#কৃষ্ণময়ীর_অলংকার
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ১৫
দুপুরের রোদে ছাদ টাকে ধূ-ধূ মরুভূমি মনে হতো। যদি সেখানে যত্ন করে আগলে রাখা সাদা গোলাপের বাগানটা না থাকতো। রোদের তেজে বাইরে তাকানো যাচ্ছে না। তীব্র আলো ঝলসে দিতে চাইছে চোখ গুলো। তপা বিছানায় বসে হাত দিয়ে ওড়নায় গিট বাঁধছে আবার খুলছে। যেন তার সমস্ত মনোযোগ এখন এই ওড়নাতেই সীমাবদ্ধ। পলক এত নীরবতায় বিরক্ত হলো। কি এমন বলবে যার জন্য এত হেজিটেশন।
সিজান গলা খাঁকারি দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল। সফলও হলো। সকলের উৎসুক দৃষ্টি নিপতিত হলো তারই উপর। এক পা দুপা করে এগিয়ে গেল তপার সম্মুখে। তপা তখনও নির্বিকার। সিজান নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে তপার মুখশ্রীতে।
“আমি জানি আমি অপরাধী। কিন্তু আমার শেষ কয়েকটা কথা শুনবি বোন? ফাঁসির আসামীকেও শেষ ইচ্ছের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আমি তো গত কয়েকটা বছর ধরে অনবরত, বিরামহীন ভাবে ফাঁসির দড়িতে ঝুলছি। আমার কি মুক্তি হবে না কখনো?”
তপা মুখ তুলে তাকাল সিজানের দিকে। সিজানের মুখটা বড্ড মলিন দেখাচ্ছে। তপার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। বাকি কথাগুলো শোনায় জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে রইল সে।
সিজান আবারও বলল,
“সেদিন তোকে এলোমেলো অবস্থায় প্রান্ত ভাইয়ের সাথে দেখে আমি তোদের খারাপ খারাপ কথা বলেছি। মায়ের কাছে বলেছি তোদের মধ্যে নিষিদ্ধ সম্পর্ক আছে। আমি কিন্তু মায়ের কানে আগে তুলিনি এই কথাটা। সেই পশুটাই মায়ের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে এক ঝুড়ি মিথ্যে বলেছে। নিজের অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে অন্যের ঘাড়ে। আমি শুধু ওদের কথায় তাল দিয়েছি। সেদিন তোদের বিরুদ্ধে বলা কথাগুলো শুধু আমি বলার জন্য বলেছি। মন থেকে বলিনি। আমি জানি তোদের পবিত্র সম্পর্কের কথা। প্রান্ত ভাই তোকে পৃথার মত করেই ভালবাসে সেটাও আমি জানি, বুঝতে পারি। আমি যখন বাড়িতে ফিরি তখন তুই প্রান্ত ভাইয়ের বুকে হাউমাউ করে কাঁদছিলি। আমি জানি সেই কান্নার কারন। কিন্তু তুই জানতি না তোর অগোচরে, বাবার অগোচরে এক কুৎসিত, বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ আমার মায়ের ব্রেন ওয়াশ করে রেখেছিল। হ্যা দোষ আমার মায়েরও আছে। সে কেবল একতরফা বিশ্বাস করে তোর ছোট বেলাটা বিষিয়ে দিয়েছে। সে চাইলেই পারতো তোকে মেয়ের মত বুকে আগলে রাখতে। কিন্তু সে করেনি। সে তো তার নিজের রক্তকেই কেবল আপন মনে করেছে। বাকি সবাই ভুয়া, মিথ্যেবাদী, অপয়া। মা তো তোকে ভাল বাসেনি। বরং তোকে ভালবেসে আগলে রাখার অপরাধে আমাকে বাড়ি ছাড়া করার পায়তারা করছিল।”
তপা চমকে তাকাল। সাথে তাকাল পৃথাও।
“সেদিন এমনি এমনি আমি মিথ্যেগুলো বলিনি রে। আমি যদি মিথ্যে বলে তোর মনে আমার জন্য ঘৃণা না জন্মাতাম তাহলে তুই আমার আগে বাড়ি ছাড়তি? ছাড়তি না আমি জানি। তোকে আমি সেই জন্ম থেকে চিনি। মরে গেলেও বাড়ি থেকে বের হতি না তুই। তাই তো সেদিন মিথ্যে বলেছি। কালি লাগিয়েছি তোর চরিত্রে। কলঙ্কিত করেছি তোদের পবিত্র ভাইবোনের সম্পর্ককে। ঝলসে দিয়েছি আমার প্রতি থাকা তোর বিশ্বাস আর ভালবাসাকে।আমার আর উপায় ছিল না রে। মা আমাকে বাড়ির বাড় করলো। কারণ বাড়িতে থেকে নাকি লেখাপড়া হয় না, হচ্ছিল না। আসল কারণ তো তার আদরের রক্ত ছিল। তার কথাতেই এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেখানে বাবার আপত্তিও শোনেনি।আমি বাড়ি থেকে বের হলে তোকে কে রক্ষা করতো বল? কে বাঁচাতো তোকে ওই নোংরা স্পর্শ থেকে। তুই বড় হলেও নিজেকে বাঁচাতে পারতি না। যে দিনের বেলাতেই কেউ না থাকার সুযোগে এত জঘন্য কাজ করার সাহস পায় সে রাতের আধারে কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা তোর থেকে কেউ ভালো জানে না। বাবা নিজের কাজ সামলে তোকে কি করে আগলে রাখতো? মাঝে মাঝেই তো বাড়ির বাইরে থাকতে হতো বাবাকে। সেদিন? সেদিন কি হতো বোন? আমি কি বাড়ি ফিরে তোর জ্যান্ত লাশ দেখতাম? নাকি মৃত লাশ? তাই তো সেদিন জীবনের সবচেয়ে নোংরা কাজটা করেছিলাম। মিথ্যে বলেছিলাম। কলঙ্কে ঝলসে দিয়েছিলাম তোকে। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। তখন এর বাইরে অন্য কিছু আসেনি আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে। তুই চলে আসার পরের দিনই আমি চলে এসেছি বাড়ি ছেড়ে। আর কোনো পিছুটান ছিল না ওই বাড়ির প্রতি। তাই তো বছরেও ফিরতাম না একবারও। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারি নি ভালো করতে গিয়ে আমি আমার ছোট্ট বোনটাকে একেবারে হারিয়ে ফেলব।পারলে মাফ করে দিস আমাকে। আর যদি না পারিস তবে পাপের বোঝা মাথায় নিয়েই ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে আমাকে। আমি মরে গেলেও ওই বাড়িতে তুই আর যাস না বোন। ওই নরক থেকে একবার বেরিয়েছিস। আর ওই যন্ত্রণা পোহাতে যাস না তুই। যদি পারিস প্রান্ত ভাইকে বলিস আমায় মাফ করতে। চলো বাবা।”
বলেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মোর্শেদুল হক তপার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“আসি রে মা। সাবধানে থাকিস। নিজের যত্ন নিস। পৃথা মা তপার খেয়াল রাখিস।”
তপা কাঁপা গলায় বলল,
“মামা। ভাই?”
মোর্শেদুল হক মুচকি হেসে বললেন,
“নিজেই ডাক। দেখ হয়তো কাঁদছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।”
তপা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। পলক দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে একহাতে বাহু ধরে আগলে নিল। মোর্শেদুল হক তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুললেন মুখে। মনে মনে বললেন,
“মেয়েটা এবার ভাল থাকবে। আল্লাহ ভাল রেখ ওকে।”
তপা কে ধরে ধরে সিজানের কাছে নিয়ে গেল পলক। সিজান তখনও উল্টো দিকে ফিরে আছে। তপা কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকল,
“ভাই।”
সিজান থমকে গেছে এতগুলো দিন পর তপার মুখে ভাই ডাক শুনে। ছোট ছোট হাতে সিজানের হাত আঁকড়ে যখন ভাই বলে ডাকতো তখন মনে হতো জীবনটা বুঝি সার্থক। এতগুলো দিন এই ডাকটা থেকে বঞ্চিত ছিল। তপা এক বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,
“ভাই। তাকা না আমার দিকে।”
সিজান ঘুরে দাঁড়াল। কাঁপা হাতে তপার গাল স্পর্শ করে বলল,
“আমায় মাফ করে দে বোন। আমি তোর ভালো করতে গিয়ে অনেক বেশি আঘাত করে ফেলেছি। আমি চাইনি তোকে এভাবে কাঁদাতে। কিন্তু আমার আর উপায় ছিল না বিশ্বাস কর। সেদিন ওই মিথ্যেগুলো না বললে তুই আমাদের ছেড়ে চলে যেতি?”
তপা মাথা নাড়ালো। সে যেত না। সত্যি যেত না।পুরো পৃথিবী তপা কে নোংরা বললেও তপা যেত না।যদি মামা আর সিজান দুজনের মধ্যে কেউ নোংরা না বলতো।
সিজান এবারে তপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“তোকে বাড়ি থেকে না সরালে আজ হয়তো তুই এভাবে আমার সামনে থাকতিই না। বেঁচে থাকলেও হয়তো জ্যান্ত লাশ হয়ে থাকতি। তোকে না সরালে আমিও যেতে পারতাম না। কিন্তু যেতে তো আমাকে হতোই। মায়ের মাথার দিব্যি ছিল যে। জানি এসব কুসংস্কার। কিন্তু মা যে বিশ্বাস করে। মায়ের অবাধ্য হলে মা তোর উপর আরও চড়াও হতো। তোর জীবনটা আরও নরক করে দিত। তাই তোকেই কষ্ট দিলাম। আমি সত্যি অনুতপ্ত। আমাকে মাফ করিস বোন। নয়তো মরেও শান্তি পাব না।”
তপা মৃদু স্বরে বলল,
“আমি কি তোকে জড়িয়ে ধরবো ভাই?”
সিজান চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। তপা বিনা দ্বিধায় আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
পেছনে দাঁড়িয়ে নীরব অশ্রু বিসর্জন দিল পৃথাও। মোর্শেদুল হক পৃথার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“সব ঠিক হয়ে যাবে মা। হয়তো হয়েও গেছে। কাঁদিস না আর। আমার বোকা ছেলেটা বোনের ভালো করতে গিয়ে সবদিক ভুলে গিয়েছিল। এবার সব আগের মত হয়ে যাবে।”
কয়েক বছর আগের কথা।
তপা তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সবে টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে। রেজাল্ট তখনও বের হয় নি। তপা সেদিন যথারীতি স্কুলে গিয়েছিল। সিজান, সিজানের বাবা, মা কাছাকাছিই একটা দাওয়াতে গিয়েছিল। তপার স্কুল ছুটির সময় ছিল বিকাল চারটা। সেদিন কোনো কারন বশত একটার মধ্যেই ছুটি হয়ে যায়। তপা বাড়ি ফিরে কাউকে দেখতে না পেয়ে নিজের জন্য বরাদ্দ ঝুপড়ি ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু সে জানতো না তার বিছানায় বসে দানবটা তারই ব্যবহার করা জামা কাপড় নিয়ে খেলছিল । বিশ্রী এক খেলা। বিকৃত মস্তিষ্কের দানবটা তপাকে দেখতেই ঠোঁটে বিকৃত হাসি ফুটিয়ে তুলল। তপা চকিত ভঙ্গিতে তাকাল বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা তার জামাগুলোর দিকে। একটা জামা দানবটা হাতে নিয়ে নাকে ছোঁয়ালো। নাক টেনে নিশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে নেওয়ার চেষ্টা করল জামায় জড়ানো তপার শরীরের ঘ্রাণ। তপা যেন নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। পা দু’টো অবশ হয়ে গেছে। তপার মস্তিষ্ক বলছে তপা পালা। নইলে আজ আর বাঁচতে পারবি না। কিন্তু পা দু’টো তাতে সায় দিচ্ছে না। নড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তপার মনে হলো পাতাল দেশ থেকে কেউ হয়তো টেনে ধরেছে তার পা দু’টো। নড়ার শক্তি না পেয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকাল সামনের দানবের দিকে। দানবটা তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তপা কে গিলতে শুরু করে দিয়েছে। পা থেকে মাথা অবধি নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বাম হাতে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে হাসল ভয়ংকর মানুষ রূপী দানবটা।
তপা শরীরের সাথে যুদ্ধ করে পিছিয়ে গেল। কিন্তু দরজা ঠেলে বাইরে বের হওয়ার আগেই দানবীয় হাতটা তাকে আঁকড়ে ধরল। তপা ছটফটিয়ে উঠল। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে তপা। কিন্তু ছোট্ট একটা প্রাণ কি পারে দানবের থেকে মুক্তি পেতে?
উপায় না পেয়ে তপা চেঁচাতে শুরু করল। প্রথমে মামা, তারপর ভাই। অবশেষে মামির নাম ধরেও অসংখ্য বার ডাকল সে। কিন্তু সে কি জানতো বাড়িতে দানব ছাড়া কেউ নেই।
তপা কে টেনে হিঁচড়ে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জামাগুলোর উপর ছুঁড়ে ফেলল। তপা ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে। বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতেই শুরু হলো দানবের দানবীয় হাতের অত্যাচার। ধস্তাধস্তি শুরু হলো বিশালাকার দানব আর ছোট্ট একটা প্রাণের সাথে।
ছোট্ট নাজুক শরীরটা নেতিয়ে পড়ার আগেই বাড়ির উঠোনে পা পড়ল প্রান্তর। কাউকে দেখতে না পেয়ে তপার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই কর্ণকুহরে প্রবেশ করল তপার আর্তনাদ। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে শেষ শক্তিটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে সে। শতাধিক বার আল্লাহ কে স্মরণ করার পর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল প্রান্ত। দানবের তখন অন্য দিকে খেয়াল নেই। সে মত্ত নিজের বিকৃত মস্তিষ্কের বিকৃত কার্য সম্পাদন করতে।
প্রান্ত গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতেই তার হুঁশ ফিরল। প্রান্তকে দেখে তাড়াহুড়ো করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘর ছাড়ল সে। তপা উঠে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। প্রান্ত দ্রুত পায়ে তপার সামনে বসে বুকের ভেতর আগলে নিয়ে বলল,
“কিচ্ছু হয় নি দেখ। ভাইয়া চলে এসেছে তো। সব ঠিক হয়ে গেছে তাকা আমার দিকে। এই পাগলি তাকা না। সব ঠিক হয়ে গেছে তো।”
তপা প্রান্তর পিঠ আঁকড়ে ধরে কাঁদছিল। হঠাৎ হাতের বাঁধন ঢিলে হতে হতে পড়ে গেল হাতটা। প্রান্ত আস্তে করে তপার মুখটা এক হাতে ধরে সামনে আনতেই বুঝতে পারল মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। প্রান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে তপার গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিয়ে বাইরে প্রবেশ করার জন্য দরজার কাছে আসতেই দেখল দরজার বাইরে সিজান বাবা মা সহ দাঁড়িয়ে আছে।
প্রান্ত কিছু বলার আগেই স্ব শব্দে চড় বসিয়ে দিল হাজেরা বেগম। যিনি সিজানের মা।
প্রান্ত গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“খালা মণি!”
হাজেরা বেগম আঙুল উঁচু করে বললেন,
“খবরদার ওই পাপ মুখে আমায় খালা মণি ডাকবি না।আমার কোনো ভাগ্নে নেই। তোর মা তো ওই কালনাগিনী কে ভাল বাসিনা বলে বড় বড় বুলি শোনাতো। কিন্তু এখন? তার শিক্ষার এই নমুনা? কালনাগিনী কই? তাকে বের হতে বল। তার চুল ন্যাড়া করে আজ আমি বাড়ি ছাড়া করব। ডাক নবাবজাদী কে।”
প্রান্ত আকস্মিক এই ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে তাকিয়ে রইল। কি বলবে আর কি বলবে না সেটা বুঝতেই কেটে গেল কয়েক প্রহর।
প্রান্ত কে ঠেলে ভেতরে ঢুকে অজ্ঞান তপার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল। তপা চোখ খুলছে না দেখে সিজান কে পানি আনতে বলল।
সিজান দ্রুত পায়ে পানি এনে দিলে সবটুকু পানি তপার মুখের উপর ঢেলে দিল। তবুও চোখ বন্ধ দেখে নাক মুখের উপর ওড়না চেপে ধরল। নিশ্বাস আঁটকে আসায় অতি দ্রুত চোখ পিটপিট করে খুলে ফেলল তপা। তপার জ্ঞান ফিরতে দেখে আবার চুলের মুঠি ধরে বলল,
“এতক্ষণ অজ্ঞান হওয়ার নাটক করছিলি? দুজনের ইচ্ছায় পাপ করে এখব অজ্ঞান হওয়ার নাটক করে একজনের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছিলি? তোর নাটক বহুত দেখছি আমি। আজ এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের হবি তুই।”
তপা কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
“কি পাপ করেছি আমি?”
হাজেরা বেগম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলল,
“তুই ওর সাথে ছিলি না? তোর অবৈধ সম্পর্ক নেই প্রান্তর সাথে? তোর এই এলোমেলো অবস্থার জন্য তোরা দুজন দায়ী না?”
তপা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল গায়ে স্কুল ড্রেসের উপর একটা ওড়না জড়ানো। প্রান্তর দিকে তাকিয়ে দেখল প্রান্ত একরাশ ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে আছে হাজেরা বেগমের দিকে।
তপা গুটি গুটি পায়ে প্রান্তর পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“ভাইয়া কি হয়েছে?”
প্রান্ত মাথা নিচু করে ফেলল। কি করে বলবে সে তাদের চেনা মানুষগুলো তাদের পবিত্র সম্পর্কটাকে নোংরামোয় রূপ দিয়েছে। তপা আবারও বলল,
“ভাইয়া বলনা কি হয়েছে?”
প্রান্ত মুখ খুলার আগেই সিজান বলল,
“তোরা দুজন একসাথে ছিলি। নোংরা খেলায় মেতেছিস তোরা। অস্বীকার করতে পারবি?”
তপা যেন আকাশ থেকে পড়ল। তার প্রাণপ্রিয় ভাই একথা বলছে এটা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রান্ত তেড়ে এসে সিজানের কলার চেপে ধরল। হাজেরা বেগম ছুটে এসে আবারও চড় লাগিয়ে দিল প্রান্তর গালে। বাদ পড়ল না তপাও। তপা কে আঘাত করতে দেখে প্রান্ত সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওর গায়ে আর একটা আঁচড় পড়লে খুন করে ফেলব আপনাকে। ভুলে যাব আপনি আমার মায়ের বোন।”
হাজেরা বেগম চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তোর কাছে এই মেয়েটা এত আপন হয়ে গেল যার জন্য তুই তোর মায়ের মত খালাকে খুন করতে চাইছিস।”
“মা কথাটা আপনার মুখে শোভা পায় না। আর সিজান, আমি ভাবতাম আংকেলের পর তুই অন্তত তপা কে ভালবাসিস। কিন্তু আমি ভুল। তোরা সবাই এক। সবকটা অমানুষ। ”
মোর্শেদুল হকের সামনে দাঁড়িয়ে তপা নরম গলায় বলল,
“মামা তুমিও বিশ্বাস করো?”
“পৃথিবী উল্টে গেলেও আমি বিশ্বাস করব না রে মা।”
তপা মৃদু হাসল। তার আর কিছু দরকার নেই। একজন তো বিশ্বাস করেছে তাকে। প্রান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া চলো এখান থেকে।”
হাজেরা বেগম গলা উঁচিয়ে বললেন,
“চলো মানে? কোথায় যাবি? আগে তোর নাগরের বাপ মা ডাকি। তারপর তো যাবি। একেবারে চিরবিদায়।”
প্রান্ত নিজেই ফোন বের করে মায়ের নম্বর ডায়াল করে বলল,
“মা ইমিডিয়েটলি মোর্শেদ আঙ্কেলের বাড়ি এসো। তোমার বোন সার্কাস শুরু করেছে। তাড়াতাড়ি এসো। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে আমি তাকে খুনও করে ফেলতে পারি।”
চলবে….
(আরও কিছুটা লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে লিখতে পারলাম না।)