#শবনম (পর্ব ১৮)
সায়লা সুলতানা লাকী
এতটা সময় চাপা অস্থিরতায় কেটেছিল বলেই কী না এখন ফ্যানের নিচে হাসপাতালের বেডে শুতেই ঘুমিয়ে পড়ল শবনম। এই সময়ে ভর্তি হওয়ায় ওর রাতের খাবার পাওয়াটা অনিশ্চিত জেনে ও ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই আয়ার হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়েছিল যাতে রাতের খাবারের ব্যবস্থাটা হয়ে যায়। গতবার যখন ভর্তি হয়েছিল তখন দুলাল প্রায় সময় এটা সেটা কিনে আনত শবনমের জন্য আর সেখান থেকে আয়াদেরকেও খেতে দিত। এতে ওরা খুব আন্তরিক ব্যবহারও করত। এখন শবনম টিকে থাকতে সেসব ট্রিকসই কাজে লাগাচ্ছে। যে কোন মূল্যে ওকে টিকতে হবে এই শহরে যদিও জানে না তা কীভাবে সম্ভব!
এদিকে রাত যত ঘনিয়ে এল ততই অস্থিরতা বেড়ে গেল অবুজ শিশু স্বপ্নার। সারাদিন মা’কে না পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। এখনও পুরোপুরি মায়ের বুকের দুধ খাওয়াটা ছাড়েনি ও, ঘুমের সময়টায় অন্তত দুধ মুখে দিয়ে শোয়। আজ সেই নিয়মটার বাহিরে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিল না। অনেক কিছু দিয়েও যখন শবনমের মা ওর কান্না থামাতে ব্যর্থ হল তখন শিউলিকে অনুরোধ করল স্বপ্নাকে বুকে নিয়ে শুতে। কিন্তু শিউলি মুখের উপরই মানা করে দিল। বলল, ওর নিজেরই শরীরটা ভালো ঠেকতেছে না এর মধ্যে নতুন কোন ঝামেলা ও নিতে পারবে না।
শিউলির অমতেই কি না শবনমের মা যেন চোখে ঘোরতর অন্ধকার দেখল। কীভাবে সামনের দিনগুলি পার করবে তা ভেবে তার যেন এবার বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে এল।
ছন্দা এইটুকু বয়সেই যেন সব বোঝতে শুরু করল। ছোট বোনের কান্না থামানোর চেষ্টায় যা যা মাথায় এল তা সবই চেষ্টা করল। স্বপ্না যতটা সহজভাবে চিৎকার করে কাঁদছে ও কিন্তু তা পারছে না। ওর নানির বেতাল অবস্থা দেখে নিজেই যেন অনেকটা ভরকে গেল। প্রথম দেখায় ওকে দেখে মনে হল ও নিজে বোধহয় কাঁদতে ভুলেগেছে কিন্তু যখন দেখা গেল ওর চোখদিয়েও নিরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে মায়ের অভাববোধে তখন সবার ধারনা ভুল হল।
কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ছন্দা আর স্বপ্না ঘুমালেও ওদের পাশে শুয়ে থাকা ওর নানির আর কান্না থামল না। মেয়ে হারানোর শোকে তিনি মৃয়মান।
গভীররাতে যখন সব স্তব্ধ তখন শবনমের বাবা আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসে বললেন
“হুদাই আর মায়া কান্দন কাইন্দো না শবনমের মা। এইবার ক্ষান্ত দেও কান্দনরে।”
“কেমন বাপ আপনে? মাইয়াডার লেইগ্যা আপনের দিলে একটুও টান পড়ে না? একটুও কষ্ট লাগে না?”
“লাগছিল, তয় অহন আর লাগে না। যহন বুঝছি মাইয়া মরে নাই, উলডা বাপের ঘরে চুরি কইরা পলায়ছে তহন রাগে শরীর থরথর কইরা কাঁপছে। ”
“ও আল্লাহ! এইডা আপনে কি কন? কী হুনাইলেন আপনে আমারে? শবনম বাইচ্যা আছে? আপনে জানেন কিছু? আমারে কন নাই ক্যা? কই আছে ও?”
“চুপ,চুপ, গলা নামাইয়া কতা কও। এই লেইগ্যাই কয় চোরের মায়ের বড় গলা। আস্তে কতা কও। সামনের ঘর থেইক্যা তোমার আরেক মাইয়া শুনলে আর ইজ্জত থাকব না। ”
” হায় আল্লাহ! এইডা কী কন, শিউলি যদি শুনে ওর বইন বাইচ্যা আছে তয়তো বহুত খুশি অইব…”
“হ তুমি আসলেই একটা বেক্কল মাইয়া মানুষ। ও যহন শুনব শবনম টেকা চুরি কইরা পলায়ছে তহন পুরা গেরাম ছড়াইব তুমি একটা চোরের মা। কয়দিন আগে ওর জামাই চুরি করনে ওরে গাইল্যাইছো না। ভুইল্যা গেছো? অহন ও ঢোল পিডাইয়া পুরা গেরাম ছড়াইব যে তোমার মাইয়াও একটা চোর। অহন যেমন পুরা গেরাম তোমার মাইয়া মরার শোকে কাতর, তহন তোমার মাইয়া চোর এই খবরে বড় তামাশা করতে লাইগ্যা পড়ব সব। নিজেগো ইজ্জত বইল্যা যা আছে তা ওই এক কারনেই ধুইয়া যাইব।”
“আপনে হাছাই কইতাছেন শবনম বাইচ্যা আছে? টেকা নেওক তবু আমার মাইয়া বাইচ্যা থাওক। আমি তাতেই খুশি। মাইয়ারে জোর কইরা বিয়া দেওনের কতাতেই তো মাইয়া ভাগছে। মাইয়া কী হুদাই কামে ভাগছেনি!”
“তোমার শরম লজ্জা গেলো কই? মাইয়া এমন একটা কাম করল আর তুমি কও তুমি খুশি? মাইয়ার বিয়ার লেইগ্যা তুমি কী কম লাফাইছোনি? অহন এমন পলডি লও ক্যা?”
“হ আমি এমনই, আমি সেন বুঝি আমার কি বেসাত খোয়াইছিলাম এতক্ষন। আমার নাড়ি ছিড়া ধন, আমার যে কেমন লাগে তা শুধু আমিই জানি। আপনে জানবেন কইত্তে?”
“আমার বুঝনের আর দরকার নাই। অহন মাইয়া অতগুলি টেকা লইয়া কই গেল হেইডা ভাবো? লঞ্চ ঘাডের ছেমরাডা কইল বিয়ানকালে গাঙপাড় দিয়া আইয়া এক বেডি লঞ্চে উডছে আর ওইডা ঢাকার লঞ্চ। অহন চিন্তা কর অতবড় ঢাকায় তোমার মাইয়া একলা একলা কী করতাছে? ওইহানে কত রকম বিপদ ঘুইরা বেড়ায় তা তুমি জানবা কইত্তে? শিয়ানা মাইয়া মানুষ একলা চলন কী অত সহজ?”
“যা করব তা ভালোই করব। মাইয়া আমার বেক্কলনি? নিজের ভালামন্দ বুঝনের জ্ঞান অইছে ওর। আর ঢাকায় কী আর ও নতুননি যে ডরামু! ঠিকই মাইয়া নিজেরে গুছায় লইতে পারব, আমি জানি।”
মুখে না বললেও শবনমের মায়ের শেষ কথাতে যে শবনমের বাপের চোখজোড়া চকচক করে উঠল তা শবনমের মা ঠিকই দেখতে পারল। ঘুমন্ত দুই নাতনির কপালে চুমু খেয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে আল্লাহর দরবারে চাইতে বসলেন মেয়ের সালামতি সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে ।
এদিকে মাঝরাতে শবনমের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমের ঘোরেই বিছানায় মধ্যে এদিক ওদিক এলোমেলোভাবে হাতানো শুরু করে। কোথাও নিজের দুই মেয়েকে না পেয়ে আতংকিত হয়ে লাফিয়ে উঠে বসে বিছানায়। মেয়েদের কাছে না পেয়ে ভয়ে জড়োসড়ো শবনম চোখ মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন এক জায়গায়। আর তখনই মনে পড়ে যে ও ওর মেয়েদের কাছে নাই। ও নিজেই যে ওর মায়ের কাছে মেয়েদের ফেলে রেখে একাই চলে এসেছে বহুদূরে। হঠাৎ করেই বুকটা কেমন খা খা করে উঠল বেদনায় । ভেতর থেকে হুহু করে কান্নার গুলো দলা পাকালো বুকের মধ্যে। চারপাশটায় একবার চোখ বোলাল। হালকা নিভু নিভু আলোতে দেখল সিস্টার দুজন ফ্লোরে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে। তার একটু দূরে ঘুমিয়েছে রাতের ডিউটিতে থাকা আয়াদ্বয়। প্রতি বেডের রোগীরা সব ঘুম। চারপাশে এত এত মানুষের ভীড়েও নিজেকে আবিস্কার করল বড্ড একা রুপে। নিজেকে আর সামলাতে পারল না। ফুপিয়ে কেঁদে উঠল । আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে লাগল আর খা খা করা খালি বুকটায় কেবল হাত বোলাতে লাগল মনের অজান্তেই। এতটা নিঃস্ব এর আগে আর কখনও ওর মনে হয়নি নিজেকে। মেয়ে দুইটার জন্য মনটা একসময় অস্থির হয়ে উঠল ফুপিয়ে কান্নাটাই যে কখন মৃদুস্বরে গোঙানির রুপ নিল তা আর টের পায়নি। হঠাৎ সিস্টারের কথায় সম্বিৎ ফিরে পেল।
সিস্টার ঘুমের মধ্যেই আস্তে করে বলে উঠল
“এই কাঁদে কে? কোন বেডের রোগী কাঁদে? ওই নতুন রোগীর নামটা যেন কী? এই মরিয়ম উঠোতো দেখো নতুন রোগীর কী আবার পেট ব্যথা শুরু হল কী না? ”
সিস্টারের ডাকে আয়া মরিয়ম উঠে এল শবনমের কাছে। আস্তে করে জিজ্ঞেস করল
“কিগো আপনের কী পেট ব্যথা করতাছে। ”
“নাগো বইন, বুকটায় ব্যথা করতাছে। অনেক কষ্ট হইতাছে।” কাঁদতে কাঁদতেই বলল শবনম।
“দিদি, রোগির বলে বুকে অনেক ব্যথা হইতাছে।” আয়ার এমন কথায় এবার সিস্টার উঠে আসে শবনমের কাছে। চোখ কচলিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় । আস্তে করে প্রশ্ন করে
“দেখি দেখানতো কোন দিকটায় ব্যথা করছে আপনার? ”
এবার শবনম আরও একটু ভলিউম বাড়িয়ে কেঁদে উঠল আর বলল
“আপাগো, এই ব্যথাতো দেহানের উপায় নাই।ব্যথাতো সব জায়গায়। এমন ব্যথা যে আমি সহ্য করতে পারতাছি না। আমার কইলজাডা যে ফাইট্যা যাইতাছে। আমি মনে হয় অহন মইরাই যামু। তয় দুঃখ একটাই মরনের কালে আমার মাইয়া দুইডারে দেইখ্যা যাইতে পারুম না।”
“আহহা! এমন আহাজারি পরে করেন, এখন আগে দেখান কোন পাশে ব্যথা? কেমন ব্যথা? কান্না থামান, ব্যথাটা কী রকম তা বলেন?”
“আপা চিনচিনানি ব্যথা। আজকা সারাদিনে একবারও মাইয়া দুইডারে দেখি নাই। কেমনে বুঝামু এই কষ্ট আপনেরে।”
“ব্যথা কি এক জায়গায় আটকে আছে না কি এদিক ওদিক সরে? ধূর, আপনে কান্না বন্ধ করেনতো আগে, ব্যাথার কথা বলেন ঠিক মতো! ডাক্তার ডাকতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করবে সমস্যা কী? আর এই রোগীতো নিজের সমস্যা স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারে না। কী আজব একজন!”
সিস্টার কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করায়৷ এবার শবনম নিজেকে একটু সংযত করতে চেষ্টা করল। কান্নার দলা গলায় আসতেই আটকে দিল আর তা একটা সময় শবনম গিলেও নিল নিজেকে শান্ত করতে। তারপর একটু দম নিয়ে বলে
“আপা ব্যথাডা মনে অয় অহন একটু কমছে। ”
কথাটা বলে বুক থেকে হাত নামিয়ে নিল।
এবার সিস্টার আরও বেশি বিরক্ত হল ওর কথায়। বেশ রাগ দেখিয়েই বলল
“ডাক্তারের কথা শুনেই ভয়ে বলছেন ব্যথা নাই। অথচ এতক্ষণ কেঁদে চোখ মুখের কী অবস্থা করেছেন। আরে আপনে যদি ঠিক মতো না বলতে পারেন তবে ডাক্তার চিকিৎসা দিবে কীভাবে? কই দেখানতো কোথায় ব্যথা! বলে এইবার সিস্টার নিজেই শবনমের বুকে হাত দিতে চায়। আর তখনই শবনম নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে বলে
“আপাগো বাপ মরা মাইয়া দুইডারে মায়ের কাছে ফালায় আইছে হেই দুঃখে অহন বুকটা ব্যথা করে।ছোড মাইয়াডা বুকের দুধ খায়, সারারাইত বুকটার লগে লাইগ্যা থাকে। গতরাইত থেইক্যা মাইয়া আমারে কাছে পায় না। দুধ মুখে নেওয়া ছাড়া ঘুমায় না। আল্লায় জানে ওয় কী করছে সারারাইত। হেইডা ভাইব্যা এতক্ষণ ব্যথা আছিল।”
” সেই জন্যই কী বুক ভার হয়ে আছে? ব্যথা কী সেই জন্য? আগে বলবেন তো! টিপে ফেলে দিলেই ব্যথা কমে যাবে। এত ছোট বাচ্চাকে তাহলে
কেন ফালায় আসছেন? মাতো হয়েছেন আরও আগে।আপনি জানেন না এমন ব্যথা হলে কী করতে হয়? আজবতো!”
সিস্টারের এই প্রশ্নে এবার নড়েচড়ে বসে ও। যদি বলে কাজের জন্য তাহলে আর হাসপাতালে রাখবে না। তাই বলল
“বাঁচার জন্য। গেরামে আমার রোগের কোন চিকিৎসা আছিল না। আমি ঢাকায় না আইলে মইরাই যাইতাম।”
“বাঁচতে হলেতো নিজের সমস্যাগুলোকে ডাক্তারকে সরাসরি খুলে বলতে হবে। না বললে সে চিকিৎসা দিবে কীভাবে?”
শবনম আর কথা বাড়ায় না। চুপ করে থাকে। এবার সিস্টার আবার ফিরে যান নিজের জায়গায়।
শবনমও শুয়ে পড়ে বেডে।
সকাল হতেই আয়া মরিয়ম ডেকে তোলে শবনমকে। গাইনি ওয়ার্ডের এক মা এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষে আছে তার নবজাতক শিশুকে নিয়ে এসেছে বাচ্চার বুড়ো নানি। কেন জানি শবনম বাচ্চাটাকে ফেরালো না। ওকে বুকের দুধ খাওয়ালো। এরপর বাচ্চাটার সাথেই ওই ওয়ার্ডে চলে গেল। কেন জানি এখানে আসার পর মনটা অনেক খানি হালকা হল। যতক্ষণ না বাচ্চার মা বেডে এল ততক্ষণ ও-ই এই বাচ্চার দেখাশোনা করল।
এভাবে ও এক এক করে দুই দুইটা বাচ্চার দেখাশোনার দায়িত্ব নিল নিজ গরজে। নিজের বেডে যাওয়ার কথা ভুলেই গেল। এদিকে রাউন্ডে ডাক্তার এসে কয়েকবারই ফিরে যায় ওকে না পেয়ে। শেষে ওকে ডেকে এনে যখন বিস্তারিত জানতে চায় তখন শবনম ওর সব সত্যতা স্বীকার করে । কোন অসুখ ছাড়াই ও ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে এসেছে তাও বলে সবশেষে নিজের জন্য একটা কাজও চেয়ে বসে ডাক্তারের হাতেপায়ে ধরে।
শবনমের জীবন কাহিনি শুনে ডাক্তারের মন কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল আগেই তাই আর ওর এই অভিনয়ের জন্য কোন শাস্তি দিল না। বরং ওর স্বামীর প্রতি ওর ভালোবাসা দেখে নিজেই শিহরিত হল।
ওকে কাজ দিবে এমন কোন প্রতিশ্রুতি ঠিক তখনই দিতে পারল না । তবে ওকে ডিসচার্জ করে দিল। কারন বেড খালি হলে আরেক রোগী চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
ডিসচার্জ হলেও এবার শবনমের তেমন কোন অসুবিধা হয় না। গাইনি ওয়ার্ডে মোটামুটি একটা পরিচয় হয়ে গেছে ততক্ষনে ওখানে গেলে কোন না কোন রোগীর সহকারী হিসেবে থাকার মতো ব্যবস্থা করতে পারবে বলে ও জানে।
রাখে আল্লাহ মারে কে? ঠিকই সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাচ্চাগুলোর প্রাথমিক দেখাশোনার জন্য শহরের মানুষের চেয়ে ওর অভিজ্ঞতা ঢেড় সারি বেশি হওয়ায় সবাই ওকে ডেকে নিল কাছে। যখন যার বাচ্চার দেখাশোনা করে সে’ই খাবার দেয়। রাতে ঘুমানোও কোন সমস্যা হয় না রোগীর বেডের পাশে ফ্লোরে নিজের রঙিন শাড়িটা বিছিয়ে শুয়ে পড়ে।
এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। কাজের ভীড়ে যখন ডুব দিয়ে থাকে তখন মেয়েদের জন্য মন কাঁদে না কিন্তু যখনই অবসর পায় কিংবা নিজের মেয়েদের সমবয়সী কাউকে চোখের সামনে দেখে তখনই ওর মাতৃত্ব জেগে উঠে প্রখরভাবে। তখন নিরবে কেঁদে বুক ভাসায় তবুও নিয়তকে দোষারোপ করে না। বলে আল্লাহ যেমন রেখেছেন তা বেশ ভালোই রেখেছেন। এরই মধ্যে একদিন ওর সেই ডাক্তারের সাথে দেখা হয়ে যায়। উনি জানান যে একটা মাতৃসদন ক্লিনিকে আয়ার চাকরি ও চাইলেই করতে পারে। যেহেতু ওর পড়াশোনার কোন সার্টিফিকেট নাই তাই ওর জন্য ভালো কোন চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভাব না।
প্রথম ধাক্কায় শবনম কোন চিন্তা ভাবনা না করেই চাকরিতে রাজি হয়ে যায়। কী চাকরি? কাজ কী? এতসব দেখার সময় নাই ওর। মাসের বেতন খারাপ না, যা পাবে তা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকতে পারবে। ওর চাচার বাসায় দুই নার্স ভাড়া থাকত তাই ভাড়া সম্পর্কে একটা ধারনাও ওর আছে। নিজের বলতে ওই এক রঙিন শাড়ি ছাড়াতো সাথে আর তেমন কিছু নাই। নিজের টাকাও তেমন কিছু খরচ করতে হয় নাই এই পর্যন্ত । তাই আপাতত মনের জোরটাও অনেক বেশি আছে।
পরদিন মরিয়মই নিয়ে যায় সেই মাতৃসদনে। আজিমপুরের ওই মাতৃসদন মরিয়ম ছাড়া ওর পক্ষে জীবনও আসা সম্ভব হত না। মনে মনে একবার দুলালের কথা মনে করল বিপদে পড়লে মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আজ আবার তার প্রমান মিলল।
এই মাতৃসদনে আয়াদের পোশাক সাদার মধ্যে নীল পাড়ওয়ালা শাড়ি। শবনম এই প্রথম নিজের কোচ থেকে টাকা বের করে নিজের জন্য একটা শাড়ি কিনল। অবশ্য ওকে তেমন কিছুই করতে হয়নি। সদনের পিয়ন মজনু ভাই’ই এনে দিল শবনম শুধু তাকে টাকা দিয়েছিল কিনতে।
পরের দিন শুরু হল শবনমের নতুন জীবন।
চলবে