। আয় তুই আমার সাথেই আয়।”

শবনম আঁচল টেনে মাথায় কাপড় দিল। এরপর বাতেনের পেছন পেছন ওই রুম থেকে বের হয়ে গেল। বারান্দায় যেতেই বাতেন পেছন ফিরে একবার ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আবার সামনের দিকে হেটে অফিস রুমে না ঢুকে অন্য একটা খালি রুমে ঢুকল-
“ও স্যার, এইহানে রোগী কই? আপনে না কইলেন ৩০৯ নাম্বার রুমের রোগীর কতা?”
“আহা! তুই বড় বেশি কথা বলোস? চাকরি করতে হইলে এত কথা বলতে হয় না। কি বলছি তা ধইরা বসে থাকলে চলব? রুম নাম্বার এত মনে থাকে না আমার। এইখানে আনলাম তোর কষ্ট দেইখা, তোর ভালো চাই বইলাই আনলাম। ওইখানে কেমন করে শুইয়া আছোস, দেইখাই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখন থেইকা এই খানে শোয়ে পড়িস। বেড খালি আছে। রোগী আসলে আবার চলে যাবি। এখন এইখানেই ঘুমা।”

বাতেনের কথায় শবনমের মনটা নরম হয়ে গেল। মনে মনে শুকরিয়া জানালো আল্লাহর দরবারে এমন ভালো মানুষের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। ওর কষ্ট ফিরোজা সামনে থেকে দেখেও একবার সাহায্য করতে চাইল না অথচ পুরুষ হয়ে এই লোক এতটা আন্তরিক আচরন করছে। অথচ প্রথম দেখায় লোকটাকে এতটা ভালো বলে মনে হয় নাই। কত কী খারাপ ভেবেছে তার সম্পর্কে । বেশিক্ষণ আর ভাবতে পারল না। ঠিকই এক কেবিনের রোগীর রাতেই লেবার পেইন শুরু হল, রোগীর চিৎকারে পুরো মাতৃসদন কেঁপে উঠল। নার্সরাও ঘুম থেকে উঠে ছোটাছুটি শুরু করল। ফিরোজাকেও উঠতে হল। রোগীর হাসবেন্ড এসে বাতেনকে খোঁজ করতেই বাতেন ছুটে গেল তার কাজে। ডিউটি ডাক্তার যে ছিল সে চোখ ডলতে ডলতে রোগীর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল।
শবনমের আর ঘুমানো হল না ও মুক্তা দিদির ডাকে তার কাছে ছুটে গেল।

কেবিনের থেকে বের করে রোগীকে লেবার রুমে আনা হল। সবাই এক এক কাজে ব্যস্ত। এরই মধ্যে শবনম খেয়াল করল দুই আয়া কী যেন শুধু ফিসফিস করে বলে আর দুজনই শবনমের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। শবনম সামনে গেলে আর দুজনের কেউই কোন কথা বলে না। ওর কাছে বিষয়টা খুব একটা ভালো লাগল না।

সকালের আগেই একটা ফুটফুটে বাচ্চার জন্ম হল। নিজের বাচ্চা না, পরিচিত, আত্মীয় কারোরই না তারপরও বাচ্চা হওয়ার খুশিতে পুরো সদনেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল। কী হয়েছে ছেলে না মেয়ে তা জানার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। শবনমও সামিল হল সেই আনন্দে।

এদিকে ক’দিন ধরেই শিউলির শরীরটা ভালো ঠেকে না। বাচ্চা প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই ওর মনে নানা সংশয়ের উদয় হয়। ওর স্বামী এই মুহুর্তে নিরুদ্দেশে আছে জানে না কবে কখন আসবে। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়াটাও সেই কারনে আরও অনিশ্চিত। প্রথম যখন এসেছিল তখন মনে রাগ গোস্যা ছিল। তারপরও মনে হয়েছিল অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফিরে আসতে পারবে তাই নিশিকে রেখে আসতে গায়ে বাঁধে নাই। কিন্তু এখন নিশির জন্য মনটা ব্যকুল হয়ে উঠে। ছন্দা আর স্বপ্নার সাথেই থাকত নিশি তাহলেতো আর ওর অত বেগ পেতে হত না। কেন যে সাথে আনল না তা নিয়ে প্রায় সময় নিজের উপরই রাগ উঠে। তখন গুনগুনিয়ে কেঁদে উঠে। এখন কাঁদলে ওর মা রেগে যায়। মাঝে মধ্যে খুব জোরে ধমকে উঠেন তিনি। ইদানীং তার মেজাজ যে বেশ খিটখিটে হয়ে গেছে তা কম বেশি সবারই আন্দাজ হয়েগেছে। এই বয়সে জবা বেশ গোছানো হয়ে উঠেছে। নিজের সাথে সাথে ছন্দাকেও সাহায্য করে স্বপ্নাকে দেখা শোনার কাজে। গোমস্তারা বড় গামলায় পানি এনে দিলে ছন্দা নিজেই স্বপ্নাকে গোসল করিয়ে নিজেও করে নেয়। এখন আর কেউ ওদেরকে গোসল করায় দেয় না। ভাতও নিজে মেখে দিলে স্বপ্না নিজ হাতে খায় আর ছন্দাও পাশে বসে নিজেরটা খায়। ওর নানু গৃহস্থালি কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে ওদের দিকে ফিরে তাকানোর বিন্দু মাত্র সময়ও পায় না। কিন্তু তা নিয়ে মনে হয় না এখন আর ওদের কোন অভিযোগ আছে? ওরা হয়ত বুঝেই নিয়েছে এভাবেই বেড়ে উঠতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here