শবনম(পর্ব ৭) সায়লা সুলতানা লাকী

0
277

#শবনম(পর্ব ৭)
সায়লা সুলতানা লাকী

উঠানে পালকি রাখতেই শবনমের শাশুড়ি বুঝে যান যে শবনমের মা এসেছেন। বেশ রস লাগিয়েই হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন
“ও আল্লাহ! নয়া বিয়াইন আইসেননি? পালকি ক্যা? একটা বিয়াইতে না বিয়াইতে কী আবার পোয়াতি অইছেন?”
শবনমের মা পালকি থেকে নেমেই এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না। আসলে তিনি তার প্রয়োজন বোধ করলেন না। সবুজ একটু রেগে উঠতেই তিনি ছেলের হাত ধরে টেনে বললেন
“আমারে আগে শবনমের ঘরে লইয়া যা বাপ। ”
সবুজ মায়ের আকুতি শুনে আর কিছু বলে না মায়ের হাত ধরে বোনের ঘরে গিয়ে ঢুকল।

শবনমের মা যেন দেখল পালঙ্কে তার মেয়েটা মৃত লাশের মতো পড়ে আছে আর পাটাতনে বালিশ ছাড়া আছে দুলাল।
মায়ের মন যেন কেমন করে উঠল এমন দৃশ্য দেখে। ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। তার কান্না কানে যেতেই শবনমের চোখ পড়ল মায়ের উপর। এতদিনের জমিয়ে রাখা রাগ ভুলে মাকে দেখে বুভুক্ষুের মতো শেষ শক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল মায়ের বুকে এক গগনবিদারী আর্তচিৎকার দিয়ে। মা-ও যেন মেয়েকে বুকে পাওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলেন এতক্ষণ। জড়িয়ে বুকে চেপে ধরে রাখলেন মেয়েকে পরম মমতায়।

দুলাল উঠে বসল। ওর মুখটা দেখে বোঝায় যাচ্ছে যে ওর বুকটাও ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলছিল হঠাৎ স্নেহমাখা একটা হাত যখন মাথায় বোলাতে শুরু করল তখন আর তা নিরবে রইল না আর্তনাদ হিসাবে প্রকাশ পেল।
“আম্মাগো আমার মায়তো এইবারও আমারে ফালায় দিয়া গেলোগা। মায়তো আমারে বুকে নিল না। আমি তো একবারও মা কইয়া ডাকতে পারলাম না।”

“কাইন্দো না বাজান, কাইন্দো না। মা নাই কও ক্যা? আমি কী মইরা গেছিনি? আমারে মা ডাকো বাজান। আমিই তোমার মা।”
“না আম্মা, আমি আর কাউরে মা ডাকতে চাই না। আমার হাউস মিট্যা গেছে। এই দুইন্যায় যারে আমি মা ডাকুম আল্লাহ তারেই লইয়া যাইব। আপনেরে লইয়া গেলেতো আপনের মাইয়াও এতিম অইয়া যাইব। এক এতিম বোঝে এতিম অওনডা কত কষ্টের। আর কেউ এতিম অউক তা আমি চাই না।”

“বাজানগো তুমি এত ভাংইগা পইড়ো না। আল্লার ওপর ভরসা রাখো। শবনম আর তোমার লেইগ্যা কোনডা বেশি ভালো অইব তা খোদা তায়ালা ভালো জানেন। তারে ডাকো, দেখবা আল্লাহ-ই তোমার মনের আশা পূরণ করব।”

“হ, খালাম্মা আপনে কতাডা এক্কেবারে ঠিক কইছেন, আপনে আইয়া উচিৎ কামডাই করছেন। হেগো দুইজনরে একটু ভালো মতো বুঝান। এত কানলে কী আর যে গেছে হেয় ফেরত আইব? উলডা কাইন্দা হের আত্মারে কষ্ট দেওন অইব।”
দুয়ারে দাঁড়ায়েই কথাটা বলল বানু।

“দুয়ার থেইক্যা সর বানু, গরম ভাত গায়ে লাগব। যা কলসি ভইরা পানি আন। মেমান ওগো দুজনরে লইয়া দুইডা ভাত মুখে দেন। পরে আপনের লগে চিনাপরিচয় করুমনে। এহন আগে ওগো মুখে কিছু দিয়া দেন। কাইল থেইক্যা ওরা মুখে কিছু তুলে নাই। আর এই বিয়াইন্যা পেটে বেশি খিদা লাগে তা কে ওরে বুঝাইব। আমি রাইতেও কিছু গিলাইতে পারি নাই। অহন আপনে আইছেন দেহেন মাইয়ারে কিছুনি খাওয়াইতে পারেন।”
মেঝ চাচিআম্মা কথাটা বলে ভাতের বোলটা নামিয়ে রাখলেন ভেতরে নিয়ে।

শবনমের মা ভাত মেখে মেয়ের মুখে তুলে দিলেন কিন্তু শবনম সেই ভাত মুখে নিতে পারল না। ওর মা তখন ওর চোখমুখ নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিয়ে বললেন
“বিয়াইন্যা পেট হইল রাক্ষসের পেট তা বলে মায়েও ভরতে পারে না খাওয়াইয়া। তোর সম্পদ আল্লায় লইয়া গেছে কিন্তু তোর বিয়াইন্যা পেটটাতো তোর লগই আছে। না খাইলে বাঁচবি কেমনে? আজকা না বাঁচলে কালকা আবার আল্লাহ তোরে রহমত দিয়া ভইরা দিব কেমনে? আমরা মানুষ আল্লাহর রহমতের আশাতেইতো বাঁইচ্যা থাকি। যে গেছে হেয় আল্লাহর কাছে জমা আছে। আর যে থাকব তোর কাছে সে আহনের লেইগ্যা পথ চাইয়া আছে। মাগো,অহন তার আশায় নিজের জীবনডা আবার শক্ত কইরা দাঁড় করা। দুইডা মুখে দে মা আর আল্লার উপর ভরসা রাখ। নাইলে যে আল্লাহ বোজার অইব। খা, মা খা।”
মায়ের এমন তাগিদে শবনম মুখে খাবার তোলে মনে নতুন এক স্বপ্নের জন্ম দিয়ে।

মেয়েকে খাওয়ায়ে এক থালা ভাত নিয়ে দুলালের কাছে গিয়ে বসলেন তিনি।
“বাজান, বাজানগো, দুইডা ভাত মুখে দাও। তোমার মায় আল্লাহর কাছে বইয়া তোমার এমন রুপ দেইখ্যা কষ্ট পাইতাছে। মায়ের মন শুধু আরেক মায়েই বোঝে। তারে আর কষ্ট দিও না। তুমি দুইডা ভাত মুখে দাও। আল্লাহ রহমতের দিকে চাও। আল্লার কি কম আছেনি? এত চিন্তা কর ক্যা? আল্লায় আবার দিব, ঢাইল্যা দিব এইডা আমার বিশ্বাস। তুমিও বিশ্বাস কর। যে যাওনের তারেতো আর বাইন্ধা রাখন যাইব না। আর যে তোমার কাছে থাকনের হেয়তো অপেক্ষায় আছে কহন তোমার বুকে আইব। হের লেইগ্যা অন্তত তুমি আবার শক্তসমর্থ হইয়া দাঁড়াও। নাইলে জীবন চলব কেমনে? অহন খাও, এরপর মসজিদে গিয়া নামাজ পইড়া হুজুররে দিয়া একটা খতম পড়াও। বালামুসিবত কাইট্যা যাইব বাপ। অহন একটু ধৈর্য ধরো দেখবা আবার সব ঠিক অইয়া যাইব। ”

শাশুড়ির কথায় এবার দুলাল ও ভাত খায় খুব কষ্টে। গলা দিয়ে ভাত নামাতে কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ভাত খেয়ে নেয়।

শবনমের মা পাশে থাকায় ওরা দুজনই একটা শক্ত মানসিক সাপোর্ট পেয়ে প্রাথমিক শোকটা কাটিয়ে উঠতে লাগল। যখন কষ্টটা চেপে ধরে তখনই শবনম চিকন সুরে ঘরের কোনে বসে কেঁদে উঠে। তখন আর কেউ বাঁধা দেয় না। কিছুক্ষণ কেঁদে মনকে শান্ত করে আবার স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে নিজে নিজেই।
দুলালকে আর কেউ তাড়া দেয় না গঞ্জে যাওয়ার জন্য। ও এমনিতেই কখনও ঘরে কখনও দাওয়ায়, আবার কখন মসজিদে গিয়ে থম ধরে বসে থাকে।

দুদিনের মাথায় শবনমর বুক ভার হয়ে আসে। ব্যথাও শুরু হয় একটু একটু করে। ওর মা সেই ব্যথার কারন বোঝেন তাই মেয়ের বুককে হালকা করতে সাহায্য করেন। তখন মেয়ের সাথে মাও চোখের পানিতে বুক ভাসান। এই কষ্ট কেবল এক মা’ই বুঝতে পারেন তা বোঝার ক্ষমতা অন্য কারো থাকে না।

নিজের থেকেই দুলাল একদিন গঞ্জে যায়, যদিও উত্তর বাড়ির নজর জানায় দুলাল আড়তে বসে শুধু ঝিমায়। কারো লগে কোন কথা বলে না। তবুও চুপচাপ গঞ্জেই বসে থেকে রাতে বাড়ি ফেরে।

তিনচার দিন যেতেই একদিন শবনম ওর মাকে বলে
“ও মা তুমি যে আমার কাছে আইছো, আমার ছোট বইনে একা কেমনে কী করতাছে? কী খাইতাছে? ওরেও লইয়া আইতা, আমি একটু দেখতাম। কেমন অইল, কার মতো অইল?”

“তুই ল আমার লগে, কয়দিন থাইক্যা আবি তোর দাদির কাছে। বুড়ি আইতে পারে না, কিন্তু তোর লেইগ্যা হগ্গল সময় কান্দে। তুই বড় নাতিন, তোর লেইগ্যা মায়াডাও হের বেশি।”

“নাগো মা, আমি গেলেগা তোমার জামাই এক্কেবারে একলা অইয়া যাইবগা। এই কষ্টের সময়ডায় তারে আমি একলা থুইয়া যাইতে পারুম না।”
“আলহামদুলিল্লাহ, আমার মাইয়াতো অনেক বুঝের অইছে, এমনেই দুইজন মিল্যামিশ্যা থাকিস। একজন যদি আরেকজনের কষ্টই না বুঝবি তাইলে আর কিয়ের মিথ্যা সংসার করন।”

শবনমের মা যতদূর সম্ভব মেয়ের সংসার গুছিয়ে দিতে লাগলেন। এখানে আসার পর দুলালের চাচিদের সাথে বেশ ভালোই একটা হৃদ্যতা তৈরি হয়েছে তার। বানু, বড় ভাবি সহ অন্যদের সাথেও ভালো সম্পর্ক তৈরি হল।
শুধু মাত্র শবনমের শাশুড়ি সুযোগ পেলেই একটু ঠেস দিয়ে কথা বলেন তাকে একা পেলে। আজও তাই হল, শবনমের মা মশলা পিষাচ্ছিলেন অন্য মহিলাদের দিয়ে। ভোর না হতেই কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে কাজে লেগেছেন তিনি। এসবে সাহায্য করছে বানু, শবনমের বড় ভাবি সাথে মেঝ চাচিআম্মা। এমন সময় তিনি সামনে এসে পড়লেন। যদিও শবনমের মা প্রানপণ চেষ্টা করেন এই উটকো ঝামেলা এড়িয়ে চলতে তারপরও পড়ে গেলেন আজ। আর তিনিও স্বভাব মতো একটু খোঁচা দিয়ে বসলেন
“ছিছিছি! আমি বাপু এমন বেশ্যরম কোনদিনও হইতে পারতাম না। পরথম মাইয়ার বাড়ি কোনদিন মাইয়ার মায় খালি হাতে আইতে পারে? আমিতো কোনদিনও এমন করতে পারতাম না। মাইনষে জানি কেমনে পারে, আবার শুনি হেরা বলে আবার ভালা ঘরের বৌঝি।”
শবনমের মা আজকেও তার কথা গায়ে মাখলেন না। বানু একটু রেগে উঠল কিছু একটা বলতে যাবে তখনই তিনি ওকে ইশারা করে থামিয়ে দিলেন।
তেমন কোন পাত্তা না পেয়ে শবনমের শাশুড়ি পরে সুর তুললেন অন্য ভাবে
“কিগো এত মশলার আয়োজন ক্যা? আইজ কী কোন আয়োজন আছেনি দুলালের ঘরে? ওরে আল্লাহ শ্বশুরবাড়ির ইষ্টিকুটুমগো বুঝি দুলাল আইজ জেফত খাওয়াইব? দুলালের টেকা কী বেশি অইয়া গেলোনি? বাপেরেতো কোনদিন কিচ্ছুই দিতে দেখলাম না।”

এবার শবনমের মা মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে বললেন
“আজ আমার মরা নাতনির জন্য একটু দোয়া দরুদের আয়োজন করছে ওর নানায়। দোয়ায় সামিল অওনের অনুরোধ রইল আপনের কাছে। নাতনি আমার দুনিয়ার আলো দেখতে না দেখতেই গেলোগা। হের লেইগ্যা দোয়া করতে নিশ্চয়ই কেউ কিরপন অইব না।”

কেনজানি শবনমের শাশুড়ি এর কোন উত্তর দিল না। চুপ করে ফিরে গেল নিজের ঘরে।

“ও আল্লাহ খালাম্মা আপনে চাচিআম্মারে দুইডা কতা হুইইলেন না ক্যা? হেয় গায়ে পইড়া আইল ঝগড়া করতে আপনের জবাব দেওন দরকার আছিল। “বানু অকপটে মনের রাগ ঝারল।

“বানুরে আমার কারো উপর রাগ নাই, গোস্যা নাই। অপরাধী যহন আমি নিজই তহন আর অন্যরে কতা শুনানের কী কোন ক্ষমতা রাখি আমি?
আমি নিজের শরম ঢাকতে মাইয়া পোয়াতি অইনের পরও তারে আমার কাছে নেই নাই। নিলে হয়ত আজকা এইদিন দেখতে অইত না। যেই কষ্ট আমি পাইতাছি ভেতরে তা আর পাইতে অইত না।”

“কতাডা বিয়াইন ভুল কইলেন, আপনের কাছে নিলেইবা আপনে কী করতে পারতেন? আমরা কী কম করছিনি? দুলালের মা নাই, কিন্তু আমরা চাচিরা কী মুখ ফিরাইনিছিনি? আমগো এইহানে আর কারো বাচ্চা অয় না? সব কি আর আপনের কাছে গিয়া অওয়াইনি?”
“তওবা তওবা বিয়াইন আমি হেই কতা কই নাই। আপনেরা আপনেগো সাধ্যিমতো সবটাই করছেন। উপরে আল্লাহ খোদা নিচে আপনেগো উপর ভরসা কইরাইতো মাইয়াডারে আমি এইহানে দিছি। আপনেরা তাই করছেন যা দুলালের মা থাকলে করত। আমি আপনেগো কোন দোষ দেই নাইগো বিয়াইন। আপনেরা মনে কষ্ট লইয়েন না। আমি–”

“আহ, বিয়াইন এইসব লইয়া হুদাই এত কতা কইয়েন না। যা অইছে হেইতে না আপনের হাত আছিল না আমগো। সবই দুলাল আর দুলালের বৌয়ের কপাল। মাইয়া আপনের কাছে থাকলেও আপনে কিছু করতে পারতেন না। বাচ্চা পেট থেইক্যাই বাইর অইছে ঠান্ডা লাগাইয়া। হেরপর পেডের উম আর বাইরের ঠান্ডায় মানাইতে পারেনাই, আরও কাবু অইয়া গেছিলোগা বাইরের ঠান্ডা পাইয়া। ওইডা ভালো চিকিৎসার দরকার আছিল। গেরামে তা পাইব কই? তারচেয়ে বড় কতা হায়াত আছিল না। আল্লার বান্দা আল্লাহ লইয়া যাইব আমরা রাখুম কেমনে। এইডা লইয়া আর মনে কষ্ট রাইখেন না। সব আল্লাহর হাতে ছাইড়া দেন বিয়াইন। আপনে মা আপনের মনডা আমি বুঝি। যদি ভুলচুক কিছু অইয়া থাকে তা সামনে যেন আর না অয় হেই ব্যবস্থাডাই করবেন সবাই মিইল্যা।”
বড় চাচিআম্মার কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল শবনম। কথাগুলো ওর মনকে আরও শান্ত করল।

এরপর আর কথা বাড়ল না কারন শবনমের বাবা আর ভাইয়েরা বাজার সদাই নিয়া বাড়িতে উঠল। গোমস্তারা শবনমের ঘর চিনে তাই সরাসরি চাঙ্গারীগুলি ওর ঘরের সামনেই নিয়া নামাল।
তখন কথাভুলে সবাই লেগে গেল রান্নাবান্নার গোছগাছ করতে।

দুপুরে নামাজের পর দোয়া দরুদ পড়া হল এরপর খানাপিনা শুরু হল গ্রামের সব লিল্লাহ বোডিং এর এতিম ছেলেমেয়েদের মাঝে। সব আয়োজন শেষে শবনমের মা বাবার বিদায়ের সময় এল। এ কয়দিন এখানে থাকায় শবনমের মায়েরও খুব মায়া পড়ে গেল ওদের ওপর। মেয়েকে রেখেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে তারা রওয়ানা দিলেন নিজের বাড়ির দিকে।

মাকে বিদায় দিতে গিয়ে শবনম মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করল নিজের যত্ন নিবে, দুলালের যত্ন নিবে। নতুন করে জীবনকে গোছাতে যা যা করা দরকার তাই করবে। পুরানো কষ্টকে নিয়ে বসে থাকবে না। আর যখন দরকার মনে করবে তখনই মাকে স্মরণ করবে, এবার আর মা কোনো ভুল করবে না। মেয়ের যে কোন প্রয়োজনে মেয়ের পাশে থাকবে তেমনটাই জানিয়ে গেলেন তিনি।

শবনম যতটা সহজ করে মাকে বলে বিদায় দিল ততটা সহজ হবে কি না তা ও জানে না। তবে মনকে নতুন করে সাজাতে চেষ্টা করবে তা নিজেই নিজের মনকে বলল। তবে খালি ঘরে শুয়ে ক্ষনে ক্ষনে শুধু নিজের মৃত সন্তানের কথা মনে পড়ে আর তাই বাহির থেকে সবাই শুধু ওর করুন কান্নার শব্দটাই পেতে লাগল।
এদিকে নতুন করে সব ভাববে এমন আশ্বাসে দুলালকে আড়তের অন্য ব্যবসায়ীরা বোঝাল যার কারনে দুলাল আবার আগের মতো হওয়ার চেষ্টায় লাগল।
রাতে বাড়ি ফেরার সময় চুড়ি, ফিতা, বাদাম নিয়ে এল। শবনমকে হাসিখুশি করতে নানান গল্প ফাঁদতে লাগল। একটু একটু করে শবনমও স্বাভাবিক হতে শুরু করল ।
সময় নিজেই যেন মলম হয়ে এমন একটা ক্ষতক্ষতে তাজা ঘা’কে শুকিয়ে তুলতে উঠেপড়ে লাগল। আর ঠিকই একটা সময়পর সেই ক্ষতক্ষতে ঘায়ের ব্যাথাকে ভুলিয়ে তুলতে সক্ষম হল। সময় যে একটা বড় ধরনের ঔষধ তা আবারও দেখল প্রকৃতি।

ঢাকা থেকে দুলালের ছোটখালা খবর পাঠালেন শবনমকে নিয়ে ঢাকা বেড়াতে যেতে। এখন ওদের মনের অবস্থা যেমন তাতে একটু পরিবর্তন দরকার। তার কথাটা বাড়িতে শোনার পর দুই চাচিআম্মা সম্মতি দিলেন বললেন ঢাকায় গেলে যেন একবার হলেও ভালো একজন ডাক্তার দেখায় শবনমকে। কারন দিনদিন ওর চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে আর শুকিয়েও যাচ্ছে শরীরটা। পাচঁচল্লিশ দিন কেটে যাওয়ার পরও কেনজানি শবনমের রক্তপাত বন্ধ হয়নি এখনও। বড়ভাবি বিষয়টাকে বেশি গুরত্ব দিয়ে দুলালকে তাড়া দিল শবনমকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে। এসব ভেবে দুলালও ঠিক করল এবার পাটের দরদাম আর বাজারের খোঁজ নিতে যখন যাবে তখন শবনমকেও সাথে নিয়ে যাবে ঢাকায়।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here