#শবনম (পর্ব ১১)
সায়লা সুলতানা লাকী
কথা এক কান দুইকান হয়ে পৌঁছে গেল দুলালের বাবার কানেও। তিনি চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন জমির জহির আর জব্বারের নাম ধরে। করুন কন্ঠে শুধু অনুরোধ করতে লাগলেন দুলালের একটু খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। কিন্তু জহির জব্বার কেউই তার অনুরোধকে পাত্তা দিল না। যে যার কাজে বের হয়ে গেল।
এদিকে শবনমের হায় হুতাশ দেখে বানু একটু আগ বাড়িয়ে বলল
“হুদাই এত চিন্তা করিস নাতো শবনম। এমনওতো অইতে পারে গাঙের মতিগতি ভালা না ঠেকায় আইজ লঞ্চই ছাড়ে নাই সারেং বেডা। ওই বেডারওতো জানের ডরভয় আছে। কী আছে না?
দেহা গেল ওইদিকে লঞ্চই ছাড়ে নাই আর এই দিকে আমরা কাইন্দা রাইন্দা একাকার অইতাছি।”
“হ, বানুভাবি আপনের কতারও একটা মূল্য আছে। এমনডাও অইতে পারে। সারেং বেডাওতো মানুষ! এমন ঝড় তুফানরে কে না ডরাইব! মনে হয় লঞ্চই ছাড়ে নাই। তাইতো সকালে ঘাটে লঞ্চও ভিরে নাই।”
শবনম নিজের মনকে বোঝাল বানুর কথার উপর ভর করে।
“হ বইন এইবার আয়, গরম ভাত রানছি। দুইডা ভাত খাইয়া ল। হুদাই কান্দলে অইব? পেডেরডা আর বুকেরডার কতা চিন্তা করতে অইব না? আয় আয় জলদি আয় দুইডা খাবি।”
“ও ভাবি তুমি হাছা কইতাছোতো? এমনডাওতো অইতে পারে তাই না?” শবনম আবার নিরাশার দোলায় চেপে প্রশ্ন করে।
“হ, দেহিস এমনডা অইছে।”
বানুও হাল ছাড়ে না। শবনমকে বুঝিয়ে ভাতের থালা এগিয়ে দেয়।
শবনম একটা থালায় ভাত নিয়ে ডলে নরম করে ছন্দাকে খাওয়ায় দেয় এরপর বানুর টানাটানিতে নিজের কয়েক লোকমা ভাত মুখে দেয়। ওর ভাত খাওয়া দেখে ওর শাশুড়ি ব্যঙ্গ করে বলে উঠে
“হায়রে আল্লাহ, কত কী যে দেহুম। ভাতার মইরা সারে নাই আর কেমনে ক্যাতক্যাতাইয়া ভাত গিলে মাইনষে। ওরে আল্লাহরে আল্লাহর এডিরে কয় কলিকাল। মাইনষের ভিতরে দিলই নাই। শুধু আছে পেটটা।”
“হায় হায় আম্মা এইসব কী কন! আসতাগফিরুল্লাহ কন, আসতাগফিরুল্লাহ কন।ছন্দার বাপে মরব ক্যা? হেয় মরে নাইতো। দেখবেন ঠিকই হেয় বাড়ি আইয়া পৌঁছবো। ”
শবনম তড়িঘড়ি করে শাশুড়িকে বলল।
“হ আর ঢং করিছ না, গতদিনের ঝড়ে না জানি কত মানুষ মরছে তা আল্লায় কইতে পারব।”
“ছন্দার বাপের মেলা বুদ্ধি, হেয় অমন ঝড় দেইখ্যা ঠিকই লঞ্চে উঠব না। দেইখ্যেন হেয় আইজ নয়ত কাইল ঠিকই বাড়িত আইয়া পৌঁছব। ”
শবনম এক বুক আশা বুকে চেপে কথাটা বলে ছন্দার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
“ওই জমিরের মা তোর দিলে কী একটু রহম নাই? এমন পাষান অইলি কেমনে? কী কতা কহন কওন লাগব তা কী তুই জানোস না? আয় আমার লগে আয়, আমি তোরে শিগাই কতা কেমনে কবি।”
বড় চাচিআম্মা এগিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলে শবনমকে সরিয়ে দিল।
সবার সাথে গলাবাজি করে নিজের ঘরে এসে বসতেই মনটা অস্থির হয়ে উঠল দুলালের চিন্তায়। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল শবনম
“ও আল্লাহ, তুমি পানা দাও, তুমি রহম কর। তুমি ছন্দার বাপেরে সহিসালামতে ঘরে আইন্যা দেও। একটা খাসি মান্নত করলাম তোমার নামে। আল্লাহগো তুমি দয়া কর। তুমি আমার ঘর ভইরা দেও। আমার ছন্দার বাপেরে ঘরে আইন্যা দেও। আমি আর এ জীবনে কিচ্ছু চাইমু না।”
শবনমের কান্নাতে পুরো বাড়ির মানুষও কাঁদে তবে তা গোপনে। কেউ সামনাসামনি তাদের মনের দুশ্চিন্তাগুলো প্রকাশ করে না। থেকে থেকে এমন চাপা বিলাপ চলল সারাটাদিন। ছন্দার প্রতিও যেন শবনম ওর সকল দায়িত্ব ভুলে গেল। কোন কাজই যেন ওর হাতে উঠল না। কীভাবে যে দুলালের খোঁজ খবর নিবে তাও বুঝে উঠতে পারে না। এমনই এক উত্তেজনায় যখন জর্জরিত তখনই খেয়াল করল ওর ঘরের দুয়ারের কাছে পালকি এসে থামল। সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় ওর মায়ের আসার কারন বোধগম্য হল না কিন্তু মা’কে কাছে পেয়ে ওর ভেতরের দুশ্চিন্তা এবার বেরিয়ে এল। ঝাপিয়ে পড়ল মায়ের বুকে গগনবিদারী এক আর্তচিৎকার দিয়ে
“ও মাগো, ছন্দার বাপেতো অহনও বাড়ি আইল না। আজকাইতো হের বাড়ি আওনের কতা। কেন আইল না। আমার ভিতর কেন এমন খাবলাইতাছে। আমার মনে কেন এত কুডাক দিতাছে? মাগো আমি অহন কী করুমগো মা?”
“আল্লাহ আল্লাহ কর, মারে আল্লাহ আল্লাহ কর। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এমন চিক্কুর দিছ না তোর পেডের বাচ্চার সমস্যা অইবরে মা। আল্লায় আমগো ঈমানের পরীক্ষা নিতাছে। আমগো অহন ধৈর্য ধরতে অইব।”
“বিয়াইন আইয়া ভালা করছেন, আমারতো মাতা ঠিক কম করতাছে না। এমন একটা বিপদ আল্লায় দিব যা জীবনও ঠাওর করতে পারি নাই।”
বড় চাচিআম্মা কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
কিছুক্ষণ পর শবনমের মায়ের চিকন সুরে কান্নার শব্দ পাওয়া গেল কিন্তু মুখে কোন কথা নাই।
বাহিরে সবুজ মুখটা মলিন করে বসে আছে। আর ওর বাপ হাত পা ছেড়ে দরজায় পাশে হেলান দিয়ে ঠায় বসে আছে। তার ভেতরে যাওয়ার শক্তি সাহস কোনটা যেন নাই। মেয়ের সাথে মুখোমুখি হতে বড় হচ্ছে যেন তার।
এমন সময় জব্বার ওদের ঘর থেকে বের হয়ে জোরে রেডিও শুনতে লাগল। পুরো সময়টা জুড়ে শুধু এই ঝড় আর বন্যারই সংবাদ। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ইয়াহিয়া কেন এসে পূর্ব পাকিস্তানের এই ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি সচক্ষে দেখে যাচ্ছে না। কেন এখনও কোন ত্রান পাঠাচ্ছে না তাদের আর্মীদিয়ে। সেসব নিয়ে যুক্তি তর্ক চলছে তুমুল ভাবে। ধারনা করা হচ্ছে কয়েক লক্ষ প্রানহানী ঘটেছে এই ঝড়ে। রেডিও বার্তা শুনে সবুজ আর ওর বাবা চুপ করে আছে। কারন তারা গঞ্জে থেকে সব খবর নিয়েই এই বাড়িতে এসেছে। কিন্তু মেয়ে যখন কোন খবর জানে না তাই আর মেয়ের এই নাজুক সময়ে কোন কিছু বলতে চায় নাই। কিন্তু এখন জব্বারের এমন আচরণে বেশ বিরক্ত হলেও তেমন কিছু বলতে সাহস পেল না। কারন বিপদের সময় অহেতুক ঝামেলায় আর জড়াতে চাইল না।
শবনমের দেহ ক্লান্ত হয়ে এল কাঁদতে কাঁদতে । এর মাঝে দুইবার বেহুঁশও হয়েছিল। রাতে বহু কষ্টে ওর মা ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। ছন্দার দেখাশোনার দায়িত্বটা এখন বানুই করছে। শবনম ঘুমিয়ে পড়লেও শবনমের মায়ের আর দুচোখের পাতা এক হতে পারে না। মেয়ের অনাগত ভবিষ্যতের কথা চিন্তায় শুধু দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কানাঘুষায় এখন শুধু ওই একই কথা চলতে থাকে বাড়িতে যে দুলাল আর নেই। কিন্তু কেউ মুখে আনতে পারছে না কষ্টে। বানু শুধু তর্ক করে এমনটাতো নাও হতে পারে বলে বেড়ায় সবার সাথে। কিন্তু সেই কথাতেও আর জোর পেল না কেউ, যখন মধ্য রাতে উত্তর পাড়া থেকে খবর এল যে দুলাল গতরাতে লঞ্চে উঠেছিল। আর ওর সাথে তাদের বাড়ির জন্য কিছু টাকা দিয়ে দিয়েছে তাদেরই এক আত্মীয়। তিনি লঞ্চ ঘাটে এসেছিলেন টাকাটা দিতে। সেই কথা শোনার পর শবনমের মা আরও ভেঙে পড়লেন। তার আহাজারিতে পুরো বাড়ির লোকগুলোও তাল মিলালো। ভোর রাতে হঠাৎ শবনম ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলার জন্য ছুটল। ওর অবস্থা দেখে ওর মা পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল
“কী অইছে মা? কী অইছে তোর? এই আন্ধারে তুই দোর খুলোস ক্যা?”
“মা মাগো, দোর খুলেন। ছন্দার বাপে আইছে। শুনেন নাই আপনে? একটু আগে যে কইল বৌ দোর খোল, আমি আইছি।”
“ও আল্লাহ কয় কী মাইয়া? কহন কইল তোরে? তুই স্বপন দেখছোসরে মা? ছন্দার বাপে আহে নাই। তোরে ডাকেও নাই। ডাকলে আমরাও শুনতাম। কিরে সবুজ তুই শুনছোস?”
“বুজি তুমি ভুল শুনছো, দুলাভাই আহে নাই। ডাকেও নাই তোমারে। তুমি ঘুমাও।”
“মা আপনে দোরডা খুলেন, আমি ভুল শুনি নাই। আমি স্পষ্ট শুনছি হেয় সুন্দর মতোই কইল -বৌ দোর খোল, আমি আইছি।”
এবার সবুজ উঠে দরজাটা খুলে বাহিরে গেল। হঠাৎ করেই শবনম শুনল ওর বাবা ফুঁপিয়ে কাঁদছে বালিশে মুখ চেপে। ওর কেন জানি সহ্য হল না। চিৎকার করে উঠল
“বাবায় কান্দে ক্যা? কি অইছে বাবার? আপনেও একটু উডেন, দেহেন সবুজ কই গেল, এহনও আহে না ক্যা? ও ছন্দার বাপ আপনে ঘরে ঢুকেন না ক্যা? ঘরে আহেন। দেহেন ছন্দায় আপনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অহন ঘুমাইছে। আহেন, ঘরে আহেন আপনে।”
শবনমের শেষ কথায় এবার ওর মা-ও কেঁদে উঠেন আঁচলে মুখ লুকিয়ে। শবনম অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
এভাবেই ভোর হল। শবনমের চোখের ঘুম গায়েব হয়ে গেল। সবুজ যখন আবার ঘরে ফিরে বলল বাহিরে কেউ ছিলো না তখনও শবনম ওর মনকে মানাতে পারল না যে দুলাল ফিরে নাই। ওর কান যা শুনেছে তা মিথ্যা হতে পারে না। সকালেও বানুকে যখন বলছিল রাতে দুলাল এসেছিল ওকে বলেছিল “বৌ দোর খোল, আমি আইছি।”
তখনই জব্বার রেডিও নিয়ে ওদের ঘরের বাহিরে এসে বসে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল শবনমের কথা শুনে। ও বারবার বলল
“ভুতে আইয়া কইছে বৌ দোর খোল, আমি আইছি। দোর খুললেই ঘাড় মটকাইয়া খাইত। ব্যাডা মইরা ভুত অইয়া গেছে এতক্ষণে। পুরা দুইন্যায় এহন খবর ছড়ায় গেছে। ওই ঝড়ে কেউ বাঁচে নাই। আর দুলাল মিয়া আইব বাইচ্যা, ব্যাডা অইছে একখান। মরনের হাত থেইক্যা বাইচ্যা আইব। আর মজার কতা খুইজ্যা পায় না মাইনষে।”
“জব্বার ভাই, দুলাভাই যে মরছে তার কোন প্রমান আছে আপনের কাছে? হুদাই প্রমান ছাড়া এত কতা কন ক্যা?”
সবুজ একটু রাগ দেখিয়েই বলল।
“হেয় যে বাইচ্যা আছে তার কোন পরমান আছে তোগো কাছে? হের লঞ্চ ঝড়ের মইধ্যে পড়ছে। আমগো গঞ্জের চাইর পাঁচজন আছিল হের লগে তারা সব্বাই মরছে একলগে। লঞ্চ ডুইব্যা গেছে। আর হেয় এমন কোনো ব্যাডা না যে অমন উত্তাল গাঙ সাঁতরাইয়া পাড়ে ভিরব। মৃত্যু নিশ্চিত। এক্কেবারে পাক্কা। গঞ্জের বেবাকেই তাই কয়।”
“সারা দুনিয়া কইলেও আমি মানি না, আমি ছন্দার বাপের লাশ না পাইলে কোনোদিনও মানুম না যে হেয় মইরা গেছে। মরলে হেয় আবার আমার কাছে আইব ক্যা? ক্যা আমারে কইব “বৌ দোর খোল, আমি আইছি।” আমি বিশ্বাস করি হেয় একদিন না একদিন আবার আমার কাছে আইব। হেয় সাঁতার জানে, আমগো বাড়িতে গিয়া খাল পড়ে সাঁতরাইছে। আমি জানি হেয় ঠিকই একদিন ফিরব।”
শবনম খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলল নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে। ওর বিশ্বাসের কাছে সবার সব কথাই হারিয়ে যায় এক সময়। নিজের শরীর নিজের কাছেই এখন অনেক ভার লাগে। তাই আর নড়াচড়া করে না চুপচাপ এক জায়গায় বসেই কাটিয়ে দেয় সারাদিন। শুধু চোখগুলো থাকে অপেক্ষায় এই বুঝি দুলাল এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।
দুদিন কেটে যায় অপেক্ষায়, দুলাল আর আসবে না আর কখনও ফিরবে না তা সবাই বুঝে যায়। আর তাই মুরুব্বিরা এসে দাঁড়ায় শবনমের ঘরের দোর গোড়ায়। তারা চায় শবনম দুলালের মৃত্যুকে মেনে নিয়ে সামাজিক নিয়মনীতিগুলো মেনে চলুক। জমিরের মা নজ ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলে-
“স্বামী মরছে আইজ তিনদিন, এহনও ভালা ঘরের মাইয়ার নাক ফুল খুলে নাই, হাতে আবার চুড়িও পইরা রইছে। ফিনদনের কাপড়ও রঙচঙের। হের মায়ে বলে অনেক জ্ঞানী, তয় হেয় কী এগুলি দেহে না? আমি অইলাম পর মানুষ, তাই কিছু কইতে পারি না। আপনেরা মুরব্বী মানুষ যহন আইছেন আপনেরাই দেহেন কী করতে পারেন। বিধবা অইছে, অহন বিধবার বেশ ধরনডাইতো উচিৎ। ”
শবনমের শাশুড়ির কথা শুনে এবার শবনমের মায়ের কলিজা ফেটে যায় কষ্টে। উনি গগনবিদারী এক চিৎকারে ফেটে পরেন-
“ও আল্লাহগো তুমি আমার কপালে এমন কষ্টও রাখছো? আমি কেমনে আমার মাইয়ার এমন বেশ সহ্য করুম। আল্লাহগো তুমি আমারেও লইয়া যাও। আমি আমার বুকের ধনের কষ্ট সইতে পারুম না।”
এসব আর্তনাদ মনে হল মুরুব্বিদের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। তারা জোরজবরদস্তি করতে লাগল শবনমের নাকের ফুল খোলার জন্য। একটা সময় শবনম নিজের গায়ের সব জোর এক করে একজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল নিজের গলা চড়িয়ে বলে উঠল
“আপনাগো আইয়া কষ্ট কইরা আমারে বিধবা বানান লাগব না। আপনেরা আমারে ছন্দার বাপের লাশটা দেহান, আমি নিজই বিধবা হমু। আর যদি না দেহাইতে পারেন তাইলে কারো বাপের সাইদ্য নাই আমারে বিধবা বানায়। আমার স্বামী বাইচ্যা আছে আমি বিধবা সাজুম ক্যা? এতে যে আমার স্বামী যেই হানে আছে তার অমঙ্গল অইব। আমি কোনদিনও তার অমঙ্গল অইতে দিমু না।”
মুরব্বিদের মধ্যে থেকে একজন চেষ্টা করলেন বোঝাতে যে লাশ বিভিন্ন জায়গায় ভেসে উঠেছে। কেউ বলছে কিছু লাশ মাছ খেয়ে ফেলছে। নিদিষ্ট ভাবে কেউই কোন লাশ খুঁজে পায় নাই। দুলালেরও লাশ কেউ খুঁজে পাবে না।
কিন্তু শবনম তা-ও মানল না। নিজে নিজের কথায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। পরে শবনমের বাবা আর মায়ের উপর সবটা ছেড়ে মুরব্বিরা ফিরে গেলেন।
মেয়ের শারিরীক অবস্থা বিবেচনা করে শবনমের মা খুব করে চাইল ওকে বাড়ি নিয়ে ফিরতে কিন্তু শবনম ওর ওই একই কথা ও কোথাও যাবে না। ও কোথাও গেলে দুলাল খালি ঘরে এসে থাকতে পারবে না। ওর খুব কষ্ট হবে। ঘরে বসে এক বেলাও ও একা ভাত খেতে পারবে না। ওর একা খেতে ভালো লাগে না। শবনম যে ওকে কথা দিছে আর কোনদিন ওকে একা ছাড়বে না, ওর জন্য ভাত নিয়ে অপেক্ষা করবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
এদিকে এই অবস্থায় ওকে ওই বাড়িতে একা রেখেও যেতে পারল না ওর মা।
চলবে