রোদেলা,পর্ব: ৬০

0
874

#রোদেলা,পর্ব: ৬০
লেখা : #মাহাবুবা_মিতু

এরমধ্যে চা নিয়ে হাজির হয় পরশের স্ত্রী, হাসিমুখে কথা বলে রোদেলার সাথে, এরপর ওদেরকে কথা বলার স্পেস দিয়ে চলে যায় ভিতরে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সুফিয়ান বলে….
: নাউ ইউর টার্ন…..

আহত চোখে তাকায় রোদেলা….
কারন সে গল্পটা ওর জীবণের সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের…..
শুরু করে ওর সেই কাহিনির পরের পর্ব….

সে-রাতে মা আমাকে বের করে দিয়ে কলাপসিবল গেইট তালা দিয়ে আটকে চাবি নিয়ে নিজের ঘরের দরজা আটকে রাখেন। কেও যে গেইট খুলে আমার চলে যাওয়া আটকাবে তারও কোন উপায় কারোই ছিলো না। নোভেল, বড় মামী হন্য হয়ে চাবি খুঁজছে। উপায় না দেখে তখন প্রিসিলা আমাকে আমার আমার ব্যাগ, ফোন জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। তখন আমার মনে হলো এ বাড়ি আমাকে তার ছায়াতলে আর জায়গা দিবে না। সেই মূহুর্তে আমার মনে হয়েছিল আমি যদি হাওয়ায় হয়ে মিলিয়ে যেতে পারতাম। কিংবা ঐ মুহূর্তে যদি আমার মৃ*ত্যু হতো। কিন্তু আমি তো অভাগা, যার জন্য এত বিড়ম্বনা অপেক্ষা করে আছে সে ম*রে গেলে চলবে কেন…..?

আমি প্রিসিলার জানালা দিয়ে ফেলে দেয়া সেই ব্যাগ আগলে ধরে বেরিয়ে পরেছিলাম অজানার উদ্দেশ্যে। কোথায় যাবো জানি না, কিন্তু দ্রুত পা চালাচ্ছিলাম আমি, যাতে কেও আমাকে খুঁজে না পায়। হাঁটছি আর চোখ বেয়ে পানি পরছে, ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকার করে কাঁদি…. বেশ কিছু সময় হাঁটতে হাঁটতে আমি চলে গিয়েছিলাম পোস্তগোলা ব্রীজের উপর।

এরপর কিছু সময় ভাবতে লাগলাম খুব সহজে, কম কষ্টে কিভাবে আ*ত্ন*হ*ত্যা করা যায়। একবার ভাবলাম পানিতে লা*ফ দিবো, আবার ভাবলাম বড় কোন গাড়ি দেখে সামনে দাঁড়িয়ে পরবো….

বলে স্মিত হেসে দেয় রোদেলা….
কেমন অপ্রকৃতস্থ দেখায় সেই হাসিটা….

একটু বিরতি নিয়ে তারপর আবার শুরু করে –
: সময় নিচ্ছিলাম ভাবতে, অতীত হাতড়ে এমন কিছু একটা খুঁজছিলাম যাকে পুঁজি করে এবারকার মতো বাঁচা যায়, কিন্তু আমি আমার পেছন ফিরে তাকিয়ে এমন কিচ্ছু পেলাম না।
অবহেলা, ঘৃণা, লাঞ্চনা, অপমান, না পাওয়া, ছাড়া কিছুই চোখে পরলো না আমার।

এমন সময় প্রেক্ষাপট যেন দ্রুত বদলে গেলো, একটা ছেলে…
না না দুটি ছেলে বিশ্রি ভাবে কিছু কথা ছু্ঁড়ে দিলো আমাকে উদ্দেশ্য করে, সেই কথা শুনে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিলো….

আমি তৎক্ষনাৎ ভুলে গেলাম কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছিলাম। আমি খুব প্রতিবাদী একজন মেয়ে, কিন্তু তখন আমি একটা কথাও বলতে পারি নি ভয়ে, ওদের কথাগুলোই সেই ভয়ের উৎপত্তি করেছিলো তখন।

আমি ওদের কাছ থেকে পালাতে দ্রুত পা চালালাম। রাত অনেক, ব্রীজটা পুরে ফাঁকা, মাঝে মাঝে দু একটা ট্রাক আর কাভার্ড ভ্যান উল্কার গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে যেন ।

আমার হাঁটার গতি বাড়ালাম, কিন্তু ওরা তো বাইকে ছিলো.. একেবারে কাছ ঘেঁষে চলছিলো সেটা, একটা সময় পেছনে বলা ছেলেটা আমার ওড়না টেনে ধরে। আমি তখন দৌড়ে পালাতে লাগলাম এমন সময় একটা সিএনজি দড়জা খুলে আমার সামনে এলে আমি কোনকিছু না ভেবেই উঠে পরি সেটাতে।

কি যে একটা মুহূর্ত ছিলো সেটা….
তার বর্ণনা মুভির কাহিনির চেয়ে কম না।

ড্রাইভার বার বার জিজ্ঞেস করছিলো কোথায় যাবেন মামা…
আমি অনেক খুঁজেও এমন একটা ঠিকানা পাই নি। তারপর কি ভেবে যেন ইকুরিয়া যেতে বললাম। ঠিক বললাম না মনে হয়- কেও আমাকে দিয়ে বলালো..

অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে সে রাতে আমি একজনের বাড়ির সামনে নামলাম, রাত তখন খুব সম্ভবত বারোটা….
মেইন ফটক পেরিয়ে মূল বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই সেই গেইট খুলে দিলেন ঐ বাড়িরই কর্ত্রী মিসেস শাহানাজ….

সুফিয়ান এবার জিজ্ঞেস করলো….
: উনি কি তোমাদের আত্নীয় হন….
: না, উনি আমার স্টুডেন্টের মা, তাছাড়া তার হাসবেন্ড আমার মায়ের পূর্বপরিচিত। যদিও তা জেনেছিলাম অনেক পরে। সেই পরিচয়ের গল্প আবার অনেক বড় কাহিনি। অন্য কোন সময় বলবো….

তো তিনি এত রাতে আমাকে দেখে অবাক হয়েছিলেন।
তিনি আমার সম্পর্কে সবই জানতেন। আমি তাকে ঐদিনের ঘটনা বললাম। কিছুদিনের জন্য আশ্রয় চাইলাম তার বাড়িতে, তিনি আমার সব কথা শুনলেন, খুব মনোযোগের সাথে। আমার এসব ব্যাপারে আগে থেকেই তিনি সব জানতেন, তাই তিনি সহজেই বুঝতে পারছিলেন আমার ব্যাপারটা। সাথে এ-ও বললেন – তুমি নিশ্চিন্তে থাকো যতদিন ইচ্ছা।

আমি কিন্তু দু’দিন থেকেই চলে এসেছিলাম সিমির বাড়িতে। যদিও আঙ্কেল আন্টি কেউই যেতে দিবে না আমাকে, আমি সিমির সাথে দেখা করে চলে আসবো এটা বলে সেখান থেকে চলে আসি। তারা আমার আপন কেও না হওয়া সত্ত্বেও আমাকে অনেক ভালোবাসেন, কেন জানি তাদেরকে বিরক্ত করতে চাই নি তাই….

তো… সেখান থেকে সিমির বাসায় যাবার পথেই আমার ব্যাগটা ছিনতাই হয়, আমার টাকাপয়সা, মোবাইল সব সেখানেই ছিল। ধ্বংসস্তুপ আমি যেটুকু গুছিয়ে নিয়েছিলাম বেঁচে থাকতে, আবার ভেঙে পরেছিলাম ঐ ঘটনায়। তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল খোদার প্রতি। এত কষ্ট যার জীবণের পরতে পরতে, তাকে আরো কষ্ট দিতে খোদার কি একটু ও কষ্ট হয় না…..

কিন্তু আমি আমার ভাবনায় ভুল ছিলাম, ঠিক এই সময়ে পিছন ফিরে যখন তাকাই, দেখি আমার জীবনে যা যা ঘটেছে তা তা-ই আমার জন্য মঙ্গলকর ছিলো। আল্লাহ আমার অজ্ঞতা ক্ষমা করুন।

তারপর কোন উপায় না পেয়ে আমি ফিরে গেলাম আবার তাদের বাড়িতে। তারা চেয়েছিলেন আমাকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি বদ্ধপরিকর। বাড়ি আমি ফিরবো না। তখন আন্টি আমাকে কিছুদিন সময় দিলেন ভাবতে কি করতে চাই, সাথে এ-ও বললেন তোমার যা সাপোর্ট লাগে আমরা তোমার পাশে আছি। তুমি ভেবো না….
সিমি এদিকে আমার জন্য একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরী জোগাড় করলেন। কিন্তু সেখানে বেতন খুবই সামান্য। আমার এক ঘন্টার একটা টিউশনিতে যা বেতন পেতাম সারাদিনের সে চাকরীর স্যালারি ছিলো
তারচেয়ে ও কম। এ মুহূর্তে যে চলবো সেই টাকাও নেই….
কি যে সময় গিয়েছিল তখন…
এখন শুনতে সহজ মনে হলেও ঐ সময়টা ছিলো খুবই সংকটের।

আমি যেন দিশেহারা, আমি দিনরাত শুধু আল্লহর কাছে সাহায্য চাইতাম। আন্টি তখন আমাকে তার বোন মেহনাজ যিনি সিলেট থাকেন সেখানে যাবো কি না তা জানতে চাইলো। তার দুই মেয়ে আর তিনি। তিনি চাকরী করেন তার বর নেই। ইকুরিয়ায় থাকলে কোনদিন না কোনদিন আমার বাড়ির যে কেও আমাকে দেখে ফেলবে, তাই আমি সিলেট থাকাটাই বেটার মনে করলাম। তারউপর তার দুটি মেয়ে, তার বরও ছিলেন না। এদিকে নিরাপদ। সেখানে লজিং টিচার হিসেবে থাকলাম মাস তিনেক।

হঠাৎ আন্টির মা যিনি ইংল্যান্ডে থাকেন তিনি অসুস্থ হয়ে যান। তার ভাই-ভাই বৌ দু’জনই জব করেন। ছোট ভাই এখনো পড়াশোনা করেন অন্য স্টেটে থেকে। মেয়েরা একেকজন একেক দেশে। তারা তার মাকে দেখাশোনা করতে পারেন না। সবাই মিলে তখন সিদ্ধান্ত নেন তাদের মাকে কেয়ার হোমে পাঠানোর।দুই আন্টিই ভেঙে পরেন। এতগুলো ছেলেমেয়ে থাকতে তার মাকে শেষে কেয়ার হোমে যেতে হবে….?

সেসময় তিনি সারাদিন কেবল তার মায়ের গল্প করতেন। কষ্ট প্রকাশ করতেন যে মা এত করেছেন আজ তার জন্য কিছুই করতে পারছে না তারা…

একদিন হঠাৎ চা খেতে খেতে আমি বললাম আন্টি আমাকে পাঠিয়ে দিন নানুর কাছে, আমি তাকে দেখে রাখবো…

বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না- আমার এখনো মনে হয় এই কথাটাও আমি নিজে বলি নি, আমাকে দিয়ে কেও বলিয়েছিলো হয়তো….

কথাটা শুনে তিনি চমকে যান, হঠাৎ সবকিছু মিলিয়ে খুশিতে ফেটে পরেন যেন কালই যাচ্ছি আমি সেখানে তার মাকে দেখাশোনা করতে……

এরপর সবকিছু দ্রুত ঘটতে লাগলো, আমার পাসপোর্ট তৈরী হলো তাদের বাড়ির ঠিকানায়, তার ভাইদের সাথে আলোচনা করলো কিভাবে আমাকে নেয়া যায় সেখানে৷ তারা সব ব্যাবস্থা করলেন। সিলেটে আমাকে আইইএলটিএস এ ভর্তি করে দিলেন। ভাগ্য ভালো ছিলো যে পরীক্ষার জন্য দুইমাস সময় ছিলো। এই দুইমাস আমি ওদের পড়ানোর সময় বাদে
দিনরাত পড়াশোনা করেছি, আর সেখানকার ইউনিভার্সিটির খবরাখবর নিয়েছি নেট ঘেটে । জীবণে এমন ফ্রিলি পড়াশোনা করবার সুযোগ আমি কখনো পাই নি, আমি আমার সবটুকু শক্তি, মেধা ঢেলে দিয়েছিলাম তখন। ফলস্বরূপ আমি আইইএলটিএস এ স্কোর করলাম এইট….!

তারপর দিনগুলো কাটলো দ্রুতগতিতে। অনেক ঝড় ঝাপ্টা পেরিয়ে ছয় মাসের মাথায় আমি চলে গেলাম স্বপ্নের দেশ ইংল্যান্ডে। এত বড় স্বপ্ন আমি জীবণেও দেখি নি। কিন্তু বাস্তবে তা ধরা দিয়েছে আমার জীবনে। আমি প্রথম কয়েকটা দিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম….
ভাবতাম এটা স্বপ্ন না তো।

কাগজপত্র জোগাড় করা, টাকাপয়সা সব সাপোর্ট আঙ্কেল আন্টি আমার জন্য করেছেন। যদিও দুই আন্টিই আমাকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন, আর আমি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম দেশ ছেড়ে এসে। কিন্তু তবুও আমি বলবো তারা আমার জন্য যা করেছেন তার ঋণ আমি জীবণেও শোধ করতে পারবো না।

এখানে এসে আমি ক্লাস করতাম আর বাড়ি ফিরে নানুর দেখাশোনা করতাম। দেখাশোনা বলতে তাকে সময়মত খাবার আর ঔষধ দেয়া, তার সাথে গল্প করা। বাকী সব কাজ তিনি একাই করতেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই রান্না করতেন আমাদের দুজনের জন্য। এত বিশাল বাড়িতে দুজনমাত্র মানুষ থাকতাম। অনেকের কাছে ব্যাপারটা কেমন কেমন লাগতে পারে। কিন্তু বাইরের পার্টটাইম জব করার চেয়ে এটা আমার জন্য ব্লেসিং ছিলো। ঘর হারা আমি একটা বাড়ি পেলাম, আত্মীয়হীন আমি পেলাম পরম মমতায় আগলে রাখা নানু মনিকে। তার ছেল-ছেলের বৌ চাকরীর সুবাদে অন্যত্র থাকতো। তাদের মাকে দেখাশোনার দায়িত্ব আমি পালন করছি দেখে তারাও আমাকে খুব ভালোবাসতো, আমার প্রয়োজন, দরকারের খেয়াল রাখতো। পড়াশোনার খরচও তারাই দিতো। এভাবেই ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ কেটে যায়।

আস্তে আস্তে আমি সবকিছু চিনতে শুরু করি, নানু মনি ও দিনশেষে কথা বলার একজন মানুষ খুঁজে পেয়ে আগের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেন। রান্না বান্নার দায়িত্ব তার হাতে দিতে বাধ্য হলাম আমি। তখন আমার কাজ বলতে তিনবেলা খাওয়া, পড়াশোনা করা আর রাতে ঘুম……

একটা সময় আমার কেমন সংকোচ লাগছিলো, তাদের কোন কাজেই আসছি না অথচ তারা আমার জন্য এত করছে…

ইউনিভার্সিটির থার্ড সিমিস্টারে ভর্তির সময় নানুর বড় ছেলে আমাকে একটা খামে করে সিমিস্টার ফি দিয়েছিলো। আমি সেটা নিতে পারি নি। ততদিনে আমি একটা সুপার শপে পার্টটাইম জব খুঁজে কাজ করতে শুরু করেছিলাম, সেখান থেকে পাওয়া টাকা আমি জমা করতাম। আমার থাকা, খাওয়া, জামাকাপড় কেনাকাটার কোন খরচই ছিলো না, পুরো টাকাটাই তাই সেভ হতো, সেই টাকা জমিয়ে আমি থার্ড সেমিস্টারে ভর্তি হই….

নানু মনি, মেহনাজ আর শাহনাজ আন্টি রাগ করলেও আমি তাদের বোঝাতে পেরেছিলাম। তারপর গ্রাজুয়েশন করলাম…
ততদিনে বেশ কয়েকটা জব বদলেছিলাম আমি। সব শেষে আমার ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসর এর আন্ডারে পিএইচডি করবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। তার রিকমেন্ডেশন পাওয়া খুব টাফ। তার সান্নিধ্যে থাকতে যোগ দিলাম রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। যে কাজ করে আমি টাকা পাই, তাই আমার পড়াশোনার অংশ। পড়াশোনা আর কাজ রিলেটেড হওয়ায় আমাকে ফোকাস করতে বেগ পেতে হয় নি।

এখন আমার বয়স আটাশ, জীবণের সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ সময় ছিলো এই পাঁচ বছর। অনেক কিছু শিখেছি, এত কিছু যে ভাবলে মনে হয় বাকী তেইশ বছরের জীবণটা শুধুই অপচয়….

সুফিয়ান জিজ্ঞেস করে –
: কাগজপত্র তোমাদের বাড়ি থেকে আনলে কিভাবে….?
ওয়েট ওয়েট….? প্রিসিলা….!
রোদেলা সুফিয়ানের দিকে চেয়ে স্মিত হেসে বলে-
: হুম প্রিসিলা….
: ও মাই গড….
তোমার বোনকে তো কনফিডেনশিয়ালিটিতে নোবেল দেয়া উচিত… ওহ্ গড এটা কেমনে সম্ভব, এই মেয়ে তো ভয়ংকরী… ঠান্ডা মাথায় মানুষ খু*ন করে ফেলতে পারবে…
: আরে ধূর…! কি বলেন আবোল তাবোল…
: হ্যা… ঠিকই বলেছি আমি…
আমি কত কত বার যে ওকে টোপ দিয়েছি, এই মেয়ে এ প্রসঙ্গ এলেই এড়িয়ে যেতো আমাকে, আমি হাঁদারাম ভাবতাম বোনের বিয়োগে ও বোধহয় মর্মাহত, আমি তাই আর ওকে ঘাঁটতাম না…. আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এসব….
যদিও ওর আচার আচরণ আমার কাছে কেমন যেন উদ্ভট লাগতো, কিন্তু এমন কিছু কল্পনায় ও ভাবি নি….

উফ্………..
পাঁচ তলা থেকে ধাক্কা দিলেও হয়তো এত চমকাতাম না…
যতটা চমক প্রিসিলা দিলো….

: তারপর….
আপনি বলুন কিভাবে খুঁজে বের করলেন আমাকে….
: সে গল্প অনেক বড়…
যে ধাক্কা দিলে তোমরা দুবোন মিলে, হজম করতে সময় লাগবে আমার….
: আচ্ছা কাল তাহলে আসুন আমার বাসায়….

আহত চোখে নিশ্চুপ হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে সুফিয়ান। যেন কিছু বলছে মনে মনে….তারপর বলে-
: নাহ্, আমরা বাইরে কোথাও দেখা করি….?

এবার আহত চোখে তাকায় রোদেলা। সুফিয়ান কিছু না বলেও যেন অনেক কিছু বলে রোদেলাকে, রোদেলাও যেন বুঝে সে-সব কথা…. তারপর বলে-
: আচ্ছা ঠিক আছে….
ব্যাগ থেকে একটা কার্ডে ওর নম্বর লিখে সেটা বাড়িয়ে দেয় সুফিয়ানের দিকে…

সুফিয়ান সেটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে –
এখানে লাঞ্চ করতে কোন সমস্যা আছে….
: না, তবে এখন আমি উঠবো, আমার একটা জরুরি কাজ আছে, সেটার কথা ভুলেই গিয়েছি।
: আমি পৌছে দিই…
মুচকি হেসে রোদেলা বলে –
: না, না, আমি একাই যেতে পারবো, রাতে ফোন করে জানাবেন…
: আচ্ছা….

গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে ওকে, ঘরে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে কার্ডের লেখা গুলোতে হাত বুলায় ও….
লেখাটা রোদেলার তাই হয়তো….
এখন অপেক্ষা শুধু রাত হবার….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here